প্রেমের সঙ্গে গোলাপ ফুলের সম্পর্ক ঠিক কত দিনের, তার কোনও হিসেব নেই। শব্দের অভাব পড়লে প্রেমিকের মনের ভাষা হয়ে ওঠে একটা লাল গোলাপ। দুরুদুরু বুকে প্রেয়সীর দিকে এগিয়ে যেতেই হয়তো সাহস সঞ্চার করতে হয়েছে তাকে দীর্ঘ দিন ধরে। তার চোখে চোখ রেখে মনের কথা বলে ওঠা আরও কঠিন কাজ। সেই কাজ সহজ করে দেয় একটি ফুল। লাল গোলাপের সমারোহে নিবেদিত হয় প্রেম।
গোলাপের সঙ্গে প্রেমের জোটের রয়েছে এক পুরনো সম্পর্ক। প্রাচীন গ্রিস এবং রোমে গোলাপকে প্রেমের দেবী আফ্রোদিতে বা ভেনাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে ভাবা হত। সেই সময় থেকেই গোলাপ আর প্রেমের সম্পর্কের সহাবস্থান। ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবিতে গোলাপ দিয়ে প্রেম প্রস্তাবের দৃশ্য সকলের মনে গেঁথে রয়েছে। তবে সেই প্রেম প্রস্তাবের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে খুনসুটিও। তবে গোলাপ থাকলে, সঙ্গে কাঁটাও থাকে। সেই কাঁটা ফুটলে রক্তও বেরোয়। ঠিক যেমন, সম্পর্কও শুধু পেলব হয়ে থাকতে পারে না। কখনও মনে, কখনও বা চোখে মেঘ জমতে থাকে। বৃষ্টিও হয়। তা হলে কি গোলাপের চেয়ে অন্য ফুলেই নির্ভর করা শ্রেয়? যে ফুল শুধুই সৌন্দর্যে, গন্ধে ভরিয়ে থাকে। যেই ফুলে নেই বিরহের কাঁটা। এই প্রসঙ্গে নিজেদের মতামত আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন প্রেমী তারকারা।
বর্তমানে সৌরভ দাসের সঙ্গে সংসার করছেন দর্শনা। সম্পর্কে ওঠাপড়া থাকেই, এমনই বিশ্বাস অভিনেত্রীর। দর্শনা বলেছেন, “আমি গোলাপই পছন্দ করি। গোলাপের সঙ্গে কাঁটা আসে ঠিকই। সম্পর্কের ক্ষেত্রেও, প্রত্যেকটা দিন মোটেও সুন্দর হয় না। আমরাও পুরোপুরি ফুলের মতো সুন্দর, এমনও নয়। ভাল-খারাপ মিলিয়েই আমরা। সম্পর্কে ভারসাম্য থাকার সবচেয়ে ভাল উদাহরণ কিন্তু গোলাপই।” তাই প্রায়ই সৌরভকে গোলাপ দিয়ে মনের কথা জানান দর্শনা। তাঁর কথায়, “সৌরভ অন্য শহর বা রাজ্য থেকে ফিরলে ওকে গোলাপ দিয়ে স্বাগত জানাই। সৌরভও আমার জন্য একই কাজ করে।” প্রেমের সপ্তাহের শুরু অর্থাৎ গোলাপ দিবসেও তাই সৌরভকে গোলাপ ফুল দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দর্শনার।
তবে গোলাপ তেমন পছন্দের নয় শোভন গঙ্গোপাধ্যায়ের। বরং যে ফুল সারা ঘর গন্ধে ভরিয়ে রাখে, সেটাই পছন্দ তাঁর। এই বিষয়ে স্ত্রী সোহিনী সরকারের সঙ্গেও মিলে গিয়েছে পছন্দ। শোভন বলেন, “গোলাপকে প্রেমের প্রতীক হিসাবে মনে করা হয় ঠিকই। কিন্তু আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনেই গোলাপ খুব একটা পছন্দ করি না। বরাবরই গোলাপ ফুল আমার তেমন পছন্দ নয়। পরে সোহিনীর সঙ্গে আলাপ হওয়ার পরে দেখি ওরও তাই মত। দু’জনেরই জুঁইফুল, বেল ফুল অথবা লিলি ফুলের দিকেই ঝোঁক বেশি। তাই আমি কখনওই কাউকে গোলাপ ফুল দিইনি। আমার স্ত্রীও পছন্দ করে না। গোলাপ দিবসেও তাই কোনও পরিকল্পনা নেই।”
গোলাপ দিবস সম্পর্কে অবহিত নন পিয়া চক্রবর্তী। এক বছর হয়ে গিয়েছে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সংসার করছেন গায়িকা তথা সমাজকর্মী। সারা বছরই নানা রকম ফুল নিয়ে এসে ঘর সাজান। পিয়ার কথায়, “আমি গোলাপ খুবই ভালবাসি। তবে শুধুই প্রেমের জন্য গোলাপ পছন্দ, এমন নয়। প্রায়ই গোলাপ দিয়ে ঘর সাজাই। আবার কারও বাড়ি গেলেও গোলাপের তোড়া নিয়ে যাই। সব ফুলই আমার পছন্দ। তবে লাল রঙের গোলাপ তেমন পছন্দ নয়। বরং হালকা গোলাপি বা সাদা গোলাপ বেশি পছন্দ। তবে আমার মার্জার ছানার জন্য সেই ভাবে গোলাপ দিয়ে ঘর সাজাতে পারি না কারণ, বাঘা ফুল খেয়ে ফেলে।” সম্পর্কও গোলাপের মতোই, মনে করেন তিনি। তবে পিয়া মনে করেন, “সম্পর্কে ভাল সময় তো থাকেই। তবে তার সঙ্গে নানা স্বাদের মুহূর্তও আসে। সেই ভারসাম্য দেখে রাখতে হয়। কাঁটা বেশি হয়ে গেলে গোলাপটা শুকিয়ে যাবে।”
ফুলের রং নিয়ে ভিন্ন মত রণজয় বিষ্ণুর। লাল গোলাপ প্রেমের প্রতীক, হলুদ ফুল বন্ধুত্বের। অভিনেতার মতে, সিনেমা থেকে এই ধারণা তৈরি হয়েছে মানুষের মনে। তাই রণজয়ের স্পষ্ট মত, “প্রথমত, ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহ নিয়ে আমার তেমন কোনও ধারণা নেই। ১৪ ফেব্রুয়ারিটা জানি। বাকি দিনগুলো নিয়ে সে ভাবে কিছু জানি না। এমনিতে গোলাপ ফুল পছন্দ। তবে রজনীগন্ধার মতো সুগন্ধযুক্ত ফুল আমার বেশি পছন্দের। কিন্তু একটা বিষয় মনে হয়, ছোটবেলা থেকেই আমাদের উপর সিনেমার প্রভাব রয়েছে। আমাদের ছোটবেলায় শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল, বন্ধুকে হলুদ গোলাপই দিতে হয়। লাল গোলাপ দিতে নেই। কিন্তু এখন আমি সেটা মানি না। আমার মনে হলে আমি আমার ভাইকেও লাল গোলাপ দিতে পারি। অন্য দিকে, আমার ভালবাসার মানুষের সাদা গোলাপ পছন্দ হলে, আমি সেটাই দেব।”
গোলাপ ফুলের সঙ্গে প্রত্যেকেরই স্কুল-কলেজের স্মৃতি জড়িয়ে থাকে। কলেজে নবীনবরণের প্রথম গোলাপ মনে সব সময় বিশেষ জায়গা দখল করে থাকে। আবার প্রথম প্রেমের প্রথম গোলাপ অনেকেই ডায়েরির ভাঁজে সযত্নে রেখে দেয়। এমন অভিজ্ঞতাও রয়েছে টলিপাড়ার তারকাদের। অভিনেত্রী দর্শনা বণিক তাই আজও প্রাক্তন প্রেমিকের দেওয়া গোলাপ যত্ন সহকারে রেখে দিয়েছেন। দর্শনার কথায়, “গোলাপ দিয়ে ভরা প্রেমপত্র পেয়েছিলাম। এখনও মনে আছে। প্রাক্তন প্রেমিকের দেওয়া প্রথম গোলাপটা কিন্তু এখনও রেখে দিয়েছি। আবার এমনও হয়েছে, গোলাপ-সমেত প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। তবে আমি বরাবরই নম্র ভাবেই প্রেমের প্রত্যাখ্যান করেছি। কখনও রূঢ় আচরণ করিনি।”
টলিপাড়ার আর এক অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্যও একটা সময় গোলাপ-সহ বহু প্রেম প্রস্তাব পেয়েছেন। তবে হাসতে হাসতেই অভিনেতা জানান, বর্তমানে গোলাপ বা কাঁটা, কোনওটাই দেওয়ার কেউ নেই। তাঁর কথায়, “গোলাপের সঙ্গে কাঁটা তো থাকবেই। যে কোনও সুন্দর জিনিসের সঙ্গে কিন্তু বিপদ জড়িয়ে থাকে। আবার প্রচুর বিপদ অতিক্রম করতে পারলে, আরও সুন্দর একটা গন্তব্যে পৌঁছনো যায়। ভালবাসা ও জীবন, প্রতি ক্ষেত্রেই সেটা প্রযোজ্য। আমার গোলাপ ও লিলি ফুল খুব পছন্দের। তবে গোলাপ পাওয়ার অভিজ্ঞতা কেবল কলেজেই হয়েছে। কেউ গোলাপ দিতে এলে কিন্তু আমি সব সময় গ্রহণ করেছি। গোলাপ নিলেই যে মন দিতে হবে, এর তো কোনও মানে নেই।”
অতঃপর প্রেমে যে গোলাপের অবদান অনস্বীকার্য, তা স্পষ্ট। তবে ক্ষেত্রবিশেষে এর অর্থ বদলে যায়। কবি, লেখক, চিত্রশিল্পীদের দৃষ্টিভঙ্গিতেও গোলাপের নানা রূপ। কখনও বন্দুকের সামনে একটি গোলাপ বন্ধুত্ব ও শান্তির বার্তা দেয়। কখনও কবি গোলাপের সঙ্গে প্রেমিকার সৌন্দর্য মিলিয়ে দেন নিমেষে। তাই কাঁটা যতই থাকুক, সম্পর্কের ভিতে গোলাপের মাহাত্ম্য চিরকালীন।