কত মানুষের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় হঠাৎ, তাঁরা বলেন, ‘আরে কত দিন কথা হয় না! এ বার একদিন ঠিক যাব...’। এক সময় এ সব কথায় বিশ্বাস হত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই দেখা, সেই যাওয়া— আর হয়ে ওঠে না। প্রতিশ্রুতি কি আসলে ভঙ্গ করার জন্যই দেওয়া?
কত প্রেম আসে-যায়, কত গান বাকি থেকে যায়। দেওয়া কথা মনে রাখে কে বা! তবু, হাতে থাকে উদ্যাপন। প্রেম সপ্তাহের চতুর্থ দিনে যখন গোলাপ, চকোলেট, টেডি বেয়ারের তুলতুলে আহ্লাদে ভরে গিয়েছে হাতে, ঠিক তখনই ওঠে সেই প্রশ্ন— ‘কথা দাও ভুলবে না গো, আমি তো ভুলব না...’
প্রেমের সম্পর্কে একটা সময় পর্যন্ত প্রতিশ্রুতিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হত। একটা সম্পর্ক যেন দাঁড়িয়ে থাকত জোরালো আঠার আশ্বাসে! দিন বদলেছে। মানুষ কি বুঝতে শিখেছে আসলে কিছুই নিত্য নয়, ধ্রুব সত্য নয় সম্পর্কও? তাই তো নতুন প্রজন্ম এখন ভরসা রাখে ‘সিচুয়েশনশিপ’-এ, যেখানে প্রেমের গন্ধ মাখানো থাকে বন্ধুত্বে। যেখানে ভালবাসাবাসি থাকলেও নেই কোনও কড়াকড়ি।
কিন্তু কোনটা ভাল বা আদর্শ? কথা দিয়ে কথা রাখা, না কি কথা রাখতে পারব না জেনে কথা না দেওয়া?
প্রতিশ্রুতি রক্ষা নিয়ে নিজের মনের কাছে ভীষণ ভাবে পরিষ্কার অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। প্রেমের সপ্তাহে তাঁর উপলব্ধি, “এমন কোনও প্রতিশ্রুতি কাউকে দিতে পারব না, যেটা আমি রক্ষা করতে পারব না। তাই আমি চাইব না, আমার কাছেও কেউ এমন প্রতিশ্রুতি দাবি করুন।” কথা রাখতে না পারলে যে নিজের মধ্যেই একটা ভীষণ কষ্ট হয়, সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। আবার কাউকে দিয়ে জোর করে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করানোর পক্ষপাতীও তিনি নন। এমনকি ছেলের কাছেও তাঁর সে দাবি নেই।
আরও পড়ুন:
সঙ্গীতশিল্পী অনুপম রায় কিন্তু মনে করেন, সম্পর্কে প্রতিশ্রুতি না থাকলে সে সম্পর্কটা গড়েই ওঠে না। কিন্তু সেগুলি খুবই ব্যক্তিগত। তাই রাখা বা না-রাখা নিয়ে খুব বেশি ভাবতে বা বাইরের কাউকে জানাতে নারাজ তিনি। বরং অনুপমের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নিজেকে দেওয়া কথাগুলি। শিল্পীর কথায়, “অন্যকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করলেও খানিক মিথ্যা দিয়ে ধামাচাপা দেওয়া যায়। কিন্তু নিজেকে দেওয়া কথা না রাখতে পারলে পার পাওয়া যায় না।” এ রকম কোনও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন অনুপম? প্রশ্নের উত্তরে জানালেন, হামেশাই করেন। “এই যেমন, মাঝেমাঝেই নিজেকে প্রতিশ্রুতি দিই, আগামী ছ’মাসে মিষ্টি ছুঁয়ে দেখব না। কিন্তু রাখতে পারি না। বিশেষত এই শীতের নলেনগুড়, সে কি ছেড়ে থাকা যায়? তাই রোজ সকালে নিজেকে বোঝাই, কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই দেখি আড়াইখানা মিষ্টি খেয়ে ফেলেছি। এ আমার বড় দুর্বলতা, লোভের ফাঁদ এড়াতে পারি না”, বলেন অনুপম। তবে অন্যের দেওয়া কথায় আজকাল আর খুব একটা বিশ্বাস করেন না। তিনি নাকি বুঝে গিয়েছেন, আসলে মানুষের ধর্মই হল প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা। তাঁর কথায়, “ছোটবেলায় খুব কষ্ট পেতাম। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এগুলো সয়ে গিয়েছে। মানুষ ভাবে এক আর হয় আর এক— এটা জীবনের অঙ্গ।” যে যা-ই বলুন, খুব একটা আশ্বাস পান না অনুপম। তাই কি নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়ে চলেন? সাবধানি গায়ক থামিয়ে দেন কথা, বলে বসেন, “এত কিছু তো বলতে পারব না।”
প্রতিশ্রুতি আসলে ভঙ্গ করার জন্যই যে দেওয়া হয়— মনে করেন অভিনেত্রী পাওলি দামও। তিনি বলেন, “সকলেই যে ইচ্ছা করে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন তা নয়। পরিস্থিতির চাপ থাকে। কিন্তু সেগুলো বোঝা যায়। আমি তাই কথা বলিই কম। আমি কাজে করে দেখাতে চাই।” বলিউডের ভাইজান সলমন খান তাঁর বিখ্যাত সংলাপে বলেন, “একবার কথা দিলে আমি নিজের কথাও আর শুনি না।” সে ভাবেই পাওলিও দাবি করেন, তিনি দেওয়া কথা আজীবন রক্ষা করার চেষ্টা করেন। আবার পরিস্থিতির শিকার হয়ে কেউ কথা রাখতে না পারলেও তেমন দুঃখ পান না অভিনেত্রী। তাই পরিজনদের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত বোঝাপড়াটা ভালই।
প্রতিশ্রুতি দিবস নিয়ে আবার খুব একটা ভাবতে রাজি নন অভিনেতা-পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সাফ কথা, এ সব প্রতিশ্রুতির বিষয়-আশয় তাঁর ‘জমে না’। পরমের বক্তব্য, “ভ্যালেন্টাইনস ডে ঠিক আছে, মিষ্টি একটা ব্যাপার। কিন্তু তার আগে-পিছে এতগুলো দিন আমি মনে রাখতে পারি না। খুব একটা প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করি না।” তবে প্রতিশ্রুতি তো কাউকে না কাউকে দিয়েছেন বটেই। পরমের দাবি, তা কোনও দিনক্ষণ মেনে নয়।