এমনটা যে হতে পারে তিনিও সম্ভবত ভাবেননি। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে কিছুটা দেরিতেই এসেছেন। সংবাদমাধ্যম থেকে সাধারণ মানুষ, সকলেই তাঁর অপেক্ষায়। ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের ‘গৃহপ্রবেশ’-এর বিশেষ প্রদর্শনে নায়িকা শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় উপস্থিত হতেই হুলুস্থুল কাণ্ড। সকলের হুড়োহুড়িতে ভেঙে পড়ল নিরাপত্তা বলয়! গোলযোগ থামাতে হিমশিম খেয়েছেন প্রেক্ষাগৃহের নিরাপত্তারক্ষীরা। নায়িকার মুখে মৃদু হাসি। খয়েরি রঙের সিক্যুইনের শাড়ি আর সাবেকি ছিমছাম গয়নায় আলো ছড়িয়েছেন শুভশ্রী।
ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এক ফ্রেমে। ছবি: সংগৃহীত।
ইন্দ্রদীপের তৃতীয় ছবি মুক্তি পেল শুক্রবার। ছবিতে অভিনয় করেছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সোহিনী সেনগুপ্ত, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ, জীতু কমল, স্নেহা চট্টোপাধ্যায়। সন্ধ্যা থেকেই প্রেক্ষাগৃহ তারকাখচিত। নীল শাড়িতে সৌরসেনী মৈত্র, নীল শার্টে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় উপস্থিত হতেই ক্যামেরার ঝলকানি শুরু। হাসিমুখে জুটি বেঁধে ছবি দিয়েছেন উভয়েই। তত ক্ষণে উপস্থিত সস্ত্রীক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ধুতি-পাঞ্জাবিতে পরিচালক-অভিনেতা পাক্কা বাঙালি বাবু। এসেছিলেন পরিচালক-অভিনেতা অঞ্জন দত্ত, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, প্রেমেন্দুবিকাশ চাকী, সৌরভ দাস, ছবির কাহিনিকার সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অনেকেই। প্রত্যেকেই খোশমেজাজে ক্যামেরার সামনে।
তিন পরিচালক অঞ্জন দত্ত, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
স্নেহার এ দিন জন্মদিন। সে কথা মনে করিয়ে দিতেই রাজহংসীর মতো সাদা পোশাকে সেজে আসা অভিনেত্রী বললেন, “এ বারের জন্মদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই প্রথম কোনও জন্মদিনে নিজের ছবি মুক্তি পেল। এর থেকে বড় উপহার আর কী হতে পারে?”
ছবিমুক্তির আগে পরিচালক যেন কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা! সকলের আগে পৌঁছে গিয়েছেন প্রেক্ষাগৃহে। খুঁটিয়ে দেখে নিয়েছেন, আয়োজন ত্রুটিমুক্ত কি না। নিজেই ঘুরে ঘুরে আমন্ত্রিতদের আপ্যায়ন করেছেন। কথা বলেছেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। শুভশ্রী উপস্থিত হওয়া মাত্রই তাঁকে ঘিরে হইচই নজর এড়ায়নি তাঁর। ইন্দ্রদীপের ঠোঁটে মুচকি হাসি।
অঞ্জন দত্ত, স্নেহা চট্টোপাধ্যায়, সৌরভ দাস। ছবি: সংগৃহীত।
এখনও কি ছবিমুক্তির আগে ভয় করে? জানতে চেয়েছিল আনন্দবাজার ডট কম। পরিচালক অকপট, “হ্যাঁ, ভয় করে। ছবি কেমন ব্যবসা করবে, দর্শকের কেমন লাগবে— এ সব ভেবে বুক ঢিপঢিপ কর।” ঋতুপর্ণ ঘোষকে উৎসর্গ করে এ ছবি। এ দিন কি তাঁর জন্য মনখারাপ ইন্দ্রদীপের। বললেন, “ঋতুদা বেঁচে থাকলে এ দিন তাঁকে ঠিক নিয়ে আসতাম। তখনও আর একপ্রস্ত ভয় হত। ছবি দেখে কী বলবেন?” ছবি ভাল লাগলে কী বলতেন তিনি? ইন্দ্রদীপের মতে, খুব আদর করতেন। হয়তো ভরসা করতেন পরিচালকের কাজের উপরে, যা ইন্দ্রদীপকে পরের ছবি পরিচালনার দিকে এগিয়ে দিত।
তাঁর নামের আগে ‘লেডি সুপারস্টার’ তকমা! তাঁকে দেখতে ভিড় সামলাতে গা ঘেমেছে নিরাপত্তারক্ষীদের। এর আগে পরিচালক বলেছেন, এ দিন আমন্ত্রিত দর্শকও শুভশ্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কী বলছেন নায়িকা? প্রত্যেকের কাছে এ দিন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। জানান, পরিচালকদের ভরসা আদায় করা, দর্শকের প্রশংসা শোনা মানে কাঁধে গুরুদায়িত্ব চাপা। প্রত্যেকটি কাজে নিজেকে প্রমাণ করার চাপ। আগামী দিনেও যাতে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করতে পারেন তার জন্য নিজেকে উজাড় করে দেবেন। মুখে কিছু না বললেও নতুন উপাধি যে তাঁকে উজ্জীবিত করেছে সে কথা তাঁর ঝকঝকে হাসিতেই স্পষ্ট।
সোহিনী সেনগুপ্ত, জীতু কমল, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত।
‘গৃহপ্রবেশ’ বলতে কী মনে পড়ে তাঁর? আনন্দবাজার ডট কম জানতে চেয়েছিল পরিচালক-অভিনেতা কৌশিকের কাছে। তিনি বলেন, “আমার মতে গৃহপ্রবেশ মানে নতুন ভাবনায় প্রবেশ। প্রত্যেক শিল্পীর নিজস্ব আঙ্গিক থাকে। সেটা দর্শকেরা জানেন না। তাঁদের সেই জগতে পা রাখার অনুমতি দেওয়া মানেও গৃহপ্রবেশ। শিল্পী বা পরিচালকের মনের ঘরে পা রাখতে পারছেন তিনি।”
‘বুনো হাঁস’ ছবির পরিচালক অনিরুদ্ধ জানান, পরিচালক যদি গানের দুনিয়ার ব্যক্তিত্ব হন তা হলে তাঁর ছবি মাত্রেই সুরেলা। ইন্দ্রদীপের মতো সুরকার ছবি পরিচালনায় মানেই দর্শক এবং বাংলা বিনোদন দুনিয়ার জন্য সুরেলা ছবি উপহার।