Advertisement
E-Paper

বাংলা ছবিতে উন্নত চিন্তাধারার অভাব, স্ট্রং কনটেন্ট নেই: ভরত কল

প্রায় ১১৫টি ছবিতে অভিনয়। ধারাবাহিকে চল্লিশ হাজার এপিসোডে কাজ করার অভিজ্ঞতা। ইন্ডাস্ট্রির অত্যন্ত পরিচিত মুখ ভরত কল তাঁর অভিনয় জীবনের পঁচিশ বছর পেরিয়ে এলেন।

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৮ ১৬:৪৭
ভরত কল।

ভরত কল।

প্রায় ১১৫টি ছবিতে অভিনয়। ধারাবাহিকে চল্লিশ হাজার এপিসোডে কাজ করার অভিজ্ঞতা। ইন্ডাস্ট্রির অত্যন্ত পরিচিত মুখ ভরত কল তাঁর অভিনয় জীবনের পঁচিশ বছর পেরিয়ে এলেন। নিজেকে বদলে ফেলার সিদ্ধান্ত, ইন্ডাস্ট্রির প্রতি ভাললাগা-ক্ষোভ-অভিমান উজাড় করে দিলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।

নিজের কেরিয়ারগ্রাফে আবার বদল! কেন?

আমি তো রিস্ক নিতে ভালবাসি আজীবন। যখন এই ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে মুম্বই গিয়েছিলাম তখন জানতাম না কী করে পেট চলবে! আমি কাজ শিখতে গিয়েছিলাম। আমার তো নাটকের ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল না। কাজ করতে করতে অভিনয় শিখেছি। যখন মুম্বই গেছি তখনও প্রায় ৫৫টা ছবিতে অভিনয় হয়ে গেছে। চোদ্দো হাজার এপিসোডের কাজ শেষ করেছি।

মুম্বই গেলেন যখন আবার এখানে ফিরলেন কেন?
ওই যে বললাম, কোথাও ভেতর থেকে মনে হল, এ বার ফিরি। ফিরে ‘অরুন্ধতী’র লাইন প্রডিউসারের কাজ করলাম। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘খাদ’-এ অভিনয়, সেই ছবিরও লাইন প্রডিউসার আমি। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘জাতিস্মর’, ‘জুলফিকার’-এ কাজ করলাম।

ওই সময় তো আবার বিয়ে করলেন?
হ্যাঁ। টেকনিক্যালি আমার দুটো বিয়ে। মেয়ে হল। আমি তারপর স্থিতির কথা ভেবে ধারাবাহিকে কাজ শুরু করলাম। এ ক্ষেত্রে লীনা গঙ্গোপাধ্যায় আর শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলতেই হয়। ওঁদের ‘পূণ্যিপুকুর’ ধারাবাহিকে কাজ না করলে আমি এত দূর আসতে পারতাম না। পুরুলিয়া হোক বা মেদিনীপুর, যেখানেই যেতাম লোকে বলত, দাদা টিভি খুললেই আপনাকে দেখা যায়।

আরও পড়ুন, বলিউডের রিয়েল লাইফ বেস্ট ফ্রেন্ড এঁরাই

কিন্তু ইদানীং ধারাবাহিকে কি আর কাজ করছেন না?
২০১৭-র পর থেকে মনে হল, বড্ড টাইপকাস্ট হয়ে যাচ্ছি। সেই হিরো-হিরোইনের বাবা! জ্যাঠা...ইত্যাদি। মনে হল, চ্যানেল যে কোনও দিন হয়তো ধাক্কা মেরে বার করে দেবে। বলবে, আগের সিরিয়ালেই তো বাবা সেজেছিল! আর ভাল লাগছে না। তাই সরে এলাম।

এ বার কোন দিকে যাবেন?
আমি এ বছর যাত্রায় সাইন করেছি। আমার দু’জন কাছের মানুষ, নিসপাল সিংহ রানে আর লীনাদিকে জানিয়েওছি আমার সিদ্ধান্ত।

আপনি তো রিওয়াইন্ড করলেন। যাত্রা দিয়ে শুরু করলে...
দেখুন, যাত্রায় ডাক পাওয়া অত সোজা নয়। আমি কাছ থেকে অনেক মানুষকে যাত্রায় খ্যাতি অর্জন করতে, একনাগাড়ে কাজ করে যেতে দেখেছি।


স্ত্রীয়ের সঙ্গে ভরত।

যেমন?
লাবণী সরকার। কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়। দীপংকর দে। দোলন রায়। এটা আমার নিজের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ! দেখাই যাক না...

চ্যালেঞ্জ নিতে পারেন। দেখতে ভাল। কণ্ঠস্বর আছে। অভিনয় করতে পারেন। তবুও পঁচিশ বছর পর মনে হয়নি, এক জন চরিত্রাভিনেতা হিসেবে রজতাভ, শাশ্বত, খরাজ, কাঞ্চন— এই নামগুলোর মধ্যে আপনার নাম থাকা উচিত ছিল?
আমি যে এ বিষয় নিয়ে ভাবিনি তা নয়। তবে আমি ডেস্টিনিতে বিশ্বাস করি। আমি জ্যোতিষ মানি। আজ আমি যা পেয়েছি তা যে কম এটাও বলতে পারি না। লেক গার্ডেন্সে বড় হলেও আদপে আমি এক জন কাশ্মীরি। বাংলার বুকে বাংলা ভাষা জেনে সেটা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি! এই বা কম কী? আর কিছু কাজ নেই আমার তাই অভিনয় করতে আসিনি। আমি তো এমবিএ করেছি। অন্য কিছু হতেই পারতাম। কিন্তু চাইনি। পিনাকী চৌধুরীর কাছে প্রথম কাজ করব বলে যখন যাই উনি দূরদর্শনের জন্য হিন্দি ধারাবাহিক তৈরি করছিলেন। বাদশা মৈত্র, কুশল চক্রবর্তী আর আমার সেখান থেকেই শুরু। তবে আমি নানুদা (সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়) আর শক্তি কপূরকে দেখে অভিনয় করতে আসি। আমি ভিলেন হতে চেয়েছিলাম।

ক্ষোভ নেই তা হলে?
আমি না মধুর হওয়ার জন্য মধুর হতে পারব না। শ্রীকান্ত মোতা, মহেন্দ্র সোনি, নিসপাল সিংহ রানে, লীনা গঙ্গোপাধ্যায়— এদের আমি আমার কাছের লোক বলে বিশ্বাস করি। মাঝামাঝি কেউ নেই। আর কেউ ছবি দেখতে বললে ভাল না লাগলে মুখের ওপর বলে দিই। মতে না মিললে সরে আসি।

আরও পড়ুন, ১০০ বাংলা ছবিতে জিয়নকাঠির ভাবনা

ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গেও তো আপনার মতে মেলেনি?
‘দহন’-এর লাইন প্রডিউসার ছিলাম। হঠাৎ কাস্টিং চেঞ্জ হল। আমি সরে এলাম। আমি ভাল বললেই ছবি চলবে এমনটা নয়।

কোন ছবি ইদানীং ভাল লাগল?
‘মাটি’। ভাববেন না, লীনাদির সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা থেকে বলছি। অর্ক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘খোঁজ’ ভাল লেগেছে।

আপনি ইন্ডাস্ট্রিতে টেবিলের এ পার-ও পার দেখেছেন। বলুন তো, ইন্ডাস্ট্রিতে নেপোটিজম, কাস্টিং কাউচের দৌরাত্ম্য কতটা?
রানে বছরে দশটা ছবি করছে। শ্রীকান্ত বারোটা। এ ক্ষেত্রে রানের কাছে মৈনাক ভৌমিক আসে। শ্রীকান্তের সঙ্গে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায় মিটিং করে। কে কাকে ডিরেক্ট করে? প্রত্যেকের নিজস্ব ভিউ আছে। রানে কিন্তু কখনও বলে না কোয়েলকে ছবিতে নাও। বরং দেখেছি, বাজারের দাবিতে কোয়েল কমার্শিয়াল ছবি করতে বাধ্য হচ্ছে। এই দিকটাও গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমার বলতে দ্বিধা নেই, বাংলা ছবিতে উন্নত চিন্তাধারার আজও অভাব। একটা ইমতিয়াজ আলি দেখান তো যে ‘হাইওয়ে’ করে আবার ‘জব উই মেট’ করে। নেই! আউটস্ট্যান্ডিং কিছু আসেনি। এত স্ট্রং কনটেন্ট চার দিকে। নেটফ্লিকস্, শর্ট ফিল্ম...বাংলায় কনটেন্ট কই? বাণিজ্যের দিক থেকে শিবু-নন্দিতার ছবি সফল।


মেয়ের সঙ্গে অভিনেতা।

আপনি প্রভাত রায়, হরনাথ চক্রবর্তীর সঙ্গে কাজ করেছেন।
আমি প্রভাতদাকে খুব মিস করি। ওই ঘরানার ছবি আর হয় না। হরদা যদিও রানের প্রডাকশনে ছবি করলেন।

আপনি ধারাবাহিক, টেলিফিল্ম অনেক প্রযোজনা করেছেন। এখন ইচ্ছে করে না?
না। এটা সময় নয়। পরে ছবি পরিচালনা করব। আমার লেট ম্যারেজ...নিজেকে স্টেবল রাখতে চাই। মেয়ে অনেক ছোট।

এখন কি ইচ্ছে করে তা হলে?
স্বপ্ন দেখতে।

কী স্বপ্ন?
আমি দেখতে চাই আমার মেয়ে উইম্বলডনে খেলছে...

উঠে পড়লেন ভরত কল। কল টাইমের সময় হয়ে যাচ্ছে যে! ঘড়ি ধরে চলা মানুষ তিনি...এই চলার মধ্যে শুধু ইন্ডাস্ট্রি নয়, জীবনও তাঁকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এক ব্যাধির সঙ্গে নিয়ত কুস্তি লড়ে যাচ্ছেন তিনি!
সেই লড়াইয়ে চেতনার আলো, মুছে দেয় অতীত ভিড়ের অন্ধকার।

সেলেব্রিটি ইন্টারভিউ, সেলেব্রিটিদের লাভস্টোরি, তারকাদের বিয়ে, তারকাদের জন্মদিন থেকে স্টার কিডসদের খবর - সমস্ত সেলেব্রিটি গসিপ পড়তে চোখ রাখুন আমাদের বিনোদন বিভাগে।

Bharat Kaul ভরত কল Tollywood TV Celebrities Celebrity Interview
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy