পুজোয় কখনও প্রেমে পড়েছেন? না পড়লেও ইচ্ছা তো হয়েছেই। বিশেষত, কোকের সেই বিখ্যাত বিজ্ঞাপন দেখে, ‘‘সপ্তমীতে প্রথম দেখা, অষ্টমীতে হাসি...।’’ সেই বছরে এই গান ঘুরেছিল পাড়ার রোমিওদের মুখে মুখে।.তার পর কেটে গিয়েছে অনেক বছর। গ্রাহকের স্বাদ বদল হওয়ায় বদলেছে পুজোর বিজ্ঞাপনেরও রূপ-রস-গন্ধ। তবে আজও শহুরে কলকাতার ব্যস্ত জীবনে পুজো আসে কিন্তু এই বিজ্ঞাপনের হাত ধরেই। টেলিভিশন থেকে প্রিন্ট, মণ্ডপে মণ্ডপে হোর্ডিং থেকে ব্যানার-বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনেই তৈরি হয় পুজোর আবহ।
যুগটাও তো মার্কেটিংয়ের। থিমের পুজোর রমরমা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে পুজোর বিজ্ঞাপনের চাহিদা। ষোলো-আনা বাঙালিয়ানাকে কানায় কানায় তুলে ধরতে বাদ রাখে না স্থানীয় থেকে ন্যাশনাল ব্র্যান্ডগুলো। কিছু বছর আগের পুজোর বিজ্ঞাপন যদি আপনার স্মৃতিতে এখনও সতেজ থাকে, তবে সেই বিজ্ঞাপনের ‘জিঙ্গল’ ও ‘পাঞ্চলাইনও’ নিশ্চয়ই আপনার মুখস্থ।
তবে আজকের বাঙালি প্রজন্ম তো আর শুধু স্থানীয় ব্র্যান্ডে আটকে নেই। তাই তাঁদের কথা মাথায় রেখেই বিগত কয়েক বছর ধরে এক সুস্বাদু ভাজার ব্র্যান্ড করছে পুজোর বিজ্ঞাপন। এ বারেও টিভির পর্দায় পরিনীতি চোপড়া অভিনীত সেই বিজ্ঞাপন বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। হাতে শাঁখা-পলা, আটপৌরে করে পরা লাল-পাড় সাদা শাড়িতে বঙ্গ-ললনা পরিনীতি বলছেন, ‘হোয়াই সো সুইট?’ অর্থাত্ বাঙালি বলতেই মনে আসে যে মিষ্টি বা বাঙালির ট্র্যাডিশনাল মিষ্টি-মুখের যে রীতি, তাকে চ্যালেঞ্জ করেছে এই বিজ্ঞাপন। এ বারের স্বাদবদল হোক নোনতার হাত ধরেই।
আর বাঙালির পুজো তো শুধু আর বাঙালির নয়। ‘গ্লোবাল’ বাঙালির কথাই বলুন, বা বৃহত্তর দর্শকের কথা মাথায় রেখেই এ বারের পুজোয় নিজের সঙ্গে বাড়িকেও সাজিয়ে তোলার ডাক দিচ্ছেন কিং খান। সাদা ধুতি-পঞ্জাবিতে বাঙালি বাবু শাহরুখ খানের অভিবাদন বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে বাংলার ঘরে ঘরে। গত বছর তাঁর টিম অর্থাত্ কলকাতা নাইট রাইডার্সের কিছু খেলোয়াড়কে দেখা গিয়েছিল, একটি সাবানের বিজ্ঞাপনে দেব-শুভশ্রীর সঙ্গে ধুনুচি নাচে। আর এ বার বাদশা খান নিজেই নেমেছেন মাঠে। আসলে কলকাতার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর না হলেও তাঁর জন্য তো এখনও কুছ কুছ হোতা হ্যায় ষোড়শী থেকে ষাট বছর বয়সি বঙ্গললনাদের।
তবে এ বারের বিজ্ঞাপন জগতে সাড়া ফেলেছে একটি সিমেন্ট কোম্পানির মহিষাসুর পালা। অ্যানিমেশনের হাত ধরে বাহুবলী থেকে হানি সিংহ, ওলা থেকে অ্যাপস— অর্থাত্ যা নিয়ে মেতে থাকে জেন-ওয়াই, সেই সবেরই আভাস পাওয়া যাবে দেবীর মহিষাসুর বধে।
‘‘তবে টিভির বিজ্ঞাপনের জগতে কিছুটা হলেও ভাটা এসেছে,’’ বলছিলেন বি়জ্ঞাপন সংস্থায় কর্মরত আন্তন মুখোপাধ্যায়। তার পিছনে অনেক কারণ থাকলেও একটি বড় কারণ, বিজ্ঞাপন বাজেটের সিংহভাগ এখন খরচা হয় পুজো-মণ্ডপের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে। টিভি বা প্রিন্টের থেকেও বিজ্ঞাপনী সংস্থার ঝোঁক পুজোর হোর্ডিং আর স্টলের দিকে বেশি। ই-কমার্স আর শপিং মলের সেলের দৌরাত্ম্যে বাঙালির পুজোর বাজারের সময়ও বদলে গিয়েছে। ‘‘আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের চাহিদাও বেড়েছে,’’ ফলে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলিও প্রতিযোগিতার মুখে, বললেন বিজ্ঞাপন কর্মী রামিজ আহমেদ।
তবে অডিও-ভিশুয়াল প্রচার মাধ্যমের যে জৌলুস, যে প্রভাব গ্রাহকদের উপর পড়ে, তার কিন্তু কোনও বিকল্প নেই। আর বিজ্ঞাপন তো শুধুই টাকা-পয়সার অঙ্ক নয়, এর মধ্যেও আছে সংস্কৃতি-মনস্কতা, নতুন কিছু করার ইচ্ছা। তাই বিজ্ঞাপনে মুখ ঢাকলেও ‘পুজোয় উঠুক তুফানি চুমুক।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy