আকাশ জুড়ে মেঘ জমেছে। বৃষ্টি ঝিরিঝিরি। স্টুডিয়ো পাড়া কাজের দিনেও যেন নিঝুম! এ দিকে, জোর খবর, ঊষসী রায় নাকি নিজের বাড়িতেই ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমনই সেই ছদ্মবেশ যে, চট করে নাকি ধরা যাচ্ছে না তাঁকে।
নিজের বাড়িতে ছদ্মবেশ কেন তাঁর? ঊষসীর কাছ থেকে সবিস্তার জানতে আনন্দবাজার ডট কম হাজির রাজ চক্রবর্তীর জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘গৃহপ্রবেশ’-এর সেটে। সেটের ভিতরেও যেন বৃষ্টির আমেজ। শট দেওয়ার আগে মহড়া দিয়ে নিচ্ছিলেন পরিচালক অমিত দাস। বাকিরা সোফা সেটের উপরে পা তুলে আরাম করে বসে। কেউ মন দিয়ে মহড়া দেখছেন। চিত্রগ্রাহক মন দিয়েছেন ক্যামেরার লেন্সে।
সেটে বিদীপ্তা চক্রবর্তী, ঊষসী রায়, মাফিন চক্রবর্তী, অনিন্দ্য সরকার। নিজস্ব চিত্র।
সেটে তখন বিদীপ্তা চক্রবর্তী, অনিন্দ্য সরকার আর বিদীপ্তার পর্দার জা মাফিন চক্রবর্তী। তিন জনের মধ্যে মৃদু বাদানুবাদ। তিন বার মহড়া দেওয়ার পর সবুজ সঙ্কেত দিলেন অমিত। ক্যামেরাম্যানের চোখ ক্যামেরায়। তিন বারের মহড়ার ফলে, এক শটে ‘ওকে’। সেট জুড়ে বড় বড় সোফা। হাসিমুখে সেখানে গিয়ে বসলেন বিদীপ্তা। জায়ের সঙ্গে ঝঞ্ঝাট নাকি? “এটা তো প্রত্যেক বাড়ির চেনা ছবি। যৌথ পরিবারে ঘটি-বাটি লাগেই। তেমনই...” মৃদু হেসে বক্তব্য রেখেই পরের শটের সংলাপে মন তাঁর।
সেটে বাড়ির সাজানো দোতলায়ও রয়েছে। তারই পাশ দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন অনিন্দ্য। একাধিক সফল ধারাবাহিকের পরিচালক তিনি। আবার অভিনয়েও পোক্ত। এই ধারাবাহিকে নায়কের বাবা তিনি। ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে বেশি ভাল লাগে, নাকি ক্যামেরার পিছনে? অনিন্দ্যর সহাস্য জবাব, “দুটোই। তবে পরিচালক হিসাবে বেশি কাজ করেছি। ফলে, ক্যামেরার পিছনই যেন আমার জায়গা।” পরিচালক অভিনেতা হলে অনেক সময় সহ-অভিনেতাদের শট বুঝে নিতে সহযোগিতা করেন। অনিন্দ্য কি সেই দায়িত্বও পালন করছেন? “একেবারেই না। অভিনয়ের সময় বরং আমি পরিচালকের অভিনেতা। অমিত যা চাইছেন সেটাই দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
এই কথোপকথের মধ্যেই সেটে ঊষসীর প্রবেশ। লম্বা সোনালি চুল! বিদেশি পোশাকে আপাদমস্তক মোড়া। চোখে চশমা। অবাক চোখে তাকাতেই হেসে চোখের ইশারা করলেন। বললেন, “আমি কিন্তু আর শুভলক্ষ্মী নই। আমি এখন লাকি। নিজের বাড়িতেই ছদ্মবেশে। স্বামী আদৃতের চোখে ধুলো দিতে।” নতুন সাজে কেমন লাগছে নিজেকে? “বহুরূপী”, সহাস্য জবাব এল আবার। তার পরেই ক্যামেরার মুখোমুখি। বিদীপ্তাকে জানালেন, শরীর খারাপ তাঁর। তাই দ্রুত বাড়ি ফিরতে চান। সংলাপ শেষ হতেই দ্রুত পায়ে সেটের এক পাশে সরে গেলেন।
শিশুশিল্পী শিবাকে নিয়ে বিদীপ্তা, ঊষসী। নিজস্ব ছবি।
সেট যখন মহড়ায়, আড্ডায় সরগরম পরিচালকের কোলে চেপে উপস্থিত শিশুশিল্পী শিবা। পর্দায় ঊষসীরএকরত্তি ছেলে। নিয়মিত অভিনয়ের দৌলতে মা আর সন্তানের এতটাই ভাব যে অভিনেত্রীকে দেখেই হাত বাড়িতে দিল সে। একরত্তির হাতে ব্যাট-বল। “কিচ্ছু বোঝাতে হয় না ওকে। এখনই কী ভাল অভিনয় করে। কেবল একটু সঙ্গ দিতে হয়”, ছেলে কোলে বললেন ছোট পর্দার ‘শুভলক্ষ্মী’। তার পর উদাস হয়ে গেলেন। জানালেন, ছোট পর্দায় নায়িকার জীবনে ভীষণ চড়াই-উৎরাই। ফলে, তাঁকেও অনেক শক্ত দৃশ্যের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। এখন যেমন নিজেকে আড়াল করেছেন ছদ্মবেশে।
আড্ডার ফাঁকেই সেট রেডি। নায়ক সুস্মিত মুখোপাধ্যায় ওরফে ‘আদৃত’ এসেছেন। শিবারও পোশাক বদলানো হবে। কিন্তু সে যে ‘মা’কে ছাড়বেই না! “আমাকে দাও। আমি পরিয়ে দিচ্ছি”, কথা থামিয়ে ছেলেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন উষসী। তাঁর ব্যস্ততায় চিরন্তনী মায়ের ছায়া।