ছোটপর্দার গণ্ডি ছাড়িয়ে বড়পর্দা, এখন ওটিটি-র জনপ্রিয় মুখ শ্রীমা ভট্টাচার্য। দুর্গাপুজোয় বেশ কাজের চাপ থাকে। মণ্ডপে মণ্ডপে আমন্ত্রণ, নানা ধরনের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার ডাক পড়ে। যদিও তার মাঝেই বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের জন্য সময় বার করেন অভিনেত্রী। কেমন কাটে পুজোর পাঁচটা দিন?
শ্রীমা জানাচ্ছেন, ছোটবেলায় পুজোতেও বাবা কড়া শাসনে রাখতেন। অভিনেত্রী বলছেন, “ছোটবেলায় পুজোয় বাড়ি থেকে খুব বেশি দূর যাওয়ার অনুমতি ছিল না। দমদম পার্ক থেকে সবচেয়ে দূরে বলতে লেকটাউন আর শ্রীভূমির ঠাকুর দেখানো হত। তবে ছোটবেলার ধারা বজায় রেখে এখনও সপ্তমীতে বাড়ির লোকের সঙ্গে বেরোই। তখন ঠাকুর দেখে ফেরার সময়ে হেঁটে ফিরতাম। তাতে অনেক কিছুর জন্য বায়না করা যেত। যদিও পরে বাবা এটা ধরে ফেলেছিলেন!”
পুজোর সময় আত্মীয়স্বজনের থেকে উপহারের আশায় থাকতেন অভিনেত্রী। হাসতে হাসতেই বললেন, “একটু বড় হওয়ার পরে জামাকাপ়ড়ের থেকে নগদ পেলে বেশি খুশি হতাম। ৫০-১০০ টাকা করে যা-ই পেতাম, পুজোয় নিজের হাতখরচটা হয়ে যেত।” ছোট থেকেই দুষ্টুমিতে ওস্তাদ নায়িকা। ছোটবেলায় তাঁর সঙ্গে থাকত একটা ‘লেজ়ার বন্দুক’। ঠাকুর দেখার লাইনে দাঁড়িয়ে অন্যদের উপর সেই লেজ়ার আলো ফেলে বেশ মজা পেতেন। বাবার কাছে বকাও খেয়েছেন এজন্য। বড় হয়ে ‘ক্যাপ বন্দুক’-এর প্রতি আকর্ষণ বেড়েছে। “আমি আর আমার ভাই, ক্যাপ বন্দুক নিয়ে হুজ্জতি করতে থাকি।”
শ্রীমা ঈশ্বরে বিশ্বাসী। অষ্টমীর অঞ্জলি দেন সাত থেকে আটটি মণ্ডপে। অভিনেত্রী বললেন, “ছোটবেলায় আমি সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী— রোজ অঞ্জলি দিতাম। আমি বিশ্বাস করতাম যে, যত বেশি অঞ্জলি দেব, ভগবান তত বেশি আশীর্বাদ করবেন। এখন শুধু অষ্টমীর অঞ্জলিই দিতে পারি। গত বছর, প্রথম বার আমি অঞ্জলি দিতে পারিনি। সময়টা ভোরবেলা পড়েছিল, আমি অসুস্থ ছিলাম। সব মিলিয়ে গত বছর এই নিয়ে খুব দুঃখে কেটেছে।” কিন্তু এত জায়গায় অঞ্জলি কেন? শ্রীমা বললেন, “আমি প্রথম অঞ্জলি দিই আমার পাড়ায়। সেখান থেকে বন্ধুরা মিলে যাই আর একটা পাড়ায়। এই সুযোগে ছোটবেলার অনেক বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়, যেটা সারা বছর সম্ভব হয় না। এই ভাবে অষ্টমীর দুপুর পর্যন্ত ২০-২২ জনের একটা দল হয়ে যায়। এই পুরো দল নিয়ে আমার ছোটবেলার প্রিয় বন্ধুর বাড়িতে যাই। ওঁর মা ভোগ রান্না করেন। লুচি, তরকারি বা পোলাও, আলুর দম— আমরা সব হামলে পড়ি। কাকিমাও জানেন, শ্রীমা আসছে মানে প্রচুর লোকজন নিয়েই আসবে!”
আরও পড়ুন:
তা হলে পুজোয় কোনও ডায়েটের বিষয় নেই? “না না। পুজোর সময় এ সব বলা পাপ,” সপাট জবাব অভিনেত্রীর। “সারা বছর যা খুশি খাওয়া পাপ। কিন্তু পুজোয় ডায়েট করা পাপ। আমি কি শাস্তি পাচ্ছি নাকি? পুজোর পর কাজ পড়লে জোর করে ডায়েট করতে হবে। ওটা কিন্তু শাস্তি আমার কাছে।” পুজোর ফ্যাশন? “অষ্টমীতে লাল-সাদা শাড়ি চাই। আর চাই সেটা যেন বাড়ির কেউ উপহার দেয়। তবে কোনও অনুষ্ঠানে গেলে ডিজ়াইনারের পোশাক থাকে। এমনিতে আমি খুব ঘুরতে যাই। সেখান থেকে টুকটাক কিনে আনি, আর নয়তো অনলাইনে কেনাকাটা। পুজোয় ফ্যাশনের থেকেও আরামের কথা মাথায় ঘোরে বেশি। কারণ, আমি ভীষণ ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখতে ভালবাসি।” লোকজন চিনতে পারেন না? অভিনেত্রী বলে চলেন, “মাস্ক পরে ঘুরি। লোকজন চিনতে পারলে ছবি তুলতে চান, ভাল লাগে, ওটা আমার পাওনা। সেটা বন্ধুদেরও ভাল লাগে। কিন্তু, পুজোর ভিড়ে এত বার দাঁড়াতে হয় যে মাঝেমাঝে ওরা রেগেও যায়। এখন, নিজে বাইক চালিয়ে বা কখনও বাইকের পিছনে বসে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরি।”