চার দিন আগের ঘটনা। আচমকাই অভিনেত্রী পূজা বন্দ্যোপাধ্যায় আর তাঁর অভিনেতা স্বামী কুণাল বর্মা সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো বার্তা পোস্ট করেন। তাঁরা জানান, এক ‘পরম বন্ধু’ চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তাঁদের সঙ্গে। তাঁর ‘কল্যাণে’ তাঁরা সব হারিয়েছেন। জমানো টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বন্ধুবেশী ওই ‘শত্রু’। তাঁরা বুঝতে পারছেন না, এ বার তাঁরা কী করবেন। সেই সময় আনন্দবাজার ডট কম পূজার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চেয়েছিল অভিযুক্তের নাম। অভিনেত্রী নাম প্রকাশ করতে চাননি।
চার দিন পরে, শনিবার রাতে এক বিস্ফোরক পোস্ট করা হয় চলচ্চিত্র প্রযোজক শ্যামসুন্দর দে-র তরফ থেকে। তাঁর স্ত্রী মালবিকা দে-র অভিযোগ, গোয়ায় তাঁর প্রযোজক স্বামীকে অপহরণ করেন পূজা আর কুণাল। তাঁরা দিন চারেক আটকেও রেখেছিলেন তাঁকে। সেই সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেছেন। গোয়া পুলিশের হস্তক্ষেপে চার দিন পরে ছাড়া পান শ্যামসুন্দর। সবিস্তার জানতে আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগ করে প্রযোজকের সঙ্গে। ‘ব্যোমকেশ ও দুর্গরহস্য’-এর প্রযোজক শ্যামসুন্দর বলেন, “পূজা-কুণালের সঙ্গে আমার ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে। কিন্তু ওঁরা কোনও টাকা পান না আমার থেকে।’’ এর পরেই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘যদি পেতেনও, তা হলে সেই টাকা আদায়ের জন্য অপহরণ করে আটকে রাখবেন? এই আচরণ কি ন্যায়সঙ্গত?” পূজা যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জানিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রযোজকের আনা এই অভিযোগ ‘হাস্যকর’। সময়ে সকলকে সব জানাবেন তাঁরা।
কী ঘটেছিল প্রযোজকের সঙ্গে? কেনই বা তাঁকে অপহরণ করেন অভিনেতা দম্পতি?
শ্যামসুন্দর জানিয়েছেন, তিনি সপরিবার গোয়া ঘুরতে গিয়েছিলেন। দিনকয়েক থাকার পর স্ত্রী এবং মেয়ে ফিরে আসেন। প্রযোজক কাজের কারণে সেখানে থেকে যান। তখনও পূজা-কুণালের সঙ্গে তাঁর দিব্যি কথা হচ্ছিল। কোনও বাদানুবাদ হয়নি। গত ৩১ মে একটি ভাড়া করা গাড়িতে চেপে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন শ্যামসুন্দর। আচমকা রাস্তা আটকান পূজা-কুণাল। শ্যামসুন্দরের কথায়, “সঙ্গে গুন্ডার দল। আমি এতটাই অবাক হয়ে যাই যে কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ওঁরা জোর করে ওঁদের গাড়িতে তুললেন। বন্দি করলেন একটি অচেনা বাড়িতে। মুক্তিপণ নয়, ওঁদের দাবি, ওঁরা পাওনা টাকা চাইছেন। সেটা মেটাতে হবে।”
এর পর চার দিন ধরে তিনি অভিনেত্রী দম্পতি আর তাঁদের ভাড়া করা গুন্ডার হাতে বন্দি।তবে প্রযোজককে তাঁরা না খাইয়ে রাখেননি। কিন্তু মারধর করেছেন কুণাল, তাঁর গুন্ডাবাহিনি, অভিযোগ শ্যামসুন্দরের। তাঁর স্ত্রী সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘শ্যামসুন্দরের থেকে ৬৪ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন পূজা আর তাঁর স্বামী। টাকা না দিলে তাঁকে মিথ্যে মাদক মামলায় ফাঁসানো হবে— এমন হুমকিও দিয়েছিলেন দম্পতি। প্রযোজক ২৩ লক্ষ টাকা দিতে পেরেছেন। যা পূজার কলকাতার আপ্তসহায়ক এবং কুণালের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মারফত দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
এর পরের অভিযোগ আরও ভয়ঙ্কর। মালবিকার দাবি, পূজা এবং কুণাল শ্যামসুন্দরের ফোন কেড়ে নিয়ে জোর করে পাসওয়ার্ড এবং ব্যক্তিগত তথ্য জেনে নিয়েছেন। প্রযোজক এবং তাঁর স্ত্রীর আশঙ্কা, ভবিষ্যতে এগুলোই হয়তো অপহৃত প্রযোজকের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবেন অভিযুক্ত দম্পতি। গোয়ার একটি রিসর্টে বন্দি শ্যামসুন্দরকে দিয়ে জোর করে ভিডিয়োও না কি বানিয়েছেন তাঁরা। যেখানে প্রযোজককে বলতে শোনা গিয়েছে, তিনি সমস্তটাই নিজের ইচ্ছায় করছেন! তাঁকে জোর করে কেউ কিছু করাচ্ছেন না। পূজা-কুণালের নামে গোয়া পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন প্রযোজক। থানা থেকে সেই অভিযোগপত্রের স্বীকৃতির প্রতিলিপি-সহ যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ সমাজমাধ্যমে ভাগ করে নিয়েছেন প্রযোজকের স্ত্রী।
শ্যামসুন্দর কলকাতায় ফেরার পরেও কিন্তু বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি। অভিনেত্রী দম্পতি মুখ খোলার চার দিনের মাথায় তিনি ঘটনাটি প্রকাশ্যে এনেছেন। কেন এত দিন কিছু জানাননি প্রযোজক? পূজা নাম না করে যে প্রতারক ‘বন্ধু’র কথা ভিডিয়োয় জানিয়েছেন তিনিই কি শ্যামসুন্দর? জবাবে প্রযোজকের যুক্তি, “কাছের মানুষদের থেকে এই আঘাত অপ্রত্যাশিত। পুরোটা বুঝে উঠতে আমার সময় চলে গিয়েছে। তা ছাড়া, ঘরের ঘটনা প্রকাশ্যে আনতেও লজ্জা করে।”