২৩ এপ্রিল ২০২৪

একাকী নয়, ‘ষড়রিপু’র প্রত্যেকেই একে অপরকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে

কাম, ক্রোধ, লোভ….ষড়রিপুর ছক থেকে খুন, কালিনানের ইতিহাস, যিশুর রেজারেকশন— সব কিছু মাত্র দু’ঘণ্টার স্ক্রিপ্টের মধ্যে বাঁধতে চেয়েছেন পরিচালক অয়ন চক্রবর্তী। কিন্তু, তাতেও কোথাও ছবির শরীরে এক চিলতে মেদ জমেনি। শুরুর দৃশ্য থেকে শেষ কাট পর্যন্ত পুরোটাই টানটান। এক মুহূর্তও মিস করা যাবে না। আর এখানেই ক্রাইম থ্রিলারের সার্থকতা।

প্রমা মিত্র
শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৬ ১৭:০৯
Share: Save:

কাম, ক্রোধ, লোভ….ষড়রিপুর ছক থেকে খুন, কালিনানের ইতিহাস, যিশুর রেজারেকশন— সব কিছু মাত্র দু’ঘণ্টার স্ক্রিপ্টের মধ্যে বাঁধতে চেয়েছেন পরিচালক অয়ন চক্রবর্তী। কিন্তু, তাতেও কোথাও ছবির শরীরে এক চিলতে মেদ জমেনি। শুরুর দৃশ্য থেকে শেষ কাট পর্যন্ত পুরোটাই টানটান। এক মুহূর্তও মিস করা যাবে না। আর এখানেই ক্রাইম থ্রিলারের সার্থকতা।

ছবির শুরুতেই দর্শক জেনে যায়, দু’ঘণ্টার মধ্যে শহরে ঘটে গিয়েছে পাঁচ-পাঁচটা খুন। বড়সড় কোনও হত্যা-কাণ্ড যখন ঘটে, তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মূল টার্গেট হয়ে থাকেন সমাজের উঁচু স্তরের বিত্তশালী, ক্ষমতাশালীরাই। তার সঙ্গে জুড়ে যাওয়া খুচরো কিছু চরিত্রেরা অজান্তেই ঢুকে পড়েন ষড়রিপুর বেড়াজালে। ঘটে যায় ছোটখাট কিছু ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজও’। পরিণত ক্রাইম থ্রিলার সাজাতে গেলে এই ছক আর তার পিছনে বিশ্বাসযোগ্য মোটিভ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটাই ছবিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন পরিচালক। এই দুয়েই অর্ধেক কাজ সেরে ফেলেছেন তিনি। শিল্পপতি যোশুয়া বেন আর তার সুন্দরী স্ত্রী রাকা চৌধুরীর বিলাস যাপনের মাঝে অনিবার্য ভাবেই এসে পড়েন গয়নার দোকানের ম্যানেজার শুভদীপ নন্দীর মতো কিছু চরিত্র। যাদের ভবিতব্যই ভিক্টিম হয়ে ওঠা। কারণ, আমরা সকলেই যে ষড়রিপুর বশীভূত, তাই এই মুহূর্তে বাজিমাত করেই পরমুহূর্তে নিজেরাই ভিক্টিম।

ছবিতে প্রতিটা রিপুর গল্পকেই আলাদা আলাদা ভাবে বুঝিয়েছেন পরিচালক। ডিটেকটিভ চন্দ্রকান্তর মুখ দিয়ে প্রতিটা রিপুর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। কিন্তু, আলাদা আলাদা করে সাজালেও ষড়রিপুর কোনওটাই যে একা মাথাচাড়া দিতে পারে না, একটা যে আর একটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে, সেটাই ছবির গল্প। কাউকে শেষ করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অন্য কোথাও কষা হয়ে যাচ্ছে তোমারও মৃত্যুর ছক। এটাই ষড়রিপুর সমীকরণ। আর সেই সঙ্গেই যোগ্য সঙ্গত করেছে দেবজ্যোতি মিশ্রের ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, শ্রীজাতর লেখা গান ও শিলাজিতের ইরটিক ভয়েস।

ক্রাইম থ্রিলারের স্ক্রিপ্ট সম্পর্কে এর চেয়ে বেশি বলে দেওয়া বোধহয় অনুচিত। তাই এ বার আসি অভিনয় প্রসঙ্গে। যোশুয়া বেনের চরিত্রে রজতাভ দত্ত, ডিটেকটিভ চন্দ্রকান্তর চরিত্রে চিরঞ্জিতের অভিনয় নিয়ে নতুন করে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। গয়নার দোকানের ম্যানেজার শুভজিত্ নন্দী ঠান্ডা মাথার বোকা, লোভী চরিত্রে রুদ্রনীলও যথাযথ। তবে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য সুদীপ্তা চক্রবর্তী। স্ক্রিনে পাঁচ মিনিট সুযোগ পেলেও ওই সময়টুকু তিনি কাউকে এক চিলতে জমি ছাড়তেও রাজি নন তা বহ্নির চরিত্রে আবারও বুঝিয়ে দিয়েছেন সুদীপ্তা। আর রয়েছেন রাকা চৌধুরীর চরিত্রে সোহানা সাবা। বাংলাদেশের এই অভিনেত্রীকে এই ছবিতে আবিষ্কার করেছেন অয়ন। তবে, কিছুটা আশাহত করেছেন ইন্দ্রনীল। সবশেষে আসি কণীনিকার চরিত্রে। স্টাইলিশ, বোকা বোকা, গোয়েন্দার সহকারী কনিকে প্রথমে শুধুই শো-পিস চরিত্র ভাবতেই পারেন। কিন্তু, ছবি যত এগোবে ততই বুঝতে পারবেন কনির চরিত্রের গুরুত্ব। যে ভাবে কনিকে শোনানো গোয়েন্দার আনুমানিক গল্পের মধ্যে দিয়ে ক্রাইম প্লট উদ্‌ঘাটন করেছেন পরিচালক, তা অসাধারণ। সেই সঙ্গেই কনিকে কিছুটা দর্শক হিসেবেও ব্যবহার করেছেন তিনি। তার মুখ দিয়েই বলিয়ে নিয়েছেন ছবি দেখতে দেখতে দর্শকদের মনে ভেসে ওঠা একগুচ্ছ প্রশ্ন। তাই কনি শুধু এই ছবিতে গোয়েন্দার সহকারীই নন, দর্শকও।

শুধু দুটো বিষয় নিয়েই বলার রয়েছে। এক, চন্দ্রকান্ত, কনি, ডিএসপির আলোচনার দৃশ্য লিঙ্ক হিসাবে দেখানো হলেও কখনও একটু বড় মনে হয়েছে। আর একটু কম সময় হলে বোধহয় ভাল হত। দুই, ছবির শেষে যিশুর রেজারেকশন, সাইমন উধাও হওয়ার যে অসাধারণ ঐতিহাসিক যোগ আপনি দেখিয়েছেন তা অনেক দর্শকের কাছেই অধরা থেকে গিয়েছে। গোটা ছবিতে ইহুদি ইতিহাস, কালিনানের কাহিনি যেমন সহজ ভাবে বোঝানো হয়েছে শেষটুকুও কিছুটা ব্যাখ্যা করলে ভাল হত। তবে এই ছবি দেখে মনে হল বহু দিন পর বাঙালি হল থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফিরে গুগল করতে বসবেন।

তাই দেখেই আসুন ষড়রিপু। এই ছবি কিন্তু অনেকটাই উইশ ফুলফিলমেন্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Movie Reviews Bengali Movie
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Share this article

CLOSE