Advertisement
E-Paper

হাউসফুলের দিন ফেরাল বাহুবলী

সে সময়ে সন্ধে হলেই শহরের বাড়িগুলি থেকে ভেসে আসত হারমোনিয়ামে গলা সাধা। ছেলেরা গানের স্কুলে তবলা শিখতে ভর্তি হত সেই মেয়েদের সান্নিধ্য পেতে। চিঠি বিনিময়ের পর্ব পেরিয়ে লুকিয়ে দেখা হওয়ার জায়গা ছিল ‘হরি’।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৭ ০০:৩৬
সুদিন: হরি হলের সামনে টিকিটের লাইন। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

সুদিন: হরি হলের সামনে টিকিটের লাইন। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

সে সময়ে সন্ধে হলেই শহরের বাড়িগুলি থেকে ভেসে আসত হারমোনিয়ামে গলা সাধা। ছেলেরা গানের স্কুলে তবলা শিখতে ভর্তি হত সেই মেয়েদের সান্নিধ্য পেতে। চিঠি বিনিময়ের পর্ব পেরিয়ে লুকিয়ে দেখা হওয়ার জায়গা ছিল ‘হরি’। অন্ধকার সিনেমাহলে একটু ছোঁয়া পাওয়া। পর্দায় তখন অমিতাভ-মৌসুমী ডুয়েট গাইছেন— ‘রিমঝিম গিরে সাওন’। হলে উপচে পড়া ভিড়। বাইরে ‘হাউসফুল’ বোর্ড।

হারিয়ে গিয়েছিল সত্তরের দশকের সেই দিনগুলো। ফেসবুক, ইউটিউব, ট্যুইটারের দাপটে পৃথিবীটা এখন অ্যানড্রয়েড মোবাইলে। মন দেওয়া-নেওয়ার জায়গারও অভাব নেই। শহরে মাথা তুলেছে রেস্তোরাঁ, পার্ক। তারই মধ্যে সত্তরের স্মৃতি রোমন্থনে ডুবলেন নিমতলাচকের বাসিন্দা ইমতিয়াজ নওয়াজ। হরিতে ‘মঞ্জিল’ যখন এসেছিল, তখন তাঁর বয়স কুড়ি। ইমতিয়াজ বলছিলেন, “কয়েক সপ্তাহ টানা চলেছিল অমিতাভ আর মৌসুমীর সিনেমাটা। প্রতি শো-ই প্রায় হাউসফুল। মনে আছে ব্ল্যাকে টিকিট কেটে সিনেমাটা দেখেছিলাম।” পুরনো সেই দিনের কথা ধরা পড়ল মেদিনীপুর ফিল্ম সোসাইটির অন্যতম সদস্য সিদ্ধার্থ সাঁতরার গলাতেও। তিনি বলছিলেন, “জিতেন্দ্র-ধর্মেন্দ্র-অমিতাভের একের পর এক হিট এই হরিতে এসেছে। ভাল ছবি হলেই টিকিটের হাহাকার পড়ে যেত।”

ক্রমে হারিয়ে যায় হরির সোনালি দিন। মাঝে হলটি ধুঁকছিল। রংচটা দেওয়াল, চেয়ার ভাঙা, পর্দাও মান্ধাতা আমলের। ক’দিন আগে হল মেরামত করা হয়েছে। সেই হলেই সোনালি অতীত ফিরিয়ে এনেছে ‘বাহুবলী: দ্য কনক্ল্যুশন’। টানা তিন সপ্তাহ হরির সিঙ্গল স্ক্রিনে চলছে সিনেমাটি।

এই হলে ৭০০ আসন। টিকিটের দাম ৩০, ৫০, ৭৫ টাকা। দিন কয়েক আগে বাহুবলীর একটি শো-তেই ২১ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। অন্য সিনেমার ক্ষেত্রে দিনে তিনটি শো-তে মেরেকেটে হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয় না। এখন ১১টা, ২টো, ৮টা— তিনটে শোয়ে হরিতে চলছে বাহুবলী ২। রোজই প্রায় ব্যালকনির টিকিট হাউসফুল। গোড়ায় ক’দিন তো টিকিট ব্ল্যাকেও বিকিয়েছে। সন্ধ্যার শো দেখতে এসে লম্বা লাইনে পড়েছিলেন তন্ময় দাস, সঞ্জীব মণ্ডলরা। তাঁদের অভিজ্ঞতা, “এত ভিড় যে ধাক্কাধাক্কি হচ্ছিল। লাইন থেকে ছিটকে যাচ্ছিলাম।”

বল্লভপুরের এই এলাকায় রাস্তা সঙ্কীর্ণ। হলের ভিড়ে রাস্তায় তীব্র যানজট হচ্ছে। স্থানীয় কাউন্সিলর কল্পনা মুখোপাধ্যায়ও মানছেন, “কোনও সিনেমা নিয়ে এত হইচই বহু দিন দেখিনি।” আর হলের কর্মী তাপস সাউ বলছেন, “ধুঁকতে থাকা হলটা প্রাণ ফিরে পেয়েছে।”

হল থেকে বেরোচ্ছিলেন বছর পঞ্চাশের এক মহিলা। পাশে সদ্য অবসর নেওয়া স্বামী। এক গাল হেসে ভদ্রলোক বললেন, ‘‘বিয়ের আগে ওকে নিয়ে লুকিয়ে ‘আরাধনা’ দেখতে এসেছিলাম। তারপরে ঘর-সংসার-চাকরি-বদলি, হলে আসার আর জো ছিল না। হলটাও আর আসার মতো ছিল না। এতদিন পরে এসে পুরনো সে সব কথা মনে পড়ে গেল।’’ পাশে দাঁড়ানো মহিলার ঠোঁটে তখন লাজুক হাসি।

Baahubali 2: The Conclusion Cinema hall
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy