কখনও ঘিয়ে রঙের উপর সুতোর কাজ করা তাঁতের শাড়ি, কখনও আবার হাতে বোনা সিল্কের শাড়ি, কখনও বা কলমকারি কাফতান— ‘আমার বস্’ ছবির ঝলকে এমন নানা রূপে দেখা গিয়েছে রাখি গুলজ়ারকে। বর্ষীয়ান অভিনেত্রীকে ছবিতে সাজিয়েছেন পোশাকশিল্পী অভিষেক রায়।
নিজের সাজ নিয়ে বরাবরই সচেতন রাখি। তাই তিনি কেমন ভাবে সাজতে চাইছেন, তা বুঝে নিতে রাখির মুম্বইয়ের বাড়ি গিয়েছিলেন অভিষেক। পোশাকশিল্পী বলেন, “ছোটবেলা থেকেই ওঁকে সুন্দর সুন্দর চরিত্রে দেখে এসেছি। ওঁর মুম্বইয়ের বাড়িতে গিয়েছিলাম। কী পরবেন, তা নিয়ে বেশ ভাবিত ছিলেন তিনি। শিবুদাই আমার হয়ে বলেছিলেন, ‘অভিষেকের উপর ভরসা করতে পারো।’”
রাখির বাড়িতে শাড়ির সম্ভার নিয়ে গিয়েছিলেন অভিষেক। সেখান থেকে অভিনেত্রী বেছে নিয়েছিলেন, কোনটা পরবেন, কোনটা পরবেন না। সাজ নিয়ে নিজের মতামতও জানিয়েছিলেন রাখি। অভিষেকের কথায়, “নিজস্ব সম্ভার থেকে বেশ কিছু শাড়ি-ব্লাউজ় দেখিয়েছিলেন। সেগুলি ব্যবহার করা যায় কি না, তা ভেবে দেখতে বলেছিলেন। কেমন কাফতান পরা যেতে পারে, তা নিয়েও মতামত জানিয়েছিলেন। পর্দায় ওঁকে কেমন দেখাবে, সে বিষয়ে খুবই সচেতন। তাই এমন মানুষের সঙ্গে কাজ করা তো অবশ্যই বড় অভিজ্ঞতা।”
ছবিতে রাখির গলায় দেখা যাবে একটি রুদ্রাক্ষের মালা। ওটি তাঁর সাজের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। মালাটি বারাণসী থেকে নিয়ে এসেছিলেন অভিষেক। তাঁর সাজে একটি রুদ্রাক্ষের মালা যোগ করলে যে ভাল হয়, সে পরামর্শ রাখিই দিয়েছিলেন, জানিয়েছেন পোশাকশিল্পী। তিনি বলেন, “রাখিদি নিজেই বলেছিলেন, ‘আমাকে একটা রুদ্রাক্ষের মালা দিয়ো’। আমরা দেখেছি প্রাচীন প্রজন্মের মহিলারা সব সময় এই ধরনের মালা পরে থাকতেন। সেখান থেকেই এই ভাবনা। ঘটনাচক্রে আমি তখন বারাণসীতেই ছিলাম। সেখান থেকেই রুপো দিয়ে বাঁধানো রুদ্রাক্ষের মালাটি নিয়ে আসি।”
শুধু রুদ্রাক্ষের মালা নয়। এ ছবিতেই রাখির হাতে দেখা যাবে সারদা বালা। এই প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, “রাখিদির সাজে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ গয়না হল সারদা বালা। আগে মহিলারা সব সময় হাতে এই বালা পরতেন। আমার মা এখনও পরেন। ছবিতে রাখিদির সাজে জাঁকজমক নেই। তবে এই বালা সাবেক ছোঁয়া তৈরি করেছে ওঁর সাজে।”

‘আমার বস্’ ছবিতে রাখি গুলজ়ার।
ছবিতে ভিন্ন ধরনের বোনা শাড়ি পরেছেন রাখি। অভিষেক বলেছেন, “ছবিতে বাংলার তাঁত পরেছেন। আবার মধুবনি শাড়ি পরেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি পরেছেন ইক্কত ও জামদানি শাড়ি। কোন শাড়ির সঙ্গে কী ব্লাউজ় পরবেন তা নিয়েও তিনি সচেতন। নিজের বেশ কিছু শাড়ি দিয়েছিলেন। তবে বলে দিয়েছিলেন, এই শাড়িগুলি শুটিংয়ে এক বার ব্যবহার হয়ে গেলে, পরে আর পরবেন না।”
‘আমার বস্’ ছবিতে প্রবীণ স্বামীহারা মহিলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাখি। কিন্তু তাঁকে সাদা রঙের শাড়ি সবচেয়ে কম পরানো হয়েছে, জানান অভিষেক। পোশাকশিল্পীর কথায়, “প্রবীণ মায়ের চরিত্র তাঁর। কিন্তু চরিত্রটি খুবই শক্তিশালী, যার নিজের সাজ নিয়েও বিশেষ রুচি রয়েছে। তাই বলে সাদা রঙের শাড়ি পরানো হয়েছে, এমন নয়। নানা রকমের প্যাস্টেল রঙের শাড়ি পরেছেন তিনি।”
শাড়ি নিয়ে প্রথম থেকেই একটি শর্ত রাখেন রাখি। ‘ফল্স’ পাড় ছাড়া কোনও শাড়িই তিনি পরবেন না। অভিষেক বলেছেন, “বহু শাড়ি রয়েছে, যা ফল্স পাড় ছাড়াও পরা যায়। কিন্তু তিনি ফল্স পাড় ছাড়া কোনও শাড়ি পরবেন না। আসলে রাখিদি যে ফ্যাশন অনুসরণ করেন, তেমন নয়। ওঁর নিজের ব্যক্তিত্বই যথেষ্ট শক্তিশালী।