Advertisement
E-Paper

টাইম মেশিনে চেপে রোম্যান্টিক যাত্রা

সেই যাত্রায় আবীর চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গী করে সামিল পরিচালক অতনু ঘোষ। ছবির নাম ‘অ্যাবি সেন’। লিখছেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।সেই যাত্রায় আবীর চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গী করে সামিল পরিচালক অতনু ঘোষ। ছবির নাম ‘অ্যাবি সেন’। লিখছেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৫ ০০:০২
‘অ্যাবি সেন’ ছবিতে রাইমা ও আবীর।

‘অ্যাবি সেন’ ছবিতে রাইমা ও আবীর।

২৬ মে, ২০১৩। তিরিশ বছরের এক যুবক তেত্রিশ বছর পিছিয়ে পৌঁছল ২৭ মে ১৯৮০তে।

সাত বার চাকরি খোয়াতে হয়েছে তাকে। এক কথায় ব্রিলিয়ান্ট, তবুও তার শোয়ের টিআরপি সবার নীচে। কোনও চাকরি আর নেই। রাগ, অভিমান, অপমান, জেদে পৃথিবীটা ছাড়তে পারলে যেন বেঁচে যায় সে।

তিরিশের এই যুবকের নাম অভিরূপ। লোকের মুখে সে অ্যাবি সেন। অ্যাবি পালাতে চায়। আবার বাঁচতেও চায়।

চোদ্দো বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানী প্রিয়াংশু তৈরি করেছে এক ম্যাজিক ক্যাপসুল। তার ম্যাজিক মিশনে ক্যাপসুল খেয়ে সময়কে ফেলে এগিয়ে যাওয়া যায়। আবার কখনও চলার বেগে সময়ের চেয়ে পিছিয়ে যাওয়া যায়।

ক্যাপসুল খেয়ে পেছনে হাঁটল অ্যাবি...

টাইম ট্রাভেল নিয়ে আস্ত একটা বাংলা ছবি। পরিচালক অতনু ঘোষ ‘অ্যাবি সেন’য়ে ‘রূপকথা নয়’য়ের পর সোজা রিয়েলিটি থেকে ফ্যানটাসির পথে গল্প বললেন। বাংলা ছবিতে ‘টাইম ট্রাভেল’ নিয়ে খুব একটা চর্চা হয়নি। তবুও ‘অ্যাবি সেন’য়ে ’৮০র সিপিয়া টোন, ফ্যানটাসি বাঙালিকে ‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’, ‘আশিতে আসিও না’র রেফারেন্সে নিয়ে যায়। যদিও সেখানে কল্পবিজ্ঞানের গল্প নেই। অন্য দিকে ‘পাতালঘর’য়ে কল্পবিজ্ঞানের আশ্চর্য সব কাণ্ডকারখানায় টাইম ট্রাভেলের গল্প ছিল না। অতনু ঘোষ যেন ‘অ্যাবি সেন’য়ে বাংলা ছবির দুই ধারাকে মিলিয়ে দিলেন।

মনের মধ্যে ভিড় করেছে অনেক প্রশ্ন।

কেমন হত যদি ফেরা যেত আমার জন্মের আগের সময়ে? কোথায় খুঁজতাম মা-বাবাকে। মাকে যদি হারাতাম তা হলে আমার জন্মই হত না। এ ভাবেও কি ফেরা যায়?

ফিরে গেল অ্যাবি সেন। মুহূর্তে বদলে গেল হাইরাইজ, কফি শপের হোয়াটসঅ্যাপে ব্যস্ত কলকাতার ক্যানভাস। দেখা দিল কেবলের তারহীন, লোডশেডিং, টানা রিকশায় ভরা ছিমছাম কলকাতা। তখন বিজয়ার প্রণাম যেত ইনল্যান্ড লেটার বা পোস্ট কার্ডে। ফোন নম্বর লিখে রাখার জন্য খোঁজ পড়ত কাগজ-কলমের। তখন উত্তমকুমার বাংলা ছবিতে একের পর এক পাগল করা রোম্যান্সের জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন...। পুরনো কলকাতার জীবনকে দেখতে বেশ লাগে।

আমরা বলি এখন সব বদলে গিয়েছে। আসলে কি কিছু বদলায়? প্রশ্ন করতে শেখায় এই ছবি। অ্যাবি দেখে আশির দশকেও তো চাকরির জায়গায় বসের তাবেদারি করা নোংরা রাজনীতির খেলা ছিল! কারখানা লক আউটে থেকে থেকে শ্রমিকের হরতাল। তখনও তো এক আধুনিকা মা ছিলেন যিনি তাঁর মেয়ের বয়ফ্রেন্ডকে প্রয়োজনে বাড়িতে আশ্রয় দেন।

সাফল্যের মাপকাঠি, ভাল থাকার সংজ্ঞা, ফেসবুকের প্রোফাইলে দ্রুত গুড লিভিংয়ের ছবি বদলেছে মাত্র। ইএমআইয়ের অঙ্ক দিয়ে স্টেটাস তৈরি হয়েছে। অনুভূতির খুব বেশি হেরফের হয়নি।

টাইম-ট্রাভেলের গল্প থেকে ইমোশনাল জার্নির দিকে ছবিটা চলে যায়। ‘‘এই ছবিতে এগিয়ে পিছিয়ে সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে গিয়ে বুঝলাম কোথাও আমাদের আবেগ একই রকম আছে। আজও কিলার ইন্সটিংক্টের চেয়ে সূক্ষ্ণ অনুভূতির দাম অনেক বেশি। ‘অ্যাবি সেন’য়ে এটাই আমার প্রাপ্তি। কোথায় যেন নিজের অনুভূতিকে মেলাতে পারি,’’ বললেন অ্যাবি ওরফে আবীর চট্টোপাধ্যায়।
এই বছর ব্যোমকেশ-ফেলুদার বাইরেও বাংলা ছবিতে অন্য ধারার চরিত্র করে খুশি তিনি। ‘অ্যাবি সেন’ নিয়েও বেশ উত্তেজিত আবীর, পরিচালক অতনু ঘোষকে বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, ‘‘এই প্রথম কোনও ছবিতে একসঙ্গে তিনতিনটে সুন্দরী নায়িকা! উফ দারুণ লেগেছে শ্যুট করতে।’

সুন্দরী নায়িকাই নন, রাইমা সেন এই ছবিতে গায়িকাও। ‘‘ডাবিংয়ের সময় আমার মায়ের আগের প্রজন্মের মহিলার কথা বলার ধরনটা খুব মন দিয়ে পরিচালকের কাছে শিখেছি,’’ বলেন রাইমা। ‘অ্যাবি সেন’য়ে বেলবটস, লংকুর্তা, শাড়ির সঙ্গে ঘাড়-খোঁপার রাইমা ওরফে পরমার মধ্যে দিয়ে বোঝা যায় জীবনকে টাকা স্টেটাস, চাকরি দিয়ে না চিনেও দিব্যি কাটিয়ে দেওয়া যায়। গানের সুরে ভরিয়ে রাখে সে অ্যাবিকে। তার ভালবাসার আলিঙ্গনে বাস্তব থেকে রূপকথায় ফেরে অ্যাবি।

ফুরিয়ে আসে অ্যাবির মেয়াদ। অ্যাবি কী করবে? ফিরে যাবে তার শপ্যাহোলিক বৌ শ্রোমীর কাছে? সুন্দরী অরুণিমা বা ছবির শ্রোমী, বর চাকরি ছাড়লে বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙচুর করে আর বলে, ‘‘চিন্তা কোরো না। আমার মনে আছে কোন দোকান থেকে কোনটা কিনেছি। তুমি নতুন চাকরি পেলেই আমরা আবার সব কিনে নেব!’’

ইএমআই, স্টেটাস, গ্যাজেটের ওপর দাঁড়িয়ে আছে শ্রোমীর জীবন। ছবিতে কোথাও এ ভাবেই পরমা আর শ্রোমীর বিপরীত দুই চরিত্রে অতীত আর বর্তমান জীবন ধরা থাকল। টিআরপির চাপ নেই, ইএমআইয়ের যন্ত্রণা নেই। পরমাকে ছাড়তে ইচ্ছে করেনা অ্যাবির। কী হবে অ্যাবির? শ্রোমীকে কি হারাবে সে? সেটা হলে গিয়ে দেখাই ভাল। অতনু ঘোষের সৌভাগ্য তিনি ‘অ্যাবি সেন’য়ের জন্য তাঁর পছন্দের কাস্টিংয়ে পেয়েছেন আবীর চট্টোপাধ্যায়, চিরঞ্জিত, রাইমা সেন, অরুণিমা ঘোষ, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, খরাজ মুখোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু, নীল মুখোপাধ্যায়, ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়, প্রিয়াঙ্কা সরকার, কাঞ্চন মল্লিক, বিশ্বনাথ বসুর মতো অভিনেতাদের।

আশির দশকের রেট্রোলুক থেকে ২০১৩র হেরে যাওয়া এক টিভি প্রোডিউসরের ভূমিকায় আবীর সাবলীল। রাইমার সংযত অভিনয় সেকালের নায়িকাদের কথা মনে করিয়ে দেয়। স্টেটাস সচেতন ন্যাগিং ওয়াইফের ভূমিকায় অরুণিমা চমৎকার। রেফারি কাঞ্চন মল্লিকের অভিনয়ে বাঙালি ফিরে পাবে লড়াকু ফুটবলের উপভোগ্য ইমেজ। ছবিটা দেখতে দেখতে মনে হয় চিরঞ্জিত কি বিজ্ঞানী ছাড়া আর অন্য কিছু হতে পারতেন এই ছবিতে?

ছবির মেজাজ ভালই ধরেছেন সুরকার জয় সরকার। অতনু ঘোষের ইউনিটকে খুঁজতে হয়েছে সে কালের দূরদর্শনের ‘অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত’ লেখার শিল্পীকে। আবার গ্রাফিক্সের সাহায্যে মুছতে হয়েছে সারা কলকাতার কেবল-এর তার।

পুজোয় পাঁচ পাঁচটা বাংলা ছবি মুক্তি পাচ্ছে। ওই দৌড়ে খেলতে চাননি ছবির প্রযোজক ফিরদৌসল হাসান আর প্রবাল হালদার। ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশন প্রযোজিত এই ছবি হলে আসছে ৩০ অক্টোবর।

শহরে ফিরছে অ্যাবি সেন...

abby sen abby sen film review atanu ghosh abby sen film
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy