Advertisement
E-Paper

বাঙালির আমাজন-সাফারি

সেই রুকস্যাক প্রথম বিশ্বযুদ্ধের গোড়ার সময়কার। বাংলার কেউটিয়া গ্রামের শঙ্কর চৌধুরীর (‌দেব) কাছে টেলিগ্রাম আসে ইতালীয় নৃতত্ত্ববিদ অ্যানা ফ্লোরিয়ানের (শ্বেতলানা গুলোকাভা)।

অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:০১

দেখো রে নয়ন মেলে আমাজনের কী বাহার— পপকর্নের ঠোঙা হাতে ‘আমাজন অভিযান’ দেখতে দেখতে এ কথা বলাই চলে। কারণ, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় আমাজনের ‘ওয়াইল্ড লাইফ’ এবং মানুষের বিচিত্র জীবনধারাকে রুকস্যাকে পুরে হাজির হয়েছেন সিনেমার পরদায়।

সেই রুকস্যাক প্রথম বিশ্বযুদ্ধের গোড়ার সময়কার। বাংলার কেউটিয়া গ্রামের শঙ্কর চৌধুরীর (‌দেব) কাছে টেলিগ্রাম আসে ইতালীয় নৃতত্ত্ববিদ অ্যানা ফ্লোরিয়ানের (শ্বেতলানা গুলোকাভা)। অ্যানার কেউটিয়ায় আসা তার মদ্যপ বাবা পিয়ানিস্ট ও অভিযাত্রী মার্কোর (‌ডেভিড জেমস) জন্য দ্বিতীয় অভিযানের প্রস্তুতি-সূত্রে। মার্কো-শঙ্কর-অ্যানার অভিযানের যাত্রাপথ, অ্যানাকোন্ডার আক্রমণ, শঙ্করের প্রতিশোধ এবং শেষে ‘এল ডোরাডো’ আবিষ্কার করতে পারল কি না— সংক্ষেপে এটাই সিনেমার গল্পের রেখাচিত্র।

এই গল্পকে ল্যাবরেটরিতে কাটাছেঁড়া করলে কয়েকটা দিক উঠে আসে। প্রথমত, পরিচালক ‘ডিটেলিং’ এবং ‘ইতিহাস’-এর প্রতি যথাসম্ভব নিষ্ঠাবান। তাই জীবনযাত্রার বর্ণনায় ব্রাজিলের জনপ্রিয় মদ কাশাচা বা পিঙ্গার কথা আসে। তেমনই আসে ‘আমাজন রবার বুম’, সোনার (রবার) লোভে ইউরোপীয় ‘প্রভু’দের অত্যাচারের কথা। দ্বিতীয়ত, শঙ্কর পরাধীন ভারতবাসী। তিনি বোঝেন সামাজিক-রাজনৈতিক ভাবে প্রান্তিক মানুষের কথা। আর তাই ক্রীতদাসকে চাবুক মারতে দেখলে বন্দুক ওঠে তার হাতে। আবার ভবিষ্যতের রক্তপাত এড়াতে চেপে যায় ‘এল ডোরাডো’ আবিষ্কারের কথা। তৃতীয়ত, আমাজনের ‘লোকাল কালার’গুলো বেশ ফুটেছে এই ছবিতে। আমাজন যে শুধু জীবজন্তু, নদীনালা নয়, সামগ্রিক ভাবে একটি সভ্যতা। এই সারকথা বোঝাতেই যেন বোরোরো, কুলিনা, মুরা প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর কথা এসেছে। চতুর্থত, পরিচালক কল্পনাবিলাসে ছিমছাম। আর তাই মার্কো বা পরে শঙ্কর-অ্যানাকে বাঁচাতে ‘ভার্জিনস অব দ্য সান’ বলে পরিচিত উপজাতি মহিলা যোদ্ধাদের আবির্ভাব কাকতালীয়। কিন্তু এর মধ্যে সচেতন দর্শক ‘ইনকা সভ্যতা’র স্মৃতি খুঁজে পেতে পারেন। পঞ্চমত, এই সিনেমায় ওয়াইল্ড লাইফ জমজমাট। তাই উপস্থিতি ইলেকট্রিক সিল মাছ, কালো বাঘ, গ্রিন অ্যানাকোন্ডা, বিষাক্ত সোনা ব্যাং, কুমির, র‌্যাটল স্নেক, জাগুয়ারের দল।

আমাজন অভিযান

পরিচালনা: কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়
অভিনয়: দেব, শ্বেতলানা গুলোকাভা, ডেভিড জেমস, লাবণি সরকার
৬.৫/১০

অভিনয়ে দেব তাঁর পূর্ববর্তী সিনে-চরিত্রের তুলনায় অনেকটাই পরিণত। এখানে তাঁর অতিমানবীয় হয়ে ওঠার সুযোগ ছিল। কিন্তু তিনি তা হননি। শঙ্কর একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই রয়ে গিয়েছে। কয়েকটা অভিযানের কারণে তার সিক্সথ সেন্স একটু বেশি। কিন্তু বিপদে সে ভয় পায়। আবার কখনও চিন্তিতও। এখানেই জিতে গিয়েছেন অভিনেতা দেব। তাঁর বাংলা উচ্চারণ এবং অভিনয় ভঙ্গিমার উন্নতি বেশ চোখে পড়ে। ডেভিড বেশ দক্ষ অভিনেতা। শ্বেতলানা তৎসম-শব্দবহুল বাংলায় কাজ চালিয়েছেন। সৌমিক হালদারের সিনেমাটোগ্রাফি অতুলনীয়। আবহসংগীতে লোক-সুরকে কাজে লাগিয়ে ফের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন দেবজ্যোতি মিশ্র। অ্যানাকোন্ডা নিধন-সহ অন্যান্য ‘অ্যাকশন’ দৃশ্যও দিব্যি উতরে গিয়েছে।

তবে এই ‘আমাজন অভিযান’-এ যুক্তি পরম্পরা কোথাও কোথাও ধাক্কা খেয়েছে। যেমন দড়ির সেতু দুর্বল বুঝেও তা পারাপারের সময় একসঙ্গে তিন জন ঘোড়া-সহ কেন যে যেতে গেলেন, বোঝা দায়। আবার অভিযানের মূল পর্বে অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান নেই। কিন্তু শেষ ক’দিন বাদে অভিনেতাদের পোশাক-পরিকল্পনায় এর কোনও ছাপই নেই। চিত্রনাট্য ও সংলাপ আরও শক্তিশালী হলে অভিযানও জমত ভাল। অহেতুক পর্তুগিজ, স্প্যানিশ শব্দের ফুলঝুরি বাঙালি কানে খোঁচা দেয়। ব্রাজিল ও আমাজনের ভূ-প্রকৃতির ধারাবিবরণীতে পরিচালক যেন ভূগোলের শিক্ষক। তাই কোনও কোনও সময় যেন অভিযানকে ছাপিয়ে ‘সাফারি’ই হয়ে ওঠে এই সিনেমা।

এ সব দুর্বলতা বাদে আমাজনকে বাঙালি চোখে দেখতে চাইলে সিনেমাটি দ্রষ্টব্য। কারণ, হলিউডি অ্যাডভেঞ্চার ফিল্মকে একটু মাথা থেকে বের করে রাখলে এ ছবি কিন্তু বাংলা সিনেমায় নিঃসন্দেহে নতুন সাহসী চেষ্টা। সে জন্য দর্শকের ধন্যবাদ অবশ্য প্রাপ্য পরিচালকের।

Celebrities Tollywood Amazon Obhijaan Kamaleshwar Mukherjee Dev আমাজন অভিযান কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় দেব
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy