Advertisement
E-Paper

অমিতাভ এবং

বাংলার নায়ক কী করে বলিউডের বাজি জিতবে? তিনি কোচ হলে কী টিপস দিতেন? হলিউড-জয় না করা নিয়ে গভীর হতাশা আছে? গৌতম ভট্টাচার্য-র সামনে আরও খোলামেলা অমিতাভ বচ্চনবাংলার নায়ক কী করে বলিউডের বাজি জিতবে? তিনি কোচ হলে কী টিপস দিতেন? হলিউড-জয় না করা নিয়ে গভীর হতাশা আছে? গৌতম ভট্টাচার্য-র সামনে আরও খোলামেলা অমিতাভ বচ্চন

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:২১

আপনাকে কী কী জিজ্ঞেস করব, প্রশ্নপত্র তৈরির আগে তিনজনের কাছে একটা করে স্পেসিমেন প্রশ্ন চেয়েছিলাম। এরা হলে অমিতাভ বচ্চনের কাছে প্রথমেই কী জানতে চাইত?

হুঁ...

একটি টিনএজ মেয়ে। একজন মধ্যবয়সি ব্যবসায়ী। একজন আজ সঙ্গে-থাকা ফোটোগ্রাফার সাত্যকি। আপনি শুনলে খুব অবাক হয়ে যাবেন যে, তিনজনের একটাই কমন প্রশ্ন! কী করে এই বয়সে ফাটিয়ে কাজ করছেন?

হাঃ হাঃ। উত্তর দিই কী করে? সচিনের মতো কোনও দর্শন নেই আগেই বলছিলাম। কোনও মেকানিক্যাল মন্ত্রও নেই। পেশার যা চাহিদা আমি চেষ্টা করি সেটাই সরবরাহ করতে।

জাস্ট এইটুকু?

হ্যাঁ। আর আমার বেশ অবাক লাগে এই প্রশ্নটা ক্রমাগত আমায় করা হয় কেন? আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করা হতে থাকে, আপনার কাজ করতে করতে ক্লান্ত লাগে না? আমি তখন পাল্টা বলি, কোনও বয়স্ক সার্জনকে কি অপারেশন থিয়েটারে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি টায়ার্ড ফিল করছেন নাকি? সত্যি যদি লম্বা অপারেশনের মধ্যে তিনি ক্লান্ত বোধ করতেন, আর এই সব কথা শুনে অপারেশন থামিয়ে দিতেন, তা হলে তো কেলেঙ্কারির একশেষ!

আপনাকে প্রশ্নটা বোধহয় এ জন্য করা হয় যে, বলিউডে সত্তরের বেশি বয়স হলেই নায়করা মোটামুটি অবসরে চলে যান। দিলীপকুমার থেকে ধর্মেন্দ্র। সেখানে আপনি ব্যতিক্রম বলে ভুরুগুলো উপরে উঠছে।

এর উত্তর তো একমাত্র সংশ্লিষ্ট মানুষেরা দিতে পারবেন। ওঁদের নিশ্চয়ই ব্যক্তিগত কারণ ছিল অবসর নেওয়ার।

ভুল বুঝবেন না যে, আপনি থেকে যাওয়ার জন্য কেউ অভিযোগ করছে বলে। ফ্যানরা শুধু চমৎকৃত হচ্ছে কাজের জন্য এখনও কী অদ্ভুত স্পিরিটে আপনি হিল্লিদিল্লি ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

ফ্যানরা যে এখনও আমার সঙ্গে রয়েছে, তার জন্য আমি গভীর কৃতজ্ঞ। আই অ্যাম ভেরি ভেরি হ্যাপি।

মিস্টার বচ্চন, আপনি টানা এত দিন এখানে কাটিয়ে যাওয়ার মধ্যে টালিগঞ্জের একটা বহুকালীন আক্ষেপ শুনেছেন কি না জানি না।

কী আক্ষেপ?

আক্ষেপ হল এই যে, বলিউডে বাঙালি নায়ক কখনও জায়গা করতে পারেনি। ছোট একটা সময়ের জন্য মিঠুন বাদ দিলে বাঙালি নায়কের সেই অর্থে কোনও সর্বভারতীয় জায়গাই নেই।

হুম।

আপনি মুম্বইয়ের সর্বকালের সফলতম মেগাস্টার। এখনকার ছেলেদের মুম্বই জয়ের কিছু মন্ত্র দিন না?

দেয়ার ইজ নো মন্ত্র। মুম্বই ইন্ডাস্ট্রি ট্যালেন্টকে সম্মান করে। ভারতীয় দর্শক ট্যালেন্ট সম্মান করে। কেউ যদি সত্যি ট্যালেন্টেড হয় সে স্বীকৃতি পাবে। কলকাতার ইন্ডাস্ট্রিতে তো আমি নিশ্চিত অনেক ট্যালেন্টেড অভিনেতা রয়েছে। এটুকু আশ্বস্ত করতে পারি, মুম্বইয়ের দিক থেকে কোনও মেন্টাল ব্লক নেই যে, ট্যালেন্টেড হলেও এখান থেকে বলে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না। একদম না। পুরোটা বাজারের ব্যাপার। মার্কেট ইকনমিক্সের ব্যাপার।

দুর্ধর্ষ অভিনেতা। আশ্চর্য রেঞ্জ ছিল ওঁর। আমার মতো নতুন আসা অভিনেতা ওঁর কাছে দারুণ সাহায্য পেয়েছে

সে তো সার্বিকভাবে বোঝা গেল। মনে করা যাক, আপনি কলকাতার কোনও ট্যালেন্টেড অভিনেতার ব্যক্তিগত কোচ। তাকে কী টিপস দিতেন?

কোচ? ওরে বাবা! আমি তাকে বলতাম, জাস্ট ডু ইয়োর ক্রাফ্ট। জিনিসটা কব্জা করাটা সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট। তার জন্য প্রচণ্ড খাটতে হবে। আদাজল খেয়ে লেগে পড়তে হবে। এর পরেও ধৈর্য ধরতে হবে। প্রতীক্ষায় থাকতে হবে ঠিক সুযোগের জন্য। ধৈর্য খুব ইম্পর্ট্যান্ট। ভুলভাল ছবিতে আগ্রহ দমিয়ে রেখে ঠিক ছবিতে ঢুকতে হবে। সেই ডিসিশনটাও ইম্পর্ট্যান্ট।

কিন্তু আমি একটা কথা বুঝে পাচ্ছি না। যদি কেউ নিজের রাজ্যে ভাল করে সে এখানকার সব ছেড়েছুড়ে মুম্বই যেতে চাইবে কেন?

জাতীয় স্তরে জনপ্রিয়তা পেতে।

কেন! বাংলার শিল্পীদের কি জাতীয় স্তরে পরিচিতি নেই নাকি?

নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু সেটাকে আরও মজবুত করার জন্য হিন্দিতে কাজ না করলে নয়।

আমার তো মনে হয়, বাংলা না ছেড়েই বাংলা ফিল্মের অনেককে গোটা ভারত চেনে।

আমি বলছিলাম পুরুষ অভিনেতাদের কথা।

দাঁড়ান, দাঁড়ান। আমাকে কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিন তো (বেশ বিরক্ত)!

বলুন।

সত্যজিৎ রায়কে এমন কিছু করতে হয়েছিল কি?

না।

মৃণাল সেন কি এমন কিছু করেছেন?

না।

উত্তমকুমার ক’টা হিন্দি ছবিতে কাজ করেছিলেন বাংলা ছেড়ে?

হাতে গোনা যায়।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কি বাংলা ছেড়ে গিয়েছিলেন?

না।

তাতে কি এঁদের কোনও সমস্যা হয়েছে? এঁরা তো ইন্টারন্যাশনালি ফেমাস। তাই নয় কি?

মেনে নিলাম। আপনাকে আরও একটা বিষয়ে খোলাখুলি জিজ্ঞাস্য রয়েছে।

বলুন।

সঞ্জীবকুমার ও আমজাদ খান

দু’জনেই গ্রেট ট্যালেন্ট। প্রতিনিয়ত মিস করি দু’জনকে। ওদের চলে যাওয়াটা যেন পরিবারের নিকট কারও চলে যাওয়া

একটা অসামান্য উজ্জ্বল কেরিয়ারের মধ্যেও কিছু অপূর্ণতা থাকে। সচিন তেন্ডুলকর অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ জেতেননি। লতা মঙ্গেশকর কখনও গ্র্যামি পাননি। তেমনি অমিতাভ বচ্চন তাঁর সেরা সময়েও দেখে যেতে পারলেন না যে, হলিউডে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি যথেষ্ট স্বীকৃতি পেয়েছে। এটা কি বড় হতাশার জায়গা নয়?

এটা তো তখনই তীব্র হতাশার জায়গা হতে পারে যখন আপনি ধরে নিতে শুরু করেন ওরা আলটিমেট। যখন আপনার বিচার-ক্ষমতা আপনাকে বোঝাতে থাকে যে ওরা সবার চেয়ে বেটার। ওরাই শেষ কথা। আপনার প্রতি যথেষ্ট সৌজন্য রেখেই বলছি, ভাই সত্যিটা কি তাই?

সত্যিটা কী?

আপনি যা বলছেন তাকে সত্যি ধরে নিলে তো আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে অবমাননা করা হয়। আমি তেমন কোনও পর্যবেক্ষণ প্রকাশিত হলে একেবারেই কমফর্টেবল হব না। কোথাও আমার মেনে নিতে অসুবিধা আছে। আমায় বলুন না, আমরা তো নিজের দেশে থাকি। নিজের মতো থাকি। নিজের মতো করে রিমার্কেবল সব ফিল্ম বানাই। ওয়েস্ট যা করে সেটাই ভাল, সেটাই পাহাড়প্রমাণ উৎকর্ষ আর বাকি সব খারাপ। এটা আধুনিক কনসেপ্ট হতে পারে। হতেই পারে যে ওয়েস্ট সত্যি দুর্ধর্ষ। কিন্তু আমরা কী দোষ করলাম? আমরা তো নিজেদের গণ্ডির মধ্যে যথেষ্ট ভাল কাজ করছি। আর তার আঁচ বিদেশেও নিয়মিত পৌঁছচ্ছে।

আমায় একটা কথা বলুন তো, হিন্দি ছবিতে ঠিকঠাক মানিয়ে নিতে ক’জন হলিউড স্টার পারবে? যেটা হিন্দি ছবিতে একজন স্টার করে দেখায়।

মানে?

আসুক না! করে দেখাক না একই ফিল্মে অ্যাকশন, ডান্স, কমেডি, ফাইট, ড্রামা। ইট ইজ টাফ। ভেরি টাফ। মানেন তো?

ইয়েস।

কাজেই আমরা সুপিরিয়র। আমরা বেটার (হাঃ হাঃ হাঃ)

ইন্টারভিউয়ের শেষের দিকে এসে আবার সেই প্রশ্নটা করছি। কিছু মনে করবেন না। আসলে সমানে জিজ্ঞেস করেও সন্তোষজনক উত্তর এখনও পাইনি।

কোন প্রশ্ন (বেশ আশ্চর্য)?

আপনার যেটা শুনতে খুব বোরিং লাগে। কী করে এই বয়সে সব সময় এমন তরতাজা থাকেন?

নাথিং। কিছুই নয়। আমার লাইফ খুব অর্ডিনারি। সকালে ঘুম থেকে উঠি। কাজে যাই। কাজ থেকে ফিরে আবার ঘুমিয়ে পড়ি।

(ছবি তুলতে তুলতে হঠাৎ সাত্যকি ঢুকে পড়ল আলোচনায়। ‘‘স্যর কী বলছেন? রাত তিনটের সময়ও আপনি দেখি ব্লগ পোস্ট করছেন। অবিশ্বাস্য লাগে তখন!’’) আরে সেদিন নিশ্চয়ই শ্যুটিং দেরিতে শেষ হয়েছিল।

দেরিতে হলেও রাত তিনটের সময় সারা দিনের ক্লান্তি নিয়ে লিখতে বসাটাই তো অবিশ্বাস্য!

উপায় নেই। নইলে তো ফ্যানদের সঙ্গে ডেইলি কমিউনিকেশনটা থাকবে না। আমি চেষ্টা করি এই যোগাযোগটা যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে না যায়!

এটাও আশ্চর্যের। যে মানুষটা নিজের টপ ফর্মে মিডিয়ায় মুখ খুলতেন না। যাকে মিডিয়া সত্তর দশকে ‘ব্যান’ করেছিল। যাঁর উপস্থিতিই ছিল পর্দায় রাজসিক, অথচ পর্দার বাইরে নির্জন দ্বীপের মতো। এত প্রাইভেট এক মহাতারকা হঠাৎ কী করে এত নিজের আগল তুলে দিলেন যে একটা দিনের ব্লগ মিস হওয়াও তাঁর কাছে অসহ্য?

আধুনিক মোড অব কমিউনিকেশনের সুযোগ থাকাটা একটা বড় তফাত। এটা দারুণ সুযোগ যে আপনি অকাতরে ফ্যানদের কথা শুনতে পাচ্ছেন। তাদের পয়েন্ট অব ভিউ জানতে পারছেন।

প্রায় এদের হাত ধরার মতো!

আরে এখন তো শুধু নামে নয়, আমি এদের অনেককে ফিজিক্যালি চিনি। আমরা কথা বলি, দেখা করি। ওপিনিয়ন শেয়ার করি। খুব বুদ্ধিদীপ্ত এরা। যাদের আমি নামকরণ করেছি ই এফ। এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলি।
অতীতে একটা মেক বিলিভ পৃথিবীর মধ্যে বসবাস করতাম। ফ্যানদের আওয়াজ আমার কানে এসে পৌঁছত না। এখন কত সুবিধে! সরাসরি
এদের কথা শুনতে পারি। পরামর্শ নিতে পারি।

ইন্টারভিউয়ের শেষ দিকে এসে গিয়েছি। একটা কথা বলুন, এত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতে থাকতে অনেক প্রিয়জন হারিয়েছেন। তাঁদের কয়েক জন সম্পর্কে আপনার অন্তিম উপলব্ধি শুনব।

নিশ্চয়ই।

সঞ্জীবকুমার ও আমজাদ খান।

দু’জনের সঙ্গেই অসম্ভব ভাল সময় কেটেছে আমার। ক্যামেরার সামনে কী হয়েছে তার তো ডকুমেন্টেশন আছে। কিন্তু ক্যামেরার পিছনে ওদের সঙ্গে আড্ডাগুলো অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং। দু’জনেই গ্রেট ট্যালেন্ট। প্রতিনিয়ত মিস করি দু’জনকে। ওদের চলে যাওয়াটা যেন পরিবারের নিকট কারও চলে যাওয়া।

প্রাণ।

দুর্ধর্ষ অভিনেতা। ইন্ডিয়ান সিনেমাতে বছরের পর বছর ধরে ওঁর সার্বিক উপস্থিতি যদি লক্ষ করা যায়, তা হলেই বোঝা যাবে কী সব বহুমাত্রিক চরিত্র করে গিয়েছেন। আশ্চর্য রেঞ্জ ছিল ওঁর। আমার মতো নতুন আসা অভিনেতা ওঁর কাছে দারুণ সাহায্য পেয়েছে। প্রাণসাব ওয়াজ ভেরি ভেরি সাপোর্টিভ। অলওয়েজ ভেরি সাপোর্টিভ। কী কী সব মুহূর্ত কাটিয়েছি ওঁর সঙ্গে।

স্মিতা পাটিল।

স্মিতার চলে যাওয়াটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। এত কম বয়সে স্মিতা মারা গেল যে ভাবা যায় না। আমি ওর সঙ্গে দু’টো ফিল্মে কাজ করেছি। স্মিতা দুর্দান্ত অভিনেত্রী ছিল সবাই জানে। কিন্তু আমার স্মৃতিতে যেটা আরও বেশি রয়েছে, তা হল মানুষ স্মিতা। খুব বড় মনের মানুষ ছিল।

রাজেশ খন্না

গ্রেট স্টার ভ্যালু। হিউজ সুপারস্টার। ভারতবর্ষ এই মাপের স্টার কখনও দেখেনি। আর দেখবে কিনাও ঘোর অনিশ্চিত

মনমোহন দেশাই।

মন-কে আমি ভীষণ মিস করি। ওকে নিয়ে সংক্ষেপে কী করে বলব, জানি না। মনমোহন দেশাই নিয়ে আমি একটা গোটা বই লিখে ফেলতে পারি। বিরাট লম্বা হয়ে যাবে সেই বই। ইউনিক স্টাইল ছিল ওর। সবাই ভাবত, ও হাস্যকর সব ফিল্ম বানায় যার মধ্যে লজিকটজিক বিশেষ নেই। অথচ ওগুলো ছিল ব্রিলিয়ান্ট। যে ভাবে গল্পগুলো ভাবত, যে ভাবে প্রেজেন্ট করত, তার মধ্যে দৃশ্যত এক ধরনের পাগলামি ছিল। কিন্তু এখানেই মনমোহন দেশাইয়ের জিনিয়াস যে দর্শককে সেটা ঠিক ধাক্কা দিত। তারা সেগুলোকে লুফে নিত।

রাজেশ খন্না।

গ্রেট স্টার ভ্যালু। হিউজ সুপারস্টার। ভারতবর্ষ এই মাপের স্টার কখনও দেখেনি। আর দেখবে কিনাও ঘোর অনিশ্চিত।

মিস্টার বচ্চন আপনি কি জানেন ইন্টারনেটে কিছু দিন আগে খবর ছড়িয়ে গেছিল আপনি মারা গিয়েছেন?

জানতাম না (হাসি)।

এই কলকাতাতে আপনি থাকার মধ্যেই ছোট অবিচুয়ারি পর্যন্ত লেখা হয়ে যায়। এখনও নেট ক্লিক করলে পাওয়া যাবে।

আমি এ সব কিছুই জানি না।

আপনার জীবনে অবশ্য নিজের মৃত্যুসংবাদ শোনার ঘটনা প্রথম নয়। ‘কুলি’র দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পরেও খবর বার হয়েছিল। এর আগেও হয়েছে। এগুলোকে আপনি কী ভাবে ‘ডিল’ করেন?

‘ডিল’ করিই না। জাস্ট ইগনোর করি। আই জাস্ট লেট ইট গো।

পরিচিতরা নিশ্চয়ই বিভ্রান্ত হয়? তারা কী ভাবে চেক করে খবরটা ভুল? আপনাকেই ফোন করে?

এরকমই নানান কিছু ঘটে (হাসি)।

জীবনের এই পর্যায়ে পৌঁছে কখনও মৃত্যুচিন্তা হয়?

সে তো হবেই। আর পাঁচ জনের মতো মৃত্যুচিন্তা আমারও হয়। একটা বয়সে পৌঁছে অনিবার্য।

(শেষ)

পুনশ্চ

কলকাতায় টানা মোটামুটি দু’মাস কাটিয়ে যাওয়ার ফাঁকে অমিতাভ বচ্চন যে প্রিন্ট মিডিয়ায় আর একটাও একান্ত সাক্ষাৎকার দেননি, তার অন্যতম কারণ, হাতে কোনও টাইম ছিল না। সময় সময় তাঁকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত রাখছিল ঋভু দাশগুপ্ত-র ছবি ‘তিন’‌য়ের শ্যুটিং। মধ্যে কোনও গ্যাপ নেই। এমনকী শহরের বিশিষ্টদের মাঝে গ্র্যান্ড হোটেলে তাঁর নিজের ওপর রূপায়িত অনুষ্ঠান ‘অমিতাক্ষর’ শেষ করেও রেহাই নেই। রাতে কলকাতার ট্রামে চেপে আবার শ্যুটিং।

দমহীন ব্যস্ততার মধ্যে তবু যে আনন্দplus ইন্টারভিউয়ের জন্য আপাত অবিশ্বাস্য এক ঘণ্টা বার করা গেল, তার নেপথ্যে ২৬ জানুয়ারি নামক একটা ছুটির দিন আবির্ভূত হওয়া। সদ্য পারিবারিক মৃত্যুর খবর পাওয়াজনিত প্রাথমিক বিষণ্ণতার বাষ্প উড়ে গেল মোবাইল ফোনের রেকর্ডারের সামনে বসতেই।

ইউনিটের সঙ্গী কেউ কেউ জানালেন, দু’-তিনদিনের মধ্যে মুম্বই ফিরে গিয়েও নাকি বিশ্রাম নেই। ঠিক পরের সকালে চেন্নাইয়ের বন্যাদুর্গতদের জন্য টাকা তুলতে জয়ললিতার শহরের ফ্লাইট ধরা। সেখান থেকে সোজা দিল্লি— এনডিটিভির পুরস্কার নিতে। ফিরে আবার অন্য শহর। বিশ্রামের কোনও কাহিনিই নেই। তিয়াত্তর বছর বয়সেও ঘুমোন দিনে চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা। রোববার অনেক সময় শ্যুটিং করেন।

আর ছুটির দিন যখন বাড়িতে থাকেন, অফিস স্টাফ বা পরিবারের লোকজন নাকি আতঙ্কিত থাকে। কোথাও এতটুকু ধুলো থাকলে চলবে না। প্রতিটি জিনিস নিয়মনিষ্ঠ ভাবে গুছিয়ে রাখতে হবে। একদিন এ রকমই এক সকালে আবিষ্কার করেন, কেবল চ্যানেল কাজ করছে না বলে টিভিতে ইন্ডিয়ার ক্রিকেট ম্যাচ দেখা যাচ্ছে না। দ্রুত নিজেই ফোন করেন কেবল অপারেটরকে, ‘‘ভাইয়া, আমি অমিতাভ বচ্চন বলছি। আমার স্টার স্পোর্টসের লাইনটা ঠিক করে দিন।’’ অপারেটর বিশ্বাস করেনি। বলে, ‘‘সকাল সকাল চ্যাংড়ামি হচ্ছে নিজেকে অমিতাভ বচ্চন পরিচয় দিয়ে?’’ বলে লাইন কেটে দেয়। এ বার উত্তেজিত অমিতাভ দ্বিতীয়বার ফোন করেন। বিখ্যাত ব্যারিটোন সহযোগে বলেন, ‘‘আমি অমিতাভ বচ্চন। লাইনটা কখন ঠিক হবে?’’ এ বার অপারেটর গলা চিনতে ভুল করেনি। শিউরে উঠে সে বলে, ‘‘স্যর, মার্জনা করবেন স্যর। এক্ষুনি ঠিক করে দিচ্ছি। আমি নিজে আসছি আপনার বাড়িতে।’’

ইন্টারভিউ শেষ করে ওঠার সময় আমাদের পক্ষ থেকে এক বাক্স নলেন গুড়ের সন্দেশ এগিয়ে দেওয়া হল তাঁকে। বললেন, ‘‘আমি অফ সুইটস।’’ কিন্তু তা কী করে হতে পারে? কলকাতার শীতে আসা কোনও অতিথি নলেন গুড়ের সন্দেশ না খেয়ে ফেরত যাবে, হয় নাকি?

পাশে তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী মেকআপ ম্যান দীপক আর ফোটোগ্রাফার পরেশ মেটা। পরেশ গত আঠারো বছর ধরে সমস্ত অনুষ্ঠানে অমিতাভের ছায়াসঙ্গী। তাঁর প্রতিটি মুভমেন্ট রেকর্ড করে রাখেন। শোনা যায় সারাদিন ধরে তোলা ছবিগুলো রাতে অমিতাভের কাছে যায়। সেখান থেকে তিনি চূড়ান্ত নির্বাচন করেন। এখান থেকেই ব্লগ বা নিজের পোস্টে শেয়ার করেন। অনেক ছবি ব্যক্তিগত আর্কাইভে রেখে দেওয়া হয়। যা ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই দিনের আলো দেখবে। কিন্তু পরেশ একান্তই বচ্চন পরিবারের ফোটোগ্রাফার, বাইরে ছবি দেওয়ার অনুমতি নেই। নলেন গুড়ের প্রস্তাবে এ বার পরেশও হাসতে শুরু করেছেন। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে, একদিনের জন্য স্যর নিয়মের লঙ্ঘন করতে পারেন।

অমিতাভ থমকে গেলেন, ‘‘আমি জানি। ইট ইজ টেম্পটিং।’’ সন্দেশের বাক্সের দিকে এক পা এগোলেন। তারপর আবার ঘাড় নাড়লেন, ‘‘ফ্যামিলিতে শেয়ার করব। আমার খাওয়া ঠিক হবে না।’’

ইন্টারভিউতে একটা জায়গা ছিল: ব্যারিটোন নয়, হাইট নয়, অভিনয় ক্ষমতা নয়, আপনার আসল দ্যুতি কি ইস্পাত কঠিন মন?

আপাতত মনে হচ্ছে, প্রশ্নটা করে কনফার্মেশনের দরকারই ছিল না!

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy