Advertisement
E-Paper

‘মেয়েরা ইদানীং নিজেরাই আপস করতে রাজি’, যশ-নুসরত বিতর্ক সামলে কোন কাহিনি বললেন পুনম?

টলিপাড়ার দাপুটে কাস্টিং ডিরেক্টর পুনম ঝা। ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে মানুষের জীবনে যেমন সাফল্য আছে, তেমনই আছে বিতর্কও। টলিউডে নায়ক-নায়িকা বাছা হয় কি সত্যিই বন্ধুত্বের নিরিখে? অভিনয়ে সুযোগ পেতে হলে কি প্রযোজক-পরিচালকের সঙ্গে কফি খেতে যাওয়া জরুরি? আনন্দবাজার ডট কম-এর সব প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব দিলেন পুনম।

উৎসা হাজরা

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৫৭
Exclusive interview of Tollywood casting director Poonam Jha

অভিনেতা-অভিনেত্রী বাছাই থেকে যশ বিতর্ক—কী বললেন পুনম ঝা? ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: টালিগঞ্জের কাস্টিং ডিরেক্টর মানে শুধু আপনার নামই সবাই বলেন। পুনম ছাড়া কি আর সত্যিই কোনও এমন অভিনেতা নির্বাচক নেই?

পুনম: ইন্ডাস্ট্রিতে আমার ২৫ বছর হয়ে গেল। ফলে অনেকেই আমায় চেনেন। তাই হয়তো আমার নাম বেশি শোনা যায়। তবে অনেকেই কিন্তু ইদানীং কাস্টিং করছেন। নিজেদের কোম্পানিও খুলেছেন।

প্রশ্ন: প্রথম কী ভাবে কাস্টিংয়ের দায়িত্ব পেলেন?

পুনম: ২০০৮ সালে যখন চাকরিতে যখন ঢুকি, তখন স্টার জলসায় অনেকগুলো ধারাবাহিক তৈরির কথা চলছে— ‘বেহুলা’, ‘সিঁদুরখেলা’, ‘মা’। সে সময় মণিদা (মহেন্দ্র সোনি), শ্রীকান্তদা (মোহতা) আমার কাঁধে বিশাল দায়িত্ব দেন। অভিনেতাদের পোশাক, লুক ঠিক করা থেকে নায়ক-নায়িকাদের বাছাই করা।

প্রশ্ন: কী করে বোঝেন যে এই ধারাবাহিক বা এই ছবিতে ওই নায়ক বা নায়িকাকেই মানাবে?

পুনম: তার জন্য প্রথমে চিত্রনাট্যটা পড়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর অবশ্যই পরখ করা বা পর্যবেক্ষণ করার চোখ থাকা চাই। মনে হয় সেটা আমার আছে। আর ইন্ডাস্ট্রিতে সবাই জানেন, পুনম মানে নতুন মুখ খুঁজে বার করবে। যদি আমার দেখার ক্ষমতা না থাকে তা হলে কী করে কাস্টিং ডিরেক্টর হলাম? কাস্টিং ডিরেক্টরের মধ্যে গোয়েন্দা, মনোবিদ এবং নিরাময়কারী (হিলার)— এই তিন গুণ থাকতে হবে। এমনও হয়েছে পার্লারে গিয়েছি, সেখানে একটি মেয়েকে দেখে ভাল লেগেছে। সেখান থেকে ডেকে অডিশন নিয়েছি। ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’ ধারাবাহিকের বিজয়লক্ষ্মীকে নাচের স্কুল থেকে বাছাই করেছিলাম। এমনকি, ফুচকা খাচ্ছে, সেখান থেকেও এক জনকে ধরে নিয়ে এসেছিলাম।

প্রশ্ন: তা হলে এই যে শোনা যায় টলিপাড়ায় নাকি শুধু বন্ধুত্বের জোরেই কাজ পাওয়া যায়। পরিচালক, প্রযোজকদের সঙ্গে সখ্য থাকলেই সুযোগ মেলে?

পুনম: আমি নিজের অপছন্দের মানুষকেও কিন্তু কাস্ট করেছি। যদি জানি সেই চরিত্রটা ওই অভিনেতাই ফুটিয়ে তুলতে পারবে তা হলে অন্যকে কেন নেব? তবে এই ইন্ডাস্ট্রিতে যে একেবারে পক্ষপাতিত্ব নেই সেটা বলতে পারব না। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে, কোনও দিনই তা ঘটেনি। ব্যক্তিগত জীবন আর পেশাদারিত্ব আমি কোনও দিন মিশিয়ে ফেলি না। তবে সমমনস্ক হলে কাজ করা সুবিধা হয়, এটাও ঠিক।

Exclusive interview of Tollywood casting director Poonam Jha

টলিপাড়ায় কী করে কাস্টিং ডিরেক্টর হলেন পুনম? ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: তা হলে ইন্ডাস্ট্রিতে ‘লবি’ নেই?

পুনম: যত দিন ‘এসভিএফ’-এ চাকরি করেছি তত দিন কিন্তু এটা আমি দেখিনি। এখনকার কথা বলতে পারব না। মণিদা এবং শ্রীকান্তদা কিন্তু সরাসরি বলে দিতেন, দায়িত্বে পুনম রয়েছে ওর সঙ্গেই যোগাযোগ করার জন্য। আমায় অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছিলেন ওঁরা। এর ফলে আমি এমন অনেক নতুন মুখ বাছাই করেছি যাঁরা এখন সফল অভিনেতা,অভিনেত্রী। তবে ইদানীং নতুন উঠতি প্রযোজক অনেকেই আসেন যাঁরা বলেন, ছবি তৈরি করব, আমার চেনা অমুককেই নায়িকা হিসাবে নিতে হবে। আমি স্পষ্ট বলে দিই, এ ভাবে আমি পারব না কাজ করতে।

প্রশ্ন: আর কাস্টিং কাউচ...

পুনম: এই শব্দটা শুনে শুনে আমার কান পচে গেল। ২৫ বছর ধরে কাজ করছি, আমার সঙ্গে কেউ অসভ্যতা করেনি এখনও। কী করে? আমার কথা শুনলে অনেকে আবার সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু ইদানীং কাস্টিং করতে গিয়ে দেখছি মেয়েরাও খুব সাহসী। একটা ঘটনার কথা বলব?

প্রশ্ন: হ্যাঁ, বলুন...

পুনম: কোনও একটা ছবি বা সিনেমার জন্য অডিশন নিচ্ছিলাম কিছু দিন আগে। একটি মেয়ে এসেছিল তাঁর মায়ের সঙ্গে। অডিশনের আগে মেয়েটি এসে আমায় বলল, “ম্যাম আমি কিন্তু ‘কম্প’ও করতে রাজি।” এ কথা শুনে তো আমি আকাশ থেকে পড়লাম। ‘কম্প’ শব্দটাই তো কোনও দিন শুনিনি। তখন পাশ থেকে আমার এক সহকারী বোঝালেন, ‘কম্প’ মানে হল ‘কম্প্রোমাইজ়’ করা। রীতিমতো আঁতকে উঠেছিলাম। তার পর সেই মেয়েটিকে বুঝিয়েছিলাম, কাজ পেতে গেলে ‘কম্প্রোমাইজ়’ করতে হয় না। কাজটা জানতে হয়। আর যাঁরা এ ধরনের কুপ্রস্তাব দেন তাঁরা কোনও দিন কাজ দেবেন না। এটা অভিজ্ঞতা থেকে বললাম।

প্রশ্ন: তা হলে কাজের সুযোগ দেবে বলে কফি খেতে যাওয়ার জন্য কেউ ডাকে না? সবই ভুল তথ্য?

পুনম: কফি খেতে তো সমস্যা নেই। কিন্তু সেই পরিচালক, প্রযোজকদের উদ্দেশ্য তোমায় বুঝতে হবে। এখন রাত ১২টায় কেউ ডাকল। বলল কোনও হোটেলে আসতে। সে সময় তো যাওয়ার প্রয়োজন নেই। যদি যাও, তা হলে যেচে তুমি ফাঁদে পা দেবে। অন্য কাউকে তো এ ক্ষেত্রে দোষ দেওয়া যায় না।

Exclusive interview of Tollywood casting director Poonam Jha

পুনম মহিলা কাস্টিং ডিরেক্টর হওয়ায় কি বাড়তি সুবিধা নতুনদের? ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: মহিলা কাস্টিং ডিরেক্টর বলে নতুনদের সুবিধাও আছে তা হলে?

পুনম: হ্যাঁ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো আছেই। ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকে ভয় পায় আমায়। তাই আমার শিল্পীদের সঙ্গে কেউ অসভ্য আচরণ করার সাহস পায় না।

প্রশ্ন: কোন অভিনেতা বা জুটিকে পর্দায় আনতে পেরে আপনি খুব খুশি?

পুনম: নির্দিষ্ট করে তো বলতে পারব না। ‘মা’ ধারাবাহিকে 'ঝিলিক', 'ফুলকি' বাছাই করেছিলাম আমি। শ্বেতা ভট্টাচার্যের প্রথম অডিশন নিয়েছিলাম। ‘সিঁদুরখেলা’ ধারাবাহিকের অডিশন। কিছুতেই পারছিল না। সে ওকে বকে-ধমকে অডিশন করিয়েছিলাম। কারণ, চ্যানেলকে তো বোঝাতে হবে মেয়েটি ফুটিয়ে তুলতে পারবে চরিত্রটা। আর বড় হিট অরণ্য সিংহ রায় এবং পাখি মানে যশ আর মধুমিতার জুটি। ওদের জুটি নিয়ে তো এখনও আলোচনা হয়।

প্রশ্ন: যশ-মধুমিতার সেটে নাকি একেবারে বনিবনা ছিল না! নায়ক-নায়িকাকে বাছাই করার পর যদি এই ধরনের সময়স্যা তৈরি হয়, কাস্টিং ডিরেক্টর হিসাবে কী করণীয়?

পুনম: এরা সবাই পেশাদার অভিনেতা। ‘বোঝে না সে বোঝে না’র ক্ষেত্রে সুবিধা হয়েছিল। কারণ, দৃশ্যের অনেকটা অংশ জুড়ে খুনসুটিই ছিল। আর ক্যামেরার সামনে সঠিক কাজ হচ্ছে কি না, সেটাই দেখা আমার দায়িত্ব।

প্রশ্ন: যশের সঙ্গে আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কেন্দ্র করেও অনেক আলোচনা হয়। এমনকি, লেখা হয়েছিল যশ এবং নুসরত জাহানের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি আপনি, আদপে আপনাদের সমীকরণটা ঠিক কী?

পুনম: যশের প্রযোজনা সংস্থার প্রথম ছবি 'আড়ি'র সৃজনশীল পরিচালক ছিলাম আমি। বন্ধুত্ব আছে বলেই কাজটা করছি। যশ, নুসরত দু’জনের সঙ্গেই আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। একটা ছেলে আর মেয়েকে মিশতে দেখলেই লোকে কথা বলে। শুনেছি, আমিই নাকি সংসার ভেঙেছি যশ-নুসরতের! এই লেখাও বেরিয়েছে। আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক নুসরত যশের জীবনে আসার আগে থেকেই। বাইরের কারও কোনও মন্তব্যে আমি বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দিতে রাজি নই। নুসরত বাইরে গেলে আমার জন্য উপহার নিয়ে আসে। আমিও বাইরে ঘুরতে গেলে পছন্দসই উপহার নিয়ে আসি ওদের জন্য। ‘আড়ি’ করার সময় তো সারা ক্ষণ কথা হত। নুসরত বলত দিদি এটা কী হবে, ওটা কী করব? আমাদের মধ্যে কোনও সমস্যা নেই।

Exclusive interview of Tollywood casting director Poonam Jha

কাস্টিং কাউচ প্রসঙ্গে স্পষ্ট উত্তর পুনমের। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: যশকে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিলেন আপনিই। ‘বোঝে না সে বোঝে না’র অরণ্যকে এখনও টেক্কা দিতে পারল না তাঁর বাকি কাজগুলো। ব্যক্তিগত ভাবে কী মনে হয়?

পুনম: যে কোনও কাজের সাফল্য শুধু অভিনেতা-অভিনেত্রীদের উপর নির্ভর করে না। তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে আরও অনেক কিছু। যশ খুব পরিশ্রম করতে পারে। ‘গ্যাংস্টার’ কিন্তু প্রায় চার কোটির ব্যবসা করেছিল। তার পরে হয়তো ওকে সে ভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। তেমন পরিচালক পেলে ও হয়তো অন্য রকম কাজ করত। যশকে প্রথমে ‘রামায়ণ’-এর রামের চরিত্রের জন্য ভেবেছিলাম আমি। সেই কাজটা অবশ্য হয়নি।

প্রশ্ন: এখন যদি ‘রামায়ণ’ তৈরি হয়, তা হলে কাকে সীতা বাছবেন?

পুনম: ২০০২ বা ২০০৩ সালের কোয়েলকে।

প্রশ্ন: এই অনিশ্চয়তায় ভরা ইন্ডাস্ট্রিতে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা একটা বড় ব্যাপার। এই পেশায় থাকতে গেলে জীবনধারণের জন্য নিজেকে টিকিয়ে রাখার উপায় কী?

পুনম: আমি প্রথম থেকে চাকরি করতাম। ২৫ বছর পরে এসে নিজে একা কিছু করার চেষ্টা করছি। নতুনদের বলব, আগে পড়াশোনা করে নিজেদের জন্য একটা কাজ খোঁজা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি এটা করো। তার পর জমি শক্ত হয়ে গেলে চাকরি ছেড়ে দাও। কারণ, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা খুব জরুরি। এখন যেমন আমি একটা নিজস্ব সংস্থা খোলার পরিকল্পনা করেছি। কলকাতা ছাড়া মুম্বই, চেন্নাই থেকেও অনেক কাজ আসে। সেখানে বাংলার শিল্পীদের একটা জায়গা করে দিতে চাই আমি।

প্রশ্ন: শোনা যাচ্ছে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনীচিত্রে মিমি চক্রবর্তীকে নাকি বাছা হয়েছে ডোনার চরিত্রে। এই দায়িত্ব আপনি পেলে কাকে নিতেন?

পুনম: মিমিকে ভাল মানাবে। এমনকি, কৌশানীও ভাল অভিনয় করছে। আর ইদানীং ইধিকা পালের কাজও আমার ভাল লাগছে।

Poonam Jha Casting Directors Tollywood Interview
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy