Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিশ্বাসে মেলে যে বস্তু...

কলেজ স্ট্রিটে, বইমেলায় কে সি পালকে হয়তো অনেকেই দেখে থাকবেন। সেই সঙ্গে তাঁর তথ্যপ্রমাণ সম্বলিত বই ও লিফলেটগুলিও, যেখানে নাকি তিনি যুক্তি সহকারে ব্যাখ্যা করেছেন তাঁর তত্ত্ব। বাস্তবের কে সি পাল এই ছবিতে টি সি পাল (মেঘনাদ ভট্টাচার্য)। তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জুড়ে যায় বাংলা ছবির স্টার চিরন্তন (চিরঞ্জিৎ) এবং পরিচালক সঞ্জীব (অঞ্জন দত্ত)। ছবিটি আসলে এই তিনজনেরই।

সিনেমার একটি দৃশ্য।

সিনেমার একটি দৃশ্য।

সায়নী ঘটক
শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০৩
Share: Save:

একজন হার-না-মানা মানুষের লড়াইকে কুর্নিশ জানাতে তৈরি হয়েছে একটা আস্ত ছবি। ‘সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে’ তত্ত্বের সত্যাসত্য যাচাই করতে নয়, ছবিটি তৈরি হয়েছে সেই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠায় এক মানুষের নিরন্তর লড়াই নিয়ে। প্রথম ছবির জন্য সাধুবাদ প্রাপ্য পরিচালক অরিজিৎ বিশ্বাসের।

কলেজ স্ট্রিটে, বইমেলায় কে সি পালকে হয়তো অনেকেই দেখে থাকবেন। সেই সঙ্গে তাঁর তথ্যপ্রমাণ সম্বলিত বই ও লিফলেটগুলিও, যেখানে নাকি তিনি যুক্তি সহকারে ব্যাখ্যা করেছেন তাঁর তত্ত্ব। বাস্তবের কে সি পাল এই ছবিতে টি সি পাল (মেঘনাদ ভট্টাচার্য)। তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জুড়ে যায় বাংলা ছবির স্টার চিরন্তন (চিরঞ্জিৎ) এবং পরিচালক সঞ্জীব (অঞ্জন দত্ত)। ছবিটি আসলে এই তিনজনেরই।

বামপন্থায় আদর্শচ্যুতি, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ, শ্রমিক সংগঠন, পুলিশের এনকাউন্টারে নিহত নকশাল— টি সি পালের একবগ্গা লড়াইয়ের সঙ্গে এই অনুষঙ্গগুলি সফল ভাবে মিশিয়েছেন পরিচালক। এ ছবির মেরুদণ্ড মেঘনাদ, চিরঞ্জিৎ ও অঞ্জনের অভিনয়। চিত্রনাট্যের ভিত জোরালো হলেও বুননের জায়গা কোথাও কোথাও দুর্বল। বিশ্বাস আর বিশ্বাসভঙ্গের কাহিনি এত বেশি ব্যবহৃত বাংলা চলচ্চিত্রে ও সাহিত্যে... তাই পরিবেশনায় নতুনত্ব না থাকলে ন্যারেশন একঘেয়ে লাগে। শেষে পুলিশের লাঠির মুখে জুটমিলের শ্রমিকদের ‘শেষ যুদ্ধ শুরু আজ কমরেড’ মনে করিয়ে দেয় একটা সময়কালকে, যার প্রাসঙ্গিকতা আজ মলিন।

অঞ্জনের অভিনয় নিয়মিত বড় পর্দায় দেখা গেলেও মেঘনাদ ও চিরঞ্জিতের অভিনয় এ ছবির বড় প্রাপ্তি। যে লোকটার সযত্নে লালিত কাচের স্বর্গ সকলে ফুৎকারে ধূলিসাৎ করছে, তার যন্ত্রণা-পাগলামি-একরোখামি দুরন্ত অভিনয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন মেঘনাদ। চিরঞ্জিৎকেও অনেক দিন পরে ফর্মে পাওয়া গেল। একদা বামপন্থী চিরন্তন এখন বিয়ার দিয়ে ব্রেকফাস্ট সারে। টি সি পালের সঙ্গে আলাপে পাল্টায় তার জীবনবোধ। তাঁর সঙ্গে অঞ্জনের কথোপকথনের দৃশ্যগুলি গভীর। চোখেমুখে বিপন্নতা ফুটিয়ে তুলতে বরাবরই দড় অঞ্জন দত্ত। পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, পল্লবী চট্টোপাধ্যায় স্বল্প পরিসরে ভাল।

টাইটল কার্ডের পাশে দেখানো হয়েছে আসল কে সি পালের কিছু ভিডিয়ো ক্লিপিং। বইমেলায় তাঁকে ঘিরে জমে থাকা ভিড়। অবিশ্বাসের দুনিয়ায় এই মানুষগুলোর প্রয়োজনীয়তা ঠিক কোথায়, সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল এ ছবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE