Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

কালো তারে বলে... অপমানিত তন্নিষ্ঠা

বিনোদনের একটি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে গিয়ে চরম বিরক্ত অভিনেত্রী তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়। সদ্যমুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘পার্চড’-এর প্রচারে সেখানে যান তিনি। ওই অনুষ্ঠানে যে ভাবে তাঁর চামড়ার রং নিয়ে তাঁকে হেনস্থা করা হয়েছে, তাতে ক্ষুব্ধ তন্নিষ্ঠা। ঘটনার বিবরণ ফেসবুকে তুলে ধরেছেন অভিনেত্রী।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:২৫
Share: Save:

বিনোদনের একটি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে গিয়ে চরম বিরক্ত অভিনেত্রী তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়। সদ্যমুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘পার্চড’-এর প্রচারে সেখানে যান তিনি। ওই অনুষ্ঠানে যে ভাবে তাঁর চামড়ার রং নিয়ে তাঁকে হেনস্থা করা হয়েছে, তাতে ক্ষুব্ধ তন্নিষ্ঠা। ঘটনার বিবরণ ফেসবুকে তুলে ধরেছেন অভিনেত্রী। যার জেরে ওই অনুষ্ঠানের মাঝখান থেকে বেরিয়েও যান তিনি। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক বাড়তেই তন্নিষ্ঠার কাছে আজ ক্ষমা চেয়েছেন ওই চ্যানেল কর্তৃপক্ষ।

‘কমেডি নাইটস বাঁচাও’ নামে যে অনুষ্ঠানে ডাক পেয়েছিলেন তন্নিষ্ঠা, সেখানে ‘পার্চড’-এর পরিচালক লীনা যাদব ও ছবির আর এক অভিনেত্রী রাধিকা আপ্টেও ছিলেন। সাধারণত সেলিব্রিটি অতিথিদের নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা হয় ওই অনুষ্ঠানে। তন্নিষ্ঠার দাবি, তিনি সে সব জেনেশুনেই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তবে তাঁর মতে, ঠাট্টা-তামাশা (রোস্ট) আর হেনস্থা তো এক জিনিস নয়। অনুষ্ঠানের উপস্থাপকরা সেই কথাটা মাথায় রাখেননি। উল্টে তাঁর চামড়ার রং নিয়ে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ যা যা করেছেন, তাতে যারপরনাই বিরক্ত তন্নিষ্ঠা।

ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘প্রথম যখন চ্যানেলের তরফে জানানো হয় বিদ্রুপ করা হবে, তখন ভেবেছিলাম মার্কিন টিভি শো গুলোয় যেমন হয়, অনেকটা সেই ধাঁচেই হয়তো কিছু হবে। তার পর শো শুরু হলো। দেখলাম, আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করার মতো একটা বিষয়ই ওঁরা খুঁজে পেয়েছেন। সেটা হচ্ছে আমার গায়ের রং। ওঁরা প্রথমে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার নিশ্চয়ই জাম খেতে ভাল লাগে! ছোটবেলা থেকে কত জাম খেয়েছেন আপনি?’— এই ধরনের আরও নানা কুরুচিকর প্রশ্ন ধেয়ে আসে আমার দিকে।’ তন্নিষ্ঠা বলছেন, ‘‘বিশ্বাস করতে পারছি না, ২০১৬ সালে মুম্বইয়ে একটা জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলে বর্ণবৈষম্যে ভরা কথাবার্তার মধ্যে আমায় বসে থাকতে হয়েছে। দমবন্ধ হয়ে আসছিল। তবু ভাবলাম আর একটু দেখি। হয়তো এমন কিছু হবে না। তার পরেও একই রকম আপত্তিকর কথা শোনা গেল। আর বসে থাকতে পারিনি।’’

কিন্তু ঘটনার এখানেই শেষ নয়।aঅভিনেত্রীর আক্ষেপ, প্রাথমিক ভাবে তিনি অনুষ্ঠানের আয়োজকদের এটাই বুঝিয়ে উঠতে পারেননি যে গলদটা কোথায় ঘটেছে। তাঁর বন্ধুরাও বলেছিলেন, সাধারণ একটা ঠাট্টার বিষয় নিয়ে এত ভাবার কী আছে! আয়োজকরা ক্রমাগত বলে যান, ‘‘এই অনুষ্ঠানে এমনটাই হয়ে থাকে। আপনাকে আগেই তা বলা হয়েছিল।’’ তন্নিষ্ঠা তখন বোঝানোর চেষ্টা করেন, বিদ্রুপ আর হেনস্থা এক নয়। বিশেষত শারীরিক কারণের জন্য কাউকে যদি হেনস্থা করা হয়, সেটা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। আর এ ক্ষেত্রে গায়ের রং নিয়ে যে ভাবে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তাতে আয়োজকদের সঙ্কীর্ণ মানসিকতাই ধরা পড়েছে। অভিনেত্রীর মতে, এই মানসিকতা আমাদের সমাজ দীর্ঘদিন ধরে লালন করে এসেছে এবং এখনও তা টিকে রয়েছে। সেটাকেই প্রশ্ন করা দরকার বলে মনে করেন অভিনেত্রী।

আয়োজকদের বিরুদ্ধে তাঁর কোনও ব্যক্তিগত ক্ষোভ নেই। আর আয়োজকরা তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণ করছেন, এমনটাও তিনি মনে করেন না বলে জানাচ্ছেন তন্নিষ্ঠা। গোটা বিতর্কে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে বলিউডও। ‘পার্চড’-এর প্রযোজক অজয় দেবগণ যেমন বলেছেন, ‘‘একটা সীমা থাকা প্রয়োজন। আমি ওই অনুষ্ঠানটা দেখিনি। কিন্তু রসিকতার মাত্রা থাকা উচিত।’’ অজয়ের মতে, আমাদের সবারই রসবোধ রয়েছে, ঠাট্টা করলেও আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু যিনি বিদ্রুপ করছেন, তাঁরও জানা উচিত কোথায় থামতে হয়। তন্নিষ্ঠাকে সমর্থন করে আর এক বলিউড অভিনেত্রী নন্দিতা দাস বলেছেন, ‘‘বর্ণবিদ্বেষী বা লিঙ্গবিদ্বেষী হওয়া কোনও মজার বিষয় নয়।’’

চাপের মুখে পড়ে তন্নিষ্ঠার কাছে ক্ষমা চেয়েছে ওই চ্যানেলটি। তারা ফেসবুকে লিখেছে, ‘‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে মজার একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে আপনাকে আঘাত পেতে হয়েছে। আমাদের তেমন উদ্দেশ্য ছিল না। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। অনিচ্ছাকৃত ভাবে আপনাকে আঘাত দেওয়ায় আমরা ক্ষমা চাইছি।’’ যা দেখে তন্নিষ্ঠা লিখেছেন, ‘‘ধন্যবাদ। এটা কোনও ব্যক্তিগত আপত্তির বিষয় নয়। আমি একটা মতাদর্শের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছি। ওরা যদি আমায় নিয়ে ঠাট্টা করতেন, ভালই হতো।’’ ওই অনুষ্ঠানের নিন্দা করেছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রধান ললিতা কুমারমঙ্গলম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE