Advertisement
E-Paper

‘রবীন্দ্রসঙ্গীতের জগৎ আজ অনেকটাই কলুষিত’

কলকাতা বইমেলায় গান গাইতে এসে সদ্য এই কথাটা বলে গেলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী অদিতি মহসিন। শুধুমাত্র এক্সপেরিমেন্টের মধ্যে দিয়েই কেন রবীন্দ্রনাথকে বুঝতে হবে? প্রশ্ন তাঁর। রবিবারের সকাল। কলকাতায় তাঁর হোটেলের ঘরে রানি আর নীল পাড়ের শাড়ি, হাল্কা গয়না আর ছোট্ট টিপ পরে তিনি সামনে দাঁড়ালেন। মঞ্চ আর বাস্তবের কোনও ফারাক নেই মনে হল। শিল্পীর সঙ্গে কথা বললেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।কলকাতা বইমেলায় গান গাইতে এসে সদ্য এই কথাটা বলে গেলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী অদিতি মহসিন। শুধুমাত্র এক্সপেরিমেন্টের মধ্যে দিয়েই কেন রবীন্দ্রনাথকে বুঝতে হবে? প্রশ্ন তাঁর। রবিবারের সকাল। কলকাতায় তাঁর হোটেলের ঘরে রানি আর নীল পাড়ের শাড়ি, হাল্কা গয়না আর ছোট্ট টিপ পরে তিনি সামনে দাঁড়ালেন। মঞ্চ আর বাস্তবের কোনও ফারাক নেই মনে হল। শিল্পীর সঙ্গে কথা বললেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।

অদিতি মহসিন।

অদিতি মহসিন।

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৮:১৭
Share
Save

• অদিতি মহসিন মানেই সুন্দর সাজ। রবীন্দ্রনাথের গান গাওয়ার জন্য এটা কতটা জরুরি?
আমার মনে হয় না রবীন্দ্রনাথের গান গাওয়ার ক্ষেত্রে সুন্দর দেখাটা জরুরি। আসলে গানের জগৎটা ইদানীং অকারণে বড্ড বেশি বদলে যাচ্ছে।

• আপনি তা হলে বদলের বিরোধী?
দেখুন আমি গান গাওয়ার ক্ষেত্রে কোথাও কোনও কিছুর বিরোধিতা করছি না। তবে গানের জগতে আমি মনে করি ঝাড়াই-বাছাই জরুরি। গান গাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তত রূপের চেয়ে গান গাওয়ার কদর হওয়া চাই। এটা বলছি, তার সঙ্গে সঙ্গে এটাও দেখছি, কেউ খুব সুন্দর গান করেন, সে অর্থে দেখতে তেমন ভাল না, ও-মা তাঁকে টেলিভিশনে কম ডাকা হচ্ছে! উল্টো দিকে এক জন বেশ অব টিউন গাইছেন তিনি খুবই সুন্দরী, তাঁকে বহু অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।

গুণটাই তো আসল পরিচয়। কোথায় গেল সেই মূল্যবোধ? এখন অবশ্য ফেসবুকে রোজ ছবি দিয়ে, অমুককে ধরে, ক্লাব কালচার করে অনেক...অনেক অনুষ্ঠান পাওয়া যায়। কিন্তু আমি আজও বিশ্বাস করি, এ সবের কোনও স্থায়িত্ব নেই। বলুন তো, রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে এত পরীক্ষা হচ্ছে, এর সঙ্গে জুড়ে, ওর সঙ্গে জুড়ে যা তৈরি হচ্ছে, তার মেয়াদই বা কত দিনের? রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে এত কিছু করার দরকার নেই। ওই জগৎটা যেমন আছে তেমন থাক না!

আরও পড়ুন, ধারাবাহিক রূপে ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’

• শুনেছি এখন মানুষ অন্য কিছু চায়। যেমন আছে তেমন রেখে দিলে তো...
আমি তো সারা বিশ্বে রবীন্দ্রনাথের গানের অনুষ্ঠান করছি। কই, কেউ তো বলেননি, আপনি নিজেকে বদলে অন্য রকম করে গান করুন! বরং আমি হঠাৎ এক্সপেরিমেন্টের নামে অন্য কিছু করলে লোকে আমার গান শুনবে না। তাই বলে কী গবেষণা হবে না? নিশ্চয়ই হবে। কিন্তু, সারা ক্ষণ অন্য রকম করার জন্য গান করা— এটা কেন করতে হবে?

• মানে আপনি বলতে চাইছেন আপনি কোনও এক্সপেরিমেন্টের পথে যাবেন না।
না। আমার ব্যক্তিগত ভাবে প্রয়োজন নেই। কিছু দিন আগে কলামন্দিরে আমার একক ছিল। প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ ছিল কিন্তু! টিকিট কেটে মানুষ গান শুনতেই এসেছিলেন। শুনুন, আর এক বছর বাদেই আমার সঙ্গীত জীবনের কুড়ি বছর হবে। রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রথাগত পরিবেশনের এক বিশাল শ্রোতা কিন্তু পৃথিবী জুড়ে আছে। যারা গানটা ঠিক যে ভাবে শুনে আসছেন, সে ভাবেই শুনতে চান।

• এই শ্রোতার মধ্যে কি নতুন প্রজন্ম আছে?
বাংলাদেশে তো আছেই। আবার কলকাতাতেও আছে। কত অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে আমার কাছে গান শেখার জন্য বলে। কলকাতার এককেও ছোট ছেলেমেয়েদের দেখেছি গান শুনতে। কলকাতার দক্ষিণী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তো অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরাই গান শিখতে আসছে।

• আপনি গান শেখান না কেন?
আমি এক জন পারফর্মার। গান শেখানোর কথা ভাবিনি।

• আপনি গান শেখান না কেন?
আমি এক জন পারফর্মার। গান শেখানোর কথা ভাবিনি।

• নিজে ভেবেছিলেন সঙ্গীতশিল্পী হবেন?
নাহ্‌। তবে ঢাকা থেকে শান্তিনিকেতন আসাটা স্বপ্নের মতো ছিল। রবীন্দ্রনাথের জায়গায় গান শেখা। মোহরদি মানে কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা...খুব মধুর সেই সব সময়।

• কবে প্রথম দেখেছিলেন কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে?
আমি যখন সঙ্গীত ভবনে এলাম, মোহরদি তখন অসুস্থ। বাড়িতে ক্লাস নেন। অনেকগুলো বছর কাটিয়ে সিনিয়র হলে, তবে সেই ক্লাসে পৌঁছনো যেত। আমি ভাবতাম, কে জানে কবে দেখা হবে? যাই হোক দোলে এক বার ‘তাসের দেশ’ হল আর আমি জুনিয়র হয়েও একক গান গাইবার সুযোগ পেলাম। আর কী! সোজা মোহরদির বাড়ি। তার পর থেকে যা স্নেহ পেয়েছি! আর বাংলাদেশের মানুষকে মোহরদি খুব যত্ন করে গান শেখাতেন। বলতেন, তোমরা কত দূর থেকে রবীন্দ্রনাথের গান শিখবে বলে চলে আসো!

• প্রায় কুড়ি বছরের এই জার্নিতে কতটা স্ট্রাগল করতে হয়েছে?
সত্যি কথা বলতে, আমায় সে ভাবে গান গাওয়ার জন্য কারও কাছে কোনও দিন হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে হয়নি। নয় নয় করে অনেক সিডি-ও হল। অনুষ্ঠানও করে চলেছি। তবে অনেক সিডি, অনেক নাম, গান ঘিরে প্রচুর চাহিদা মনের মধ্যে রাখিনি কোনও দিন।

আরও পড়ুন, ‘আমাকে নিয়ে গসিপ হোক, সেটা চাই না’

• চাহিদা থাকা খারাপ?
দেখুন আমরা এখানে খারাপ-ভালর বিচার করছি না। আমি আমার অভিজ্ঞতার কথা বলছি।

• আজকের গানের জগৎ নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কী বলে?
এক সময় অঙ্কন হোক, গান হোক— শিল্পীর গুণের কদর করার একটা জায়গা ছিল। কেউ ভাল ছবি আঁকলে, গান গাইলে মানুষ স্বাচ্ছন্দে সেটা বলতে পারত। সমাজের মধ্যে আপনা থেকেই ভাল কিছুকে প্রমোট করার একটা প্রবণতা ছিল। সে কারণেই আমরা শ্রোতাদের সামনে এসেছি। এখন সে সব নেই। আর গান শেখার জায়গাটাও ভয়ঙ্কর। যে মুখ পরিচিত, মিডিয়ায় বার বার দেখা যায়, যিনি প্রচুর অনুষ্ঠানের সুযোগ দেবেন— তিনি শিক্ষক। কী আর বলব? হতাশ লাগে মাঝে মাঝে। এই নিয়েই আছি। চেনা চারপাশ থেকে খানিক দূরে গানের কাছে নিজেকে নিবেদন করেই জীবন কাটাতে চাই।

বলিউড-টলিউড-টেলিউডের হিট খবর জানতে চান? সাপ্তাহিক বিনোদন সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

Aditi Mohsin Celebrities Video
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy