শ্বেতা
প্রথম ধারাবাহিক ‘সিঁদুরখেলা’তেই দর্শকের মন জয় করে নিয়েছিলেন শ্বেতা ভট্টাচার্য। এখন ‘যমুনা ঢাকি’-র প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। ডেলিসোপের মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন বলে, আগে হাতে ফাঁকা সময় প্রায় থাকতই না। কিন্তু করোনা আবহে এত দিন শুটিং বন্ধ হওয়ায় অভিনেত্রীর হাতে ছিল অগাধ সময়। যদিও ধারাবাহিকে অভিনীত চরিত্রে তিনি কর্মঠ কিন্তু বাস্তবে শ্বেতা খুবই আরামপ্রিয়। কী ভাবে সময় কাটছে তাঁর? ‘‘খাচ্ছিদাচ্ছি, ঘুমোচ্ছি (হেসে)। কখনও নাচছি, ফোনে কথা বলছি। খুব অদ্ভুত মানুষ আমি। এক জিনিস বেশিক্ষণ করতে ভাল লাগে না।’’ তবে ইদানীং শুট ফ্রম হোম শুরু হওয়ায় অনেকটা সময় কাটছে বলে জানালেন। ‘‘বাড়িতে শুটিং করাটা কিন্তু বেশ মজার, ভাল লাগছে। গত বছর কোমরে চোট পাওয়ার পরেও এ ভাবে শুট করেছিলাম। লকডাউনে ঘরে বসে থাকতে দম বন্ধ হয়ে আসে। বাড়ি থেকে শুটিং করায় সাউন্ড নিয়ে খুঁতখুঁতানি রয়েছে। তবে পুরনো এপিসোড দেখানোর চেয়ে এটা ঢের ভাল,’’ স্বস্তির সুর শ্বেতার কণ্ঠে।
তিন বছর বয়স থেকে ভরতনাট্যমের তালিম নিয়েছেন। ছোট থেকে স্বপ্ন দেখতেন নৃত্যশিল্পী হওয়ার। একটি নাচের রিয়্যালিটি শোয়ে প্রতিযোগী হিসেবে অংশ নিয়েও অসুস্থতার জন্য সরে আসতে হয় তাঁকে। তখনই সিনেমার প্রস্তাব পেয়েছিলেন, কিন্তু মানসিক ভাবে প্রস্তুত না থাকায় রাজি হননি। ‘‘রাজ চক্রবর্তীর আমাকে পছন্দ হয়। ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এর নায়িকা চরিত্রের অফার দেন। ক্লাস নাইনে পড়ি তখন, ছবিটা করতে পারিনি। এর পর টুকটাক কাজ করি ‘লে ছক্কা’, ‘প্রেম আমার’, ‘চ্যালেঞ্জ’-এ। ‘লাভ কানেকশন’ ছবিতে সেকেন্ড লিড করি। তার পর এসভিএফ থেকে ডাক এলেও অভিনেত্রী হব বলে ভাবিনি,’’ বললেন শ্বেতা। কিন্তু ‘সিঁদুর খেলা’-র লিড চরিত্রের অফারে ‘হ্যাঁ’ বলতেই হল তাঁকে। এর পর ‘ভালবাসা ডট কম’, ‘তুমি রবে নীরবে’, ‘জড়োয়ার ঝুমকো’, ‘কনককাঁকন’, ‘যমুনা ঢাকি’— পরপর ছ’টি বাংলা ধারাবাহিক! এর মধ্যে মুম্বইতে ‘জয় কানহাইয়া লাল কী’ দিয়ে হিন্দি ধারাবাহিকেও আত্মপ্রকাশ করেছেন। এ জন্য হিন্দি ভাষা শিখেছেন।
‘তুমি রবে নীরবে’ ধারাবাহিকে মূক ও বধির ঝিলের চরিত্রে অভিনয় করতে সাইন ল্যাঙ্গোয়েজ শিখেছিলেন শ্বেতা। ‘জড়োয়ার...’ ঝুমকো হয়ে গয়না বানানোর প্রাথমিক ধাপ সম্পর্কে জেনেছিলেন। এ বার ঢাকির চরিত্র করতে গিয়ে ঢাক বাজাতেও শিখে গিয়েছেন। ‘‘মাচায় গেলে ঢাক বাজানোর অনুরোধ আসবেই। গত বছর পুজোর ওপেনিংয়েও ঢাক বাজাতে হয়েছিল। এ বছর ভাবছি পাড়ার পুজোয় ঢাক বাজানোর বায়নাটা নিয়েই ফেলব,’’ হেসে বললেন শ্বেতা। ঢাক বাজাতে শিখলেন কী ভাবে? ‘‘কোনও মেয়েকে ঢাক বাজাতেও দেখিনি কখনও। পাড়ার পুজোয় যিনি ঢাক বাজান, তাঁর বাড়ি গিয়ে শিখতে শুরু করলাম। ফ্লোরে পেশাদার ঢাকি এসে শেখাতে লাগলেন কী ভাবে কাঠিটা ধরতে হয়। বোল তুলতে হয় কী করে। এখন একটা বোল প্রফেশনাল ঢাকি তুলে দিলে বাকিটা বাজিয়ে নিতে পারি,’’ বললেন তিনি।
আপনার জনপ্রিয়তার গ্রাফ তো ঊর্ধ্বমুখী, এখন সিনেমার অফার পেলে ‘না’ করবেন কি? ‘‘ছবিতে অভিনয়ের প্রচুর সুযোগ এসেছিল। কিন্তু শর্ট ড্রেস পরব না, স্লিভলেস পরব না, ঘনিষ্ঠ দৃশ্য করব না। এর পর কোন পরিচালক আমাকে নেবে বলুন? হয়তো বিশ্বাস করবেন না, ব্যক্তিগত জীবনে আমি কখনও ছোট বা স্লিভলেস পোশাক পরিনি। নিজেকে এর জন্য কোনও দিন তৈরি করতে পারলে বড় পর্দায় কাজ করব,’’ অকপট অভিনেত্রী।
ইন্ডাস্ট্রিতে টানা এত বছর কাজ করার পরও সে অর্থে বন্ধু নেই শ্বেতার। ‘‘বন্ধুত্ব নিয়ে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। সহজে বিশ্বাস করে ঠকেছি অনেকের কাছে। তাই এখন ইন্ডাস্ট্রির কাউকে বন্ধু বলে স্বীকার করতেই পারি না,’’ বললেন অভিমানী শ্বেতা। অভিনেত্রীর প্রতিটি কথায় উঠে আসে তাঁর প্রিয় প্রযোজক-পরিচালক স্নেহাশিস চক্রবর্তীর প্রসঙ্গ। তাঁর সঙ্গে কাজ করবেন বলে মুম্বইয়ের প্রজেক্টও ছেড়েছেন। বললেন, ‘‘দাদা আমার কাছে বটবৃক্ষ। আমার প্রথম ধারাবাহিক ছাড়া বাকি সবক’টা দাদার সঙ্গেই করেছি। একতা কপূরের ‘মুঘল-এ-আজ়ম’ ধারাবাহিকে সুযোগ এসেছিল, প্রচুর টাকার অফারও দিয়েছিল। কিন্তু ঘর থেকে বেরোনোর সাহস পাইনি।’’ দীর্ঘ দিন ধরে প্রেমের সম্পর্কেও রয়েছেন অভিনেত্রী। লাজুক হেসে বললেন, ‘‘ইন্ডাস্ট্রির বাইরের একজনের সঙ্গে মন দেওয়া-নেওয়া অনেক দিন আগেই হয়ে গিয়েছে। আমাদের ন’বছরের সম্পর্ক। কলকাতার বাইরে থাকে। এলে দেখা হয়, না হলে মোবাইলই ভরসা।’’ বিয়েটা কবে করছেন? ‘‘জানি না, বিয়ে নিয়ে উচ্চবাচ্যই করে না। হয়তো কলকাতায় শিফট করার পর বিয়ের কথা উঠবে,’’ শ্বেতার ঠোঁটে হাসি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy