Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Promita Bhowmik

Promita Bhowmik: এত বড় মাপের অভিনেত্রী হয়েও মাধবীদি প্রতিটি শটের পরে আমার মতামত নিয়েছেন: প্রমিতা

প্রমিতা বললেন, ‘‘কোনও কোনও নায়িকা কিন্তু ভাল অভিনেত্রীও বটে। তাই চিত্রনাট্য লিখতে লিখতে যদি আমার কোনও নায়িকার কথা মনে হয়, আমি তাঁকেই বেছে নেব। অভিনয়টাই আমার ছবির ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে। উল্টোদিকে চরিত্রের সঙ্গে মানালে নাট্যজগতের অপরিচিত মুখ হলেও তাঁকেই আমি বেছে নেব।’’

মাধবী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রমিতা

মাধবী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রমিতা

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২২ ২০:৪৯
Share: Save:

ডাক্তারি পড়া ছেড়ে বাংলা ভাষা নিয়ে পড়াশোনা। কবিতা লিখতেই লিখতেই ছবি বানানোর শখ। তথ্যচিত্র, পোয়েট্রি ফিল্ম, স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি থেকে পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি, ধীরে ধীরে ইন্ডাস্ট্রিতে কতিপয় মহিলা পরিচালকের এক জন হয়ে উঠছেন তিনি। কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ্তা চক্রবর্তীর পরে মাধবী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছোট ছবির শ্যুটিং শেষ করলেন। দীর্ঘ এই যাত্রার গল্প শোনালেন প্রমিতা ভৌমিক—

প্রশ্ন: মাধবী মুখোপাধ্যায়ের প্রথম স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি, ইন্ডাস্ট্রির নবাগতা পরিচালক হয়ে কী ভাবে রাজি করালেন তাঁকে?

প্রমিতা: সত্যজিৎ রায় যে মানুষকে ফ্রেমের পিছন থেকে দেখেছেন, একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমিও তাঁকে নির্দেশ দেব, এটাই ভাবতে পারিনি। তবে হ্যাঁ, অনেক বায়না করেছিলাম মাধবীদির কাছে। সব থেকে বড় কথা, এত বড় মাপের মানুষ হয়েও মাধবীদি এক বারও আমাকে তুচ্ছ ভাবেননি। কেবল জানিয়েছিলেন, চিত্রনাট্য পছন্দ হলে অভিনয় করবেন। কথা রেখেছেন মাধবীদি।

প্রশ্ন: সেটে কী রকম তিনি?

প্রমিতা: আমার মতো এক জন নতুন পরিচালককেও তিনি অগাধ সম্মান দিয়েছেন। প্রত্যেকটি শটের পরে জিজ্ঞাসা করেছেন, ‘‘প্রমিতা ঠিক হচ্ছে তো?’’ নিজের মতো করে চরিত্রটিকে তৈরি করেছেন তিনি। সেটের সকলকে চমকে দিয়ে নতুন কোনও মাত্রা যোগ করছেন চরিত্রে। এই আমার পাওনা!

কণীনিকা, প্রমিতা এবং সুদীপ্তা

কণীনিকা, প্রমিতা এবং সুদীপ্তা

প্রশ্ন: মাধবী মুখোপাধ্যায়ের আগে কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুদীপ্তা চক্রবর্তীর সঙ্গে ‘পরিচয়’ ছবিতে কাজ, দুই প্রজন্মের নায়িকাদের মধ্যে পার্থক্য নজরে এসেছে?

প্রমিতা: মাধবীদি হোন, বা কণীনিকাদি অথবা সুদীপ্তাদি। তিন জনের চরিত্র বোঝার ধরন একেবারে আলাদা। মাধবীদি ছাড়া বাকি দু’জন তো একই প্রজন্মের। তাও তাঁদের অভিনয়ের ধরন আলাদা। প্রজন্ম দিয়ে তাই আলাদা করতে পারব না আমি কাউকে। ব্যক্তিবিশেষে অভিনয় ধারা বদলায়। তবে একটি জিনিস তিন জনের মধ্যেই দেখলাম। তা হল, নিষ্ঠা। তাঁরা প্রত্যেকেই অভিনয়টাকে যে কতটা ভালবাসেন, তা স্পষ্ট।

প্রশ্ন: কণীনিকা এবং সুদীপ্তাকে একই ফ্রেমে ধরেছেন, অভিনেত্রী হিসেবে কাকে বেশি নম্বর দেবেন?

প্রমিতা: দু’জনের চরিত্র সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী। আমি ঠিক যে ভাবে দেখতে চেয়েছিলাম চরিত্র দু’টিকে, দুই শিল্পী ঠিক সে ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন। তা হলে তো বলতে হয়, দু’জনেই যে যার নিজের ক্ষেত্রে ১০-এ ১০।

প্রশ্ন: মহিলা পরিচালকের সংখ্যা এত কম ইন্ডাস্ট্রিতে, আপনাকেও এই জায়গায় পৌঁছতে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে নিশ্চয়ই?

প্রমিতা: আমাদের সমাজ পুরুষতান্ত্রিক। তাই প্রত্যেক পুরুষের মনেই পুরুষতন্ত্র থাকে। আমার সঙ্গে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের প্রত্যেকে হয়তো এ রকম নন। কিন্তু একটা ইউনিটে তো অনেকেই থাকে। কারও কারও মনে হতেই পারে যে, ‘মহিলা নির্দেশনা দিচ্ছে!’ বা ‘বাচ্চা একটা মেয়ে পরিচালক’। তাই জন্য কোনও কাজ করতে গেলে অনেক মহিলাই তিন পা এগিয়ে পাঁচ পা পিছিয়ে যান। এক জন পুরুষকে এটা ভাবতে হয় না। এক জন মহিলাকে সেটা ভাবতে হয়। আমি যে ব্যক্তিগত বাবে তেমন কিছুর মুখোমুখি হয়েছি, তা নয়। আমি নতুন। আর কয়েক বছর কেটে গেলে হয়তো আমিও দেখতে পাব একই জিনিস। আবার না-ও দেখতে পারি।

সেটে প্রমিতা

সেটে প্রমিতা

প্রশ্ন: আপনার ছবি তো বাণিজ্যিক ছবির গোত্রে পড়ে না। তবে কি কোনও দিন টলিউডের নায়িকাদের নিজের ছবির চরিত্রে ভাবতে পারবেন?

প্রমিতা: কোনও কোনও নায়িকা কিন্তু ভাল অভিনেত্রীও বটে। তাই চিত্রনাট্য লিখতে লিখতে যদি আমার কোনও নায়িকার কথা মনে হয়, আমি তাঁকেই বেছে নেব। অভিনয়টাই আমার ছবির ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে। উল্টোদিকে চরিত্রের সঙ্গে মানালে নাট্যজগতের অপরিচিত মুখ হলেও তাঁকেই আমি বেছে নেব।

প্রশ্ন: ডাক্তারি ছেড়ে বাংলা ভাষা, কবিতা, এখন টলিউডের কতিপয় মহিলা পরিচালকের মধ্যে এক জন, গর্ব হয় নাকি আক্ষেপ?

প্রমিতা: খুবই আনন্দ হয়। যা চেয়েছিলাম, করতে পেরেছি। যা চাইনি, তা বাদ দেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছি।

প্রশ্ন: বাবা-মায়ের কথায় ডাক্তারিতে ভর্তি হওয়া?

প্রমিতা: পাঠভবনে পড়তাম। বিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলাম। ভাল নম্বর পাই উচ্চমাধ্যমিকে। মা-বাবার ইচ্ছেমতো ডাক্তারি পরীক্ষা দিই। পাশও করে যাই। কিন্তু কয়েক দিন ক্লাস করে বুঝলাম, মন বসছে না। প্রথমে বাড়িতে কেউ রাজি হননি। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিজের ইচ্ছেশক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে ছেড়েই দিলাম শেষমেশ। এক বছর পর ২০০৪ সালে যাদবপুরে বাংলা ভাষা শিখতে চলে যাই। তা নিয়েও অনেক কথা শুনতে হয়। দক্ষিণ কলকাতার স্কুলে পড়াশোনা করে বাংলা পড়তে যাচ্ছি! অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। প্রত্যেকটি পরীক্ষায় প্রথম হতে দেখে মা-বাবাও খুশি। আমিও স্বাধীনতার গন্ধ পাই। স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই গবেষণা করার সুযোগ পাই। তার পরেই কলেজে পড়ানোর চাকরিতে ঢুকে পড়ি।

প্রশ্ন: কিন্তু শিক্ষিকা প্রমিতা তো এখন পরিচালক, কলেজের চাকরি ভাল লাগছিল না?

প্রমিতা: না না, পড়াতে আমি ভালবাসি। খুবই। কিন্তু এ দিকে বিশ্ব চলচ্চিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। নেশার মতো নানাবিধ ছবি দেখার অভ্যাস! পাশাপাশি কবিতা লেখাও চলছে। ১৬ বছর বয়সে প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। তাই ওটাকে কোনও দিনও বাদ দিইনি। অর্থাৎ জীবনের অনেকগুলি ভাললাগাকে নিয়ে একসঙ্গে বাঁচছিলাম। কিন্তু একটা সময়ে গিয়ে বুঝলাম, এতগুলি দিকে মন দেওয়াটা বোধহয় আমার কম্ম নয়। সামলে উঠতে পারিনি। মনে হল, একটা কিছুতে মনোনিবেশ করতে হবে।

প্রশ্ন: কবে মনে হল যে কেবলই ছবি বানাতে চান?

প্রমিতা: বরাবরই মনে হত, আমি যে কবিতা লিখছি, বা যে গল্প লিখছি, সবটা আমার চোখের সামনে ভাসত। আমি দেখতে পেতাম। তা হলে আমার দেখাটা বাকিদেরও দেখাই! এই শুরু হল ছবি বানানোর পথে হাঁটা। কলেজে পড়ানো ছেড়ে দিই। ছবি বানানোর জন্য যে প্রশিক্ষণ দরকার, তার পর সেই শিক্ষার পিছনে ছোটা শুরু। আর আজ সেই শিক্ষাই কাজে লাগছে প্রতি পদক্ষেপে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE