Advertisement
E-Paper

‘‘সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনের পর সে ভাবে আন্তর্জাতিক ফিল্মোৎসবে ভারতীয় ছবি নেই’’

হলিউডে বানানো একটা অ্যাডভেঞ্চার ছবি আর ‘চাঁদের পাহাড়’ একই ঘারানার। পার্থক্য শুধু বাজেটের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২১ ১৯:০৪
আঞ্চলিক সিনেমা নিয়ে লড়াই করে চলেছেন শপথ দাস।

আঞ্চলিক সিনেমা নিয়ে লড়াই করে চলেছেন শপথ দাস।

জনপ্রিয়তায় বড়পর্দাকে টেক্কা দিচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। অন্য ধারার ছবির বহু নির্মাতারা উঠে আসছেন এই অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের হাত ধরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এতে সিনেমার লাভ কতটা হবে? ‘আর্ট হাউজ এশিয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর উদ্যোক্তা শপথ দাস কথা বললেন আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে।

প্রশ্ন: ‘আর্ট হাউজ এশিয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ শুরু করেছিলেন কেন?

আমার মনে হয়, ‘আর্ট ফিল্ম’ একটা বিশেষ ঘরানা। সেটা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। কর্মাশিয়াল ছবির মধ্যে থেকেই দুটো ঘরানাকে তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে। একটা নাকি ‘ভাল’ ছবি, অন্যটা ‘খারাপ’ ছবি। ‘খারাপ’ ছবি মানে, যা বেশি জনপ্রিয়। খুব বেশি মাথা খাটাতে হয় না। বিপুল অর্থব্যয় করে বানানো ছবি। আর এই তথাকথিত ‘ভাল’ ছবি মানে, যা একটু কম জনপ্রিয়, এবং কিছুটা পরীক্ষামূলক। কিন্তু দুটোই মূল ধারার থেকে আলাদা কিছু নয়। এবং এই দুটো ধারার সংজ্ঞাই নির্ধারিত করে দিচ্ছে আমেরিকান চলচ্চিত্র মহল।

প্রশ্ন: আর্ট ফিল্ম কোথায় আলাদা?

ধরুন, অস্কারে আগে আমেরিকাতেও প্রচুর জনপ্রিয় এবং কিছুটা পরীক্ষামূলক ছবি মুক্তির ভিড় দেখা যায়। আমেরিকার সংজ্ঞায়িত ‘ভাল’ এবং ‘খারাপ’— এই ‘বাইনারি’টার বাইরেও যে পুরোদস্তুর পরীক্ষামূলক ছবি থাকতে পারে, এবং যা নিজের মতো করেও জনপ্রিয় হতে পারে, এমন ছবিকেই ‘আর্টি ফিল্ম’ হিসেবে দেখছি। সেই ছবি এমন হবে, যাতে প্রাদেশিক, আঞ্চলিক বা স্থানীয় ছোঁয়া লেগে থাকবে। এমন ছবিকে তুলে ধরা বা তাকে পরিবেশন করার একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করাই আমাদের এই প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য।

প্রশ্ন: কিন্তু ওটিটি বা অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম তো এখন ছোট ছোট বাজেটের ছবিকে সুযোগ দিচ্ছে।

ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোও তো হলিউডেরই বর্ধিত সংস্করণ। হলিউডের বাইরের হলিউড। কেউ কি বলতে পারেন, ভবিষ্যতে ওখানকার প্রযোজকরাই সব দেশের আঞ্চলিক ছবি বা কনটেন্ট তৈরির দায়িত্ব নিয়ে নেবেন না? ওঁদের হাতে যা অর্থ রয়েছে, তাতে ওঁরা সহজেই গ্রামবাংলার একটা সেট বানিয়ে নিতে পারেন। নিজেদের মতো গল্প লিখতে পারেন। এবং প্রয়োজনে ওখানকার পরিচালক তো বটেই, দরকার হলে এখান থেকে পরিচালক নিয়ে গিয়ে আমেরিকায় বাংলা ছবি বানাতে পারেন। সেই ছবির মধ্যে বাংলার নিজস্বতা কতটা থাকবে? সেটা তো আমেরিকার চোখে দেখা বাংলার গল্প। তা এখনকার দর্শক ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেখতে বাধ্য হবেন। আর পেটের দায়েই এখানকার পরিচালক, নির্মাতারও বাধ্য হবেন সেই ছবির কাজ করতে। আঞ্চলিক গল্পগুলো ক্রমে ক্রমে হারিয়ে যাবে ওই বিপুল পরিমাণ অর্থের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে।

প্রশ্ন: অর্থ তারতম্যটাই কি বড় পার্থক্য তৈরি করে দিচ্ছে?

অবশ্যই। ধরুন, হলিউডে বানানো একটা অ্যাডভেঞ্চার ছবি আর এখানে বানানো ‘চাঁদের পাহাড়’ একই ঘারানার মধ্যে পড়ে। কিন্তু দুটোর মধ্যে কোনও প্রতিযোগিতাই চলতে পারে না, তার সবচেয়ে বড় কারণ দুটো ছবির বাজেটের ফারাক। ‘চাঁদের পাহাড়’-এর মধ্যেও যে আঞ্চলিকতা, বাঙালিয়ানার ছোঁয়া আছে, তা হারিয়ে যাবে একদিন হলিউড যদি এই বাংলা ছবিটাও কী ভাবে বানানো হবে, তা নির্ধারণ করতে শুরু করে। আর পয়সার জোরে ওরা সেটা একদিন করতেই পারে।

প্রশ্ন: কী ভাবে এই প্রতিযোগিতার সামনে লড়বেন ভাবছেন?

আঞ্চলিক ছবিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এটাই একমাত্র রাস্তা। এই ছবিকে সাধারণ মানুষের কাছে আরও বেশি করে পৌঁছে দিতে হবে। তার জন্য সবচেয়ে আগে জোর দিতে হবে ছবির পরিবেশনায়। ডিসট্রিবিউশন ঠিক করে হলে এই আঞ্চলিক ছবিও পৌঁছবে মানুষের কাছে। তাঁরা দেখবেন। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসবে না এই ধরনের ছবির। সেই কারণেই আমরা শুধু চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করি না। একই সঙ্গে এ সব নিয়ে ওয়ার্কশপও করি। নিজেরা শিখি, অন্যদের শেখাই কী ভাবে টিকিয়ে রাখতে হবে আঞ্চলিক সিনেমা। কারণ অর্থের লড়াইয়ে পেরে উঠব না। আমাদের কাজ করতে হবে আন্তরিকতা দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে এবং ঐকান্তিক ভাবে।

প্রশ্ন: সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনের পর বাংলা ছবির বিদেশের মাটিতে গ্রহণযোগ্যতা কতটা? কতটাই বা বর্তমান বাংলা ছবি সম্পর্কে ওখানকার মানুষ জানেন?

শুধু বাংলা ছবি কেন, ভারতের ছবিই তো সে ভাবে বিদেশের বড় ফেস্টিভ্যালের প্রতিযোগিতা বিভাগে যাচ্ছে না। অনেক উৎসবেই ভারতীয় ছবি দেখানো হয়। কিন্তু মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে ভারতীয় ছবি যেতে পারছে না। তার বড় কারণ সেই ডিসট্রিবিউশনের সমস্যা। বাংলায় এখনও ভাল ছবি হচ্ছে। কিন্তু মানুষের কাছে পৌঁছতে পারছে না সেগুলো। ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে এখানে ভিত্তি করলে, তারাও নিজেদের মতো করে গল্পটা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।

প্রশ্ন: পড়াশোনা করেছেন বিদেশে। বেশির ভাগ সময় থাকেন বিদেশে। অথচ বাংলা ছবি, ভারতীয় ছবি নিয়ে কাজ করেন। এখানকার নির্মাতাদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন?

এখানে পরিচালকদের সঙ্গে অবশ্যই যোগাযোগ আছে। অনুরাগ কাশ্যপের সঙ্গে ছবি নিয়ে যোগাযোগ আছে। মানসমুকুল পাল, প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য, বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছবির সূত্রে অবশ্যই খুব ভাল সম্পর্ক। ওঁরা আমাদের ফেস্টিভ্যাল, ওয়ার্কশপে বহু সাহায্যও করেন। বিকল্প ছবির মুভমেন্ট যদি করতে হয়, সবাই মিলেই করতে হবে। সেই হিসেবে ওঁরা সব সময় পাশে থেকেছেন।

প্রশ্ন: এখানে কেউ ‘ইন্টালেকচুয়াল’ বা ‘আঁতেল’ বলে দাগিয়ে দেন না?

না, তেমন হয়নি কখনও। কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, এ সব করে কী হবে! অনেকেই সংশয়ে ছিলেন, এতে আদৌ লাভ হবে কিনা, তা নিয়ে। অনেকেই বলতেন, অন্য কাজ আগে করো, তারপর সিনেমা বাঁচানোর লড়াইটা লড়বে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরাও আমার পাশেই এসে দাঁড়িয়েছেন। তাই আমার কখনও নিজেকে একা বা দলছাড়া বলে মনে হয়নি।

আরও পড়ুন: বিয়ে ভেঙে গিয়েছে, শ্রীলেখা জানতে চান তাঁকে আর কেউ বিয়ে করবেন কি না

আরও পড়ুন: গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত টেলিপাড়ার শিশুশিল্পী সহ পরিবার

shapath das international film festival Satyajit Ray mrinal sen
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy