ঔরঙ্গাবাদের শো-য়ে ৯০ হাজার দর্শক সামলে সদ্য মুম্বই ফিরেছেন মিকা সিংহ। মুম্বইয়ের বাংলো নাইন-এ বসে কথা শুরুর আগেই অর্ডার করলেন চিকেন কাবাবের প্ল্যাটার আর ফ্রেশ লাইম সোডা। বললেন, ‘‘আমি কিন্তু শুদ্ধ হিন্দিতে কথা বলতে পারব না। আর কথার মাঝে আমার মুখ চলবে। মুখ না চললে আড্ডা কিন্তু জমে না।’’
আপনি তো বলেছিলেন রিয়্যালিটি শো-য়ে কোনও দিন অংশ নেবেন না। প্রতিযোগীরা এই প্ল্যাটফর্মে এসে হারিয়ে যায়।
আমার ধারণা ভুল ছিল। এখন দেখলাম রিয়্যালিটি শো করেই লোকে সেটল হচ্ছে। রাহুল বৈদ্য বলে এক গায়ক ছিল। ওকে বেশ কিছু দিন দেখা যায়নি। এখন ও প্রচুর শো করছে। রাজা হাসানও শো করছে। দেখুন যে বারো জন প্রতিযোগীকে টিভির পর্দায় মানুষ পারফর্ম করতে দেখছে, তাদের জীবন কিন্তু রিয়্যালিটি শোয়ের প্ল্যাটফর্ম থেকেই তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এটা মানতেই হবে।
কিন্তু সবাই অরিজিৎ সিংহ, শ্রেয়া ঘোষালের সাফল্য....
(থামিয়ে দিয়ে) দাঁড়ান দাঁড়ান। ওদের বিষয়টা আলাদা ছিল। অরিজিৎ বা শ্রেয়া খুব ফোকাসড ছিল। ওরা গানের জন্য মুম্বই চলে এল। অরিজিৎ যে লম্বা সময় প্রীতমদার সঙ্গে কাটিয়েছে, ধৈর্য ধরে শিখেছে সেটা একটা বড় ব্যাপার। আজকের কোনও বাচ্চা ছেলেমেয়েকে যদি বলি তুই আমার সঙ্গে দশ বছর থাক, আমি তোকে অরিজিৎ কেন, অরিজিতের চেয়েও বড় স্টার বানিয়ে দেব, সে আসবেই না। অথচ তাঁকে দশ বছর ধরে গড়পরতা গ্র্যাজুয়েট হতে বললে সে সেটাই করবে। আজকের প্রজন্মের মধ্যে ধৈর্য নেই। আমি ৯৮ সালে এসেছি। প্রথমে পপ গেয়েছি।
আপনি তো দালের মেহেন্দির ব্যান্ডে ছিলেন?
আমার গায়ক হওয়ার কোনও প্ল্যানই ছিল না। আমি সঙ্গীত পরিচালক হতে চেয়েছিলাম। শ্রোতারাই আমাকে গায়ক করে দিয়েছে। দালেরজি আমার গুরু, আজও উনি আমায় রেগে গিয়ে যদি চড় মারতে চান আমি কিন্তু গালটা বাড়িয়ে দেব।
লোকে বলেছিল ওঁর ব্যান্ড ছেড়ে একক ভাবে আমায় গান গাইতে। আমি তখনই প্লেব্যাকে আসি। প্লেব্যাকে দশ বছর দিয়েছি। আজকের ছেলেমেয়েদের প্রথম টার্গেট রহমান সাহেব! ভাবুন, যাঁকে কিনা আমি এই ২০১৫তে পেয়েছি। ওরা কেউ ছোট ফিল্মে কাজ করবে না। এ ভাবে কী করে হবে? যে কোনও জায়গায়, যে কোনও গান গাইতে হবে। এই স্পিরিটটাই আসল। এটা না থাকলে তারা হারিয়ে যাবে। প্রাইভেট অ্যালবামও করতে হবে।
এখন প্রাইভেট অ্যালবাম চলে না কিন্তু।
কে বলল? হানি সিংহের অ্যালবাম সুপার হিট।
কিন্তু লোকে বলে হানি সিংহ সুরে গান না। শুধু ডিস্কে নাচার জন্য হানি সিংহ বিখ্যাত।
একদম ভুল (উত্তেজিত)। আপনি বলুন তো অরিজিৎ সিংহের ফ্যান বেশি, না হানি সিংহের? আপনি বলতে পারবেন না। ইন্ডাস্ট্রিতে মেলোডির জন্য অরিজিৎ সিংহকে দরকার আর রিদমের জন্য হানি সিংহ। আর দুটোই যদি কেউ একসঙ্গে চায় তো আমি আছি (হেসে)।
বিতর্ক আপনার পিছু ছাড়ে না। রাখি সাওয়ান্তের কিস নিয়ে বিতর্ক...
ওটা নিয়ে অনেক কথা হয়ে গিয়েছে, আজ আর নয়। আমি একটু পাগলাটে। যা ইচ্ছে হয় করি। আসলে শিল্পীমাত্রেই এমন হয়। গানের কথায় আসি। আজ কাউকে খারাপ বলা যাবে না। লোকে বলছে আমরা বেসুরোই শুনতে চাই। বেসুরো গান হবে। ক্লাবে হানি সিংহের গানই লোকে নেবে। আর মেলোডিতে অরিজিৎ এখন এক নম্বরে। আর মিকা প্রয়োজন হলে অরিজিৎও হতে পারে, আর হানি সিংহও হয়ে যেতে পারে। আমাকে যেমন খুশি বানিয়ে নিন।
কিন্তু হানি সিংহ, মিকা সিংহের দাপটে সোনু নিগম-শানেরা কোথায় গেলেন? ওঁরা কি পুরনো প্রজন্ম হয়ে গেলেন?
কী বলছেন? সোনুজির শো ইউএসএ-তে আমার শোয়ের চেয়ে বেশি হয়। আমি কিন্তু এমনি বানিয়ে এটা বলছি না, এটাই সত্যি। ওর মতো পারফর্মার কোনও দিন পুরনো হয় না। ভারতের বাইরে সোনু নিগমের খুব ডিমান্ড। উনি যে রফি সাহেবের, কিশোরকুমারের আজকের সব গান গাইতে পারেন এটা ওঁর অ্যাডভানটেজ। দেখুন সচিনজি নিজের সময় সিক্সার মেরে মাঠ কাঁপাতেন। সারাজীবন ওকে কি পারফর্ম করে যেতে হবে নাকি?
তা হলে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সমস্যা কী?
দেখুন মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ভাগ হয়ে গিয়েছে। এখন সব মানুষের নিজের মিউজিক চাই। যার বাংলা গান পছন্দ সে বাংলা গান শুনবে। কেউ বা শুনবে ভোজপুরি।
আগে ছিল দূরদর্শন। তখন লোকের কাছে এত অপশন ছিল না। এখন ইউটিউবে লোকে নিজের পছন্দের গান শোনে। আর বেসুরো গানের কথা বলছিলেন না? বেসুরো গানের শ্রোতা তো আছে। এখন একটা গান সুপারহিট হলে লোকে শিল্পী হয়ে যায়।
হ্যাঁ, ক্ষতি কী? একটা গান গেয়েই লোকে স্টার। আমার এক বন্ধু আছে, যে কিনা এই ইন্টারভিউটা পড়ে আমার সঙ্গে ঝগড়া করতে আসবে। ওর নাম জসসি। একটা গান গেয়ে ও হিট। আর আজও একটা গানই গেয়ে যাচ্ছে।
মানে পিচ কারেকশানেও আপনার আপত্তি নেই?
শুনুন প্রোডাক্ট ভাল হতে হবে। সে যে ভাবেই হোক। লোকে চাইছে সলমন খানের লিপে মিকা সিংহ গাইবে, তাই মিকা সিংহকে গাইতে হবে। মিকার থেকে রাজা ভাল গায় হয়তো, কিন্তু কিছু এসে যায় না। কী বাজারে চলছে সেটাই আসল। আর সেটা সাধারণ মানুষ ঠিক করছে। এখন সুপারহিট মিউজিক ডিরেক্টর হল প্রীতম। প্রীতমকে ফিল্মে নিতেই হবে। এ ভাবেই কাজ হচ্ছে।
কিন্তু সলমন খান তো নিজেই গাইছেন এখন। তা হলে মিকা সিংহের কী হবে?
ভাল তো। গাক না। লোকে তো চাইছে। সলমন, শাহরুখ আমার খুব বন্ধু। কিন্তু কোনও পার্টিতে ড্রিঙ্ক করে বলতে পারব না তোমার ছবিতে আমাকে গাইতে দিও। কোনও হিরো নয়, আমি আমার ফ্যানের জন্য বেঁচে আছি। কেউ বলে না আমি বলছি। আজ আমি বলিউডের হিরোদের সমান টাকা রোজগার করি। আমার ধৈর্য আর পরিশ্রম আর আমার ফ্যানেদের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে। অন্য কেউ কী করছে তা নিয়ে মাথা ঘামাই না।
তা হলে সাফল্যের পথ খুব সহজ বলছেন?
না। সাফল্য জিনিসটা আলাদা। ধরে রাখা খুব শক্ত। শুধু গায়কি দিয়ে সাফল্য আসে না। আমি ’৯৮য়ে এসেছিলাম। এই ইন্ডাস্ট্রিতে গত ১৮ বছরে প্রায় ৫০০ গায়কগায়িকা এসেছে। কেউ সাউথে চলে গিয়েছে। হিট হয়ে থেমে গিয়েছে। যেমন ‘কোলাবরি’ মনে আছে সাউথে কী হিট! তার পর আর কোনও গান ছিল না কিন্তু।
আপনি নিজের ব্যাপারে কী ওভার কনফিডেন্ট?
শুনুন তাই যদি হত তা হলে আমি বলতাম না সারেগামাপা-র মতো এক নম্বর রিয়্যালিটি শোয়ে মিকা সিংহ বিচারক হল কি হল না তাতে ‘সারেগামাপা’র কিছু আসে যায় না। আমি এখানে এসেছি নতুন বাচ্চাদের হেল্প করার জন্যই। আমার কমিউনিটির গায়কগায়িকাদের আমি কিন্তু অনেক হেল্প করি। আমি যখন এত পেয়েছি ওপরওয়ালার কাছে, আমার ফিরিয়ে দেওয়ার আছে। দিল্লির একটা ছেলে দারুণ গায়। বলল, ‘‘আমার বাইক নেই।’’ আমি কিনে দিলাম। কিছু সাহায্য তো করতে পারি। আর সেটা সকলকে জানানোর জন্য করি না কিন্তু। আমি চাইলে মিডিয়া ডেকে ফ্রন্ট পেজ স্টোরি করতে পারি। সেটা কখনও করব না। আমি তো এই সাক্ষাৎকারেই সোনুজি, অরিজিৎ, আর হানির কথা বললাম। শুধুই নিজের ঢাক পেটাবার ইচ্ছে হলে সেটা কি করতাম?
‘লমহা’য় আপনার মেলোডি শুনে লোকের ভাল লেগেছিল। কিন্তু লোকে মিকা বলতে ‘মওজাই মওজা’, ‘সুবহ হোনে না দে’ ভাবে। কোথাও মনে হয় আপনার সব ধরনের গান গাওয়ার ক্ষমতাকে লোকে আজও বোঝেনি।
আমি এ বার মেলোডির দিকে মন দেব। রহফত সাহেবের সঙ্গে গান গাইবার কথা আছে। ডান্সিং সংয়ে আমি নম্বর ওয়ান। কিন্তু এ বার সুফি গাইতে হবে। ওই যে বলেছিলাম ধৈর্য ধরতে হবে।
কলকাতায় গান গাইতে ইচ্ছে করে?
ওরে বাবা। কলকাতায় আমি সব থেকে বেশি শো করেছি। আর আমার তো মনে হয় কলকাতার মতো রুচিশীল শ্রোতা খুব কম শহরেই আছে। শ্রোতার সঙ্গে আরও দুটো জিনিস আছে কলকাতায়। সেটা হল মিষ্টি দই আর রসগোল্লা। এই দুটোর আমি অন্ধ ভক্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy