Advertisement
E-Paper

স্বাদের লাউ

চাঁদিফাটা গরমে লাউয়ের ডাল খেয়ে প্রাণ জুড়োয়নি, এমন বঙ্গসন্তান বিরল। লিখছেন অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়এমন সাধের একটি বস্তু না থাকলে কবে যে বৈরাগী হয়ে যেতাম, কাকপক্ষীও টের পেত না। ভাবুন তো একবার, চিংড়ির কি দশা হত, নামের আগে লাউ না থাকলে কার এত মাথাব্যথা যে তার কদর করত!

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৬ ০০:৫৯

এমন সাধের একটি বস্তু না থাকলে কবে যে বৈরাগী হয়ে যেতাম, কাকপক্ষীও টের পেত না। ভাবুন তো একবার, চিংড়ির কি দশা হত, নামের আগে লাউ না থাকলে কার এত মাথাব্যথা যে তার কদর করত! বাঙালির পাতে এমন সরস খাদ্যযোগ আর কটাই বা আছে, আপনিই বলুন না?

তা, লাউ যে খুব অভিজাত সবজি এমনটা তো নয়। বরং, তাকে নিয়ে কিঞ্চিত তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে হাসি ঠাট্টা অবধি করা হয়ে থাকে। তা হোক। চাঁদিফাটা গরমে লাউয়ের ডাল খেয়ে প্রাণ জুড়োয়নি, এমন বঙ্গসন্তান বিরল। আহা, সঙ্গে এক কোয়া গন্ধরাজ লেবু, দমে দই! চল্লিশ ডিগ্রি গরমে পুড়তে থাকা শহরে এর চেয়ে মোক্ষম দাওয়াই আর কী আছে।

লাউয়ের মতো দেখতে বলে যত আওয়াজ দিক, চচ্চরি থেকে ডেজার্ট, লাউয়ের মহিমা অপার। এমনকী বাঙালির পরম প্রিয় সব মিষ্টান্নেও লাউয়ের ব্যবহার সুবিদিত। লাউয়ের মোরব্বা তো অতি উপাদেয় একটি সৃষ্টি। বীরভূমের সিউড়ি বা রামপুরহাট এর জন্য প্রসিদ্ধ।

শুনেছি, লাউ বা চালকুমড়ো নাকি বলিও দেওয়া হয়, ছাগলাদির প্রাণরক্ষার তাগিদে। তা হলে কি মানতে হবে লাউয়ের কোনও বিশেষ আমিষগুণও আছে? ব্যাপারটা চাউর হয়ে গেলে রেওয়াজি খাসির দোকানের মাথায় হাত! তা, ভেজ হোক বা নন-ভেজ, লাউয়ের গুণে যে কোনও ভেজাল নেই, সে কথা না মেনে কিন্তু উপায় নেই। অ্যান্টি-অক্সিজেন হিসেবেও এর জুড়ি মেলা ভার।

সাধে কি, রুনা লায়লার ওই প্রবাদপ্রতিম গানটির দুই বঙ্গেই এমন জনপ্রিয়তা? আমার তো মনে হয়, বাংলাদেশের মানুষরা লাউয়ের অনেক বেশি রেসিপি জানেন, এ বঙ্গের মানুষজনের থেকে। আমি তো অন্তত ও দেশে গিয়ে তাই দেখেছি। চিংড়ি বাদেও নানা রকমের মাছে, বিশেষ করে ইলিশে, লাউয়ের এমন ইনোভেটিভ ব্যবহার আমি অন্য কোথাও দেখিনি।

আসলে, স্বাদ পাল্টে যায় দেশান্তরে, জল আর পানির স্বাদও কি আর এক? এক যদি হত, তবে ইলিশ কেন বেশি ভালবাসে পদ্মাপার? তা, স্বাদে যতই ফারাক থাক, আস্বাদে যে সে তুলনাহীনা, এ তো হলফ করে বলা যায়। অবশেষে, আমার একটি ফিউশন রেসিপির কথা, এই লেখার শেষ পাতে না বললেই নয়। ট্রাই করে দেখতে পারেন। লাউ-চাউ। এমন হিন্দি-চিনি খাই-খাই রেসিপি বড়ই সুস্বাদু। বড় সাধের, এই স্বাদের সন্ধান।

আর সন্ধান না করেই বা উপায় কি বলুন। এই মারকাটারি গরমে বাইরেটা না হয়, এসি চালিয়ে ঠান্ডা করলেন, শরীরের ভেতরটা ঠান্ডা করতে লাউ লা-জবাব! এমন প্রাকৃতিক এয়ারকন্ডিশনার কোথায়, কটা পাবেন শুনি? কুচো চিংড়ি তো ছুতো, লাউ অ্যালাউ করলে কত মাছ বর্তে যায় এই গ্রীষ্মিতে! আসলে, নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা বলে লাভ নেই, থানকুনি পাতারও চমৎকার ঝোল হয়, রান্নাটা জানাই সব! তো, প্রাণ জুড়োতে লাউ অ-সাম-শালা! এক বন্ধুর জামাইষষ্ঠীর মেনুতে তাঁর শাশুড়ি মা এমন লাউ-চচ্চরি রেঁধেছিলেন যে, বন্ধু পরে অফিসে গপ্পো জুড়েছিল, ওহ, যা মেটে চচ্চড়ি খেলাম, জন্ম-জন্মান্তরেও ভুলব না। তা পারে, লাউ পারে বটে, জামাই ঠকানো রান্না রাঁধতে!

শুনেছি বাঙালি যখন পূর্বে পশ্চিমে যেত হাওয়া বদল করতে, সঙ্গে চাল-ডাল-তেল-নুনের সঙ্গে লাউ নিত খান কতক, বিহারি ওয়েদারকে কাবু করতে নাকি অব্যর্থ ওষধি হিসেবে গণ্য হত। শিমূলতলা কি যশিডির সেই স্থানমাহাত্ম্য আজ আর কতটা আছে জানি না, তবে লাউ আজও আছে এবং থাকবে। সাহেবি গোর্ড গোত্রীয় এই ফসলটি নিয়ে জাস্ট কোনও কথা হবে না! বিলিতি কথায় আছে, অ্যান অ্যাপেল আ ডে, কিপ দ্য ডিজিজ অ্যাওয়ে...লাউয়ের ক্ষেত্রেও সে রকম বলা যায় কিপ দ্য সামার অ্যাওয়ে। তা, শুরুতে বলছিলাম না, লাউ বলে লোকে আওয়াজ দিয়ে থাকে, তো, লাউয়ের মতো এমন বিল‘কুল’ জিনিস আর আছে নাকি!

লাউ-এর আরেকটা ব্যাপার আছে। সেটার যোগ সঙ্গীতের সঙ্গে। বিশেষত, লোকসঙ্গীত। শুকনো লাউয়ের খোল থেকে যে কত রকম তালবাদ্য ও বাজনা তৈরি হয় তার হিসেব নেই। তবলা-বায়া-তানপুরা তো, লাউ-এরই বাই-প্রোডাক্ট। তা হলে, ভেবে দেখুন, খাদ্য থেকে বাদ্য, লাউয়ের মহিমা অপার। বড় সাধের এই স্বাদের লাউ!

Gourd summer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy