Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Sreelekha Mitra

Independence Day: দুপুরে মাংসটা কিন্তু কব্জি ডুবিয়ে খেতে হবে, স্বাধীনতা দিবসে কটাক্ষ শ্রীলেখার

আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা কি এই দেশ দেখবেন বলেই নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন?

জীবনকে তুচ্ছ করে, পরাজয়ের গ্লানি থেকে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠল এক দল ভারতবাসী।

জীবনকে তুচ্ছ করে, পরাজয়ের গ্লানি থেকে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠল এক দল ভারতবাসী।

শ্রীলেখা মিত্র
শ্রীলেখা মিত্র
শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২১ ১১:২৩
Share: Save:

৭৫তম স্বাধীনতা দিবস পালন করছি আমরা। এখনও ১০০ হতে আর কত বাকি? এই অঙ্কটা কষতে হয় না। মুখে মুখেই হয়ে যায়, তাই না? ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্ট আমরা ব্রিটিশ শাসনের থেকে স্বাধীন হলাম। সত্যিই স্বাধীন হলাম কি? ইংরেজদের আগে পর্তুগিজ, ফরাসি তাদের শাসনের বেড়াজালে দেশের বিভিন্ন অংশকে আবদ্ধ রেখেছিল। ভারতীয় ভূখণ্ডে ছোট ছোট দেশীয় রাজ্যের রাজারাও কি স্বাধীন ছিলেন? তাঁদেরও তো রাজস্ব, রাজকর দিতে হত ব্রিটিশ শাসকদের। কোথাও কোনও রাজা স্বাধীন হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও তাঁর সে উপায় বা দুঃসাহস-- কোনওটাই কার্যকরী হত না ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে। গুঁড়িয়ে দেওয়া হত তাঁদের শিরদাঁড়া, পাঁজর আর স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখার সাহস। সাক্ষী ১৮৭৫ সালের মহাবিদ্রোহ।

এই পরাধীনতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় বাধা ছিল বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে নিজস্ব একতার অভাব। এত বিশাল দেশ! হিমালয়ে চূড়া থেকে শুরু করে ভারত মহাসাগর অবধি তার ব্যাপ্তি। প্রাদেশিকতার ফলস্বরূপ এক জোট হয়ে বিদেশি শক্তির সঙ্গে লড়ার ক্ষমতা থাকা তো দূরস্থান, ভাবার মতো সাহস, মনের জোর, স্পর্ধা, স্নায়ুর জোর ছিল স্বপ্নের অতীত। অতএব, মাথা নত করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দাসত্ব মেনেও মানিয়ে নিলাম আমরা, ভারতবাসীরা। আমাদের দেশে আমরাই দাস। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘স্লো পয়েজনিং’, সেই ভাবে ধীরে ধীরে এই দাসত্বের বীজ ছড়িয়ে পড়ল আমাদের শরীরে, মননে, কাজে, ভাবনায়। আমাদের স্বপ্নে। ‘যো হুকুম’ থেকে ‘ইয়েস স্যার’-এর ব্যাপ্তিতে ক্রমে ক্রমে আমরাও হয়ে উঠলাম পারদর্শী।

যে শিরদাঁড়া মানুষকে সোজা দাঁড়াতে শেখায় সেই শিরদাঁড়া ধীরে ধীরে বেঁকে গেল। আমরাও ঝুঁকলাম। কিন্তু তারও পর আছে। গড্ডলিকা প্রবাহে না ভেসে একদল মানুষ চিরকা্লই একটু বা বেশি ব্যতিক্রমী থেকেই যান। যাঁদের মূল্যায়ন হয় না। বা হলেও সেই মূল্যায়ন হয় তাঁদের মৃত্যুর পর। তবে তাঁরা মূল্যায়নের আশায় নয়, তাঁদের অদম্য সাহসের ভরসায় এই মেনে বা মানিয়ে নেওয়ার দলের সহজ পথ থেকে কঠিন রাস্তাটাই বেছে নেন। তাঁদের উপর থেকে 'দস্যু', 'দুষ্কৃতী', 'উগ্রপন্থী' ইত্যাদি তকমা সরিয়ে ধীরে ধীরে নামকরণ হয় 'বিপ্লবী'।

এ ভাবেই দেশে বিপ্লব এসেছিল। যার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিলেন হাজার হাজার যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরীর দল। ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হল বলিদান, লেখা আছে অশ্রু জলে।' জীবনকে তুচ্ছ করে, পরাজয়ের গ্লানি থেকে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠল এক দল ভারতবাসী। কীসের আশায় এই আত্ম-বলিদান? কেন ক্ষুদিরাম মায়ের কাছে বিদায় চাইলেন? কেন জালিয়ানওয়ালাবাগের ইতিহাস আজ নিছকই প্রহসন? হ্যাঁ, আমি দায়িত্ব নিয়ে ‘প্রহসন’ শব্দটি ব্যবহার করছি। বেশ করছি। এই এতগুলো মৃত্যুর দায় তৎকালীন ইংরেজ সরকারের নয়। এই দায় আমার, আপনার, তোমাদের আর তোদের। আমাদের বিস্মৃতির।

১৫ অগস্ট পাড়ার মোড়ে, ক্লাবে ‘খেলা হবে’-র ছলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে ‘জনগণমন’ গাইলেই সব দায় শেষ হয়ে যায় না। বা যখন প্রেক্ষাগৃহ খোলা ছিল... হ্যাঁ মাল্টিপ্লেক্স। সিঙ্গল প্লেক্স তো এখন অতীত! আর বর্তমান? যত কম বলা যায় ততই ভাল। পপকর্ন হাতে ‘আবার উঠতে হবে’ বলে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে যাঁরা জাতীয় সঙ্গীত গান তাঁদের ও তাঁদের ছেলেমেয়েদের উদ্দেশ্যে আমার প্রশ্ন, স্বাধীনতার মানে কী? আপনারা/ তোমরা কী জানো স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে? স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্পর্কে? তোমরা তো আবার ইনস্টাগ্রাম, টিকটক বা রিলপ্রেমী! 'দেশপ্রেম' শব্দটা চেন কি?


লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার্সদের ভিড়ে স্বাধীনতা? ওই তো! সকাল বেলা পতাকা উত্তোলন। বহুতলের ফ্ল্যাটের তলে একটু গান গাওয়া। তার পর মিষ্টি খাওয়া। মাঝে মাঝে গুগল করে জাতীয় সঙ্গীতের কথাগুলো খুঁজে দেখে নেওয়া। তেরঙ্গার প্রথম রং কী? সেটাও লুকিয়ে দেখে নেওয়ার মতো জনগণের কিন্তু অভাব নেই। আর ‘জনগণমন’-র রচয়িতার নাম? খেপেছেন? ১০ জনের মধ্যে সমীক্ষা চালান। এই প্রজন্মের কাছে জানতে চান পাঁচ জন স্বাধীনতা সংগ্রামী বা দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর নাম। সবাই সঠিক উত্তর দিলে এই শ্রীলেখা মিত্র কান ধরে ৫০ বার ওঠবোস করবে।

৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আপনাদের সবাইকে শুভেচ্ছা। মিষ্টির পর দুপুরের খাওয়ার তালিকাটা মনে করে মিলিয়ে নেবেন। মাংসটা কিন্তু কব্জি ডুবিয়ে খেতে হবে। দমভর খাওয়ার পর হজমে সামান্যতম গণ্ডগোল হলে বুঝবেন, এই স্বাধীনতা আমাদের জন্য নয়।

আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা কি এই দেশ দেখবেন বলেই নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sreelekha Mitra 75th Independence Day Tollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE