Advertisement
E-Paper

গার্গী প্রেমে ভেসে যায় না, বেড়া টানতে জানে! ব্যক্তিজীবন নিয়ে অকপট মঞ্চের ‘তারাসুন্দরী’

কেন তারাসুন্দরীকে মঞ্চে নিয়ে আসতে চলেছেন গার্গী? নটী বিনোদিনীর হাত ধরে মঞ্চে আসা অভিনেত্রীকে নিয়ে কেন এত চর্চা কম?

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৫৫
নটী তারাসুন্দরীর সাজে গার্গী রায়চৌধুরী।

নটী তারাসুন্দরীর সাজে গার্গী রায়চৌধুরী। ছবি: ফেসবুক।

গিরিশচন্দ্র ঘোষের সময়ে পেশাদার মঞ্চে চার জন নটীর রাজপাট। তাঁদের মধ্যে অন্যতম নটী বিনোদিনী বহুচর্চিত। তাঁকে নিয়ে কাজ হয়েছে অগুনতি। তিনকড়ি দাসীর অন্যতম পরিচয়, তিনি ‘মীরাবাঈ’ থেকে ‘লেডি ম্যাকবেথ’— সমস্ত চরিত্রে অনায়াস। তাঁকে নিয়েও কাজ হয়েছে। প্রভাদেবী অনেক পরে এসেছেন। এঁদের সমসাময়িক আর এক অভিনেত্রী তারাসুন্দরী।

তাঁকে নিয়ে চর্চা কই? কাজও হয়নি আজ পর্যন্ত। মঞ্চ এবং পর্দার সফল অভিনেত্রী গার্গী রায়চৌধুরীকে সেই অভাববোধ বুঝি ছুঁয়ে গিয়েছে? তিনি নভেম্বরে মঞ্চস্থ করতে চলেছেন খ্যাতনামী অভিনেত্রীর জীবন। মুখ্যভূমিকায় গার্গী স্বয়ং।

কেন তারাসুন্দরীকে নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে হল? প্রশ্ন ছিল আনন্দবাজার ডট কম-এর।

গার্গীর কথায়, “মঞ্চদুনিয়া বলছে, নটী বিনোদিনী, তিনকড়ি দাসী, প্রভা দেবী এবং তারাসুন্দরীর মধ্যে সবচেয়ে ‘ভার্সেটাইল’ অভিনেত্রী চতুর্থ জন। বাস্তবে তিনিই উপেক্ষিতা। তাঁকে নিয়ে, তাঁর অভিনয় নিয়ে কোনও গবেষণামূলক কাজ হয়নি। যে একটা বা দুটো ছবি আছে, সেগুলোও ঝাপসা। সেই জায়গা থেকে মনে হয়েছে, ওঁকে নিয়ে এ বার কাজের সময় হয়েছে।” পাশাপাশি, এ-ও অনুভূব করেছেন, মঞ্চের মতো তারাসুন্দরীর জীবনেও ‘কমেডি’ আর ‘ট্র্যাজেডি’র সমান্তরাল উপস্থিতি। শোনা যায়, তাঁর নাকি এক চোখে জল আর এক চোখে হাসি খেলা করত!

গার্গীর মতে, যাঁকে নিয়ে কোনও কাজ হয়নি, তাঁকে নিয়ে কাজ করা কঠিন। তিনিও একজন অভিনেত্রী, সেই তাগিদে গার্গী তাই কঠিন পথটাই বেছে নিয়েছেন। “তারাসুন্দরীকে পরের প্রজন্মের কাছে পরিচিত করার দায় আমারও আছে। সেই জায়গা থেকে ওঁকে জানার চেষ্টা।”

উপেক্ষিত নটীর জীবন জানতে গিয়ে তাঁর উপেক্ষিত থাকার কারণও কি জানার চেষ্টা করেছেন অভিনেত্রী?

গার্গীর উপলব্ধি বলছে, নেপথ্যে এক বা একাধিক কারণ থাকতে পারে। নাট্যকার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের লেখা পড়ে তাঁর মনে হয়েছে, কে বিখ্যাত হবেন আর কে উপেক্ষিত হবেন, এর কারণ নির্ধারণ করা বোধহয় সম্ভব নয়। যেমন, নটী বিনোদিনীকে নিয়েও একটা সময় কোনও কাজ হয়নি। তার পর যখন হতে শুরু করল, তখন এত পরিমাণে হল, যে তিনি বহুচর্চিত হয়ে গেলেন। “তারাসুন্দরীর ক্ষেত্রে আমিই না-হয় এগিয়ে এলাম। আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা, তাঁকে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া।”

একই ভাবে তাঁর জীবন নিয়ে জানতে গিয়ে গার্গী দেখেছেন, যেমন দুর্ধর্ষ অভিনেত্রী, তেমনই ক্ষুরধার বুদ্ধি ছিল নটীর। আত্মসম্মানবোধ ছিল প্রবল। তাঁকে মঞ্চে এনেছিলেন নটী বিনোদিনী। জানা গিয়েছে, তারাসুন্দরী রকমারি কণ্ঠস্বরে কথা বলতে পারতেন। সঙ্গীতেও দক্ষতা ছিল তাঁর। তারাসুন্দরী তাঁর সময়ের সবচেয়ে সাহসী এবং প্রতিভাময়ী অভিনেত্রীর তকমা পেয়েছিলেন। তাঁর দেহজ আকর্ষণও নাকি ছিল মারাত্মক।

এখনকার অনেক নাট্যগবেষকের মতে, বিনোদিনীর থেকেও বেশি ‘ভার্সেটাইল’ ছিলেন তাঁর প্রিয় তারাসুন্দরী। বিনোদিনীর ছায়া তাঁকে তাই ম্লান করতে পারেনি। পাশাপাশি, তারাসুন্দরীর প্রেমজীবনও আকর্ষণীয়। ক্লাসিক থিয়েটারের অমরেন্দ্র দত্তের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তাঁর। অমরেন্দ্র যখন তাঁকে ঠকিয়ে অন্য নারীতে আসক্ত হন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন নটী। সেই মামলা তিনি জিতেওছিলেন! তথাকথিত শিক্ষিত না হলেও ক্ষুরধার বুদ্ধির জোরেই তাঁর এই জয়। তাঁকে সেই সময়ের পুরুষসমাজ তাই ভয় পেত। এই জায়গা থেকে গার্গীর উপলব্ধি, হয়তো তিনি উপেক্ষিতা এই কারণেও।

পরে অপরেশ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি হয় তারাসুন্দরীর। অপরেশ-তারাসুন্দরীর সন্তান নির্মল। নটী যদিও পরে সন্তানকে হারান। জীবনযন্ত্রণায় দগ্ধ অভিনেত্রী একসময় বলেছেন, “বলতে পারো কে সঙ্গ দিয়েছে আমাকে? কে গ্রহণ করেছে? তা এই রঙ্গমঞ্চ।”

বিনোদন দুনিয়া বলে, গার্গীও সব ঘরানার ছবিতে অনায়াস। কিন্তু টলিউড তাঁকে সে ভাবে পায় কই? তিনিও কি তা হলে তারাসুন্দরীর মতোই উপক্ষিতা? অভিনেত্রীর জীবনেও নিশ্চয়ই প্রেমের আনাগোনা ঘটেছে?

প্রথম প্রশ্নের জবাবে তাঁর দাবি, “আমি যে ভাবে নিজেকে দেখতে চেয়েছি, সে ভাবেই পর্দায় বা মঞ্চে তুলে ধরেছি। সেখানে কোনও ফাঁক নেই। একই সঙ্গে বিপরীতধর্মী ছবিতে অভিনয় করেছি। তাই কোনও ভাবেই উপেক্ষিত নই।” দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে হেসে ফেলেছেন গার্গী। বলেছেন, “অবশ্যই প্রেম এসেছে। কিন্তু প্রেমে ভেসে যাওয়ার মতো মেয়ে গার্গী নয়। কোথায় বেড়া টানতে হয়, সেটা ভাল করেই জানি।”

Bengali Theater Noti Binodini
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy