E-Paper

ধর্মনিরপেক্ষতার বাঁধনেই বিশ্ব কুটুম্বিতার ডাক

রামমন্দির উদ্বোধনের পটভূমিতে আনন্দের তিন দশক আগের ‘রাম কে নাম’ ছবিটি এখন নতুন করে গেরুয়া-শিবিরের তোপের মুখে পড়েছে।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:৪২
Anand Patwardhan

পরিচালক আনন্দ পট্টবর্ধন। —নিজস্ব চিত্র।

বসুধৈব কুটুম্বকম এবং সংখ্যাগুরুতন্ত্র— এই দু’নৌকায় কি এক সঙ্গে পা ফেলা যায়? প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন প্রবীণ তথ্যচিত্র পরিচালক আনন্দ পটবর্ধন।

রবিবার সন্ধ্যায় পিপলস ফিল্ম কালেক্টিভ- এর উদ্যোগে ‘কলকাতা পিপলস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর শেষ ছবি হিসেবে আনন্দের নতুন ছবি ‘দ্য ওয়র্ল্ড ইজ় ফ্যামিলি (বসুধৈব কুটুম্বকম)’ তখন সবে দেখানো শেষ হয়েছে।

উপনিষদের শব্দবন্ধটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও আকছার উচ্চারণ করেন। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন থেকে শুরু করে বিদেশ নীতিতে ভারতের বিশ্ববন্ধু ভাবমূর্তি বোঝাতে এই শব্দবন্ধ বহু ব্যবহৃত। ‘পৃথিবীই পরিবার’ চেতনার বিস্তারে আনন্দ কিন্তু এ দিন তাঁর বাবা, মা তথা পরিবারের গল্পই সিনেমায় তুলে ধরেছেন।

রামমন্দির উদ্বোধনের পটভূমিতে আনন্দের তিন দশক আগের ‘রাম কে নাম’ ছবিটি এখন নতুন করে গেরুয়া-শিবিরের তোপের মুখে পড়েছে। পুণের এফটিআই থেকে শুরু করে দেশের নানা প্রান্তে আনন্দের ছবি দেখানো বন্ধ করতে গেরুয়া-শিবিরের একাংশের নামে হামলার অভিযোগও উঠেছে। তাঁর নতুন ছবিটিতে আনন্দ কিন্তু সমকালের ভারতের রাজনীতি নিয়ে অল্পই কথা বলছেন। কিন্তু একটি কোঙ্কনি ব্রাহ্মণ পরিবার ও তার অন্তরঙ্গ বলয়ের মূল্যবোধের গল্পই এক অন্য ভারতের কথা তুলে ধরছে।

আনন্দ বলছিলেন, “আমার বাবার নাম বাসুদেব। ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এ বাবার নামের ছায়া আছে। আমার পরিবারের মতো আরও অনেক পরিবার ভারতে আছে। তাঁদের ধর্মনিরপেক্ষ আন্তর্জাতিকতাবোধের গল্পেই বসুধৈব কুটুম্বকমের আসল মানেটা লুকিয়ে।”

আনন্দের দুই কাকা গান্ধীবাদী স্বাধীনতা-সংগ্রামী রাওসাহেব পটবর্ধন এবং অচ্যুত পটবর্ধন। মা নির্মলা, করাচির সিন্ধি কন্যা। ৪০-এর দশকে শান্তিনিকেতনের মৃৎশিল্পকলার ছাত্রী তিনি। হিন্দির থেকেও বাংলাতেই তিনি স্বচ্ছন্দ ছিলেন। গান্ধীকে নির্মলাও কাছ থেকে দেখেছেন। ছবিতে উঠে আসে দেশভাগের সময়ে করাচিতে সদ্য তরুণী নির্মলার সংগ্রহে গান্ধীর রুমাল হারানোর ব্যথা। রাম বলতে প্রবীণ বাসুদেব বোঝান, “আমার রাম হল সন্ত কবীরের রাম।” দেশভাগের পরে ছিটকে যাওয়া আনন্দের মায়ের বান্ধবী, পাকিস্তানে প্রাক্তন মন্ত্রীও এ ছবির চরিত্র হয়ে উঠেছেন। নিজের জন্যই মা, বাবার ঘরোয়া ছবি তুলছিলেন আনন্দ। তাঁরা চলে যাওয়ার অনেক বছর বাদে অতিমারির সময়ে মনে হয়, এ গল্প তো ভারতের চিরকালীন মূল্যবোধের গল্প।

চার দিনের এই চলচ্চিত্র উৎসবও নানা ছবিতে চিরন্তন বহুত্ববাদী ভারতের সুরই খুঁজেছে। আনন্দের ছবিতে তাঁর মায়ের বন্ধু ইরা গেয়ে শোনান, ‘অল্প লইয়া থাকি, তাই মোর যাহা যায়, তাহা যায়’! রবীন্দ্রগানটিও যেন অনেকের কাছে বিস্মৃতপ্রায় এক অন্য ভারতের কথাই মনে পড়িয়ে দেয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Anand Patwardhan Kolkata movie cinema

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy