Advertisement
E-Paper

অরিজিতের সঙ্গে নাম জড়ালেও পেশাজীবনে প্রভাব পড়েনি, আমার ব্যর্থতার দায় আমারই: রূপরেখা

‘‘এমনও তো হতে পারে, আগামী ১০ বছর মঞ্চানুষ্ঠানে আমার গাওয়া সিঙ্গল অনেক নতুন শিল্পীর কণ্ঠে শোনা যাবে”, বলছেন রূপরেখা।

রূপরেখা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রত্যাবর্তন।

রূপরেখা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রত্যাবর্তন। ছবি: সংগৃহীত।

উপালি মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২৫ ০৮:৫৭
Share
Save

এত দিন কোথায় ছিলেন ‘ফেম গুরুকুল’-খ্যাত রূপরেখা বন্দ্যোপাধ্যায়? যাঁর সহ-প্রতিযোগী অরিজিৎ সিংহ ভারতীয় সঙ্গীত দুনিয়ার তারকা। বাংলা-বলিউড— সর্বত্র তাঁর অবাধ বিচরণ। অথচ, গত ১৫ বছরে প্রায় সমপ্রতিভাসম্পন্ন হয়েও গানের দুনিয়ায় রূপরেখা কোথায়! এই কৌতূহল যখন ঘুরেফিরে সঙ্গীতপ্রেমীদের মনে ঘা মারে তখনই ১৫ বছর পরে রূপরেখা হিন্দি সিঙ্গল নিয়ে ফিরলেন। ‘তুম’ গানের সুরকার সমিধ মুখোপাধ্যায়, গীতিকার বিজয় বিজয়ওয়াত। কালিম্পঙের পাহাড়ি পটভূমিকায় সিঙ্গলে অভিনয় করেছেন অভি মল্লিক, প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল।

নিজের গাওয়া আদ্যন্ত প্রেমের একটি গান নিয়ে ফিরতে এক যুগেরও বেশি সময় লেগে গেল? কেন এত সময় নিলেন রূপরেখা?

তিনি ফিরছেন, খবর পেয়েই যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। কণ্ঠে কোনও দ্বিধা নেই। বিনয়ের পাশাপাশি সময় সেখানে দৃঢ়তার ছাপ রেখেছে। রূপরেখা বললেন, “১৫ বছর ধরে মঞ্চানুষ্ঠান করে গিয়েছি। বছর দশেক আগে আরও এক বার নিজের একটি সিঙ্গল তৈরির চেষ্টা করেছিলাম। গানের সুর মন ছোঁয়নি। ফলে, আমিও আর এগোইনি। এ বার সেটা হল। তাই অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হল।”

এখন মানুষ যেতে আসতে, কাজের ফাঁকে গান শোনেন। সিঙ্গল কি আদৌ শোনেন তাঁরা?

রূপরেখা কিন্তু এই প্রশ্নে আহত নন, বিমর্ষও নন। বরং আশাবাদী। তাঁর উপলব্ধি, শোনার মতো গান উপহার দিতে পারলে এখনও মানুষ শোনেন। যতই ব্যস্ততা বাড়ুক, যতই হাতে সময় কম থাকুক। সেই ভাবনা থেকেই গায়িকার আশা, এই সিঙ্গল তাঁর শ্রোতাদের হতাশ করবে না। যতই তিনি গানের দুনিয়া থেকে দূরে থাকুন। তাঁর কণ্ঠ, তাঁর গান বহু জন শুনতে ভালবাসেন— সেটা মঞ্চানুষ্ঠান করতে গেলেই টের পান। মৃদু হেসে বলেছেন, “মানুষের কাছে গানটি পৌঁছোতে পারলে এমনও হতে পারে, আগামী ১০ বছর মঞ্চানুষ্ঠানে আমার গাওয়া সিঙ্গল অনেক নতুন শিল্পীর কণ্ঠে হয়তো শোনা যাবে।” ইতিমধ্যেই যাঁরা ‘তুম’ শুনেছেন তাঁরা প্রশংসা করেছেন।

গায়িকা বাঙালি, সুরকারও বাঙালি। তবু বাংলা নয়, হিন্দি গান দিয়ে প্রত্যাবর্তন! এ কথা অস্বীকার করেননি রূপরেখাও। তাঁর কণ্ঠে অনেকে বাংলা গান শোনার আবদার জানান, দাবি তাঁর। বাংলা গান নিয়ে ফিরলে তাঁর ১৫ বছর ধরে দেখা স্বপ্ন যে ভেঙে যাবে! জানিয়েছেন শিল্পী। “গানের দুনিয়ায় পা রাখার পর থেকেই স্বপ্ন দেখতাম, বলিউডে নেপথ্য শিল্পী হয়ে হিন্দি ছবিতে গাইব। সে আশা পূরণ হয়নি। কেউ আমায় সুযোগ দেননি।” সেই স্বপ্ন আংশিক পূরণ করছে হিন্দি সিঙ্গল। রূপরেখা বাঙালি হয়েও তাই আগে হিন্দি গান গাইলেন।

নিজের প্রতি, গানের প্রতি বিশ্বাস অটুট রূপরেখার।

নিজের প্রতি, গানের প্রতি বিশ্বাস অটুট রূপরেখার। ছবি: সংগৃহীত।

“এই সিঙ্গল আমার অনেক ব্যথার প্রলেপ”, ফোনের ও পার থেকে গায়িকার কণ্ঠস্বরে কি বাষ্প জমল?

পরক্ষণেই অভিজ্ঞ শিল্পী সামলে নিলেন নিজেকে। ১৫ বছর ধরে না নেপথ্যশিল্পী তিনি, না আধুনিক গানের শিল্পী! কেবল মঞ্চানুষ্ঠান করে দিন কাটিয়েছেন। বাকিরা যখন বলিউডে খ্যাতনামী, তাঁর বুকের ভিতর জ্বলেছে। তিনি পুড়েছেন। আর জেদ ধরে রেখেছেন, আজ নয়তো কাল তাঁর স্বপ্ন সফল হবেই। “সিঙ্গল বেরোনোর পর স্নায়ুগুলো একটু শিথিল হয়েছে। সেই জ্বালা জ্বালা ভাবটা আর নেই। অনেকটা ভারমুক্ত লাগছে”, লম্বা শ্বাস ফেলে দাবি গায়িকার।

তবু অরিজিৎকে ছুঁতে পারলেন কই? রূপরেখাও তো কম প্রতিভাময়ী নন...! না, এ বার আর কোনও আফসোস বা ব্যথা নেই কণ্ঠস্বরে। ১৫ বছরে নিজেকে, নিজের খামতি প্রতি মুহূর্তে অনুভব করেছেন তিনি। সেই সুর তাঁর কথায় স্পষ্ট। রূপরেখা বললেন, “অরিজিৎ সে সময় মাটি কামড়ে বলিউডে পড়েছিল। সারা রাত স্টুডিয়োয় থাকত। সুরকার প্রীতম চক্রবর্তী, বিশাল-শেখর, ললিত পণ্ডিতের কাছে দিনের পর দিন পড়ে থেকেছে। সহ-সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে কাজ করেছে। এই সংগ্রাম, এই লড়াই একজন মেয়ের পক্ষে সম্ভব নয়।” সহ-সঙ্গীত পরিচালক রূপে কাজ করার সময় প্রত্যেক সুরকারের থেকে কিছু না কিছু শিখেছেন অরিজিৎ। যা রূপরেখা পারেননি। তার পরেই সপাট দাবি তাঁর, “প্রীতমদার কাছে অনেক বার গিয়েছি। কিন্তু অরিজিতের মতো ওঁর ‘লবি’র মধ্যে ঢুকতে পারিনি। এটাও আমারই ব্যর্থতা।”

এই ফাঁকগুলো পূরণ হয়নি বলেই ইঁদুরদৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছেন তিনি, স্বীকার করলেন রূপরেখা। “কিন্তু গান থেকে দূরে থাকিনি। মঞ্চানুষ্ঠানের পাশাপাশি নিয়মিত রেওয়াজ, তালিম নেওয়া— কিচ্ছু বাদ রাখিনি। আমার সঙ্গীতশিক্ষায় কোনও ফাঁকি নেই।” মুম্বই তা হলে স্বজনপোষণের আখড়া— বলিউডে কাজ করতে গিয়ে যাঁরা এ কথা বলেন তাঁরা তো তা হলে ভুল কিছু বলেন না! প্রশ্ন শুনে রূপরেখা কিন্তু পাশ কাটিয়ে যাননি। বরং এ বারেও যেন সত্যি প্রকাশ্যে এনেছেন। “যথেষ্ট স্বজনপোষণ হয়। প্রীতমদার কথাই ধরুন। ওঁর হাত ধরে অন্তরা, নেহা কক্কর বলিউডে গানের দুনিয়ায় জায়গা পেয়েছেন। আবার আমি এত চেষ্টা করেও ওঁর কাছাকাছি পৌঁছোতে পারিনি। আমার তাই কিছুই হল না।”

১৫ বছর ধরে অপেক্ষাই সার। বলিউড ফিরিয়ে দিয়েছে রূপরেখাকে। তাই আর বসে না থেকে সিঙ্গল গেয়ে সঙ্গীতের দুনিয়ায় দ্বিতীয় বার কড়া নাড়া তাঁর।

অরিজিতের মতো প্রেমের গান তাঁরও প্রিয়। এ বার পাশাপাশি আইটেম গানও গাওয়ার চেষ্টা করবেন। “মঞ্চানুষ্ঠানে এই ধরনের গান শ্রোতারা বেশি শোনেন। শ্রেয়া ঘোষাল কী ভাল ভাল আইটেন গান গেয়েছেন। ও রকম গাওয়ার ইচ্ছা আমারও।” এখনকার শ্রোতারা শুধুই যে আইটেম গান শোনেন, সেটা নয়। নিজেদের ভাষায় গান শুনতে চান। শিল্পী শোনাতে না পারলে তাই নিয়ে হুলস্থুল বাধান। যেমন, ইমন চক্রবর্তী, সোনু নিগম। প্রথম জন হিন্দি গান শোনাতে চাননি আর দ্বিতীয় জন কন্নড় গান গাইতে দেরি করেছেন বলে তুমুল শোরগোল। রূপরেখার অবশ্য এ রকম কোনও অভিজ্ঞতা নেই। “আমার শ্রোতারা খুব ভাল। ধৈর্য ধরে গান শোনেন। ভাল গানের কদর করেন। আমার কোনও নিজস্ব গান নেই। তবু ওঁরা আমাকে ভালবাসেন। আমার কণ্ঠ ভালবাসেন। আমি কৃতজ্ঞ।”

ফোন-আড্ডা শেষের দিকে। টাইম মেশিন চেপে ১৫ বছর আগের সময় ছুঁতে চাওয়ার চেষ্টা।

রূপরেখা তখন ভীষণ চর্চিত নাম। তাঁর গায়কির কারণে। অরিজিতের সঙ্গে নাম জড়িয়ে গুঞ্জনের কারণেও। তিনি আর গায়ক নাকি লুকিয়ে বিয়ে করেছিলেন। রূপরেখা গায়কের প্রথম স্ত্রী! “প্রথম প্রথম গায়ে মাখিনি। একটা সময়ের পরে সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে সমস্ত জানিয়েছিলাম। কোনও দিনই আমরা এ রকম কিছুই করিনি। অরিজিৎ আর আমি খুব ভাল বন্ধু।” ২০১৮ সাল পর্যন্ত সেই বন্ধুত্ব অটুট ছিল। তার পর সেই সম্পর্কও ছিন্ন হয়েছে। মিথ্যে গুঞ্জন পেশাজীবনের শুরুতে বড় ছাপ ফেলেছিল? “একেবারেই না। মঞ্চানুষ্ঠানে আমার ব্যক্তিগত জীবন কোনও ছায়া ফেলেনি। ব্যর্থতার কারণ আমার অনেক অপারগতা”, কোনও কুণ্ঠা না রেখেই বললেন রূপরেখা। আগামী দিনে গানের দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা পেতে অরিজিতের সাহায্য নেবেন? “কেন নেব না! অরিজিৎ আমার বন্ধু তো! খুব ভাল মানুষ। আমার বিশ্বাস, গিয়ে দাঁড়ালে ও-ও আমায় ফেরাতে পারবে না”, মিষ্টি হেসে কথা শেষ করলেন গায়িকা।

Ruprekha Banerjee Single Arijit Singh Love Affair

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।