তৃতীয়ার সন্ধ্যা, আমি নবীনা প্রেক্ষাগৃহে। তিন বছর ধরে অপেক্ষার পর অবশেষে প্রেক্ষাগৃহে আমাদের ‘রঘু ডাকাত’। দর্শকদের সঙ্গে বসে ছবি দেখতে ভাল লাগে। ওঁদের অনুভূতি, ওঁদের মন্তব্য আমার ‘শিক্ষক’। পর্দায় ছবি চলছে। আমি ফিরে গিয়েছি অতীতে।
সহযোগী লেখক সৌগতদা আর আমার রাতের পর রাত জেগে কাটানোর দিনগুলো ফিরেছে। আমাদের জেগে স্বপ্ন দেখার দিনগুলোও। যে দিন শুটিং শুরুর কথা জানালেন শ্রীকান্ত মোহতা-মহেন্দ্র সোনি, সটান বলেছিলাম, আমায় বানতলা দিয়ে দিন। ওখানেই ‘ফিল্মসিটি’ বানিয়ে নেব! আউডডোর শুটিং করেছি ঝাড়খণ্ডে এবং অন্যত্র। ওই যে স্বপ্নদৃশ্য দেখেছেন, যেখানে রঘু আর সৌদামিনীর প্রথম ভাললাগা— উশ্রী নদীর ঝর্নায় সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করা।
‘রঘু ডাকাত’-এর ‘সৌদামিনী’ ইধিকা পাল। ছবি: সংগৃহীত।
শুরু থেকেই ‘রঘু ডাকাত’-এর ভাগ্যে যেন লড়াই লেখা! বানতলায় সেট হয়েছে। কালীমন্দির, গ্রামের বাজার— আরও অনেক কিছু। রঘু ওখানে দেবীর সামনে অন্যতম খলনায়ককে মারবে। শুটিংয়ের আগে আচমকা মেঘভাঙা বৃষ্টি। পরপর দু’দিন অঝোর বর্ষণ। কালীমন্দির ধূলিসাৎ। আমাদের মাথায় হাত। ফের নতুন করে মন্দির বানাতে হয়েছিল। এ রকম ঘটনা একটি? একদিন দাউদাউ আগুনে সেট ছাই! ফের নতুন করে শুরু সব কিছু। এর দিনকয়েক পরেই সেটে পুলিশ! আমি তো বুঝতেই পারছি না, ওঁরা আসল না কি অভিনেতা। কারণ, পাশের সেটে অন্য ছবির শুটিং হচ্ছে। সেখানে পুলিশি ব্যাপার-স্যাপার আছে। তাই ভেবেছি, বোধহয় ওঁরাই শুটিং দেখতে এসেছেন।
ওমা, দেখি সত্যিকারের পুলিশ! ওঁরা আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে এসেছেন। আগের দিন রাতে ভেড়ির জলে একটি লাশ ভেসে উঠেছিল, সেই ব্যাপারে। কী কাণ্ড! যা-ই হোক, কথা বলে সন্তুষ্ট হয়ে ওরা বিদায় নিল।
তার পরেও কিন্তু কারও মুখ থেকে হাসি মিলায়নি। বারেবারে সেট ভেঙেছে। বারেবারে একাধিক শক্ত দৃশ্যের শট নিতে হয়েছে। উৎসাহে ফুটতে ফুটতে দেব, ইধিকা পাল, সোহিনী সরকার— ছবির নায়িক-নায়িকারা ভারী জিনিস বইছেন! এক জায়গা থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। খেতে বসার সময় আর এক কাণ্ড। ৫০০ লোক খেতে যাচ্ছেন। সেই পর্ব আর মেটেই না! শেষে দ্রুত খাওয়া শেষ করতে কোমর বেঁধে নেমে পড়লেন ইধিকা-সহ অভিনেতাদের অনেকে। তাঁরা পরিবেশন করায় বিষয়টি তাড়াতাড়ি মিটেছে। তার মধ্যে হা-হা, হি-হি তো আছেই।
দেব আর দেবের ঘোড়া। ছবি: সংগৃহীত।
আর দেবের চোখ ঘড়ির দিকে! আমায় বলছে, “ও ধ্রুবদা! সময়ে আমাদের শুটিং শেষ হবে তো?” বেচারি ও-ই ছবির নায়ক, সহ-প্রযোজক, আবার কার্যনির্বাহী পরিচালক! তিন কাজের ভারে রাতের পর রাত জেগে। বেচারির দু’পাশে দুই সুন্দরী নায়িকা। ও যে একটু খুনসুটিতে মাতবে, তেমন উপায় নেই! তার মধ্যে আবার ঘোড়াদের খাওয়ানো। সে-ও দেব একার হাতে সামলেছে। ছোলা খাওয়ানোর চক্করে আমাদের সঙ্গে পশুদের বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল।
৪৪ দিনে শুটিং শেষ। আমাদের ভাল লাগছে কই? শুটিং সেরে ফেরার পরে অনেকে জানতে চেয়েছিলেন, পরপর দুটো ছবির কার্যনির্বাহী পরিচালক দেব। আগামী দিনে ছবি পরিচালনা করলে বাকিদের অন্ন মারা যাবে? আনন্দবাজার ডট কম মারফত জানাচ্ছি, ও যদি সত্যিই ছবি পরিচালনা করে, তা হলে সবচেয়ে বেশি খুশি আমি হব।
সোহিনী সরকারের জন্য কেঁদেছে দর্শক! ছবি: সংগৃহীত।
হঠাৎ হাততালির শব্দে হুঁশ ফিরল। ছবিতে ইধিকাকে বাঁচাতে সোহিনী হাজির। হাততালিতে হল ফেটে পড়ছে। তার পরেই নীরবতা। দর্শক চুপ। পর্দা জুড়ে দেব। কাঁদতে কাঁদতে বলছে, “গুঞ্জার রঘু।”