Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Tarun Majumdar

করোনা-যুদ্ধে প্রান্তিক মানুষ কী ভাবে বেঁচে থাকবে? প্রশ্ন তরুণ মজুমদারের

পরিচালক তরুণ মজুমদার লকডাউনের ভাবনা শেয়ার করলেন আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে। শুনলেন মৌসুমী বিলকিসপরিচালক তরুণ মজুমদার লকডাউনের ভাবনা শেয়ার করলেন আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে। শুনলেন মৌসুমী বিলকিস

তরুণ মজুমদার।—ফাইল চিত্র

তরুণ মজুমদার।—ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২০ ১৫:০৭
Share: Save:

তরুণ মজুমদারের সিনেমার চরাচরে ভীষণ ভাবে উপস্থিত প্রকৃতি এবং প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ পিছিয়ে পড়া মানুষ। কখনও মশারি আঁকড়ে ধরে ম্যালেরিয়ায় মৃত সন্তানের জন্য কাঁদেন মা, কখনও ফিল্মের প্রোটাগনিস্টের অভিজ্ঞতায় নিজেদের সুখ-দুঃখ নিয়ে প্রকৃতি ও প্রান্তিক মানুষের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি।

ফিল্ম শুটের সূত্রে সুন্দরবন থেকে উত্তরবঙ্গের নদী-জঙ্গল-পাহাড় ও মানুষ তাঁর চেনা। তাঁর গ্রন্থ ‘বাতিল চিত্রনাট্য’-তে ছড়িয়ে আছে সেই সব গল্প। করোনা সঙ্কটকে তিনি দেখছেন ‘পোয়েটিক জাস্টিস হিসেবে প্রকৃতির প্রতিশোধ’। মানুষ যথেচ্ছ ভাবে প্রকৃতির অবমাননা করেছে। এই ভাইরাস তারই ফলশ্রুতি, মনে করেন তিনি। তাঁর কথায়: “মানুষের সমাজের বাইরে থাকা পশুপাখি যদি প্রতি-আক্রমণ করে তা হলে সভ্য সমাজের কী দুর্দশা হবে?”

লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন তিনি। বললেন, “যখন লকডাউন ঘোষণা করে সবাইকে বাড়িতে থাকতে বলা হয়, তখন এঁদের প্রতি সরকারের একটা দায়িত্ব থেকে যায়, এঁদের কী করে নিজের ঘরে ফিরিয়ে দেওয়া যায়। তা না হলে বান্দ্রায় যা ঘটেছে সে রকম ঘটনা আরও ঘটবে।”

স্কুলে আটকে রয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা।

আরও ুপড়ুন: কার্তিক আরিয়ানের ভিডিয়োয় গার্হস্থ্য হিংসার ইঙ্গিত? উত্তাল বলিউড

লকডাউনে সচ্ছলদের বাড়িতে থাকতে অসুবিধা হচ্ছে ঠিকই, অসচ্ছলদের অসুবিধা আরও বেশি। যাঁদের ভিক্ষান্নে দিন চলে তাঁরা যে কী অবস্থায় আছেন ভাবতে পারছেন না তরুণবাবু। তাঁর মতে, “আমরা যখন একটা সমস্যার মোকাবিলা করব তখন সব থেকে পিছিয়ে পড়া অংশটার কথা সবার আগে ভাবা উচিত। এর জন্য কে দায়ী, কে নয় সেই তর্কের ভেতর ঢুকতে চাইছি না। কিন্তু যাঁরাই দায়ী হন না কেন তাঁরা অত্যন্ত নিন্দাযোগ্য বলে মনে করি।”

তিনি নজর রাখছেন সারা দেশের ঘটনাপ্রবাহের উপর। মনে করলেন টুকরো টুকরো ঘটনাগুলি। দেশের অনেক মানুষের খাদ্যসঙ্কট। মা খেতে দিতে না পেরে দুই সন্তানকে নদীতে ফেলে দিয়েছেন। কোথাও গাছের কচি পাতা বা কচুপাতা সেদ্ধ করে খাচ্ছেন মানুষ। দিল্লি থেকে হাঁটতে শুরু করেছিলেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। তাঁরা চেয়েছিলেন কাজ ও জীবনের নিরাপত্তা। কিন্তু ৩২৫ কিলোমিটার হাঁটার পরে দু’জন যুবকের রাস্তায় পড়ে মৃত্যু হয়। চার দিকে দুরবস্থা। সমাধান জানা নেই। প্রচুর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ছোট ছোট জায়গায় প্রশংসাযোগ্য কাজ করছে। কিন্তু এত বড় দেশ, শুধু ছোট ছোট সংস্থা বা ব্যক্তির কাজ দিয়ে সবার সমস্যা মিটবে না। ব্যক্তি বা সংস্থার বার বার সাহায্য করার মতো সংস্থানও নেই বলে তিনি মনে করেন।

অনেক মানুষ যে-কাজে হাত পাকিয়েছেন, সে-কাজ হারিয়ে অদক্ষ কাজে যোগ দিচ্ছেন। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে মানুষ এটা করতে পারে। তরুণবাবুর কথায়: “আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, এই সময়ে রাজ্য সরকার আর কেন্দ্রীয় সরকার মাঝে মাঝে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে। মনে হচ্ছে যে এরা দেশের মানুষের বিপক্ষে কাজ করছে। এই সময়টা মতবিরোধের সময় নয়। চুলোয় যাক ভোট, চুলোয় যাক সব কিছু। এখন দেশের মানুষকে বাঁচানোটাই প্রথম কাজ।”

আরও ুপড়ুন: বাঙালির জীবন নয়, বাঙালির ভোট নিয়ে বিজেপি বেশি চিন্তিত

কিছু দিন আগে একটি ডকু-ফিচার করার সূত্রে পরিচালক জেনেছেন, দেশের মোট শ্রমশক্তির শতকরা ৯৪ ভাগ অসংগঠিত শ্রমিক। যাঁদের চাকরির নিশ্চয়তা নেই, কাজের নিশ্চয়তা নেই, যাঁদের যে কোনও দিন কাজ থেকে বার করে দেওয়া যেতে পারে। আর এক দল আছেন যাঁরা প্রতি দিন রোজগার করেন এবং সন্ধ্যের সময় খাবার কিনে বাড়ি ফেরেন। এক জন রিকশাওয়ালা, অটোওয়ালা, রাস্তার মুটে থেকে শুরু করে ছোট ছোট দোকানদার, এ রকম অনেকেই সেই অর্থে শ্রমিক নন। কিন্তু এঁদের অবস্থা শ্রমিকদের মতোই শোচনীয়, মনে করিয়ে দিতে চান তিনি।

এখন বেকার হয়ে দিন কাটাচ্ছেন অনেকে।

এক দিকে অনেক দিনমজুর রেশন কার্ডের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ‘রোজ’ নষ্টের বিলাসিতা করতে পারেননি। রেশন কার্ড নেই। মিলছে না ত্রাণ। অন্য দিকে, রেশন কার্ড নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগও তাঁর ভাবনায় ধাক্কা দিচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে কোনও কোনও জায়গায় গরিব মানুষের রেশন কার্ড সামান্য ‘দাদন’ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন ডিলার। সঠিক ব্যক্তির কাছে ত্রাণ পৌঁছচ্ছে না।

তরুণবাবুর মতে, “রেশন কার্ড নিয়ে সমস্যার অনেকগুলো দিক আছে। আমার ভাবতে দুঃখ হয় যে কোনও রকমে আমি চালাচ্ছি, আমি খাচ্ছি, আমার কাজ করছি। কিন্তু আমারই দেশের লোক... অনেক গ্রামে শুটিং করেছি। গ্রামের মানুষগুলোর কথা মনে পড়ে। টেলিফোনে এখনও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। তাঁদের কষ্টের কথা আমি জানি (কিছু ক্ষণ চুপ করে গেলেন)।”

শেষটা দেখতে চান তরুণ মজুমদার। এখনই চিত্রনাট্য লিখছেন না, ভাবছেন না ফিল্ম করার কথাও। তিনি বলছেন, “লকডাউন আমাদের শিল্পক্ষেত্রকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে, তেমনই আমাদের চলচ্চিত্রের যে ক্ষেত্রটা আছে তাকেও সম্পূর্ণ চুরমার করে দিয়েছে। আমি না হয় অল্প ছবি করি। কিন্তু যাঁরা নিয়মিত ছবি করেন, তাঁদের উপরেই অনেক টেকনিশিয়ান এবং শিল্পীকে নির্ভর করতে হয়। এই ক্ষেত্রটি ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। আমার কাছে কোনও উত্তর নেই, এঁরা কী ভাবে বাঁচবেন। আমার হাতে এঁদের বাঁচাবার মতো ক্ষমতা নেই। যাঁদের হাতে ক্ষমতা আছে তাঁরা কী করেন সেটা খুব উৎসুক ভাবে লক্ষ্য করব।”

হল, মাল্টিপ্লেক্স বন্ধ। সিনেমা শিল্প সঙ্কটের মুখে। তিনি মনে করেন, “এই সঙ্কট আগেই তৈরি হয়েছিল। হয়তো এ বার সেটা ক্লাইম্যাক্সে যাবে। এমন কিছু হোক যাতে সবার ভাল হয়। এটাই চাই।”

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tarun Majumdar Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE