পাশাপাশি: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। শান্তিনিকেতনে কবিতা উৎসবে। ফাইল চিত্র
সৌমিত্রদা আমার চেয়ে বয়সে বড় ছিলেন। ওঁর মতো খোলামেলা ও সহজ করে কথা বলার মানুষ জীবনে খুব কম দেখেছি। ছাত্রজীবনে ওঁকে প্রথম দেখি। আমার নাটকে অভিনয় ও নাট্য পরিচালনা সম্পর্কে জানতেন। পরবর্তী সময়ে ওঁর প্রায় সব নাটক দেখতাম। নাটকের চরিত্রের ভাল-মন্দ নিয়ে সৌমিত্রদাকে বলতাম। উনি শুনে মেনে নিয়ে বলতেন, ‘‘মাধব, ঠিক বলেছ।’’ ওই রকম না করলেই পারতাম। কোনও খেদ ছিল না।
একবার কলকাতার মধুসূদন মঞ্চে ওঁর নাটক দেখতে গিয়েছি। এক সময় শ্রীরাম লাগু ওই চরিত্রটি করতেন। নাটক দেখে বাস ধরার তাগিদে প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। টেকনিশিয়ান এসে জানালেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নাকি আমায় খুঁজছেন। ওঁর কাছে যেতেই পুলুদা বললেন, ‘‘এ কী, মাধব! কেমন করলাম, কেমন লাগল, সে সব না বলেই চলে যাচ্ছ?’’
পরবর্তী কালে ‘গান্ধর্বি’ নামে একটি সিনেমায় একসঙ্গে দু’জনে ছোট চরিত্রে অভিনয় করি। সে সময় সেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছি। মনোজ মিত্রও ছিলেন। সৌমিত্রবাবু কবিতা শোনাতেন। নিজে খুব ভাল কবিতা লিখতেনও। একবার বালুরঘাটে উনি অনুষ্ঠান করতে আসেন। পিডব্লিউডির বাংলোয় ওঠেন। যেতেই বলেন, ‘‘মাধব, বোসো। দু’টো কবিতা লিখেছি। শোনো।’’ স্পষ্ট উচ্চারণে পড়া সেই কবিতা দু’টি শুনে অভিভূত হয়ে পড়ি। সেই সময় কাপের পর কাপ চায়ের সঙ্গে কবিতা ও নাটক নিয়ে আমাদের মধ্যে কত যে আলোচনা হয়েছিল, তা বলার নয়।
আরও পড়ুন: আক্ষেপ থাকল, সৌমিত্রকে কাজে লাগাতে পারিনি
এর পর গৌতম ঘোষের একটি নাটক দেখে ওঁকে বলেছিলাম— আপনার এই অভিনয় জাতীয় পুরস্কারের দাবি রাখে। অবশ্য পরে অন্য একট নাটকের জন্য পুলুদা জাতীয় পুরস্কার পান। কলকাতা গেলে ফোন করলেই দেখা করতে বলতেন পুলুদা। একবার ওঁর মেয়ের সঙ্গে পরিচয় করে দেন। পৌলমী এসে আমায় প্রণাম করেন।
শেষের দিকে সৌমিত্রদার সঙ্গে আর তেমন নিবিড় যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু হাসিখুশি ওই মানুষটার কত কথা, কত স্মৃতি, কত অনুষজ্ঞ আজ মনের মধ্যে ভিড় করে আসছে। চলে গেলেন পুলুদা। আর কোনওদিন কিংবদন্তি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে নাটক নিয়ে আর কোনও কথা হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy