মমতা শঙ্কর।
প্র: মাছের ঝোল ভালবাসেন?
উ: ভীষণ... শুধু খেতে নয়, রান্না করতেও ভালবাসি। মন খারাপ হলে রান্না ঘরে চলে যাই। মন ভাল হয়ে যায়।
প্র: তাই কি ছবির নাম শুনেই ‘হ্যাঁ’ করেছিলেন?
উ: ‘মাছের ঝোল’ নামটা শুনেই ভাল লেগেছিল। কিন্তু স্ক্রিপ্টটা পড়ার পর আরও ভাল লাগল। ছেলে ও মায়ের সম্পর্ক। যে মায়ের মধ্যে ছেলের জন্য ভালবাসা, স্নেহ সবই আছে, কিন্তু মা ভীষণ প্র্যাকটিকালও। চোখের জল ফেলবে না। ছেলের চরিত্রে অভিনয় করছেন ঋত্বিক চক্রবর্তী। পরিচালক প্রতীম ডি গুপ্ত আর ওর ইউনিটের সঙ্গে কাজটা বেশ এনজয় করেছি। আমার মনে হয়, ‘মাছের ঝোল’ সকলের মন ছুঁয়ে যাবে।
প্র: অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর ‘পিঙ্ক’-এ অভিনয় করেও ছবির কিছু অংশ মানতে পারেননি। সে নিয়ে প্রকাশ্যে বলেওছেন। তার রিঅ্যাকশন কী হয়েছিল জানেন?
উ: জানি। সকলে ভুল বুঝল। দেখুন, যারা খারাপ কাজ করে তারা আমার কাছে ঘৃণ্য। কিন্তু কিছু ঘৃণ্য পুরুষের জন্য সমগ্র পুরুষ জাতটাকে খারাপ তকমা দেওয়া যায় না। এখন চারপাশে এত সমস্যা, সে সময় মেয়েরা কি সাবধান থাকবে না? সে কি তার পরিধানের বিষয়ে রুচিশীল হবে না? বাড়িতে দারোয়ান কেন রাখি? গয়না আলমারিতে না রেখে বাইরে রাখলেই পারি। এর পর চোর চুরি করলে বলব, চোর তুই চুরি করলি কেন? এটাও তো সেই রকমই হল। নিজেকে একটু সাবধানে রাখা। ‘পিঙ্ক’-এর কিছু অংশ মেনে নিতে পারি না। যে ছেলেদের চিনি না, প্রথম পরিচয়েই তাদের সঙ্গে গিয়ে ড্রিঙ্ক করব? আড্ডা, ড্রিঙ্ক সবই চলতে পারে তবে চেনা গণ্ডির মধ্যে। দুঃখের বিষয়, যাঁরা এই প্রসঙ্গে পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির সঙ্গে তুলনা টানেন, তাঁদের বলি, বিদেশে ভাল ফ্যামিলির লোকজনেরা কিন্তু বেশ রক্ষণশীল। ওঁরা নিজেদের সংস্কৃতি নিয়ে সচেতন। আমাদেরও তো একটা সংস্কৃতি আছে। আমি ভারতীয় বলে ভীষণ গর্ববোধ করি। পাশাপাশি, আমি বিশ্ব নাগরিকও। এটা আমার পরিবার এবং আমাদের স্কুল উদয়ন কলা কেন্দ্রের ছাত্রছাত্রীরাও মানেন। মোদ্দা কথা হল, চারিদিকে এত সমস্যা, তার মধ্যে যদি নারী পুরুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয়, তা হলে তো সমাজ আরও অশান্ত হয়ে উঠবে। কিছু দিন আগে স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে যা হল, তা কল্পনাতীত! এটা নতুন কিছু নয়। এত দিন পর হঠাৎ এ সব নিয়ে...
প্র: একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। বাঙালিকে নৃত্যে আগ্রহী করেছেন দু’জন পুরুষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও উদয় শঙ্কর। অথচ বাঙালি ছেলেদের নাচ শেখা নিয়ে আজও নাক সিটকানো রয়ে গিয়েছে।
উ: শুধু ছেলেরা কেন, মেয়েদের নাচ শেখা নিয়েও ট্যাবু আছে। এখনকার ছেলেমেয়েরা কেরিয়ার নিয়ে বেশি চিন্তিত। কেউ ভাবতেই পারে না নাচকে কেরিয়ার করে বাঁচা যায়। আর আমরা তো নাচের উপরই বেঁচে আছি।
প্র: আপনার দুই ছেলেও কিন্তু নাচকে কেরিয়ার হিসেবে নেননি।
উ: দু’জনেই ছোটবেলায় নাচ করত, কিন্তু বড় হয়ে আর করল না। নাচ নিয়ে অনেকেই এগোতে চায় না। তার আর একটা কারণ, সরকারি অনুদানের বেহাল অবস্থা। এক জন শিল্পীকে কেন্দ্রীয় সরকার অনুদান দেয় ছ’হাজার টাকা! এই টাকায় কী হয় বলুন তো? আমরা তো অনুদান পাই না। তবু বাবার আশীর্বাদে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারছি।
প্র: বাবা মানে, সত্য সাঁই বাবা? আপনি তো তাঁর বিরাট ভক্ত। কিন্তু তাঁকে নিয়ে তো বিস্তর বির্তক...
উ: বাবার মিরাকেলের ব্যাপারটা আমার মা অমলা শঙ্করই বিশ্বাস করতেন না। ১৯৯৭-তে বাবা মাকে ডেকে পাঠালেন তাঁর আশ্রমে, তার পরই মার মনে পরিবর্তন এল! ১৯৯৯-এ দাদা আনন্দ শঙ্করের মৃত্যুতে মা এক ফোঁটা চোখের জল ফেলেননি। সবই বাবার মিরাকেল। শুধু মা কেন, আমারও পরিবর্তন হয়েছে। আগে শুধু চাইতাম, ঠাকুর এটা যেন হয়, ওটা যেন হয়। পার্থিব চাওয়া। এখন কিছুই চাইতে পারি না। কোনও টেনশন নেই। বাবাই শিখিয়েছেন, কাজই হল পুজো। আলাদা করে পুজো করার দরকার নেই। বাবার সবচেয়ে বড় মিরাকেল, মানুষের মনের ভিতরের পরিবর্তন।
প্র: ঘরের দেওয়ালে দেখছি জেমস ক্যামেরন, লিওনার্দো ডি’ক্যাপ্রিয়র সঙ্গে আপনার ছবি, এগুলো...
উ: এগুলো কোনওটা টোকিও, কোনওটা কায়রো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের। বহু বার বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে জুরি হয়েছি।
প্র: আপনি নিজেও তো জাতীয় পুরস্কার-সহ অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। এ সব কথা অনেকেই জানে না...
উ: কী বলব বলুন তো? আমি এটা করলাম, ওটা করলাম...যেচে কাউকে বলতে অস্বস্তি হয়। আসলে বাবা-মার মধ্যে ও সব দেখিনি। মনে করি, কাজই কথা বলে।
প্র: সিনেমায় কোরিওগ্রাফ করতে দেখা যায় না কেন?
উ: সঞ্জয় লীলা ভংসালীর ‘দেবদাস’-এ করার কথা ছিল। ডেট ক্ল্যাশ করায় করা হয়নি! এ বারও ‘পদ্মাবতী’র জন্য বলেছিল। কিন্তু তার পর আর কথা এগোয়নি।
প্র: মমতা শঙ্কর নতুন কী মঞ্চস্থ করতে যাচ্ছে?
উ: শবরী। রামায়ণের একটি চরিত্র। শবরী, বলিষ্ঠ ও আধুনিক এক চিরন্তন নারী চরিত্র। প্রচুর বিদেশি মিউজিক ব্যবহার করেছি। কাকার (রবি শঙ্কর) সেতার, ব্রেন্ট লুই, শিবমণি...
প্র: ‘মাছের ঝোল’-এর পর?
উ: অরিন্দম ভট্টাচার্যের ‘ফ্ল্যাট নম্বর ৬০৯’ এবং আর কয়েকটা হাতে আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy