সদ্য পদোন্নতি হয়েছে। অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার থেকে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার তিনি। প্রশাসনের বড় বড় দায়িত্ব অলোক সান্যালের কাঁধে। তার ফাঁকেই একের পর এক ছবি, সিরিজ়ে অভিনয় করে চলেছেন। সদ্য মুক্তি পেয়েছে রাজা চন্দের সিরিজ় ‘বিভীষণ’। পর্দায় ‘পেশা বদলে’ তিনি চিকিৎসক! এর পরেও মন খারাপ, এখনও কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবিতে অভিনয় করে ওঠা হয়নি তাঁর।
কেমন লাগল অন্য পেশার চরিত্রে অভিনয় করে? প্রশ্ন রেখেছিল আনন্দবাজার ডট কম। অলোকের যুক্তি, “নিজের চরিত্রে যখন অভিনয়ের সুযোগ পাই, বিশ্বাস করুন, নতুনত্ব পাই না। কারণ, বাস্তবে আমি যা সেটাই পর্দায় তুলে ধরার সুযোগ পাই। অন্য পেশার চরিত্র আমায় টাটকা অক্সিজ়েন জোগায়। মন ভাল করে দেয়।” তাঁর মতে, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাও কিন্তু সংস্কৃতিমনস্ক। সারা দিন অপরাধজগতের সঙ্গে কাটানোর পরে দিনের শেষে কেউ বাদ্যযন্ত্রী, কেউ গায়ক, কেউ বা লেখালেখি করেন। এ ভাবেই নিজেদের ভাল রাখেন তাঁরা।
জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের ‘দ্য একেন: বেনারসে বিভীষিকা’ ছবিতে অলোক সান্যাল। ছবি: ফেসবুক।
শুধুই রাজার সিরিজ়ে নয়, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের ‘দ্য একেন: বেনারসে বিভীষিকা’তেও তিনি চিকিৎসকের চরিত্রে। বারাণসীতে গিয়ে শুটিং করেছিলেন। “সেই ছবি সুপারহিট। ৩ কোটিরও বেশি ব্যবসা দিয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাই রাজার সিরিজ়ে কাজে লাগিয়েছি। পাশাপাশি, আমার একাধিক চিকিৎসক বন্ধুও রয়েছেন। তাঁদের কিছু বৈশিষ্ট্য পর্দায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।” তাঁর বহু উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে অন্যতম রাজ চক্রবর্তীর সাম্প্রতিক ছবি ‘সন্তান’। এই ছবিতে তিনি পর্দায় মিঠুন চক্রবর্তীর ‘বেয়াই’! ঋত্বিক চক্রবর্তী তাঁর ছেলে।
সদ্য আরও একটি ছবিতে নিজের পেশার বাইরে গিয়ে অভিনয় করলেন তিনি। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ছবিতে তাঁকে এক রাজার ভূমিকায় দেখা যাবে।
যিনি সারা ক্ষণ পুলিশের পোশাকে তাঁর গায়ে রাজামশাইয়ের পোশাক কতটা মানাল? রাজা সেজে কেমন লাগল অলোকের?
প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলেছেন তিনি। বলেছেন, “সৃজিত ছবির ভিতরে ছবি দেখাতে চলেছেন। এক পরিচালক চৈতন্যদেবের জীবন নিয়ে ছবি বানাচ্ছেন। সেখানে রাজার চরিত্রাভিনেতা আমি। ভারী পোশাকে সেজে গোঁফ লাগানোর পর নিজেকে দেখে নিজেই চমকে গিয়েছি। ছোট চরিত্র। কিন্তু অন্য রকম অভিজ্ঞতা।” পেশার কারণেই বড় চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সময় দিতে পারেন না। সদ্য ছোট পর্দা থেকে ধারাবাহিক ‘লক্ষ্মীর ঝাঁপি’তে অভিনয়ের ডাক পেয়েছিলেন। “ধারাবাহিকে কাজ মানে রোজ শুটিং। তাতে অনেকটা সময় চলে যাবে। কাজের ক্ষতি হবে। তাই ‘না’ বলতে হল”, একটু বুঝি ক্ষুণ্ণ তিনি।
নিজেকে তাই বুঝিয়েছেন, পেশাজীবনও সমান গুরুত্বপূর্ণ তাঁর কাছে। তাই মন দিয়ে আপাতত প্রশাসনিক কাজ সামলাবেন। অবসর নেওয়ার পর পুরো সময় দিয়ে দেবেন অভিনয়ে। বাংলা বিনোদনদুনিয়ার কমবেশি প্রায় সমস্ত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করে ফেলেছেন। কারও ছবিতে কাজ করা বাকি? অলোকের আফসোস, “এখনও কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবিতে অভিনয় হল না! ওটা আমার স্বপ্ন।” পরিচালক যখন, যাঁর জন্য চরিত্র লেখেন বড্ড যত্ন নিয়ে লেখেন। এক দিন এ রকমই কোনও চরিত্র লিখে তাঁকে ডাকবেন কৌশিক, স্বপ্ন দেখেন ডেপুটি পুলিশ কমিশনার।
রাজ চক্রবর্তীর ‘সন্তান’ ছবিতে অলোক সান্যাল, ঋত্বিক চক্রবর্তী, খরাজ মুখোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
প্রশাসন আর বিনোদন, দুই ভিন্ন মেরুর পেশাজীবন। কী করে মেলান তিনি? অলোকের কথায়, “একটি পেশা অন্যটি নেশা। তাই হয়তো মিলে যায়।” আরও একটি শখ আছে তাঁর, হাড়হিম খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করার। “মুণ্ডিত মস্তক, লম্বা-চওড়া পেটাই চেহারা। এই চরিত্রে আমায় মানাবে না?”, হাসতে হাসতে জানতে চাইলেন ডেপুটি কমিশনার।