বলিউডে তাঁর অভিষেক হয় আমির খানের সঙ্গে ‘তারে জ়মিন পর’ ছবিতে। তার পর দীর্ঘ সময় অনেকেই খুঁজেছেন সেই সময়ের শিশু শিল্পী দর্শিল সাফারিকে। ‘তারে জ়মিন পর’-এ অভিনয়ের সময় দর্শিলের বয়স ছিল মাত্র দশ। যদিও এখন সে পূর্ণবয়স্ক পুরুষ। একটা লম্বা সময় অন্তরালে ছিলেন। যদিও সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘সিতারে জ়মিন পর’ ছবির প্রদর্শনীতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। নিজের প্রথম ছবির সাফল্যের পর হাতভর্তি কাজ যে পেয়েছেন তেমন নয়। আমিরের সঙ্গে অভিষেক কেরিয়ারে বাড়তি গতি দিতে পারল না দর্শিলকে! ‘সিতারে জ়মিন পর’ ছবিতে সুযোগ না পাওয়ার আক্ষেপ রয়েছে তাঁর। আনন্দবাজার ডট কমের মুখোমুখি দর্শিল সাফারি।
প্রশ্ন: খুব অল্প বয়সে সাফল্য দেখেছেন। সেটা কি আশীর্বাদ, না কি বিড়ম্বনা?
দর্শিল: (খানিক ভেবে) না, বিড়ম্বনা নয়। আমার ক্ষেত্রে মনে হয় সবটাই আশীর্বাদ। আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি। বলতে পারেন, আমি হয়তো জীবনকে এ ভাবেই দেখি। আমি আসলে জীবন নিয়ে খুব আশাবাদী। বরাবর ইতিবাচক দিকটা দেখতেই পছন্দ করি। খ্যাতি তখনই অভিশাপ হয়ে যায়, যখন আপনি বুঝতে পারেন একের পর এক ভুল কাজ করছেন এবং শেষমেশ হাল ছেড়ে দেন। কিন্তু আমি হাল ছাড়ার পাত্র নই। আমি জীবনে ভালমন্দ যা-ই দেখেছি, আমার কাছে সবটাই অভিজ্ঞতা। এই আশীর্বাদ বা অভিশাপ কোনওটাই তো আমার হাতে নেই।
প্রশ্ন: আপনার এখন ২৮ বছর। নিজের মধ্যে কোন জিনিসটার পরিবর্তন চান?
দর্শিল: পরিবর্তন বলতে অভিনেতা হিসেবে নিজেকে ঘষামাজা করে আরও ভাল করতে চাই। যে কোনও চ্যালে়ঞ্জ যাতে নিতে পারি।
প্রশ্ন: চেষ্টা করেননি ‘হিরো’ হয়ে উঠতে?
দর্শিল: আসলে আমি হিরো হয়ে ওঠার চেষ্টা করিনি। এই ইন্ডাস্ট্রিতে যাঁরাই নিজের ভাগ্যান্বেষণে আসেন, তাঁরা হিরো হতে আসেন না। যাঁরাই হিরো হতে আসেন, তাঁদের জন্য রাস্তাটা বড্ড প্রতিকূল হয়ে যায়। অমিতাভ বচ্চন থেকে শাহরুখ খান, আমির খান সকলেই অভিনয় করতে এসেছিলেন। তার পর নিজেদের কাজের জোরে হিরো হতে পেরেছেন। তাই নিজের শৈল্পিক সত্তাটার উপর সব থেকে বেশি জোর দেওয়া উচিত।
প্রশ্ন: ‘তারে জ়মিন পর’-এর পরে মাঝে প্রায় ২০ বছর কী করছিলেন?
দর্শিল: আমি খানিক পড়াশোনায় মনোযোগী হই। আমি মাস মিডিয়া নিয়ে স্নাতক পড়াশোনা শেষ করি। তার পরে একটা লম্বা সময় প্রায় ৮ বছর থিয়েটার করি। যেখানে অভিনয়টা শিখি আর কী।
প্রশ্ন: প্রথম ছবির পর জীবনে ঠিক কী বদল এসেছিল?
দর্শিল: এত ভালবাসা পেয়ে গিয়েছিলাম রাতারাতি যে, বুঝতে পারছিলাম না কী করব! আমি খানিক যেন নিজের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। বড় হওয়ার পর বুঝতে পারি, ঠিক কী হয়েছিল।
প্রশ্ন: ঈশান অবস্তিকে নিজের পরিচিতির থেকে এত বছরেও আলাদা করতে পেরেছেন কি?
দর্শিল: না, পারিনি। দর্শক এখনও ওই নামে ডাকতে ভালবাসেন। মজার কথা হল, আমি কিন্তু ওই চরিত্রটা হয়ে ওঠার জন্য অভিনয়ই করিনি। কারণ, অভিনয়ের কোনও জ্ঞান ছিল না তখন। আমি তো খেলতে খেলতে গোটাটা করে ফেলি।
প্রশ্ন: ‘তারে জ়মিন পর’ ছবির পর ‘সিতারে জ়মিন পর’ ছবি মুক্তি পেল। অনেকেই ভেবেছিলেন দর্শিল থাকবেন!
দর্শিল: হুম, প্রথমে ভেবেছিলাম যে এটা হয়তো প্রথম ছবি সিকুয়েল। কিন্তু এটা একটা বিদেশি ছবির রিমেক। আর আমির স্যর ও গোটা টিম যা ভেবেছেন ঠিকই ভেবেছেন হয়তো। আর দর্শকদের ছবিটা ভাল লাগছে, এটাই তো অনেক। তবে আমি সুযোগ পেলাম কি না এ সব নিয়ে ভাবি না, নিজেকে পরিশ্রম করে যেতে হবে।
প্রশ্ন: এতগুলো বছর পর আমির ও আপনি ফ্রেমবন্দি হলেন ‘সিতারে জ়মিন পর’ ছবির প্রিমিয়ারে। কতটা বদল দেখলেন?
দর্শিল: আমির স্যার এতটুকু বদলাননি। ‘সিতার জ়মিন পর’ ছবির প্রিমিয়ারে আমাদের দেখা হল। উনি দেখামাত্রই জড়িয়ে ধরলেন। দু’জনের মধ্যে একটা ইতিবাচক আদানপ্রদান। আমার যে সিরিজ়টি সবে মুক্তি পেয়েছে ‘গেমারলোগ’, সেটার ট্রেলার উনি দেখেছেন। খুব পছন্দ করেছেন।
প্রশ্ন: নতুন প্রজন্মের গেমের প্রতি একটা আসক্তি আছে। আপনার এই সিরিজ় সেই নেশাকে বাড়তি প্রশ্রয় দেবে না কি?
দর্শিল: আসলে কোনও জিনিসের প্রতি আসক্তিই তো ভাল নয়। মানুষের কোনও জিনিসের উপর আসক্ত তখনই হয়, যখন সে কোনও কিছুর থেকে পালাতে চায়। আমাদের সিরিজ়ে গেমের ভালমন্দ নিয়ে কোনও জ্ঞান দেওয়া হয়নি। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছেলেমেয়েরা একটা জায়গায় জড়ো হয়েছে এবং তার পর তাদের জীবনের গল্প উঠে আসবে এখানে। একেবারে বিনোদনের কথা মাথায় রেখেই এই সিরিজ়টা বানানো হয়েছে।
প্রশ্ন: আপনার কোন জিনিসের প্রতি আসক্তি আছে?
দর্শিল: প্রত্যেকের কিছু না কিছু জিনিসের প্রতি আসক্তি থাকে। আমি চকলেট খেতে খুব ভালবাসি।
প্রশ্ন: বেশি চকলেট দাঁতের পক্ষে ক্ষতিকারক, ওজনও বাড়ে
দর্শিল: না, দাঁতের আমি যত্ন নিই।
প্রশ্ন: আপনার জীবনে আমিরের প্রভাব কতটা?
দর্শিল: আমির খান আমার কাছে শিক্ষক, আবার আমার বাবার মতো। ওঁর কাছে মাস্টার ক্লাস যখন করেছিলাম, তখন আসলে কিছুই বুঝতে পারিনি। বড় হওয়ার পর বুঝলাম, আসলে সেই সময় কী শিখেছি।
প্রশ্ন: কখনও আমির খান ও আপনার মধ্যে কাজ নিয়ে কথা হয়নি?
দর্শিল: কাজ অবশ্যই করতে চাই। কিন্তু তাঁর জন্য দরকার একটা সঠিক সময় ও ভাল চিত্রনাট্য।
প্রশ্ন: আপনার কী মনে হয়, তারকা-সন্তান হলেই সুযোগ এবং ভুল শোধরানোর জায়গা অনেক বেশি বলিউডে?
দর্শিল: আমি এটা নিয়ে তেমন কিছু বলতে চাই না। স্বজনপোষণ কিংবা তারকা-সন্তান যে যা-ই বলুন, আসলে প্রতিভাই শেষ কথা। পরিশ্রম ও প্রতিভা, এই দুটো থাকলে স্বজনপোষণ নিয়ে কেউ কোনও মন্তব্য করতে পারবে না।
প্রশ্ন: নতুন প্রজন্মের অভিনেতা আপনি। আপনার কি মনে হয় ওটিটিতে যৌনতা ও রক্তপাতই যেন মূল উপজীব্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে?
দর্শিল: আমার মনে হয় দর্শক খুবই বুদ্ধিমান। তাঁরা জানেন কী দেখবেন। নির্মাতারাও কিন্তু সবটা জেনেবুঝে তেমনই গল্প তৈরি করছেন। কেউ কিন্তু কাউকে জোর করছেন না।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে উগ্র পৌরুষ নিয়ে বেশ কিছু ছবি বা সিরিজ় হচ্ছে। আপনার যে ইমেজ, কখনও এমন ধরনের চরিত্র করতে চাইবেন?
দর্শিল: আমার মনে হয় অভিনেতা হিসেবে চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করব। কারণ, সমাজে এই ধরনের লোক আছে বলেই ছবি হচ্ছে। উগ্র পৌরুষের ছবি করতে আপত্তি নেই। কিন্তু এটা নিশ্চিত করব, লোকে যাতে এটা দেখে প্রভাবিত না হয়।
প্রশ্ন: তারকা-সন্তানদের সঙ্গে সত্যি কি ‘আউটসাইডার’দের প্রতিযোগিতা আছে?
দর্শিল: না, না। তেমন কিছু নয়, খামোখাই লোকে ধুয়ো দেন। আমরা সকলেই একে অপরকে সাহায্য করি। প্রচুর তারকা-সন্তান রয়েছেন যাঁরা আামার বন্ধু।
প্রশ্ন: তারকা হলে কি ভাল অভিনেতা হওয়া যায় না?
দর্শিল: আমি নিজেরটা বলতে পারি। আমি একজন ভাল অভিনেতাই হতে চাই। কাজ করে গেলে সাফল্য এমনিই আসবে।
প্রশ্ন: আমির খানের কাছে কখনও কাজ চাইতে গিয়েছেন?
দর্শিল: যখন যা হওয়ার তখন সেটা হবেই। আমি নিজে থেকে কোনও চেষ্টা করিনি কারও কাছে যাওয়ার। আমি নিজে সেই জায়গাটায় পৌঁছোতে চাই, যেখানে লোকে নিজে থেকে আমাকে ডাকবে।