ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক নির্দেশিকা জারি করেছে, করোনা-সতর্কতার জন্য জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ৬৫ বছরের বেশি বয়সিদের বাড়ি থেকে না বেরনোই বাঞ্ছনীয়। শনিবার, দ্বিতীয় দিনটি কেমন ভাবে কাটালেন অভিনেতা ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়?
ভোর ৬টা
ঘুম ভাঙতেই মনের মধ্যে সবুজ জঙ্গল আর জলের সোঁদা গন্ধ। উত্তর গোয়ায় পোরভোরিমে আমার বাড়িতে আমি আর আমার স্ত্রী আম্মু। তাড়া নেই আজ। এখন তো আমরা সকালে বেরোচ্ছিও না। ওই যে, সরকারের উপদেশ, পঁয়ষট্টির পর বাইরে বেরনো যাবে না। এই বয়সের মানুষের নাকি গৃহবন্দি হওয়াই ভাল, কারণ ধরে নেওয়া হচ্ছে, এই বয়সের মানুষের ইনফেকশনে কাবু হওয়াটার সম্ভাবনা বেশি। আমার কিন্তু নিজেকে বর্ষীয়ান নাগরিক ভাবতে অসুবিধে হয়। দিব্যি শরীরের কলকব্জা চলছে। মানসিক, শারীরিক ভাবেও তো সুস্থ। মাঝে মধ্যে জঙ্গল পাহাড়েও যাচ্ছি। আর আমাকে বেরতেও তো হবে! গোয়ায় তো আমি আর আম্মু। বাইরের কাজ করবে কে?
সকাল সাড়ে ৮টা
এমনিতেই আমার বাড়ির চারপাশ নিস্তব্ধ। ওই পেছনের জঙ্গল থেকে পাখিদের নানা কলরবই একমাত্র আওয়াজ। সকালের দিকে ওইটুকুই। তবে চারপাশের বাড়ি থেকে আগে বাচ্চাদের সকালে-বিকেলে খেলা, হাসির শব্দ আসত। বেশ লাগত। মনে হত জীবনটা চলছে। কিন্তু এই করোনার জন্য চারপাশের বাড়ির সব বাচ্চাই গৃহবন্দি। এখন থমথমে চারিদিক। পিন পড়লেও শব্দ শোনা যাবে। আমি শহরের মানুষ। এত শীতল শব্দহীনতা ভেতরে ভেতরে কেমন যেন অস্বস্তি তৈরি করে।
সকাল সাড়ে ১০টা
পাড়ার মোড়ে বাজারে গিয়ে ভাল লাগল। দোকানপাট খোলা। আশ্বস্ত বোধ করলাম। তবে মোটের ওপর জীবনের বেগ স্থিমিত। রাস্তা ফাঁকা। মানুষ কম। সকলেরই কী একটা যেন হয়েছে!
বেলা ১২টা
আমাকে বেরতে হচ্ছেই। কে বাজার করে আনবে? ওষুধ কিনবে? বেঁচে থাকতে গেলে এ গুলো তো করতেই হবে! আমি যে পরিবেশে আছি সেখানে লোকজন খুব কম। বাইরের বাতাস পরিশুদ্ধ। এই পরিবেশে যে হাঁটাচলা একেবারেই করা যাবে না, এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। স্নান, দুপুরের খাওয়ার সময় হয়ে আসছে। আমরা চেষ্টা করি, দেড়টা-দুটোর মধ্যে দুপুরের খাওয়া সেরে ফেলার।
দুপুর ৩টে
এখন তো শুটিং বন্ধ। মুম্বই, কলকাতা— কোনও দিকেই যাওয়ার পথ নেই। নিজের জন্য অনেকটা সময়। আমার একাকীত্ব কিন্তু বেশ ভাল লাগে। এই সময়টা না পড়া বই, না লেখা কিছু, না শোনা গানের জন্য রাখছি। আজ কি শুধুই দিনপঞ্জি লিখছি? নাহ্, এই যে সারা বিশ্বে করোনার জন্য আতঙ্কের পরিবেশ, এই অবস্থা কি এক মাসের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে? এই ক্রাইসিস কবে মিটবে? কেউ জানি না আমরা। ভাল-খারাপ যে অবস্থাই হোক, মনে হচ্ছে এখান থেকে নিশ্চয়ই কিছু শিক্ষা আমরা নেব। এই বিপর্যয় বলছে, এই ‘লক ডাউন’ বলছে, মানুষ এ বার নিজের লাইফস্টাইল নিয়ে একটু ভাবুক! এই বিপদ সাময়িক নয়। বিকেল হয়ে আসছে। সকালের ঠান্ডা আমেজটা এখন আর নেই।
বিকেল ৫টা
কোনও একটা দিন কিছু না পড়ে আমি থাকতে পারি না। আমার খুব প্রিয় সাহিত্যিক জন লে কেয়ারের বই ‘এজেন্ট রানিং ইন দ্য ফিল্ড’ পড়ছিলাম। ওটাই চলছে এখন, সংগ্রহে যা গানবাজনা, ছবি আছে সেগুলোও দেখছি। বিকেলের চা এল! গরম চায়ের পেয়ালায় চুমুক বেশ আরামদায়ক।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা
এখন তো হাঁটা বাতিল। দুপুরের তাপ কমে এ বার ঠান্ডা ভাব আসবে একটা। ভাবছি, আজ ছবি দেখব। লেখালেখিও করতে পারি, দেখি। এখন ঘড়ি ধরে কাজ করার তাগিদ নেই। ছোটা নেই। তাই বেশ অনেক রাত অবধি আম্মুর সঙ্গে ছবিও দেখা যেতে পারে। কিন্তু একটা বিষয় মাথায় ঘুরছে। এই সঙ্কটে আমরা স্বাস্থ্য নিয়ে এত কথা বলছি। হাত ধোয়া। হাইজিন… এগুলো ঠিক। কিন্তু শুধু স্বাস্থ্য নয়। অর্থনীতির দিকটা, বৃহত্তর সমাজে এর দীর্ঘ প্রভাব, এগুলো নিয়ে ভাবছি কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy