Advertisement
E-Paper

কৃষ্ণের মতো বহুগামী কি না জানি না, আমার কাছে সম্পর্ক মানে খারাপ ‘আমি’কেও ধারণ করা: তথাগত

“আমি ভাল রাঁধতে পারি। বাসন মাজতে একবারেই পারি না! প্রযোজকেরা আগে না বুঝে দ্বিতীয় কাজের জন্য ডেকেছিলেন। তাই হয়তো বড় পর্দার নায়ক নই।”

উপালি মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৫ ০৮:৫৭
ছবির মতো জীবন নিয়েও অকপট পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়।

ছবির মতো জীবন নিয়েও অকপট পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

কী অদ্ভুত কাকতালীয় যোগ! শ্রীকৃষ্ণ বিবাহিত নারীতে আসক্ত। ‘রাস’ ছবির নায়িকাও বিবাহিত। আবার ছবির পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায় ‘দ্রৌপদীসখা’র মতোই ‘বহুবল্লভ’! ছবির সঙ্গে জীবনকে কী ভাবে মিলিয়ে দিলেন তিনি?

প্রশ্ন: এ বছর জামাইষষ্ঠীতে তথাগত মুখোপাধ্যায় কী করলেন?

তথাগত: তেমন কিছু নয়। ছবিমুক্তির সময় এগিয়ে আসছে। প্রচারের কাজ কিছু ছিল। সে সব করতে করতেই দিন কেটে গিয়েছে।

প্রশ্ন: আলোকবর্ষার বাড়িতে নিমন্ত্রণ ছিল না?

তথাগত: (হেসে ফেলে) না, তেমন কিছুই ঘটেনি ওই দিন।

প্রশ্ন: একটা জিনিস কি খেয়াল করেছেন? বাঙালির এই আচার-অনুষ্ঠান আবার ফিরেছে সম্প্রতি...

তথাগত: আমার আসন্ন ছবি ‘রাস’ তৈরির নেপথ্য কারণ কিন্তু এটাই। সিনেমা একটা কমার্শিয়াল মাধ্যম। আমরা সিনেমার মাধ্যমে মানুষের কাছে সেই বিষয়গুলোই পৌঁছোতে চাই, যেগুলো সমসাময়িক। ছবির মূল দর্শন যদিও ‘তুমি সাধারণ থাকো, সাধারণ ভাবে বাঁচো। তোমার জীবনে যতটুকু আছে ততটুকু নিয়েই খুশি থাকো।’ ছবির মোড়ক হল ঐতিহ্যবাহী বাঙালি কিংবা যৌথ পরিবার। কেন এই মোড়ক? এখন দেশের প্রত্যেকটি জাতি অস্তিত্ব সঙ্কটে ভুগছে। প্রত্যেকে নিজের ঐতিহ্য বা বনেদিয়ানায় ফিরতে চাইছে। সেই চাওয়া ধরে রাখতে চাইছে তাদের সাহিত্য, তাদের সিনেমায়। বাঙালিও সেটাই চাইছে। বাংলায় হোর্ডিং লেখা, বাংলা ভাষাকে স্থায়ী পাঠ্যক্রমে রাখতে চাওয়ার দাবি জানিয়ে। বাঙালি বুঝেছে, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক হওয়ার আগে তার যা ‘অরিজিন’, সেটায় ফিরতে হবে।

প্রশ্ন: মানে শিকড়?

তথাগত: মানে শিকড়। শিকড়ে ফেরাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন: আপনিও সেটাই চান বলেই ‘পারিয়া’র মতো অ্যাকশন ছবির পরে ‘রাস’-এর মতো পারিবারিক, প্রেমের ছবি?

তথাগত: তার মাঝে ‘গোপনে মদ ছাড়ান’ বানিয়েছি। সেটা এখনও মুক্তি পায়নি। আমি ছবির কোনও ঘরানায় বিশ্বাসী নই। আমার কাছে ছবির একটিই সংজ্ঞা, সেটি হল সিনেমা। সিনেমা দেখতে যেমন ভালবাসি, তেমনই সিনেমা বানাতেও ভালবাসি। তার সঙ্গে আরও একটি জিনিস কাজ করে, সেটি প্রযোজক বাছাই। আমি সব প্রযোজকের সঙ্গে কাজে স্বচ্ছন্দ নই। যাঁরা সিনেমাকে পাগলের মতো ভালবাসেন, ছবির অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে পারেন— তাঁদের হাতে আমার ছবি তুলে দিতে রাজি। সবার হাতে নয়। ‘রাস’-এর ক্ষেত্রে ‘ছবির মতো এন্টারটেনমেন্ট’ প্রযোজনা সংস্থাকে আগে পেয়েছি। তাই ছবিটি আগে তৈরি হল। এর পরে তৈরি হবে ‘পারিয়া ২’। তা ছাড়া, ‘রাস’-এর গল্প অনেক দিন ধরে বলতে চেয়েছি।

প্রশ্ন: ছবির নামে আপনার সেই ইচ্ছে প্রকাশিত?

তথাগত: আমার শুরুতে অন্য নাম পছন্দ ছিল, ‘ঝুলন’। এই উদ্‌যাপন নিয়ে ছোট থেকেই আলাদা দুর্বলতা। নবম শ্রেণি পর্যন্ত বাড়িতে নিয়ম করে পালন করতাম। নিজে হাতে ঝুলনযাত্রা সাজাতাম। আশপাশের অনেকেই দেখতে আসতেন। পরে নামটা বদলে দিলাম। মনে হল, ‘ঝুলন’-এর থেকেও ‘রাস’ শব্দটির সঙ্গে বাঙালির বেশি আত্মীয়তা, নৈকট্য। তাই নাম বদলে দিলাম।

প্রশ্ন: বাঙালির যে কোনও রসালো উদাহরণ মানেই ‘রাসলীলা’...

তথাগত: (হেসে ফেলে) সেটাও আছে। আমাদের ছবিতেও সেই প্রেম রয়েছে। বিক্রম চট্টোপাধ্যায়, দেবলীনা কুমার এবং রণজয় বিষ্ণু যে চরিত্রগুলো করেছেন সেই তিনটি চরিত্রের মধ্যেও প্রেম আছে। পুরনো দিনের প্রেম ফিরিয়ে আনবেন তাঁরা। ওই হাত ধরা, চুমু খাওয়া প্রেম নয়। এই প্রেমে শরীরের থেকেও মনের কার্যকারিতা বেশি। এই ভালবাসা উপলব্ধি করতে হয়। চোখের ভাষা পড়ে বুঝতে হয়। আর আমার ছবিতে পুরুষের থেকে নারী সব সময় বেশি শক্তিশালী। কী শরীরে, কী মনে। তাই আমার ছবিতে কে রাসলীলা করেছে— কৃষ্ণ না কি রাধা, সেটাও দেখার বিষয়।

প্রশ্ন: রাসলীলার সময়ের শ্রীকৃষ্ণের মতোই বিক্রম অবিবাহিত। বাস্তবে রাধার মতোই দেবলীনাও বিবাহিত...

তথাগত: অদ্ভুত ভাবে মিলে গিয়েছে, তাই না?

প্রশ্ন: শেষ পর্যন্ত পর্দার ‘রাধা’ কাকে পছন্দ করবে?

তথাগত: সেটা পর্দায় দেখতে হবে। তবে এই ছবির অনেক দৃশ্য তরুণ মজুমদারকে নিবেদন করে তৈরি। তাঁর ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’কে অনুসরণ করে শেষ দৃশ্য তৈরি। সেই পুরুষের পায়ের উপরে নারীর দুটো পা উঠবে। এ বার প্রশ্ন, সেই পুরুষালি পা বিক্রম না রণজয়ের?

প্রশ্ন: বাঙালির গল্প বলতে গিয়ে তথাগতের ছবিতে একঝাঁক অভিনেতা-তারকা, সামলানো সহজ ছিল?

তথাগত: প্রথমত, ওরা আমার বন্ধু। তাই ওদের সামলাতে হয়নি। বরং ওরাই অনেক জায়গায় আমাকে সামলেছে। দ্বিতীয়ত, ওরা কোনও দিন তারকাসুলভ হাবভাবও দেখায়নি। আমারও সকলের কাছে একটাই অনুরোধ ছিল, আমার সেটে কেউ যেন তারকাসুলভ আচরণ না করেন। কারণ, তারকাদের সঙ্গে কাজ করতে আমি স্বচ্ছন্দ নই। ওরা এ রকম কিছু করলে সামলানো সত্যিই কষ্ট হত। ওঁরা মন দিয়ে কাজ করেছে। টিফিনের সময়ে কেউ নুডল্‌স, কেউ রোল চেয়ে খেয়েছে। এক এক সময় এমন আড্ডায় মজেছে যে, সেই আড্ডা থামিয়ে কাজে ফেরাতে গিয়ে ঘেমেনেয়ে উঠেছি! (বলতে বলতেই মুখে তৃপ্তির হাসি)

প্রশ্ন: দুই নায়ক এক নায়িকা... সেটে ত্রিকোণমিতি তৈরি হয়েছিল?

তথাগত: তথাকথিত নায়ক বিক্রম। রণজয়ও প্রেমিকসুলভ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। ওকে নায়ক বলা যাবে কি না সেটা ছবি দেখলে স্পষ্ট হবে। যেমন ধরুন, মহাভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র শ্রীকৃষ্ণ। কিন্তু তিনি কি মহাকাব্যের নায়ক? রণজয়ও এই ছবিতে সে রকমই।

প্রশ্ন: আচ্ছা, প্রশ্নের ধারা বদলাচ্ছি। সেটে দুই ‘এলিজ়িবল ব্যাচেলর’ আর এক বিবাহিত নায়িকা... রাসলীলা হল?

তথাগত: (এ বার জোরে হাসি) ওরা খুব ভাল বন্ধু হয়ে গেল। তার থেকেও ভাল ওদের তিন জনের বোঝাপড়া তৈরি হল। মন দিয়ে তিন জনে শুটিং করল। পুরো টিমের সঙ্গে মিলেমিশে গিয়ে পারিবারিক বন্ধন তৈরি করল। রাসলীলা ছাড়া বাকি সবটাই হল। অনেকেই নালিশ করেন, মুম্বই গিয়ে কেন ছবি বানাচ্ছি না। কলকাতা ছেড়ে আমার না যাওয়ার এটাও একটা কারণ। অভিনেতাদের সঙ্গে এই আত্মিক বন্ধন।

প্রশ্ন: আপনার ছবি কি বাঙালি শিল্পীর কাছে হিন্দি গান শোনানোর আর্জি কমাবে?

তথাগত: এই জায়গা থেকেই তো আমার এই ছবি বানানোর ইচ্ছে। ছবির মাধ্যমে মনে করিয়ে দেওয়া, আমরা বদলাইনি। আমাদের শিকড় একই আছে। দেখুন, এক এক জাতির এক এক সমস্যা। দক্ষিণ ভারতে যেমন এক রকমের সমস্যা। ওখানে নায়িকাদের তালিকা ধরিয়ে দেওয়া হয়, কোনও ছবিতে অভিনয় করতে গেলে কী কী করতে হবে। সোজা কথায়, কম্প্রোমাইজ় করার কথা। সেই সমস্যার মোকাবিলা তাঁরা তাঁদের মতো করে করার চেষ্টা করেন। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কিন্তু এই সমস্যা নেই।

প্রশ্ন: ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস যে সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, টলিউডের ৬০ শতাংশ প্রযোজক-পরিচালকের নামে নাকি যৌন হেনস্থার অভিযোগ!

তথাগত: আমি এ ব্যাপারে সত্যি কিছুই জানি না। যদি স্বরূপ বিশ্বাস এ কথা বলে থাকেন তা হলে সেটা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। উনি বলতেই পারেন। আমি ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ১৬ বছর ধরে ওঠাবসা করেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এ রকম কিছু টলিউডে হয় না। দু’-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কোনও নায়িকাকে বলপূর্বক যৌন হেনস্থা করা হয়েছে বা তাঁর কনট্র্যাক্ট পেপারে লেখা আছে, তাঁকে প্রযোজকের ঘনিষ্ঠ হতে হবে— এ সব এ রাজ্যে হয়নি। তাই আবারও বলছি, জায়গা অনুযায়ী সমস্যা তৈরি হয়। তাকে মেটাতে হয় সেই জায়গা বা সেই রাজ্যবাসীদের মতো করে। আপনি যা যা বললেন, বাংলায় সত্যিই এই ধরনের সমস্যা বাড়ছে। তার প্রতিবাদ জানিয়ে কেউ ছবি বানাব, কেউ পথে নামব, কেউ স্থায়ী পাঠ্যক্রমে বাংলা ভাষা রাখার জন্য লড়াই করব।

প্রশ্ন: বাংলা ছবির অবস্থাও কি খুব ভাল? ক’টা সফল হচ্ছে! ছবি বানানোর আগে ভয় করে না?

তথাগত: ছবি তৈরির সময় হয় না। কারণ, সিনেমা আমি প্যাশন থেকে বানাই। এখন ভয় করছে, ‘রাস’ দর্শক দেখবে তো? আমার ছবি দেখবে কি না, এই ভয়টা করছে না। দর্শক বাংলা ছবির প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছে। বাংলা ছবি অনেক টাকা দিয়ে টিকিট কেটে দেখতে যাব? যদি টাকা, সময় নষ্ট হয়! এই বিশ্বাস ফেরাতে হবে। যাঁরা আধুনিক পরিচালক তাঁরা নানা স্বাদের ছবি বানাচ্ছেন দর্শকদের কথা ভেবেই— তাঁদের অনুভূতি, তাঁদের চাওয়া বুঝতে। সেই জায়গা থেকেই আমি তরুণ মজুমদারের ‘দাদার কীর্তি’ বা ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’ ঘরানার ছবি বানিয়েছি। যেটা আমার ঘরানা নয়। যদিও টিজ়ার বা ছবির গান যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবু ভয় করছে। এই ভয় নিয়েই আগামী দিনে ছবি বানিয়েই যাব।

বাংলা ছবি নিয়ে তথাগতের ভাবনা।

বাংলা ছবি নিয়ে তথাগতের ভাবনা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

প্রশ্ন: কোন ঘরানায় হেঁটে ছবি বানাবেন? অতীতের মতো গল্পনির্ভর, না এখনকার মতো মাথা খাটিয়ে বোঝার?

তথাগত: সব ধরনের ছবি সব পরিচালককে বানানোর চেষ্টা করতে হবে। টলিউড একটি দিকেই পিছিয়ে। কোনটা জানেন? ছবি নিয়ে সিরিয়াসনেসের অভাব। আমরা মনে করি, প্রযোজকেরা মনে করেন, যা হোক একটা কিছু বানিয়ে দিলেই দর্শক দেখবে। দর্শক সেটা দেখবে না। তাঁদের রুচি বুঝে সঠিক ছবি উপহার দিতে পারলে দর্শক ভিড় করে প্রেক্ষাগৃহে যাবে। দর্শক কিন্তু এত বোকা নয়। যে ছবিই বানাব সেটা খুব মন দিয়ে বানালে, দর্শক মনোরঞ্জনের উপকরণ সঠিক মাত্রায় তাতে মিশিয়ে দিতে পারলে তামিল, তেলুগু, হিন্দি ছবি ছেড়ে বাংলার মানুষ বাংলা ছবিই দেখবেন। এটা সকলের আগে মনে রাখতে হবে।

প্রশ্ন: তথাগত কতটা বাঙালি?

তথাগত: (মৃদু হেসে) পুরোপুরি। ২০১১ সালে একটি বড় প্রযোজনা সংস্থা আমায় হিন্দি সিরিয়াল অভিনয়ের জন্য মুম্বই পাঠাতে চেয়েছিল। আমি যেতে পারিনি। কারণ, আমি বাংলা ভাষা ভালবাসি। ‘মেফিস্টো’র মতো! প্রযোজক কিছুই বোঝেননি। আমি কিন্তু যাইনি। তা বলে হিন্দি ছবির অফার পেলে কি করব না? নিশ্চয়ই করব। পাশাপাশি, বাংলা ছবিও করব। অনেক প্রতিভাশালী বাঙালি বলিউডে গিয়ে জমিয়ে কাজ করছেন। যেমন, সুজিত সরকার, সুজয় ঘোষ। তাঁদের মতো বাংলা ছবি বানানো পুরোপুরি ছেড়ে দেব না। প্রযোজক না পেলে দরকারে নিজের পয়সায় বাংলা ছবি বানাব।

প্রশ্ন: বাংলার প্রতিভারাও তো বলিউডে ব্যস্ত...

তথাগত: হয়তো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে। বাংলায় আমরাও ভাল কাজ করতে পারি বা ভাল কাজ হতে পারে— এই বিশ্বাস আমাদের মধ্যেও তলানিতে। এটা সকলের আগে ফিরিয়ে আনা দরকার। একটা সময় বাংলা ছবি কিন্তু সব প্রদেশের ছবিকে টেক্কা দিত।

প্রশ্ন: তার জন্য পরিচালক-ফেডারেশনের মধ্যেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা দরকার...

তথাগত: বরাবর ফেডারেশনের নিয়ম মেনেই কাজ করার চেষ্টা করেছি। তাতে আমার কোনও সমস্যা না হলে অবশ্যই মানব। কোনও দিন যদি সেই নিয়ম আমার ছবি তৈরির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তখন অবশ্যই বিরোধিতা করব।

প্রশ্ন: যখন যে সমস্যা মাথাচাড়া দিয়েছে সেটাই আপনার ছবির বিষয়। কোনও দিন আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে ছবি বানাবেন?

তথাগত: (একটু ভেবে) আমি আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে ছবি বানাব না। কারণ, ঘটনার সত্যতা এখনও অধরা। আমি ধর্ষণ, দুর্নীতি নিয়ে ছবি বানাব। ‘রাস’-এও কিন্তু এই সমস্ত বিষয়ও আছে। আবার হাসপাতালে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর বিষয় আগামী ছবির বিষয় হতেই পারে। তবে ছবির গল্প কিন্তু শুধুই হাসপাতালে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সেই সময়, রাজ্য, দেশকে ছুঁয়ে যাবে।

প্রশ্ন: পরিচালক তথাগত যত জনপ্রিয় হচ্ছেন, বড় পর্দার নায়ক তথাগত যেন মিলিয়েই যাচ্ছেন!

তথাগত: (হেসে ফেলে) আমায় বড় পর্দায় কে, কবে নায়কের ভূমিকা দিলেন? হ্যাঁ, অনেক বড় বড় পরিচালক-প্রযোজক আমায় কথা দিয়েছিলেন, নায়কের ভূমিকায় নেবেন। কিন্তু তাঁরা কথা রাখেননি (আবার হাসি)। আসলে, ওঁরা আমায় বাসন মাজতে ডেকেছিলেন। আমি সেটা একেবারেই পারি না। আমি রান্না ভাল করতে পারি। সেটা আবার ওঁরা জানেন না! বাসন মাজার বদলে রান্নার জন্য ডাকলে হয়তো উতরে যেতাম। তবে বিক্রম বলেছে, ও আমায় নায়ক করে ছবি বানাবে। আমি যা যা অত্যাচার করেছি, তার শোধ তুলবে বলে।

তথাগত-আলোকবর্ষা সমীকরণ।

তথাগত-আলোকবর্ষা সমীকরণ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

প্রশ্ন: টলিউড বলছে, ‘রাস’ বানানোর পিছনে নাকি আরও একটি গোপন কারণ রয়েছে। তথাগতেরও শ্রীকৃষ্ণের মতোই বহু সম্পর্ক...

তথাগত: শ্রীকৃষ্ণের মতো! আমার ছবিতে দেবলীনার একটা সংলাপ আছে, “সম্পর্ক হল ন্যাড়া ছাদ। যেখানে কারেন্ট চলে গেলে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকা যায়।” ন্যাড়া ছাদ একটা নিশ্চিন্ততার কথা বলে। যেখানে হাওয়া চলাচল করতে পারে। বিক্রমের তেমন একটি সংলাপ, “বাড়ি ফেরা মানে তো ইট-বালি-সুড়কির স্ট্রাকচারে ফেরা নয়। নিজের মানুষের কাছে ফেরা।” অর্থাৎ, নিজের মানুষ সেই বাড়ি। ন্যাড়া ছাদ বলুন বা বাড়ি— প্রত্যেকের এমন একটা জায়গা দরকার যেখানে নিশ্চিন্তি থাকবে। যেখানে সে ভাবনার ক্ষেত্রে নগ্ন হতে পারবে অনায়াসে। যেখানে তার ‘খারাপ আমি’ নিয়েও কোনও প্রশ্ন উঠবে না। বরং, সেই বাড়ি বা প্রিয়জন ‘খারাপ’টুকুও ধারণ করবে। যত দিন সেটা সম্ভব তত দিন সম্পর্ক, প্রেম সব থাকবে। যেদিন সে সব হারিয়ে যাবে তখনই সেটা কারাগার। আমার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। কারাগারে কে থাকতে চায়?

প্রশ্ন: আলোকবর্ষা ‘খারাপ তথাগত’কে ধারণ করতে পেরেছেন?

তথাগত: (মৃদু হেসে) এখনও পর্যন্ত। আমিও ‘খারাপ আলোকবর্ষা’কে ধারণ করেছি। তাই সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। গাঢ় হচ্ছে। এই বোঝাপড়া যত দিন থাকবে তত দিনই...।

Tathagata Mukherjee Rash
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy