Advertisement
E-Paper

ঘুরব আমি একা একা

সেলফি তোলার মতো এটাই নাকি এখন ট্রেন্ড। স্বার্থপরতার পরিচয়? নাকি নিজের সঙ্গে সময় কাটানোই উদ্দেশ্য? খোঁজ নিচ্ছেন অদিতি ভাদুড়ি।একটা দুর্ঘটনা। বিদেশ ঘোরার অদম্য ইচ্ছে। আর সেই ইচ্ছেডানায় ভর করেই যাত্রা সুদূর প্যারিসে। প্যারিস তাঁকে শেখাল একা স্বনির্ভর হয়ে বাঁচতে শেখা।

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৪ ০০:০০

একটা দুর্ঘটনা। বিদেশ ঘোরার অদম্য ইচ্ছে।

আর সেই ইচ্ছেডানায় ভর করেই যাত্রা সুদূর প্যারিসে।

প্যারিস তাঁকে শেখাল একা স্বনির্ভর হয়ে বাঁচতে শেখা।

আর আমস্টারডাম সফরে সেই জীবন হয়ে উঠল মুক্ত, বাধাহীন।

‘কুইন’-য়ে কঙ্গনা রানাওত ‘রানি’-র জীবনের বৃত্তটা যেন সম্পূর্ণ হল।

কিন্তু কঙ্গনা সেল্‌ফি ছিলেন না ছবিটিতে।

তা বলে সেল্‌ফিরা থেমে থাকবে না কি!

আমরা অদ্ভুত

শৈলজা পান্নু। হিসারের এই জাঠ কন্যা সামনের জুনে ঘুরতে যাচ্ছেন রাজস্থান। যোধপুর এক্সপ্রেসে তাঁর ফার্স্ট স্টপেজ হবে জয়পুর। সেখান থেকে তিনি ঘুরে বেড়াবেন বাকি রাজস্থান। কলকাতার এক কনসালটেন্সিতে কাজ করা শৈলজা ঘুরতে বেড়িয়ে পড়েন একলাই। জিজ্ঞেস করতে জানালেন, “আসলে এটা আমার একটা অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। পড়াশুনো, চাকরি সব নিয়ে বহু দিন ধরেই তো ঘরছাড়া আমি। আর খুব বেশি মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বও নেই আমার। তাই একলাই বেরিয়ে পড়ি ঘুরতে। এনজয়ও করি খুব।”

দলছুট

দল বেঁধে বেড়ানোতে এ প্রজন্মের অনেকেই কিন্তু আর বিশ্বাস করেন না। একা ঘুরে বেড়ানো এই জেনারেশন কি সত্যি এতটাই সেলফিশ! খালি নিজের মতো ঘোরা, নিজের মতো পয়সা কামানো! নিজে, নিজে আর নিজে!

জোর প্রতিবাদ করলেন আইটি সেক্টরে কাজ করা সপ্তর্ষি। “প্রচুর ক্ষেত্রে সময় অ্যাডজাস্ট হয় না বন্ধুদের সঙ্গে। সবাইকেই তো নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই ঝোপ বুঝে কোপ মারার মতো এক-আধটা সুযোগ বের করে নেওয়া। এতে তো সেলফিশনেসের কিছু নেই!”

আর এই বিষয়টাই ইদানীং নানা ট্যুর অর্গানাইজারদেরও চোখ খুলে দিচ্ছে। শহরের এক নামকরা ভ্রমণ সংস্থার উচ্চপদস্থ এক্সিকিউটিভ মৌসুমী জানালেনও সে কথা। “একা ঘুরতে যাওয়া লোকেদের সংখ্যা এখন প্রচুর। বিশেষ করে অল্পবয়সিদের মধ্যে এই ট্রেন্ডটা যেন বেড়ে যাচ্ছে। আমরা বিভিন্ন সিজনে একা লোকেদের জন্য ট্যুর বুক করি।” সঙ্গে এ-ও বললেন, একা যাঁরা ঘুরতে যাচ্ছেন, তাঁদের অ্যাকোমোডেশন পাওয়াটা কখনও কখনও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। সে ক্ষেত্রে একান্ত নিরুপায় অবস্থায় একা ঘুরতে যাওয়া দু’জন ব্যক্তিকে হোটেলে রুম শেয়ার করতেই হয়। মৌসুমীর মতে সেটা যদিও খুব একটা অসুবিধের ব্যাপার নয়।

উঠছে জেগে সকালগুলো

এ যেন সব পেয়েছির দেশ। হঠাত্‌ বড় হয়ে যাওয়ার এক চমত্‌কার অনুভূতি। ‘ওয়েক আপ সিড’-য়ে রণবীর যেমন। নিজের বাড়ি ছেড়ে গিয়ে হঠাত্‌ই একদিন বড় হয়ে গিয়েছিল সে। কিন্তু সে তো একা থাকার গল্প। বা ভেবে দেখুন ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’-র সেই কবীরকে, যে কিনা ঘোরার নেশায় ঘরছাড়া হয়ে জায়গা করে নিয়েছিল গোটা পৃথিবীর মানচিত্রে।

“আমার দারুণ লেগেছিল যে দিন একা একা কাঞ্চনজঙ্ঘার সানরাইজ দেখেছিলাম। নাহ্‌, একবারও মনে হয়নি পাশে কেউ নেই বা কেন নেই!” উত্তেজিত শোনায় পল্লবী মিত্রর গলা। ইউনিভার্সিটির পিএইচ ডি লেভেলের এই ছাত্রী একা দিগ্বিজয় করতে শুরু করেছেন বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই। ঘুরতে গিয়ে বন্ধুদের মিস করেন না তিনি? করি না, তা বলব না। কখনও কখনও মনে হয়। কিন্তু মজাটা হল বাইরে বেড়াতে গিয়ে নতুন নতুন অনেক বন্ধু হয়ে যায়। ধরুন আমি যেমন একা যাই। অনেকেই আছে যারা আমার মতো একা ট্যুর করে। হোটেলে অনেক সময় রুম না থাকলে হয়তো দু’জনকে মিলেই অ্যাকোমোডেট করতে হয়। আগে অস্বস্তিতে পড়তাম। এখন ব্যাপারটার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। আর ওদের সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্বও হয়ে যায় সত্যি।”

তবে পল্লবীর মতো একা ঘুরতে বেরোনোদের অভিজ্ঞতা সব সময় না-ও মিলতে পারে।

কেন্দ্রীয় সরকারি চাকুরে প্রীতিময় মুখোপাধ্যায় যেমন একা ঘুরছেন বেশ অনেক বছর হল। বললেন, “আগে এমন হয়েছে থাকার অসুবিধের জন্য রুম শেয়ার করতে হয়েছে। করতামও। কিন্তু সবার হ্যাবিট তো এক হয় না। কিছু খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল তখন। তাই রুম শেয়ার ব্যাপারটা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছি এখন।”

“ঘুরতে গিয়ে কখনও নতুন সফরসঙ্গী পেয়ে যায় একা-একা ঘুরে বেড়ানো প্রজন্ম। জন্ম নেয় আস্ত একটা সম্পর্ক”

চলো যাই ঘুরে

ঘুরতে তো বেরোলেন একা। কিন্তু হঠাত্‌ শরীর খারাপ হলে?

কিংবা ধরুন লাগেজ হাতছাড়া হয়ে গেল! কী করবেন তখন?

ঠিক এ রকম উদ্ভট সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন স্কুলশিক্ষিকা মানালি বসু। “গত জুলাইয়ে গিয়েছিলাম অসম। সারা দিন ঘোরাঘুরি করে হোটেলে ফিরে একদিন দেখি আমার লাগেজ গায়েব! উফ্ সে কী বিপদ! সঙ্গে এমন কেউ নেই যে তথ্যপ্রমাণ দিতে পারে। বড় বিপদে পড়েছিলাম সত্যিই। যদিও পুলিশের সাহায্য নিয়ে ট্রেস করা গেল পরে। হোটেলেরই এক কর্মচারীর কাণ্ড সেটা,” হাসতে হাসতে বলেন মানালি। এর পরেও কিন্তু মানালির একা ঘুরতে যাওয়া বন্ধ হয়নি। “কী জানেন তো, এটা একটা নেশার মতো। একবার ধরে গেলে সহজে আর ছাড়তে চায় না,” বক্তব্য তাঁর।

মানালির মতোই একা ঘুরে বেরান যাঁরা, তাঁরা কিন্তু রাস্তায় বেরোনোর নিয়মকানুনগুলো ভালই জানেন। আর তাই বোধহয় ঘটনা বা দুর্ঘটনা কোনও কিছুই সহজে কাবু করতে পারে না তাঁদের।

জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চন্দ্রিমা একাই ঘুরতে গিয়েছিলেন ভাইজাগ। “অন্ধ্রপ্রদেশ ট্যুরিজমের বাসে আরাকু গিয়েছিলাম। ফেরার পথে বিনা বুকিংয়ে হজ্জোতি করে কিছু ট্যুরিস্ট বাসে উঠতে যায়। আমার পেশার কারণেই বাস-মালিকের সঙ্গে একজোট হয়ে ওদের আটকাতে পেরেছিলাম,” বলেন চন্দ্রিমা। আরও জানান, পথে বেরোতে হলে তাই নিয়মকানুনগুলো জেনে রাখাটা খুব দরকার একা ঘোরা মানুষদের।

বন্ধু কী খবর বল

ঘুরতে গিয়ে নতুন সফরসঙ্গী তৈরি হয়ে যায় একা ঘুরে বেড়োনো প্রজন্মের প্রতিনিধিদের। অনেক সময় সেখান থেকেই জন্ম নেয় আস্ত একটা সম্পর্ক। কখনও বা সফরের সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় সফরেই। দিল্লির এক নামজাদা ভ্রমণ সংস্থার ট্যুর ম্যানেজার অজয় সম্পত বললেন, “আমরা সিঙ্গলদের জন্য এমন ট্যুর অর্গানাইজ করি যেখানে বিভিন্ন বয়সের মানুষরা একসঙ্গে এসে নিজেদের ইন্টারেস্ট শেয়ার করতে পারেন। অ্যান্ড দে আর অল সিঙ্গল। কিন্তু ঘুরে বেড়াতে গিয়ে ওদের মেন্টালিটির বেশ ম্যাচ হয়ে যায়।”

এমনি ভাবেই কিন্তু বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল পুণের রাপ্তীর সঙ্গে কলকাতার অন্বয়ের। এই দুই সফ্টওয়্যার প্রফেশনাল ইদানীং প্রায়ই একসঙ্গে ট্যুর বুক করে ফেলেন।

অন্বয় যদিও জিজ্ঞেস করাতে বললেন, “হ্যাঁ, রাপ্তীর সঙ্গে যেতে ভালই লাগে। বেশ ম্যাচ হয় আমাদের। তবে এমন নয় যে প্রত্যেকটা ট্রিপ আমরা একসঙ্গে প্ল্যান করি। ঘুরতে গিয়ে অনেক নতুন বন্ধুও হয়ে যায়। ওদের সঙ্গেও ট্যুর প্ল্যান করি কখনও কখনও।”

সেল্‌ফিদের ঘোরা তাই বাঁধাবন্ধনহীন। এক সম্পর্ক থেকে আরেক সম্পর্কে অনায়াস যাত্রা। আর সেই ঘোরার এক অতুলনীয় রসদ নিজের নিজেকে চিনে নেওয়া। এদের ‘একলা চলো রে’ নীতিকে তাই স্বার্থপর মানতে নারাজ এরা। এ যেন উচ্ছল, উদ্দাম আমার ‘আমি’র সেলিব্রেশন।

এক এক্কে পাঁচ

• একা ঘোরা মানে নিজের দায়িত্ব নিজের। প্রথমেই দেখে নিন ব্যাগে প্রয়োজনীয়
ওষুধপত্র রয়েছে কি না। না থাকলে লিস্ট মিলিয়ে কিনে রাখার ব্যবস্থা করুন

• বিদেশে গেলে পাসপোর্টটা খুব যত্নে রাখুন নিজের কাছে। কোনও কোনও দেশে ঘুরতে গেলে
কিন্তু সঙ্গে ভিসা থাকাটাও জরুরি। বেড়াতে বেড়োনোর আগে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন।
কোনও ট্যুর এজেন্সির সঙ্গে গেলে খবর পেয়ে যেতে পারেন তাঁদের থেকেও

• সঙ্গে অবশ্যই রাখুন অ্যাডাপটার, চার্জার। এর কোনও একটা নিতে ভুল হলে সাঙ্ঘাতিক বিপদে পড়ে যেতে পারেন

• ঘুরবেন একা। কাজেই হাল্কা ওজনের ব্যাগ নেওয়াই যথেষ্ট। ঘোরাটা অনেক কম ঝামেলার হবে

• যে জায়গাগুলোতে যাচ্ছেন, আগে থেকে নেট চেক করে সেখানকার স্থানীয় থানা,
এমার্জেন্সি পয়েন্টগুলোর বিষয়ে খবর নিয়ে রাখুন। সুবিধেই হবে

‘আই কান্ট মেক ইউ লভ মি’: আইটিউনস-এ তাঁর তৃতীয় সিঙ্গল। পিগি চপস্ কি নার্ভাস?

কেশ‘শ্রী’: নতুন হেয়ার-স্টাইলে যিশু সেনগুপ্ত

aditi bhaduri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy