Advertisement
E-Paper

কিছু না জেনেই শর্মিলার সঙ্গে নেচেছিলেন যুবক অমিতাভ

কলকাতার মানুষ তাঁকে জামাইবাবু বলে ডাকতেই স্বচ্ছন্দ। বাবুমশাই বহুবারই বলেছেন কলকাতার সঙ্গে তাঁর নাড়ির টান। ইদানীং প্রায়ই আসেন কখনও শ্যুটিংয়ে, কখনও চলচ্চিত্র উৎসবে। বুধবার সন্ধেয় শহরের পাঁচতারা হোটেলে অমিতাভ বচ্চন ফের অনর্গল তাঁর যৌবনের কলকাতার স্মৃতিতে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে ছবি তোলা থেকে ময়দানের ফুটবল, উৎপল দত্তর নাটক, সবই জড়িয়ে থাকল তাঁর স্মৃতিচারণে।

সৌভিক চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:৪৮
‘অমিতাক্ষর’। অনুরাগীদের ডাকে সাড়া দিয়ে মঞ্চে অমিতাভ বচ্চন। বুধবার শহরের একটি অনুষ্ঠানে শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে। রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।

‘অমিতাক্ষর’। অনুরাগীদের ডাকে সাড়া দিয়ে মঞ্চে অমিতাভ বচ্চন। বুধবার শহরের একটি অনুষ্ঠানে শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে। রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।

কলকাতার মানুষ তাঁকে জামাইবাবু বলে ডাকতেই স্বচ্ছন্দ। বাবুমশাই বহুবারই বলেছেন কলকাতার সঙ্গে তাঁর নাড়ির টান। ইদানীং প্রায়ই আসেন কখনও শ্যুটিংয়ে, কখনও চলচ্চিত্র উৎসবে। বুধবার সন্ধেয় শহরের পাঁচতারা হোটেলে অমিতাভ বচ্চন ফের অনর্গল তাঁর যৌবনের কলকাতার স্মৃতিতে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে ছবি তোলা থেকে ময়দানের ফুটবল, উৎপল দত্তর নাটক, সবই জড়িয়ে থাকল তাঁর স্মৃতিচারণে।

দ্য ৪২ ফাউন্ডেশন এবং অল বেঙ্গল অমিতাভ বচ্চন ফ্যানস অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে এই ‘অমিতাক্ষর’-এ অমিতাভের সঙ্গে আলাপচারিতায় মেতে উঠেছিলেন শর্মিলা ঠাকুর, অপর্ণা সেন, সন্দীপ রায় এবং সুজিত সরকার।

অমিতাভ জানালেন, এলাহাবাদ থেকে সামান্য কিছু টাকা হাতে নিয়ে এসে পড়েছিলেন কলকাতায়। শুরু করেছিলেন চাকরি। মাইনে চারশো সত্তর টাকা। থাকতেন টালিগঞ্জের বাবার এক বন্ধুর বাড়িতে। ট্রাম ধরে এসপ্ল্যানেড যেতেন। পোশাক বলতে ছিল সবেধন নীলমণি জ্যাকেট-ট্রাউজার এবং একটি টাই। বর্ষাকালে জল জমত ধর্মতলায়। প্যান্ট গুটিয়ে নিয়ে হাঁটতে হতো। সঙ্গে দুশ্চিন্তা, খুব বেশি কুঁচকে যেন না যায়! পরে অফিসের কাছাকাছি থাকবেন বলে উঠে এলেন রাসেল স্ট্রিটের এক গেস্ট হাউসে। দুপুরের খাবার অফিসেই মিলত নিখরচায়। রাতে আদ্দেক দিনই ফুচকা খেয়ে কাটত।

সওদাগরি আপিসের কাজে ঘুরতে হয়েছিল আসানসোল, ধানবাদের কয়লাখনি এলাকায়। খনিশ্রমিকদের কষ্ট দেখে এক অদ্ভুত অবসাদ গ্রাস করেছিল তাঁকে। তখনই কলকাতায় দেখেছিলেন উৎপল দত্তের নাটক ‘অঙ্গার’। সেই অভিজ্ঞতা আজও ভীষণ রকম টাটকা। তাপস সেনের আলোয় মঞ্চের ওপর খনি শ্রমিকদের আর্তনাদ আজও যেন কানে বাজে। এই সব অভিজ্ঞতাই পরে কাজে লেগেছিল ‘কালাপাথর’ ছবি করার সময়। নাটক পড়ার অভ্যাসেও শান পড়ে এই কলকাতাতেই। হাতের কাছেই ছিল ব্রিটিশ কাউন্সিলের লাইব্রেরি। আর বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ করতে হলে গন্তব্য ছিল পার্ক স্ট্রিটের সাবেক ব্লু-ফক্স। সেখানে এক বার আচমকাই শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে নাচার সুযোগ হয়েছিল। যুবক অমিতাভ তখনও বুঝতেও পারেননি যে, উনি শর্মিলা। পরে বন্ধুরা বলার পরে মাথায় হাত! তখন তো জানা ছিল না আগামী দিনে ‘চুপকে চুপকে’, ‘ফরার’, ‘দেশপ্রেমী’ বা ‘বিরুধ’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করতে হবে এই শর্মিলার সঙ্গেই!

জীবনের প্রথম পোর্টফোলিও তৈরির জন্য ছবি তুলে দিয়েছিলেন ভাই অজিতাভ। ছবি তোলা হয় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে একটা গাছের নীচে। মেমোরিয়ালের ভিতরে তখন ঢোকা হয়নি। অমিতাভ জানালেন, কয়েক দিন আগে ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের নাচের অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে প্রথম বার ভিতরে ঢুকলেন। হেসে ফেলে বললেন, সে দিনও মনে মনে খুঁজছিলেন ওই গাছটা। বিজ্ঞাপনে ভয়েসওভার করার কাজ জুটল কিছু দিন পরে। কাপড় কাচা সাবানের বিজ্ঞাপন করে পাওয়া গেল পঞ্চাশ টাকা। সেই টেপ সম্বল করেই চলে গিয়েছিলেন মৃণাল সেনের কাছে। মুম্বইয়ের ফিল্মিস্তান স্টুডিওয় ওই টেপ শুনেই মৃণাল তাঁকে ‘ভুবন সোম’-এ ভয়েসওভারের কাজ দেন।

খেদ থেকে গিয়েছে, ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’-র ভয়েসওভার ছাড়া সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ করা হয়নি। যদিও সত্যজিতের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছে বহু। সেই ঘর এবং আড্ডার বর্ণনা দিতে গিয়ে আবার হেসে ফেললেন অমিতাভ। হেসে ফেললেন সন্দীপ রায়ও। অমিতাভ বলছিলেন, সত্যজিতের ঘরটা ছিল পৃথিবীর যে কোনও গৃহিণীর কাছে দুঃস্বপ্ন। কাগজ আর বইপত্রের ভিড়ে সবার খেই হারিয়ে যেত। ‘‘অথচ হাত বাড়িয়ে ঠিক জায়গা থেকে ঠিক বইটা দিব্যি খুঁজে বের করে ফেলতেন মানিকদা!’’ অমিতাভ বলে চলেন, ‘‘আজও যখন জয়া (বচ্চন) আমার অগোছালো অফিসঘর নিয়ে খোঁচায়, আমি বলি মানিকদার কথা ভাবো!’’

এ ভাবেই প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে যেতে যেতে অমিতাভ ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছিলেন তাঁর স্মৃতির কলকাতাকে। অনুষ্ঠানের একেবারে শেষ লগ্নে দর্শকাসন থেকে উঠে দাঁড়ালেন এক বৃদ্ধা। তাঁকে দেখে চমকে উঠলেন তিনি। মঞ্চ থেকে নেমে জড়িয়ে ধরলেন তাঁকে। দর্শকদের সঙ্গে পরিচয় করালেন, ওই বৃদ্ধা শ্রীমতি প্রাণপ্রসাদ।

১৯৬৮ সালে জীবনের প্রথম চাকরিটি শুরু করেছিলেন অমিতাভ। তখন শ্রী প্রাণপ্রসাদ ছিলেন ওই কোম্পানির ডিরেক্টর।

আবেগের মুহূর্ত বটে! মধ্য সত্তর ছুঁই ছুঁই তরুণ এ বার ধরা গলায় বলতে শুরু করলেন, ‘‘কভি কভি মেরে দিল মে খেয়াল আতা হ্যায়...।’’ কলকাতা উঠে দাঁড়িয়ে কুর্নিশ জানাল তার নিকট-আত্মীয়কে।

amitabh bachchan kolkata souvik chakraborty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy