Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
গোয়েন্দা প্লাস

কিরীটীকে আজকের জন্য সাজানো হয়েছে

ফেলুদা — সব্যসাচী চক্রবর্তী। কিরীটী — ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। দুই গোয়েন্দার প্রথম সাক্ষাৎকার। জেরা করলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কিরীটী নামটা বলতেই বইয়ের পাতা ফুঁড়ে উঠে আসে ইররেসেসটেবল এক পুরুষ...এই সিনেমায় কিন্তু কিরীটী চরিত্রটাই অন্য রকম। সাহেবি কায়দায় জিনস, টি শার্ট পরা। ব্যাক ব্রাশ করা চুল। লুচি-আলুর দম ভালবাসা বাঙালি।

‘কালো ভ্রমর’ ছবিতে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত।

‘কালো ভ্রমর’ ছবিতে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত।

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০০:০৩
Share: Save:

• কিরীটী নামটা বলতেই বইয়ের পাতা ফুঁড়ে উঠে আসে ইররেসেসটেবল এক পুরুষ...

(একটু লজ্জা পেয়ে) এই সিনেমায় কিন্তু কিরীটী চরিত্রটাই অন্য রকম। সাহেবি কায়দায় জিনস, টি শার্ট পরা। ব্যাক ব্রাশ করা চুল। লুচি-আলুর দম ভালবাসা বাঙালি।

• কিন্তু নীহাররঞ্জন গুপ্ত-র কিরীটীর তো মাথায় সাহেবি টুপি একটু বেঁকিয়ে পরা, আর মুখে জ্বলন্ত চুরুট।

আসলে নীহাররঞ্জন গুপ্ত কিরীটীকে বরাবর আধুনিক করে দেখাতে চেয়েছিলেন। সেই কথা মাথায় রেখেই তাকে আজকের মতো সাজানো হয়েছে। আমরা সবাই চেয়েছিলাম নতুন প্রজন্মের সামনে কিরীটীকে তাদের মতো করে প্রেজেন্ট করতে। সে কারণেই কিরীটী চুরুটের বদলে সিগারেট খায়। ল্যাপটপ, ইন্টারনেট ব্যবহার করে। জিনস আর টি শার্টে কিরীটীকে যতটা সম্ভব রিয়েল করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।

• প্রথম কিরীটী করছেন আপনি, ভয় করছে না?

নাহ, বরং আমি খুব কনফি়ডেন্ট। যেভাবে ২৩ দিনের মধ্যে পুরো শ্যুট হয়েছে, তাতে মনে হয় এটা একটা ইন্টারেস্টিং প্রজেক্ট হবে।

• ব্যোমকেশ, ফেলুদা, শবর-য়ের রমরমায় কিরীটী কতটা জায়গা করতে পারবে?

দেখুন, বাংলা ছবিতে ভাল গল্পের অভাব। তাই আমরা সাহিত্যে হাত দিয়েছি। সেই জায়গা থেকে গোয়েন্দার এত চাহিদা। তা ‌ছাড়া গোয়েন্দা গল্পের এমনিতেই একটা দর্শক আছে। সেই কারণে কিরীটী নিয়েও আমি আশাবাদী। ৬০-৭০-এর দশকে সদ্য কিশোরী থেকে সব বয়সের মহিলার হার্টথ্রব ছিল কিরীটী। আর ছেলেদের কাছে তিনি ‘আয়রন ম্যান’। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ-অজিত, সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা-তোপসে, বা হেমেন্দ্রকুমার রায়ের জয়ন্ত -মানিকের চেয়ে কিরীটী-সুব্রত কিন্তু একদম আলাদা। তারা ওই সময়ের গোয়েন্দাদের মতো পুরোদস্তুর বাঙালি নয়। তাদের গাড়ি আছে, হোটেলের বিলাসিতা আছে। অন্য রকম অ্যাপ্রোচের জন্য কিরীটী দর্শক টানবে বলে আমার মনে হয়।

• তার মানে কিরীটী হল স্টার গোয়েন্দা?

স্টার নয় বরং গ্ল্যামারাস। আমি চিড়িয়াখানা দেখতে গিয়ে বুঝেছি, ব্যোমকেশ করার জন্য উত্তমকুমারকে গ্ল্যাম লুক থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল।

• কিন্তু উল্টো দিকে কিরীটীর গ্ল্যামার তো উত্তমকুমারকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তিনি তো কিরীটী করতে চেয়েছিলেন।

হ্যাঁ, শুনেছি। কিরীটী করার জন্য উত্তমকুমার নীহাররঞ্জন গুপ্তর কাছে গিয়েছিলেন এবং নীহাররঞ্জন মুখের উপর না বলে দেন। আসলে লেখক চেয়েছিলেন সেলুলয়েডে কেউ যদি কিরীটী করে তো সে একমাত্র অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়।

• কিরীটীর জন্য আপনার প্রস্তুতি কী ছিল?

দেখুন, পরিচালক অনিন্দ্যবিকাশ দত্ত আর্মির পোশাক-পরা নীহাররঞ্জন গুপ্তের একটা ছবি আমাকে দেখিয়েছিলেন। ছবিটি বর্মায় (এখনকার মায়ানমার) তোলা। পরিচালকের মনে হয়েছিল আমার চেহারার সঙ্গে ওই ছবি মিলে যায়। আর নীহাররঞ্জন যে নিজেই কিরীটী, তা তো সকলেরই জানা।

• কিন্তু সব ছেড়ে ‘কালো ভ্রমর’ কেন?

আমার মনে হয়, কিরীটীর সুপার হিউম্যান ইমেজটা ‘কালো ভ্রমর’-এ সবচেয়ে ভাল ধরা পড়ে। ও রকম দুর্ধর্ষ ক্রিমিনালের সঙ্গে লড়াই করার জন্য শুধু প্রোটাগোনিস্ট নায়ক হলেই চলে না। দরকার অধিনায়কের। ক্যাপ্টেনের। সে জন্যই গোয়েন্দা কিরীটী রায়ের জন্ম।

• কিন্তু শেষমেশ কিরীটী রায়ও তো কালো ভ্রমরের মতো দুর্ধর্ষ দুর্বৃত্তকে নিজে হাতে শাস্তি দেননি। আজ যদি কোনও সিরিয়াল কিলারকে শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়, সেটা কি দর্শক মেনে নেবে?

এই সময় চারপাশে তাকালে দেখবেন ‘কালো ভ্রমর’-এর মতো অজস্র ক্রিমিনাল ঘোরাফেরা করছে। কিন্তু কিরীটী এই অপরাধীদেরই অন্য চোখে দেখতে শিখিয়েছে। অদ্ভুত একটা দর্শন আছে তার। অপরাধীকে শুধু অপরাধী হিসেবে না দেখে তার গ্রে ম্যাটারটা বোঝার চেষ্টা করে কিরীটী। কিরীটীর এই অ্যাটিটিউডটা নিশ্চয়ই ছবিতে ইয়ুথকে কানেক্ট করবে বলেই আমার মনে হয়।

• ইয়ুথ কানেক্ট তো হল। কিন্তু প্রেম বা যৌনতা এই ছবিতে কী ভাবে কানেক্টেড?

ব্যোমকেশ-এ সেক্সুয়ালিটি আছে। কিরীটীতেও বিস্তর আছে। তবে এই ছবি করার সময় আমরা বাচ্চাদের কথাও ভেবেছি। অ্যাটলিস্ট ১৪-১৫ বছরের ছেলেমেয়েদের কথা। তাই খুব বেশি সিগারেট খাওয়া বা সেক্সুয়ালিটি হাইলাইট করা হয়নি।

• কিন্তু কিরীটী আর কৃষ্ণার কেমিস্ট্রিটা কেমন?

কিরীটী যতই সাহেব হোক আদতে সংসারী। কৃষ্ণার চরিত্রটা অরুণিমা করেছে। ও ভাল অভিনেত্রী।

• ‘কালো ভ্রমর’-এর নায়ক কে? আপনি, না কি কৌশিক সেন?

কৌশিক তো দুর্দান্ত অভিনেতা। কিরীটী আর কালো ভ্রমর যেখানে মুখোমুখি হচ্ছে সেই দৃশ্যটা নিশ্চয়ই দর্শকদের ভাল লাগবে। তবে ‘কালো ভ্রমর’ য়ের নায়ক কে সেটা দর্শক বলবেন।

• আপনার পছন্দের গোয়েন্দা কে, সেটা তো বলুন...

গোয়েন্দা হিসেবে ফেলুদাই আমার সবচেয়ে প্রিয়। ছোটবেলা থেকেই ফেলুদা করার শখ ছিল আমার।

• ‘ডবল ফেলুদা’-র জন্য সন্দীপ রায় যখন ফেলুদা খুঁজছিলেন, তখন কোনও অফার পাননি?

আমায় কেউ ফেলুদা করতে বলেননি।

• আপনার সেরা ফেলুদা আর সেরা ব্যোমকেশ কে?

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছাড়া আর কেই বা সেরা ফেলুদা হতে পারে। আমার তো মনে হয় সত্যজিৎ রায় ওঁকে ভেবেই ফেলুদা চরিত্র তৈরি করেছিলেন।

• এই যে ৬০ বছরে সব্যসাচী ফেলুদা...

(থামিয়ে দিয়ে) করুক না। আমার কিছু বলার নেই। আর আমার মতে সেরা ব্যোমকেশ উত্তমকুমার।

• কিন্তু এখন তো উত্তমকুমারকে পাওয়া যাবে না। আপনি আবীর বা যিশুর ব্যোমকেশ দেখেননি?

না, আমার দেখা হয়নি।

সাক্ষাৎকার শেষ হতেই গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন গোলপার্কের দিকে। মুম্বই ফিরে যাওয়ার আগে কিরীটীর স্রষ্টা নীহাররঞ্জন গুপ্তর বাড়িটা দেখার খুব ইচ্ছে তাঁর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE