Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

উঁকি মেরে দেখা যাক রানি পদ্মিনীর খাসমহলে, যাঁকে নিয়ে এত হইচই...

রাজা রবিবর্মার ছবির আদলে নাকি ঠিক করা হয়েছে রানি পদ্মিনীর লুক? কেমন ভাবেই বা সেজে উঠছে চিতোর দুর্গ? খবর নিলেন পারমিতা সাহাসঞ্জয় লীলা ভংসালীর ম্যাগনাম ওপাস ‘পদ্মাবতী’ আবার খবরের শীর্ষে। কোলাপুরে তৈরি সেটে ভাঙচুরের কারণে। দুষ্কৃতীরা সেটে ঢুকে পুড়িয়ে দেয় শিল্পীদের পোশাক-সহ ১২টিরও বেশি তাঁবু।

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৭ ০০:৫৫
Share: Save:

সঞ্জয় লীলা ভংসালীর ম্যাগনাম ওপাস ‘পদ্মাবতী’ আবার খবরের শীর্ষে। কোলাপুরে তৈরি সেটে ভাঙচুরের কারণে। দুষ্কৃতীরা সেটে ঢুকে পুড়িয়ে দেয় শিল্পীদের পোশাক-সহ ১২টিরও বেশি তাঁবু। কিন্তু তাতে পরিচালক একটুও দমে যাননি। বরং নতুন উদ্যেমে কাজ শুরু করেছেন। তাই একবার উঁকি মেরে দেখা যাক না রানি পদ্মিনীর খাসমহলে, যাকে নিয়ে এত হইচই...

মুম্বইয়ের ফিল্মসিটিতে তৈরি হয়েছে পদ্মাবতীর আবাস, চিতোর দুর্গ। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় কাজ চলছে এখানে। সেটে বানানো হয়েছে রাজা-রানির মহল। রানির অন্দরমহল ও জহরকুণ্ড, জলমহল এবং সে সময় চিতোরের মধ্যেকার মন্দিরগুলো। চিতোরের কীর্তিস্তম্ভের কাছাকাছি অংশ অর্থাৎ পুরনো চিতোর রি-কনসট্রাক্ট করা হয়েছে সেটে। কীভাবে বানানো হবে চিতোরগড়, তা নিয়ে বহুদিন ধরে চলেছে রিসার্চ। বিশাল এই চিতোর দুর্গটি বানিয়েছেন সুব্রত চক্রবর্তী ও অমিত রায়। ৪৫০ জন কর্মী দিনরাত কাজ করেছেন সেট বানাতে।

এবার আসি চরিত্রদের লুক ও কস্টিউমে। পদ্মিনী ও তার স্বামী রানা রতন সিংহ অর্থাৎ দীপিকা পাড়ুকোন ও শাহিদ কপূরের লুক ঠিক করার সময় অকৃত্রিম যে রাজস্থানী ঘরানা, তার চেয়ে সামান্য সরে এসে কিছুটা কমার্শিয়ালাইজেশনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ, বড় পরদার ক্ষেত্রে দেখতে ভাল লাগাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। রাজস্থানে সে সময় ব্যবহার হত বলে, পুরো কস্টিউমে সুতো এবং জরির কাজ প্রচুর। কস্টিউমের রঙে প্রাধান্য আর্থ কালারের। আর এই রঙের পোশাকের জন্য সেটও বানানো হয়েছে এক ধরনের মিউটেড কালার দিয়ে, যেটা বেশ মোনোটোনাস। রাজস্থানে এ ধরনের মোনোটোনি কিন্তু চোখে পড়ে। বিশেষ করে পাহাড়ের উপর চিতোরের ধূসর প্রকৃতি। বালিয়াড়ি, পাহাড় আর পাথর। তার জন্য পুরো কস্টিউম ও সেটে আর্দি টোন রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন: দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নামছেন সোহম

অঞ্জু মোদীর পোশাকে দীপিকা। ‘পদ্মাবতী’তে তাঁকে কি এর চেয়েও বেশি গর্জাস লুকে দেখা যাবে?

চারপাশের রুক্ষ প্রকৃতির কারণে, রাজস্থানের মানুষ রঙের ঘাটতি পূরণ করেন পোশাকে রঙের বৈচিত্র দ্বারা। এই প্যানোরমিক ভিউ পুরো ছবি জুড়ে। পরিচালক নাকি পদ্মাবতীকে কল্পনা করেছেন রাজা রবিবর্মার পেন্টিংয়ের আদলে। পদ্মিনীর জেশ্চার, সাজগোজ... সবই যেন সেই ছবির ‘পরদারূপ’। দীপিকার পরনে শাড়ি নয়, রয়েছে ঘাগরা-চোলি। আর্দি টোনের মধ্যে ইন্ডিয়ান রেড, শ্যাবি গ্রিনের মতো রঙের ব্যবহারে কস্টিউমগুলো উজ্জ্বল। পদ্মাবতী যেহেতু অপূর্ব সুন্দরী ছিলেন, তাই তাঁকে যখন দেখানো হবে, ছবির প্রেক্ষাপটও হবে ‘চিত্রবৎ’। জলে ভেসে বেড়ানো পদ্ম, পদ্মের পাপড়ি, ময়ূর নাচছে, রাজহাঁস ঘুরছে, মোহময় একটা পরিবেশ। রাজা রবিবর্মার ছবিতে একটা বিশেষ ধরনের গোলাপি রঙের ব্যবহার দেখা যায়, যেটা ছবিতেও আপনারা পাবেন। ‘পদ্মাবতী’র দীপিকার সঙ্গে ‘জোধা আকবর’-এর ঐশ্বর্যার কি কোনও মিল আছে? উত্তরটা ছবি মুক্তি পেলেই জানা যাবে, তবে যেটুকু খবর, পদ্মাবতীর লুক সুরিয়্যালিস্টিক। তাই জোধার সঙ্গে মিলের প্রশ্ন নেই। শাহিদের লুক রাজস্থানের রাজাদের মতোই, তবে তা মাচো নয়। পিউরিটান লুক। আর্দি টোন। ছবিতে রাফ জুটের কাপড়কে ডাই করে সেট ও কস্টিউমে ব্যবহার করা হয়েছে। যেটা ক্যামেরায় ম্যাজিকাল লাগবে। ছবিটা যেহেতু বিরাট রেঞ্জের এবং কস্টিউমও প্রচুর, তাই দিল্লির ডিজাইনার রিম্পল ও হরপ্রীত নারুলা বানিয়েছেন দীপিকা, শাহিদ ও রণবীরের পোশাক। রিম্পল ফোনে জানালেন, ‘‘পোশাকে অরগ্যানিক ফ্যাব্রিক ব্যবহার করেছি এবং তাতে থাকছে হ্যান্ড এমব্রয়ডারি। আঙ্গারাখা কাট রাখছি। সঙ্গে লহেরিয়া বা টিপিক্যাল রাজস্থানি টোন। রাজপুত নারীদের মতো ছবিতেও মাথায় থাকছে গোল বলের মতো ‘বোরলা’ ( টিকলির মতো)।’’ বাঙালি ডিজাইনার ম্যাক্সিমা বসু বানিয়েছেন বাকিদের পোশাক।

যাই হোক, পদ্মাবতী ও রতন সিংহের ঠিক বিপরীতে আলাউদ্দিন খিলজি। রণবীর সিংহ। ছবিতে খুব ডার্কভাবে তাঁকে দেখানো হয়েছে। খুব সুন্দর তিনি, কিন্তু তাঁর মধ্যেকার নৃশংসতা বাকিদের ভয় পাইয়ে দেবে। ছবির গল্প অনুযায়ী সুদূর আফগানিস্তান থেকে তিনি এসেছেন চিতোর আক্রমণে। তাই তাঁর চাপ দাড়ি, চোখে সুর্মা। লম্বা চুলে রুক্ষতা। ঠোঁট ফাটা। গায়ের রং পুড়ে গিয়েছে। পুরো লুকে রয়েছে বোল্ডনেস। চরিত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কস্টিউম ও সেট... দু’ জায়গাতেই চোখে পড়ার মতো বৈপরীত্য।

জুয়েলারির মধ্যে রুপোর প্রচুর ব্যবহার হয়েছে। সোনার যেটুকু ব্যবহার হয়েছে, তাও অ্যান্টিক রঙে। ছবির চরিত্রদের লুক, সেট তৈরির সময় বিশেষভাবে সাহায্য নেওয়া হয়েছে সে সময়কার রাজপুত ঘরানার মিনিয়েচার পেন্টিংয়ের। চিতোরে ‘পদ্মাবতী’-র রিসার্চ টিম বেশ অনেকবার গিয়েছিল রেকি করতে। জয়পুরে ছবির সেট বানানো হয়েছিল যুদ্ধের সিকোয়েন্সের জন্য। কোলাপুরেও সম্প্রতি যে সেট ভাঙা হল, সেখানে আলাউদ্দিনের তাঁবু বানানো হয়েছিল। চিতোর ধ্বংস করার আগে তিনি প্রায় সাত মাস অপেক্ষা করেছিলেন। এবং বিভিন্ন ছুতোয় চিতোরে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন। একবার তাঁবু খাটিয়েও ফিরে যান গরম সহ্য করতে না পেরে। একবার রাজা রতন সিংহকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যান। পদ্মিনী তাঁকে বুদ্ধি করে ছাড়িয়ে আনেন। এই অপেক্ষার দৃশ্যই সেখানে চিত্রায়িত হচ্ছিল। যুদ্ধের দৃশ্যে আলাউদ্দিনের বাহিনী দেখানোর জন্য কোলাপুরে প্রায় ৬০-৭০টা ঘোড়া আর ২৫টির মতো উটেরও ব্যবহার হয়েছে।

এখনও কাজ চলছে সঞ্জয় লীলা ভংসালীর বিগ বাজেট এই ছবির। সেট থেকে খবর যাতে না বেরোয়, তার জন্য রয়েছে পাহারা। কিন্তু এত বড় কর্মযজ্ঞের কিছু খবর যে বেরিয়েই যায়...

খরচের বহর

আর্ট ডিপার্টমেন্টের বাজেট ৩১ কোটি টাকা।

চিতোর বানাতে খরচ ন’কোটি টাকা।

জুয়েলারি ও কস্টিউম ২০ কোটির কাছাকাছি।

পুরো ছবির বাজেট? শোনা যাচ্ছে, ২২০ থেকে ২৫০ কোটি টাকার মতো।

রিম্পল নারুলার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিবেদিতা দে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE