দেখতে দেখতে আমার কৃষভির এক বছর হয়ে গেল! এখনও ভাবলে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। গত বছর ঠিক এই সময়ে কালীপুজো ছিল। সকাল থেকে এক বারও অনুভব করিনি ওর হৃদ্স্পন্দন। সন্ধেবেলা আমায় নিয়ে হাসপাতালে যায় কাঞ্চন। সে তখন কী বকুনি আমার চিকিৎসকের। আসলে আমার এই ন’মাসের যাত্রা যে খুব সহজ ছিল, তা তো নয়। হাসপাতাল থেকে তো বলেই দেওয়া হয়েছিল, হয় মা নয়তো বাচ্চা। অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার আগে বন্ডে সই করতে হয়েছিল কাঞ্চনকে। এত কিছুর পরে যে এই ভাবে কৃষভিকে নিয়ে একটা বছর কেটে যাবে! সবটাই এখন আমার কাছে স্বপ্ন।
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় হবু মায়েদের মাঝেমাঝেই মেজাজ পরিবর্তন হয়। আমার আরও বেশি হত। এমনও দিন গিয়েছে যখন কাঞ্চনকে বলেছি, তুমি আমার জীবন থেকে চলে যাও। আমি আমার সন্তানকে নিয়ে একা থাকব। আমার সব কিছুর সঙ্গে তাল দিত কাঞ্চন এবং আমার চিকিৎসক। সেই জন্য কাঞ্চনকেও খুব বকুনি সহ্য করতে হয়েছে। আসলে ওই সময় আমার জরায়ুর একটা পর্দা ফেটে গিয়েছিল। এমনকি ‘ওয়াটার ব্রেক’ হয়েছিল অনেক বার। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আরও অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। জন্ডিস ধরা পড়েছিল। ৯ মাস আমি জন্ডিসে ভুগেছিলাম। ফলে ওই সময়টা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায় আমার জন্য। কিন্তু এত কিছুর মধ্যে ঈশ্বরের কাছে একটাই প্রার্থনা করেছিলাম, আমার সন্তান যেন সুস্থ হয়। এক বছর পরে এখন চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা হলে আমি বলি আপনার জন্য আমার আবার দ্বিতীয় বার মা হতে ইচ্ছা করে।
আরও পড়ুন:
তাই তো কৃষভি যার জন্য এই পৃথিবীর আলো দেখতে পেয়েছে তার সঙ্গেই কেক কাটল প্রথম। জন্মদিনে পরিবারের কাছের মানুষদের নিয়ে সময় কাটানোর ইচ্ছা আছে। ওর জন্য মাছ রান্না করব। এখনও মাংস দিইনি। ওর বাবা তো মেয়ের জন্য রুপোর থালা, বাটি, গ্লাস কিনে এনেছে। তাতেই নানা পদ সাজিয়ে দেব ভেবেছি দুপুরবেলা। সন্ধেবেলা কেক কাটা হবে। এখন একবছর আগের দিনগুলোর কথা ভাবলে মনে হয়, এক জন মানুষ আমার শরীরে তৈরি হল। সে আবার দেখতে দেখতে এক বছরের হয়েও গেল। মা হিসাবে চাইব, কৃষভি ভাল মানুষ হোক। ব্যস এটুকুই।