Advertisement
E-Paper

রন্ধ্রে রন্ধ্রে কূটকচালি! নষ্ট মঞ্চের পরিবেশ? প্রশংসা করতেও ভয়! অকপট নাট্যব্যক্তিত্বেরা

“কৌশিক সেন বরাবর মন খুলে প্রশংসা করেছেন। পিঠ চাপড়েছেন। সমালোচনাও সামনে করেছেন”, বললেন সুরজিৎ।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৯
মঞ্চের হালচাল নিয়ে সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, সোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, শঙ্কর চক্রবর্তী, চৈতালি চক্রবর্তী।

মঞ্চের হালচাল নিয়ে সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, সোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, শঙ্কর চক্রবর্তী, চৈতালি চক্রবর্তী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

শাসকদল, বিরোধীপক্ষের টানাপড়েন রয়েইছে। আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারি হল পাচ্ছে না বহু নাট্যগোষ্ঠী। সে খবর একাধিক বার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত। ইদানীং শোনা যাচ্ছে, মঞ্চদুনিয়ার অন্দরের রাজনীতিও নাকি বেড়েছে!

অভিযোগ, এর জেরে নষ্ট মঞ্চের পরিবেশ। বন্ধুত্বেও চিড় ধরাচ্ছে এই কূটকচালি। বন্ধুবিচ্ছেদের ভয়ে, কাজ হারানোর শঙ্কায় মন খুলে প্রশংসা বা সমালোচনা— কিছুই আর নাকি করতে পারেন না নাট্যকর্মীরা। বাস্তবে এ রকমই কি ঘটছে? এ বিষয়ে কী মতামত নাট্যকর্মীরদের?

সবিস্তার জানতে আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগ করেছিল নাট্যদুনিয়ার চার জনপ্রিয় মুখ চৈতালি চক্রবর্তী, শঙ্কর চক্রবর্তী, সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।

প্রত্যেকে একযোগে জানিয়েছেন, অন্দরের কূটকচালি কোথায় না হয়? পারস্পরিক নিন্দে-মন্দ, হিংসা, তার থেকে দূরত্ব তৈরি হওয়া— আগেও ছিল, এখনও আছে। পাশাপাশি এটাও স্বীকার করেছেন, দিন যত এগোচ্ছে ততই যেন এই ধরনের মানসিকতা বাড়ছে। এই মনোভাবকে তাঁরা সমর্থন করতে পারেন না।

যেমন, সোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কাছে প্রসঙ্গ তুলতেই কণ্ঠস্বরে বাড়তি সতর্কতা। তিনি বলেছেন, “আমি এই ভয়েই কোনও কথা বলি না। সাতেপাঁচে থাকি না। কারও হয়ে কিচ্ছু বলতে যাই না। আসি-যাই, কাজ করি, ব্যস।” একটু থেমে নিজেকেই যেন সাবধানতার পাঠ পড়িয়েছেন, “রাজনৈতিক মহল ছুঁলে তো কথাই নেই। থিয়েটার মহলের অন্দরের রাজনীতিও কম বিষাক্ত নয়। আমি ও সবের থেকে শত হস্ত দূরে।”

এই বক্তব্য কিন্তু কমবেশি প্রায় সকলেরই। চৈতালি ১৯৮৪ সাল থেকে ‘পঞ্চম বৈদিক’ নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত। মাঝে কয়েকটা বছর মঞ্চের সঙ্গে দূরত্ব ঘটেছিল। ফের তিনি স্বমহিমায়। সেই সময় থেকেই তিনি মঞ্চের অন্দরের রাজনীতি বা কূটকচালি দেখছেন। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি দুষেছেন সমাজমাধ্যমকে। তাঁর কথায়, “তখন পত্র-পত্রিকা ছিল। সেখানে অন্দরের সব খবর প্রকাশিত হত না। ফলে, পাঠক অনেক কিছুই জানতে পারতেন না। অন্দরের কাজিয়া তাই অন্তরালেই থেকে যেত।” সমাজমাধ্যম এসে ঘরের কলহ প্রকাশ্যে এনে ফেলছে। সেখানে নীতিপুলিশি করছেন হাজার হাজার মানুষ। ফলে, কলহ বাড়ছে। তার ছাপ পড়ছে মঞ্চদুনিয়ায়।

চৈতালি মনে করেন, বিষয়টি কে, কী ভাবে মানিয়ে নিতে পারবেন— সেটা ব্যক্তিবিশেষের উপর নির্ভর করে। তিনি তাই বরাবর, কাউকে সমর্থন করেন না। কারও হয়েও বলতে যান না। সকলের সঙ্গেই হাসিমুখ বজায় রাখার চেষ্টা করেন।

প্রায় একই কথা বললেন শঙ্করও। শুরুতেই তাঁর সাফ দাবি, “আমি তো ওই জন্য নাটকের পর গ্রিনরুমেই যাই না! গেলেই নানা মানুষের আগমন। নানা মুনির নানা মত। কী বলতে কী বলে ফেলব। তা-ই নিয়ে আর এক অশান্তি।” কাউকে প্রশংসা করতে হলে তাই মুঠোফোনেই ভরসা তাঁর। তিনি চৈতালির মতোই দুষেছেন সমাজমাধ্যমকে। শঙ্করের কথায়, “যাকে বলে, ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’। সব কিছু সামনে এনে ফেলছে। লোকেও তা-ই নিয়ে মাতামাতি করে।” তার পরেই স্বীকারোক্তি, “একটা সময়ে খুব দুর্মুখ ছিলাম। যা বলার, মুখের উপরে বলে দিতাম। যার জেরে প্রচুর কাজ হারিয়েছি। এখন বয়স হয়েছে। এ সব অশান্তি আর ভাল লাগে না। তাই বেশির ভাগ সময় মৌনব্রত পালন করি।” তবে এক-এক সময় এখনও মন খুলে প্রশংসা করেন এই প্রজন্মের, সে কথাও জানিয়েছেন শঙ্কর।

সুরজিৎ এ ব্যাপারে আদর্শ মেনেছেন কৌশিক সেনকে। নাট্যাভিনেতা-পরিচালকের কথায়, “একমাত্র কৌশিককে দেখি প্রাণ খুলে সকলের প্রশংসা করে। এই আচরণ আগের প্রজন্মের নাট্যব্যক্তিত্বদের মধ্যে ছিল।” তাঁরা প্রকাশ্যে নিন্দা-প্রশংসা দু-ই করতেন। কাউকে ভয় পেতেন না। আর যাঁদের বলতেন, তাঁরাও খুব সহজ ভাবে নিতেন। এখনকার সব কিছুই বদলে গিয়েছে। কেউ আর কারও সম্পর্কে কোনও কথা বলেন না। প্রশংসা যদিও বা করেন, নিন্দা বা সমালোচনা একেবারেই না। এই মানসিকতা এক-এক সময় অস্বস্তিতে ফেলে তাঁকেও। তিনিও তাই ভয় পান কোনও বিষয় নিয়ে মন খুলে কথা বলতে।

Surajit Banerjee Chaitali Chakraborty Shankar Chakraborty Sohan Bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy