তাঁর ছবিতে সবাই স্বাগত। গত কয়েক বছর ধরে দেবের ছবিতে তাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কখনও বিরোধী দলের মিঠুন চক্রবর্তী, কখনও রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। গত কয়েক বছর ধরে নন্দনে তাই তাঁর ছবি নেই!
গুঞ্জন, এ বছরে সেই ধারা অব্যাহত। একই সঙ্গে আরও প্রেক্ষাগৃহেও নাকি শো পায়নি অভিজিৎ সেন পরিচালিত ‘প্রজাপতি ২’। নন্দন ছাড়া নবীনা প্রেক্ষাগৃহেও দেখানো হচ্ছে না ছবিটি। শোনা গিয়েছিল, অশোকা প্রেক্ষাগৃহে ছবির শো নিয়েও নাকি সমস্যা হয়েছে।
কেন এরকম ঘটল? কেন নবীনা প্রেক্ষাগৃহে ছবি নেই তাঁর? সবিস্তার জানতে আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল দেব, ছবির প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরী এবং হলমালিক নবীন চৌখানির সঙ্গে। দেব এবং অতনু ফোনে সাড়া দেননি। তবে ফোনে সাড়া দিয়েছেন দেবঘনিষ্ঠ নবীন। বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি। তবে তাঁর প্রেক্ষাগৃহে কেন ‘প্রজাপতি ২’ নেই, সে নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। কথা বলেছেন অশোকা প্রেক্ষাগৃহের মালিক প্রবীর রায়। তিনি বলেছেন, “কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছিল। তবে সোমবার সন্ধ্যায় সেই সমস্যা মিটে গিয়েছে। আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। সব বিক্রিও হয়ে গিয়েছে। প্রথম দিনেই অশোকায় ‘প্রজাপতি ২’ হাউসফুল।”
এরকম কিছু যে ঘটতে পারে তার আগাম আভাস অবশ্য সোমবার ছবির ট্রেলারমুক্তি অনুষ্ঠানে আনন্দবাজার ডট কম-কে দিয়েছিলেন দেব। আগের বারেও ‘প্রজাপতি’র মুক্তির সময় প্রেক্ষাগৃহ পাওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। সে প্রসঙ্গ তুলতেই দেব বলেন, “‘প্রজাপতি’ নামের সঙ্গেই যুদ্ধ। এ বারেও যে ছবিমুক্তি নিয়ে যুদ্ধ হবে তার আভাস পেয়েছি সকাল থেকেই।” হেসে ফেলে কটাক্ষও করেন, “নিজের বন্ধুদের সঙ্গেই ভালবাসার (পড়ুন অসহযোগিতার) কথা চলছে।” ক্ষোভের আঁচও যেন ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁর পরবর্তী কথায়। দেব বলেন, “যে দিন আমি স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দেব, যে দিন আমি এটা ভাবা বন্ধ করে দেব যে, বাংলা ছবিকে নিয়ে আর ভাবার দরকার নেই, যা আছে ঠিক আছে, সে দিন আর কারও সঙ্গে লড়াই হবে না। সবাই আমাকে ভালবাসবেন, আদর করবেন।” কিন্তু তিনি স্বপ্ন দেখবেন। চেষ্টা চালাবেন, কী করে দর্শককে হলমুখী করে তোলা যায়। দেশের পাশাপাশি বিদেশে বাংলা ছবিকে ছড়িয়ে দিতে একাধিক নতুন নতুন শহরে, রাজ্যে ছবিমুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
দেব কথাপ্রসঙ্গে আরও জানান, বিরোধী দলের মিঠুন চক্রবর্তীর জন্য গত বারের মতো এ বারেও তাঁর ছবি নন্দনে নেই, সেটা বোধহয় নয়। তাঁর কথায়, “আমার দল মিঠুনদাকে অযথা অপমান করবে, এ রকম নয়।” তার পরেই হাসতে হাসতে জানান, তাঁর বিশেষ ‘বন্ধু’রাই নাকি এ ব্যাপারে দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন! তাঁরাই মাঠে নেমেছেন। নায়ক-প্রযোজকের কথায় আফসোসের সুর, “যে সব হলে আমার সমস্ত ছবি হাউসফুল গিয়েছে সেখানেই এ বার আমি নেই! হলমালিকদেরও খারাপ লাগবে, যখন দেখবেন অন্য হলে ‘প্রজাপতি ২’ দেখতে দর্শক চলে যাচ্ছেন।” তিনটি বাংলা ছবির পাশাপাশি বড়দিনে একাধিক অন্য ভাষার ছবিও মুক্তি পাচ্ছে। সেই কারণেই কি শো-সংখ্যা কম? এক্ষেত্রেও দেব অকপট, “বলতে পারব না। তবে অন্যরা তো শো পাচ্ছেন।”
দেব যে ময়দান ছেড়ে যাবেন না, মঙ্গলবার লিখিত ভাবেও জানিয়ে দিয়েছেন। প্রেক্ষাগৃহ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে তিনি সমাজমাধ্যমে বার্তা দিয়েছেন। সেখানে ছবি-সহ সাফ লিখেছেন, “এই বছর আমাকে অনেকে অনেক তকমা দিয়েছেন। কেউ মাফিয়া তো কেউ মেগাস্টার। তার পরেও সিনেমাহলে আমার সিনেমার পোস্টার লাগার পরেও, আমার সিনেমা জায়গা পায়নি। আশা করি সিনেমাহলের মালিকরা খুশি। কারণ, তাঁরা যদি বাঁচেন বাংলা সিনেমা বাঁচবে। প্রত্যেকটা বাংলা সিনেমা ভালো চলুক। বাংলা সিনেমার জন্য আমার লড়াই চলবে।” এ প্রসঙ্গে নবীন জানিয়েছেন, নবীনা প্রেক্ষাগৃহে ‘প্রজাপতি ২’-এর পোস্টার পড়েনি। যেটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে সেটাকে বলে ‘গেট ডেকোরেশন’।
একটি করো শো পাবে ‘প্রজাপতি ২’। মঙ্গলবার বিকেলে আমরা অগ্রিম বুকিং খুলে দেব।” নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক হলমালিকের কথায়, “তৃতীয় সপ্তাহেও ‘ধুরন্ধর’ হাউসফুল চলছে। সেই ছবি তুলে দিয়ে কী করে অন্য ছবিকে শো দেব আমরা! আমাদেরও তো ব্যবসা করে খেতে হবে।” প্রযোজক অতনুর ছবি দুটো করে শো পেয়েছে বিনোদিনী (সাবেক স্টার), প্রিয়া, বসুশ্রী, বেলঘরিয়ার রূপমন্দির, নিউ এম্পায়রে। একটি করে শো পেয়েছে অশোকা, মেনকা আর প্রাচীতে। তবে শহরের কোনও মাল্টিপ্লেক্সে এখনও ‘প্রজাপতি ২’-এর বুকিং দেখানো হচ্ছে না।