দোলন রায়। ছবি: সুদীপ্ত চন্দ
দক্ষিণ কলকাতার একটি আবাসনের আঠারো তলার উপর দোলন রায়ের ডুপ্লেক্সের বৈঠকখানার দেওয়াল জুড়ে তাঁর বিভিন্ন সময়ের ছবি। ছবির দিকে চোখ যেতেই বললেন, ‘‘এইগুলো সব আমার ভক্তদের কাণ্ড। আমি কিন্তু কিছুই করি না ফ্যান ক্লাব টিকিয়ে রাখার জন্য।’’ না চাইতেই এত ভালবাসা পাচ্ছেন, আপনি তো লাকি। ‘‘একদম না, আমি বোকা। মার্কেটিংটাই তো করতে পারলাম না। ১৯৯৭-এ ‘সংঘাত’-এর জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। ১৯৯৬ ও ১৯৯৮-এ বাংলা ছবি থেকে তিন জন অভিনেত্রী জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। তাঁদের নিয়ে প্রচুর লেখালিখিও হয়েছে। আমাকে নিয়ে একটা লাইনও না!’’
নাটক থেকেই তো অভিনয় জীবন শুরু, কিন্তু এখন মঞ্চে নিরুদ্দেশ দোলন রায়। ‘‘নাটক করতে বড্ড মন চায়। কিন্তু সময় নেই। যেমন-তেমন করে নাটক করব না।’’ একসঙ্গে একাধিক সিরিয়াল করার কি এখন আপনার খুব প্রয়োজন? ‘‘আর্থিক কারণে ২০২০ পর্যন্ত করে যেতে হবে। তার পর যা মন চাইবে তাই করব। এত পরিশ্রম করতে পারি শুধুমাত্র ভাল পারিশ্রমিক পাই বলে নয়, আত্মতুষ্টিও দরকার। যেটা পাই ভাল নাটক, সিনেমা থেকে। গত বছর বাবা চলে গেলেন। এই বিষণ্ণতার মধ্যেও আমার পরম পাওয়া কৌশিকের (গঙ্গোপাধ্যায়) ‘দৃষ্টিকোণ’। ওই যে আত্মতুষ্টির কথা বলছিলাম, পেয়েছি এই ছবিটা করে। ভাল লেগেছে ‘হ্যাপি বার্থ ডে’-তে বাদশা মৈত্র ও লকেটের সঙ্গে কাজ করে। বছরে একটা শিবুর ছবি (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়), একটা অরিন্দমের (শীল) ছবি করতে পারলে মন্দ হয় না!’’ মুচকি হেসে জানালেন তিনি।
দোলন রায়কে তো সচরাচর নেগেটিভ চরিত্রে দেখা যায় না, তা হলে ‘ভজগোবিন্দ’-তে নেগেটিভ চরিত্রটি কি একঘেয়েমি কাটানোর জন্য? ‘‘স্নেহাশিসদাকে বলেছিলাম, নেগেটিভ চরিত্র করব। আমাকে কেউ নেগেটিভে ভাবতে চায় না। যদিও এটা তো আমার প্রথম নেগেটিভ নয়। ‘মা’-এ করে খুব ভাল ফিডব্যাকও পেয়েছিলাম!’’ ভাল! কিন্তু শোনা যায় তো অন্য কথা। কথা শুনে অভিনেত্রী এতটাই জোরে হাসলেন যে, তাঁর মা-ও চলে এলেন। ‘‘আমি তো শুটিংয়ে চলে যেতাম। ভুগতে হয়েছে মাকে। ‘মা’য়ে একটা দৃশ্য ছিল, অপার (অপরাজিতা আঢ্য) পুজোর ফুল ছিঁড়ে নষ্ট করছি। সেই সময় একদিন বাজারে ফুল কিনতে গিয়েছি। কয়েক জন বয়স্ক মহিলা আমাকে দেখে মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফুলওয়ালাকে প্রায় খেঁকিয়ে বললেন, ‘আগে ওঁকে বিদায় করুন তো!’ লক্ষ্মীপুজোর দিন পুরোহিত আমাকে জিজ্ঞেস করেছিেলন, ‘আপনি এই সব বদমাইশি কবে বন্ধ করবেন বলুন তো?’ শেষে মা আর না থাকতে না পেরে বলেছিলেন, ‘কবে সিরিয়ালটা শেষ হবে বল তো?’’’ এটাও তো আত্মতুষ্টি! ‘‘অবশ্যই! তবে আবার উৎপাত শুরু হল বলে,’’ একসঙ্গে হেসে উঠলেন মা ও মেয়ে।
দর্শকের ভাল-মন্দ রিঅ্যাকশন হজম করার মতো বুকের পাটা অনেকেরই আছে, কিন্তু ২১ বছর আগে ২৫ বছরের বড় প্রেমিকের (দীপঙ্কর দে) সঙ্গে লিভ ইন করার সাহস পেলেন কোথা থেকে? ‘‘আমরা লিভ ইন করিনি। বিয়ে করেই একসঙ্গে থেকেছি। আর সমস্যা? আমি যা পাপারাৎজির মুখোমুখি হয়েছি, তা বোধ হয় কোনও প্রথম সারির নায়িকা হননি। গাড়ির কাচ ইট মেরে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। তখন ভিতরে আমি ছিলাম।’’ আপনার মতো সুন্দরী সব হাতছানি এড়িয়ে এই ইন্ডাস্ট্রিতে ২১ বছর বিয়ে টিকিয়ে রাখলেন! রহস্যটা কী? ‘‘সততা। পরস্পরের প্রতি নির্ভরতা ও বিশ্বাস। এই যে বলছিলাম না, আমি মার্কেটিং জানি না। এত বড় অভিনেতা হয়েও উনি কিন্তু এ ব্যাপারে কোনও পরামর্শ দিতেন না। শুধু বলতেন, ভাল করে কাজ করবে। সে সময় যে বন্ধুরা ছিল, অরিন্দম (শীল), কৌশিক (সেন), ব্রাত্য (বসু)... ওরাও কিছু শেখায়নি আমাকে।’’ ছিল কেন বলছেন? ‘‘এখন যোগাযোগটা ক্ষীণ! এই মানুষগুলোর স্ট্রাগল পিরিয়ডের সঙ্গী ছিলাম আমি। কৌশিকের ছেলে ‘ঋদ্ধি’র নামটা আমারই রাখা।’’
সাক্ষাৎকারের মাঝে মন খারাপের হাওয়া ঢুকলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হচ্ছিল না অভিনেত্রীর প্রাণখোলা হাসিতে। অভিনয়ের বাইরে তিনি ভালবাসেন রান্না করতে। মায়ের সঙ্গে গল্প করতে। একটু অবসর পেলে মজে থাকেন বাগান নিয়ে বা বই নিয়ে। লেখেন ভ্রমণকাহিনি, প্রবন্ধও। সকালে আনন্দবাজার পত্রিকার ‘শব্দজব্দ’ না করতে পারলে তাঁর ভাত হজম হয় না। এখন অবশ্য তিনি ব্যস্ত স্বামীর সঙ্গে বার্ষিক ভ্রমণের পরিকল্পনা নিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy