Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Celebrity Interview

‘আমার সঙ্গে কাজ করা এত মুশকিল হলে এত জন পরিচালক এগিয়ে আসতেন না’, জন্মদিনে অকপট গার্গী

২৩ এপ্রিল গার্গী রায়চৌধুরীর জন্মদিন। ‘মহানন্দা’ থেকে ‘শেষ পাতা’— এই কি তাঁর কেরিয়ারের সেরা সময়? আড্ডা জমল আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।

iamge of Gargi Roychowdhury

গার্গী রায়চৌধুরী খুব সহজ কিন্তু নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে বিশ্বাসী। ছবি: সংগৃহীত।

পৃথা বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৩ ১১:৩৯
Share: Save:

প্রশ্ন: জন্মদিন এখন কী ভাবে কাটে?

গার্গী: বরাবর যে ভাবে কাটাতাম। খুব কাছের কিছু মানুষের সঙ্গে। জন্মদিনে অনেক মানুষের সঙ্গে হইহই করাই যায়। কিন্তু এই দিনটায় নিজের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোও খুব প্রয়োজন। পার্টি করা, আড্ডা মারা, একটু কম সংখ্যার লোকদের সঙ্গে ভাল। বেশি লোক হয়ে গেলে সবার সঙ্গে আলাদা করে গল্প করা যায় না, আবার অতিথি আপ্যায়নেও ত্রুটি থেকে যায়। আসলে আমরা বাঙালি তো। মনে হয় পাত পেড়ে খাওয়াই, একটু নিজে হাতে ভাতটা বেড়ে দিই। সে দিক থেকে আমি খুব সাবেকি।

প্রশ্ন: জন্মদিনে মেনু কী হয়?

গার্গী: এটা আমার কর্তা ঠিক করে। আমি কিছু জানি না। কেক আনা থেকে খাবার মেনু— সব আমার কর্তা আর আমার একদম কাছের কিছু বন্ধুর উপর ছেড়ে দিই।

প্রশ্ন: যত বয়স বাড়ে, কিছু মানুষ জন্মদিনে হিসাব নিয়ে বসেন, জীবনে কী কী পেলেন। আপনি সেই দলে পড়েন?

গার্গী: আমার তো বয়স অত বাড়েনি। এখনও ছোট আছি (হাসি)। একদমই সে ভাবে ভাবি না। তবে যে দিন থেকে ছেলেবেলা কাটিয়ে মেয়েবেলা শুরু হল, সে দিন থেকে প্রত্যেক রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভাবি, যে সারা দিনে কী কী করলাম। অতিমারির পর থেকে এই ভাবনাটা আরও বেড়ে গিয়েছে। আসলে আমাদের জীবন থেকে দুটো বছর তো পুরো হাওয়া হয়ে গেল। তাই বেশি করে মনে হয়, সারা দিনে কোন কাজটা করলাম।

movie scene of sesh pata

দাঁড়ি টানতে পারি বলেই ‘মহানন্দা’র পর ‘শেষ পাতা’ হয়। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: জন্মদিনে বিশেষ কারও শুভেচ্ছা না পেলে মনখারাপ হয়ে যায়?

গার্গী: কে কী করল না, তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। অনেকে ভাবতে পারেন, ন্যাকামি করে কথাটা বলছি। কিন্তু সত্যিই মন থেকে বলছি। আমি মনে করি, আমি খুবই প্রিভিলেজড। প্রত্যেক মুহূর্তে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই এই জীবনটার জন্য। তার পরেও যদি ভাবতে বসি, কে জন্মদিনে ফোন করল না, তা হলে তো আমি সত্যিই এখনও ছেলেমানুষ।

প্রশ্ন: ‘প্রিভিলেজড’ শব্দটা ব্যবহার করলেন। কেরিয়ারের দিক থেকেও কি তাই মনে করেন?

গার্গী: অবশ্যই। ছোট থেকে না বুঝেই নাচ-গান-আবৃত্তি-নাটকের মধ্যে থেকেছি। যখন বুঝেছি, অভিনয়ের প্রতি মায়া তৈরি হয়ে গিয়েছে। তখন থেকে এটাকেই কেরিয়ার বানিয়েছি। টেলিফিল্মে চুটিয়ে কাজ করেছি এক সময়ে, কিন্তু মেগা প্রায় করিনি বলতে পারেন। সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ করার পর দু’দিন ছুটি নিতাম বলে চূড়ান্ত অশান্তি হত সে সময়। তা-ও নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে পেরেছি। আমি ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে এখনও পর্যন্ত একটাও কাজ করিনি। এগুলো প্রিভিলেজ না?

প্রশ্ন: ‘মিতালি’ থেকে ‘মহানন্দা’, সব রকম চরিত্রে আপনি সমান সাবলীল। অভিনেত্রী হিসাবে নিজেকে প্রস্তুত করেন কী করে?

গার্গী: ১২-১৩ বছর বয়স থেকে মানুষকে লক্ষ করার একটা খেলা খেলি আমি। নাটকের লোক। ‘বহুরূপী’তে অভিনয় করেছি। থিয়েটারে জাতীয় স্কলারশিপ পেয়ে দিল্লি গিয়েছি। তাই বরাবরই মানুষ অবজ়ার্ভ করার কাজটা চালিয়ে যাই। খুব কম বয়স থেকে ভীষণ পরিণত মানুষদের সঙ্গে মিশেছি। তাই আমার কিছু আদর্শ তৈরি হয়ে গিয়েছে। আমি ‘না’ বলতে শিখেছি। নিজের মনের মধ্যে একটা ছবি রয়েছে, কোন কোন পরিচালকের সঙ্গে আমার কাজ করতে ভাল লাগবে। তার বাইরে যাই না।

movie scene of mahasweta

‘মহানন্দা’ ছবিতে মহাশ্বেতা দেবীর ভূমিকায় গার্গীর অভিনয় প্রশংসিত হয়। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: আপনি কি তা হলে ঝুঁকি নেন না?

গার্গী: ঝুঁকি তো নিই। কিন্তু জেনেবুঝে নয়। ‘বহুরূপী’র ‘পিরিতি পরমনিধি’ করেছিলাম যখন খুব ছেলেমানুষ। না বুঝেই করেছিলাম, খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। সে সময় ধীরেনদা (দাস) খুব মজা করে গান শেখাতেন। তখন কিন্তু বুঝিনি। আসলে এখনও আমি সুর বুঝি না। কিন্তু কোথায় সুর থেকে এ দিক-ও দিক হল, সেটা ধরতে পারি। জীবনেও তাই সংযমটা রয়েছে। কোথায় মাত্রা টানতে হবে জানি। নাটকে রিহার্সাল করতে হয়, কিন্তু সিনেমায় অভিনয় হবে নির্ভার। তাই খুব বেশি রিহার্সাল দিই না। তা ছাড়া মিতালির মতো চরিত্র তো আমাদের চারপাশেই ঘুরছে। তাদের দেখেই শিখি।

প্রশ্ন: আপনি তো চারপাশের মানুষদের লক্ষ করতে ভালবাসেন। এত বছরে ইন্ডাস্ট্রির মানুষদের কী বুঝলেন?

গার্গী: ভাল, সবাই খুব ভাল।

প্রশ্ন: সকলেই খুব ভাল বলছেন?

গার্গী: যখন আমার মনে হয়, কেউ কিছু খারাপ করছেন, আমি চেষ্টা করি, আমার দিক থেকে যেন সেই ভুলটা না হয়। আসলে সব ইন্ডাস্ট্রিতেই অনেক কিছু ঘটে। আমরা প্রচারের আলোয় থাকি বলে সমালোচনাও বেশি হয়। তবে আমি যেমন চাই না কেউ সারা ক্ষণ আমার সমালোচনা করুন, আমি সহজে কাউকে নিয়ে কোনও ধারণা তৈরি করতে চাই না। চেষ্টা করি বোঝার এক জন মানুষ কেন কোনও খারাপ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। তবে নিজেদের আরও একটু সাবধান হওয়া জরুরি। কারণ, শেষ দিন পর্যন্ত আমার কাজটাই তো আমার পরিচয় হয়ে থেকে যাবে।

প্রশ্ন: আপনি ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনও কাজ করেন না। তাই কি ‘গার্গীর সঙ্গে কাজ করা মুশকিল’ বলে ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার একটু বদনাম রয়েছে?

গার্গী: কাজ তো অনেকেই করছেন। আমি যেমন সকলের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী নই, সকলেই বা আমার সঙ্গে কাজ করবেন কেন? তবে আমার সঙ্গে কাজ করতে এত অসুবিধা হলে কিন্তু এত জন পরিচালক আমার সঙ্গে কাজ করতেন না। তা ছাড়া, কোনও দিনই আমি সংখ্যায় বিশ্বাসী নই। বছরে দুটো ছবি করি, এ বছর তিনটে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকটা চরিত্র কিন্তু দর্শকের মনে আছে। এখন অপেক্ষায় রয়েছি ভাল কোনও ওয়েব সিরিজ়ের।

movie scene of haami2

শিবপ্রসাদ (মুখোপাধ্যায়)-নন্দিতাদি (রায়) আমায় নিয়ে যে ভাবে ভেবেছেন, আর কেউ ভাবেননি। মিতালিকে নিয়ে তিনটে ছবি হয়ে গেল। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: অভিনেত্রীরা খুব স্পষ্টবক্তা হলে কি ইন্ডাস্ট্রিতে মুশকিলে পড়তে হয়?

গার্গী: কোনও মানুষই খুব বেশি স্পষ্টবক্তা হলে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়। তাই একটা ভারসাম্য বজায় রেখে চলা প্রয়োজন। ১৮ বছর বয়সে মনে হত, সব তছনছ করে দিই। কিন্তু বয়সের সঙ্গে বুঝেছি, এগুলোর কোনও প্রয়োজন নেই। পৃথিবী নিজের নিয়মে চলবে। সব সময় সব কথা স্পষ্ট বলে দেওয়াটাও ঠিক হয় না।

প্রশ্ন: এত বছরে আপনার অভিনীত সবচেয়ে পছন্দের চরিত্রগুলো কী?

গার্গী: টেলিফিল্মের জন্য এক সময় প্রত্যেক বছর সেরা অভিনেত্রীর জন্য একটা-দুটো করে পুরস্কার পেতাম। কোনও দিন নিতেও যেতাম না। বয়স বাড়ার সঙ্গে বুঝলাম নিজের আনন্দটা অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়। তাই এখন যাই। তবে একটা ছবি হয়ে যাওয়ার পর আমি সে ভাবে সেই চরিত্র নিয়ে আর ভাবি না। দাঁড়ি টানতে পারি বলেই ‘রামধনু’র পর ‘হামি’ হয়। ‘মহানন্দা’র পর ‘শেষ পাতা’ হয়। আসলে খুব সহজে বোর হয়ে যাই। তাই নিজেকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য নিত্যনতুন চমক লাগে।

প্রশ্ন: এত বছর ধরে গার্গী রায়চৌধুরীর চেহারা একই রকম। কী করে?

গার্গী: (জোর হেসে) আমি খুব সহজ মনের মেয়ে। খুব সহজ কিন্তু নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে বিশ্বাসী। ব্রাউন রাইস বা কিউয়ি খাই না। নিমবেগুন বা পেয়ারা খেতে ভালবাসি। বিয়েবাড়ি থেকে ফিরেও কেষ্টার হাতের মাছ-ভাত খেতেই ভালবাসি। তবে আইসক্রিম পেলে ছাড়ি না। পাহাড়ে বেড়াতে যাই। ঠিক সময়ে ঘুম, শরীরচর্চা এগুলো করি। সবচেয়ে বড় কথা, যা অপছন্দ, তা করি না একদমই। সে কারণেই বোধহয় চেহারায় একটা ছাপ পড়ে।

প্রশ্ন: কোন কোন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করা বাকি, তার কোনও তালিকা বানিয়েছেন?

গার্গী: ভীষণ লোভী অভিনেত্রী আমি, খিদেও খুব বেশি। তাই তালিকার কোনও শেষ নেই। যে দিন ‘মহানন্দা’ শেষ হল, সে দিনই আমি এক জন পরিচালককে ফোন করে বলেছিলাম, ‘‘এ বার তো আমায় নিয়ে ভাব!’’ এত বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে আছি। সবাই জানেন, গার্গী কী ধরনের কাজ করে। তা হলে আর আমার কাজ চাইতে কুণ্ঠা কোথায়! শিবপ্রসাদ (মুখোপাধ্যায়)-নন্দিতাদি (রায়) আমায় নিয়ে যে ভাবে ভেবেছেন, আর কেউ ভাবেননি। মিতালিকে নিয়ে তিনটে ছবি হয়ে গেল। মেয়েদের নিয়ে এমন ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি আর ক’টা রয়েছে? তবে এগুলো যখন হল, তখন সব ধীরে ধীরে নিশ্চয়ই হয়ে যাবে। সঠিক সময়ের অপেক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE