একসময় ধারাবহিকের গল্প মানেই দর্শকের মনে বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল, হয় দেখানো হবে একটি নায়কের অনেকগুলো বিয়ে, না হলে দেখানো হবে শাশুড়ি-বৌমার কোন্দল। করোনা পরিস্থিতির পর থেকে কাজের ধরন থেকে ধারাবাহিকের চিত্রনাট্য, সবেতেই পরিবর্তন এসেছে। ২০১৯ পর্যন্ত অনেক ধারাবাহিকই সম্প্রচারিত হত তিন-চার বছর পর্যন্ত। কিন্তু গত কয়েক বছরে এমনও দেখা গিয়েছে, মাত্র তিন মাসেই ধারাবাহিক বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইদানীং চ্যানেল কর্তৃপক্ষ, প্রযোজনা সংস্থাগুলি দর্শককে অন্য স্বাদের গল্প দেওয়ার চেষ্টায় রয়েছে। এক সময় যেমন ‘বাণিজ্যিক ঘরানা’র ছবির একঘেয়েমির মাঝে স্বাদবদল করেছিল ‘ঊনিশে এপ্রিল’, ‘পারমিতার একদিন’-এর মতো ছবিগুলো। ধারাবাহিকের গল্পেও খানিক সেই পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। লেখক, লেখিকারা দাম্পত্যকলহ, সংসারের দ্বন্দ্ব থেকে বেরিয়ে পরিণত প্রেম, শাশুড়ি-বৌমার বন্ধুত্বের গল্প লেখার চেষ্টা করছেন। সেই তালিকায় রয়েছে বেশ কিছু ধারাবাহিক।
আরও পড়ুন:
চিরসখা
টিআরপি তালিকায় যে প্রথমের দিকে জায়গা করে নিয়েছে এই ধারাবাহিক, তেমন নয়। কিন্তু শুরুর দিন থেকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই কাহিনি। তিন সন্তানের মা কমলিনী। স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর, তার বন্ধু স্বতন্ত্রই কমলিনীর পরিবারকে সামলেছে। সময়ের সঙ্গে গভীর হয়েছে কমলিনী-স্বতন্ত্রের সম্পর্ক। তিন ছেলেমেয়ে এখন বড়। ঠাকুরপো-বৌদি থেকে এখন স্বতন্ত্র-কমলিনী হচ্ছে স্বামী-স্ত্রী। এমন গল্প আগে কখনও সে ভাবে ছোটপর্দায় ফুটে ওঠেনি। দর্শকও এই সম্পর্কের পরিণতি দেখার অপেক্ষাতেই ছিল। এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয়, দর্শকের ভাবনাও বদলাচ্ছে। এই গল্প কিছু বছর আগে দেখানো হলে হয়তো অনেক বেশি সমালোচিত হত।
পরিণীতা
রায়ান এবং পারুলের কাহিনিও পরতে পরতে অনেক চমক নিয়ে এসেছে। ছোট শহরের মেয়ে পারুল। পড়াশোনা করতে এসেছে কলকাতায়। উচ্চশিক্ষার জন্য শহরে এসে পাকেচক্রে ইউনিভার্সিটির বন্ধু রায়ানের সঙ্গে বিয়ের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সে। কিন্তু বিয়ের পরেও কলেজের কেউ জানতে পারেনি যে তারা আদপে স্বামী-স্ত্রী। এই সমীকরণ আগ্রহ জাগিয়েছে দর্শকমনে। অনেকগুলো সপ্তাহ ধরে টিআরপি তালিকায় প্রথমে রয়েছে এই কাহিনি।
জোয়ার ভাঁটা
এক সময় দর্শকের ধারণা ছিল সমসাময়িক নায়িকাদের মধ্যে কখনও বন্ধুত্ব হতে পারে না। কিন্তু সেই ধারণা এখন অতীত। অনেক ধারাবাহিকেই একের অধিক নায়ক, নায়িকাদের ভিড়। নায়ক-নায়িকার প্রেম, বিয়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে ‘জোয়ার ভাঁটা’র গল্প বোনা হয়েছে দুই বোনের জীবনকে কেন্দ্র করে। বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে দুই বোনের লড়াই দেখানো হচ্ছে পর্দায়।
কনে দেখা আলো
এই ধারাবাহিক টিআরপি তালিকায় আশানুরূপ ফল করেনি। কিন্তু ধারাবাহিকের শুটিং শুরু হওয়ার আগে থেকে দর্শকের মনে কৌতূহল তৈরি হয়েছিল। কারণ, প্রচার-ঝলক প্রকাশ্যে আসার পর ‘লাপতা লেডিজ়’ ছবির সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছিল অনেকে। সেই সঙ্গে উপরি পাওনা ছিল প্রয়াত অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে সাইনার ছোটপর্দায় নায়িকা হিসাবে আগমন। নতুন বিয়ের পর বর-কনের অদলবদল গল্পে হাস্যরস যোগ করেছিল।
কম্পাস
নায়িকা মানেই সবকিছু ‘পারফেক্ট’। সুন্দর রূপটান, সেই সঙ্গে ঝাঁ চকচকে পোশাক। ‘কম্পাস’-এর গল্প ভেঙেছে সেই ধারা। ছোট করে কাটা চুল, চোখে চশমা— ভেঙেছে তথাকথিত নায়িকার ‘লুক’। গল্পে দেখানো হচ্ছে স্বামী তার নতুন বৌকে না মেনে নিলেও ঢাল হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে শাশুড়ি। টিআরপি তালিকায় ভাল ফল না করলেও গল্পের কারণে এই মুহূর্তে চর্চায় ‘কম্পাস’।