সাত দিন পরেই মহালয়া। সে দিন পিতৃপক্ষের অবসান। পরের দিন দেবীপক্ষের সূচনা। হিন্দুধর্ম মতে, এই দিনেই দেবতা, ঋষি ও মৃত পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে জল নিবেদন করা হয়। এককালে বাড়ির পুরুষেরাই শুধু পূর্বপুরুষদের জল দিতেন। এখন অনেক মেয়েও মহালয়ার ভোরে তর্পণ করেন। তবে পূর্বপুরুষকে জল দেওয়ার রীতিতে একেবারেই বিশ্বাসী নন সুদীপা চট্টোপাধ্যায়।
সুদীপা মনে করেন, বিয়েতে কন্যাদানের পরে গোত্রান্তর হয়ে গেলে আর পূর্বপুরুষকে জল দেওয়া চলে না। তিনি বললেন, “আমি তর্পণ করি না। দাদারা করেন। আমি এই বিষয়টা মানি না। ইদানীং শুনি, অনেকেই অঞ্জলি দেওয়ার সময় ‘পুত্রাং দেহি’ বলতে চান না। বরং বলেন, কন্যাং দেহি, সন্তানং দেহি। এইগুলো অর্ধশিক্ষিতের কথা।”
সুদীপা তাঁর বিশ্বাসের কথা আরও বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, মৃত্যুর পরে কেউ স্বর্গে গেলে আলাদা বিষয়। কিন্তু নরকে গেলে সেখানে অনেক ‘লোক’ আছে। যার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন জায়গা হল ‘পুতলোক’। পুরাণ মতে, মৃত্যুর পরে সেখানে সবচেয়ে বেশি অত্যাচারিত হয় আত্মা। সুদীপার কথায়, পুরাণ মতে ‘পুতলোক’ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয় বা সন্তানেরা তর্পণ করে।
তিনি যোগ করেন, “পুতলোক থেকে ‘পুত্রাং দেহি’ কথাটা এসেছে। আর আমরা যদি হিন্দুশাস্ত্র মতে বিয়ে করি, তা হলে তো কন্যাদান হয়। গোত্রান্তর হয়ে যায়। আমি এখন আর মুখোপাধ্যায় নই, এখন চট্টোপাধ্যায়। বাবা যা রেখে গিয়েছেন তা নিয়েই থাকব, তা তো নয়। স্বামীর সম্পত্তিরও ভাগ নেব। আর এখন তো আমি অন্য গোত্রের। তা হলে অন্য গোত্রে জল দেব কী করে? যদিও এই ভাবনাটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত।”
তবে সুদীপার মতে, যে মেয়েরা মুখাগ্নি করেন, শ্রাদ্ধে বসেন বা পিণ্ডদান করেন তাঁদের যে তিনি ছোট করছেন, তা নয়। এই ভাবনা একান্তই তাঁর নিজের, ব্যক্তিগত। সুতরাং অন্যের ভাবনাকে যেন তাঁর ভাবনার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা না হয়, সেই অনুরোধই জানিয়েছেন তিনি।