গানটা আমাদের সকলের প্রাণের। সকলের জানা। প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘আমি বাংলায় গান গাই’ যেন ভাষা দিবসের পরিপূরক। এই গান শোনেনি এমন বাঙালি পাওয়া দুষ্কর। বেশ কয়েক বছর আগে ‘ক্রান্তি’ ছবিতে এক বার ব্যবহার করা হয় এই গান। এ বার সেই গানের পুনর্নির্মাণ করলেন শোভন গঙ্গোপাধ্যায়। যদিও শোভন একে নতুন নির্মাণ বলতেই স্বচ্ছন্দ। অভিনবত্ব রয়েছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই বিভিন্ন জেলার মানুষ বাংলা বলেন বিভিন্ন টানে। সে রকমই সাতটি ভাষা মিশে যাবে এই গানে।
আরও পড়ুন:
বাংলা ভাষার রূপ অনেক। বিভিন্ন জেলায় স্থানভেদে বদলেছে বাংলা ভাষার ভঙ্গিমা। বিভিন্ন জেলায় বাংলা ভাষা আঞ্চলিক ছোঁয়া পেয়ে হয়ে উঠেছে ভিন্ন। এই গানে কলকাতা, কোচবিহার, মালদা, পুরুলিয়া, বীরভূম-সহ বিভিন্ন জেলার বাংলা ভাষার নিজস্বতা উঠে এসেছে, জানালেন শোভন। সঙ্গে রয়েছে এই সব জেলার নৃত্যের আঙ্গিক।
প্রায় সাতটি জেলার ভাষাভঙ্গি নিয়ে এই গানটি নির্মাণ করেছেন শোভন, নিজেও মুগ্ধ সেই রেশে। তবে এই গানটির জন্য পরিণত কোনও স্বর নয়, শোভন বেছে নিয়েছেন কচিকাঁচাদের। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা বাংলা ভাষার কদর সে ভাবে করছি না, যত্ন করছি না। বাচ্চারা ভয় পাচ্ছে এই ভাষায় কথা বলতে। বাংলা পরীক্ষার আগে আজকাল নাকি বাচ্চাদের জ্বর চলে আসছে! কিন্তু বিষয়টা যে সাবলীল, সেটা ওদেরও জানিয়ে দেওয়া দরকার। সে জন্য বাচ্চাদের বেছে নিয়েছিলাম।’’
শোভন বলেন, ‘‘মানুষের মনে প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের খালি গলায় গাওয়া গানটি রয়ে গিয়েছে। আলাদা করে কখনও তেমন সঙ্গীতায়োজন করা হয়নি। সেটাই বিশেষত্ব। তাই আমরা গানটার জন্য নতুন করে সঙ্গীতায়োজন করেছি। সঙ্গে প্রতিটি জেলার আলাদা ভাষাবৈশিষ্ট্যকে একসঙ্গে এনে নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছি।’’
তবে কাজটা খুব সহজ নয়। বাংলা ভাষা সংবেদনশীল। সামান্য উনিশ-বিশ হলেই সমালোচনার ভয় থাকে, মানছেন শোভন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এমন একটা মধ্যবিত্ত জায়গা থেকে উঠে এসেছি যে ইংরেজিটা ভাল করে বলতে পারি না। আবার চাই ইংরেজিটা আমাদের ছেলেমেয়েরা বলুক। আমাদের দোষে বাংলা ভাষার অবক্ষয় ঘটেছে। তাই কাজটা করতে গিয়ে আমি আমার ভাষাকে আর বেশি করে চিনব, সে ভাবেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি। আমি তো সব সময় বাণিজ্যিক ভাবে কাজ করে অভ্যস্ত। তাই কাজটা খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল।’’
সান বাংলার উদ্যোগে নতুন ভাবে এই গানটি নির্মাণের সময় প্রতিটি মুহূর্তে সাহায্য পেয়েছেন স্ত্রী সোহিনী সরকারের। বিভিন্ন ভাবে শোভনকে সহযোগিতা করেছেন অভিনেত্রী। নতুন গানটি স্ত্রীকে শোনানোর পর বেশ খুশি হয়েছেন স্ত্রীও, জানালেন শোভন।