শরতের আকাশ জানান দিচ্ছে, মা আসছেন। শহরের অলি-গলিতে বাঁশ বাঁধা শুরু হয়ে গিয়েছে। পুজোর আগে কাজের চাপ অনেকটাই বেড়ে যায় তারকাদের। উদ্বোধন, পরিক্রমা তো আছেই, সেই সঙ্গে থাকে নানা বিজ্ঞাপনের কাজ, ফটোশুট। তবে ঈশানের জন্মের পর থেকে অভিনেত্রী নুসরত জাহানের দুর্গাপুজো অনেকটাই বদলে গিয়েছে। ছেলে এখন পুজোর বিষয়টা বুঝতেও শিখেছে, ফলে ওকে এখন আরও বেশি সময় দিতে হয়। ‘চারুলতা’ সাজতে সাজতে জানালেন নায়িকা।
কপালে লাল টিপ, বিনুনি ঝোলানো, লাল সুতির শাড়ির সঙ্গে মানানসই ক্রুশের কাজ করা পুরনো কায়দায় তৈরি ব্লাউজ। দক্ষিণ কলকাতার একটি ক্যাফেতে ‘ফটোশুট’-এর মাঝে পুজোর পরিকল্পনা, ছেলের নানা বায়নার কাহিনি অনর্গল বলে চললেন অভিনেত্রী। রূপসজ্জার মাঝে, ফোনে ছেলেকে দেখে নিচ্ছিলেন। ছোট্ট ঈশান কী করছে, তা সারা ক্ষণ মাথায় চলে মা নুসরতের।
নায়িকার মতে, ছেলে হওয়ার পর তিনি আদ্যোপান্ত বদলে গিয়েছেন। নিজেরও মনে হয়, নতুন করে যেন পুজো দেখছেন। অভিনেত্রী যোগ করলেন, “গত বছর, ঢাকের তালে নাচতে ওর (ঈশানের) ভাল লেগেছিল। এই বছর যেমন, নিজেই ‘ঠাকুর ঠাকুর’ বলছে।” দুর্গাপুজোর সময় সারা শহর আলোয় সেজে ওঠে। সেই আলো দেখতে ভালবাসে নায়িকার একরত্তি। ঈশানের চোখ দিয়ে শহরের আলোকসজ্জাও এখন নতুন করে দেখছেন নায়িকা।
নুসরত বললেন, “সন্তান হওয়ার পর বা নিজের সংসার হয়ে গেলে, অনেকেই নিজের কথা ভাবেন না। কিন্তু আমি সেই তালিকায় একেবারেই নেই। কিছু দিন আগে বেনারস গিয়েছিলাম। সেখান থেকে শাড়ি কিনে নিয়েছি আর ব্লাউজ তৈরি করতে দেওয়া হয়ে গিয়েছে।” এই বছর আবার পুজোর সময় একটি ছবিও মুক্তি পাবে নায়িকার। যে ছবিতে বিশেষ নাচের দৃশ্যে দেখা যাবে তাঁকে।
কিছু দিন আগে মুক্তি পেয়েছে নুসরতের সেই বিশেষ গান ‘অর্ডার ছাড়া বর্ডার ক্রস’। যে গানে নায়িকার নাচ দর্শকের নজর কেড়েছে। ক্যামেরার সামনে এমন ‘পারফরম্যান্স’ করতে গেলে সারা বছর নিয়ম মেনে কড়া ডায়েটে থাকতে হয় অভিনেত্রীদের। তবে বছরে চারটে দিন কোনও নিয়ম নেই। সব ছুটি। নায়িকা যোগ করলেন, “আমার রূপটান শিল্পীর বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। গত কয়েক বছর ধরে ওর বাড়িতে যাই পুজোয়। সেখানে গিয়ে জমিয়ে খাওয়া দাওয়া করি। এই চারদিন তো খাবই। তার পরে জিম করে বাড়তি ক্যালোরি ঝরিয়ে ফেলব, ব্যস।”
নায়িকা যে মিষ্টি খেতে ভালবাসেন, এ কথা বহু সাক্ষাৎকারে বলেছেন তিনি। এমনকি তিনি দক্ষ রাঁধুনি। তবে এখন আর তাঁর রান্না করতে ভাল লাগে না। একমাত্র ছেলের জন্য যদি রান্না করতে হয় বা কাছের মানুষ যদি আবদার করে, তখন তিনি রান্নাঘরে যান। কারণ, সারাদিন একরত্তির দুষ্টুমি সামাল দিতে অনেকটা সময় কেটে যায় নায়িকার।
সাজতে সাজতেই এক ফাঁকে ক্যামেরায় দেখে নিলেন ছেলে কী করছে। ফোন করে বলেও দিলেন দুষ্টুমি যেন কম করে সে। মা যে শুটিংয়ে বেরিয়েছে, সেও এখন বুঝতে শিখে গিয়েছে। পেশার জন্য এখন যে খুব বেশি মণ্ডপে প্রতিমাদর্শনে বেরোতে পারেন নায়িকা, তা নয়। তবে এখন ছেলের জন্য যেতেই হবে।
নায়িকার ছোটবেলার পুরোটাই কেটেছে দক্ষিণ কলকাতায়। কাটলেট, কোল্ড ড্রিঙ্কস, রোল, মোগলাই—পুজোর চার দিন এগুলোই খাওয়ার চল ছিল। তারকা হওয়ার পর এই খাবারগুলো আর লাইনে দাঁড়িয়ে খেতে পারেন না। নুসরতের কথায়, “ওই দিনগুলো খুব মনে পড়ে। এখন বাক্স করে বাড়িতে এনে খেতে হয়। ঈশান যদিও এই সব খাওয়া শেখেনি। ওকে মাছ দিয়ে পেঁপে, আলুর ঝোল করে দিই। ও অবশ্য এ সব খেতে ভালবাসে।”
অভিনেত্রী হওয়ার সুবাদে শহরের অনেক পুজোয় অবাধে যাতায়াত করতে পারেন তিনি। ছেলেকেও শহরের বেশ কিছু বড় পুজো দেখানোর ইচ্ছা আছে তাঁর। আনন্দবাজার ডট কম-এর বিশেষ ফটোশুটের ফাঁকে দুর্গাপুজো, কাজ, আর ছোট্ট ঈশানের নানা কর্মকাণ্ড ভাগ করে নিলেন অভিনেত্রী। পুজোর চার দিন সাধারণত শাড়িই পরে সবাই। তাই এই দিন একেবারে অভিজাত সাজেই সেজেছিলেন নায়িকা। পুজোর আগে নিজেকে এই সাজে দেখে নুসরতের মুখেও দেখা গেল তৃপ্তির হাসি।
পোশাক: পরমা,অলঙ্কার: সুরজিৎ, রূপটান: প্রীতম দাস, কেশসজ্জা: মৌসুমী ছেত্রী, সাজগোজ পরিকল্পনা: কিয়ারা সেন, চিত্রগ্রাহক: তথাগত ঘোষ, স্থান: দ্য ভবানীপুর হাউস, পরিকল্পনা স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রয়োগ: উৎসা হাজরা।