Advertisement
E-Paper

বিয়েবাড়িতে আমি নাচি না, পুরুষদের ‘দৃষ্টি’ অস্বস্তিতে ফেলে দেয়: জয়া ভট্টাচার্য

‘দিল্লি ক্রাইম’ সিরিজ়়ের তৃতীয় অধ্যায়ে বিমলার চরিত্রে নজর কেড়েছেন। যদিও নিজেকে ‘গুন্ডা’ বলেন। টেলিভিশনে করা খলচরিত্র নাকি একসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে সাহায্য করেছে তাঁকে।

সম্পিতা দাস

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৯
জয়া ভট্টাচার্য।

জয়া ভট্টাচার্য। ছবি: সংগৃহীত।

হিন্দি ধারবাহিক ‘কিউঁ কি সাস ভি কভি বহু থি’ করার পর ঘরে ঘরে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন অভিনেত্রী জয়া ভট্টাচার্য। কিন্তু এখন সেই ধারাবাহিক নিয়ে কোনও কথা শুনতে নারাজ তিনি। স্বেচ্ছায় প্রায় সাত বছর সরিয়ে নেন প্রচারের আলো থেকে। ফের তিনি নজর কেড়েছেন ‘দিল্লি ক্রাইম’ সিরিজ়়ের তৃতীয় অধ্যায়ে বিমলার চরিত্রে। স্পষ্টবক্তা, নিজের শর্তে জীবন চালান। আনন্দবাজার ডট কম-এর মুখোমুখি জয়া ভট্টাচার্য।

প্রশ্ন: ‘দিল্লি ক্রাইম’ সিরিজ়টার সঙ্গে যুক্ত হলেন কী ভাবে?

জয়া: ২০১৭ সালে প্রথম সুযোগটা আসে। কিন্তু সেই সময়ে আমার মা ভীষণ অসুস্থ ছিলেন। আমি নাকি পথে বসে গিয়েছি, আমার সর্বস্ব শেষ হয়ে গিয়েছে— এমন নানা কথা শোনা গিয়েছিল আমাকে নিয়ে। তাতে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ি। সেই সময়ে অডিশন দিই। ওঁরা আমাকে প্রথম বারেই নেয়নি। পরে সিরিজ়ের পরিচালক আমাকে দিল্লিতে ডেকে পাঠান। তখন জানান, আমি চরিত্রটার জন্য মানানসই। কিন্তু নেটমাধ্যমে আমার ধারাবাহিকে করা চরিত্রের ছবিতে ভর্তি যেখানে চড়া মেকআপ, সবই প্রায় ‘নেগেটিভ’ চরিত্র। ফলে উনি ঠিক মিল খুঁজে পাচ্ছিলেন না। শেষে মুকেশ ছাবড়া আশ্বস্ত করায় বিমলার চরিত্রটা পেয়েছিলাম। আমি যে ভালবাসাটা পেয়েছি পুরো টিমের তরফ থেকে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

প্রশ্ন: সেটের পরিবেশ কেমন ছিল?

জয়া: আমি এটা আপনাকে বলতে পারি, যে পদ্ধতিতে আমরা কাজ করেছি তাতে ফ্লোরে উপস্থিত শিল্পী থেকে, প্রযোজক কেউ কাউকে বিরক্ত করেননি। পুরো সেটে একটা শব্দ হত না। সবাই চাপা স্বরে কথা বলতেন সেটে। ফোন এলেও কেউ ধরতেন না। যাতে অন্য কারও মনোযোগে ঘাটতি না হয়, সেটা সবার খেয়াল থাকত। প্রতিটি অভিনেতা তাঁদের অভিনীত চরিত্রকে ধারণ করেছিলেন বলা যায়।

প্রশ্ন: সেটে অবসর সময়ে গল্প করতেন না?

জয়া: না, প্রয়োজনই পড়ে না। সেটে গিয়ে কেউ বাজে বকবক করতেন না। কাজ ছাড়া কেউ অন্য কথা বলতেন না। সেটের ভিতরে যেই ঢুকে গেলেন, সেটা শেফালি (শাহ) হোক কিংবা রসিকা (দুগ্গল)— সবাই যেন সেই চরিত্রটা হয়ে যেতেন। কারণ, সেটে ঢোকার আগে তাঁরা হয়তো একশো বার চিত্রনাট্যটা পড়ে ফেলেছেন। এতটাই প্রস্তুত হয়ে সকলে সেটে আসতেন।

প্রশ্ন: শেফালি, রসিকা কিংবা হুমার মধ্যে কার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ভাল সম্পর্ক আপনার?

জয়া: সত্যি বলতে কী, যাঁদের নাম বললেন সবাই মারাত্মক পেশাদার। তেমনই তাঁদের জ্ঞানের ভান্ডার। হিন্দি ইন্ডাস্ট্রিতে একটা জিনিস খুব হয়, সেটা হল সিন কেড়ে নেয়। কিন্তু এই সেটে তেমন কিছু হয় না। ধরুন, একটা দৃশ্যে আপনার একার শট নেওয়া হবে। বাকি অভিনেতারা কিন্তু পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে, যাতে ওই পরিবেশটা ফিল করতে পারি। মানে আপনাকে জোর করে কিছু করতে হবে না। ফলে আপনি অনায়াসে চরিত্র হয়ে উঠতে পারবেন।

প্রশ্ন: কলকাতায় আপনি কখনও কাজ করলেন না কেন?

জয়া: আমি বাঙালি হলেও প্রবাসী। লখনউয়ে আমার জন্ম, পড়াশোনা সব। তাই সে ভাবে কলকাতায় গিয়ে কাজ করার দরকার পড়েনি। এ ছাড়াও আমাকে কেউ ডাকেওনি সেই অর্থে। আসলে কলকাতায় কত ভাল ভাল অভিনেতা। আমি তো শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘হামি’ ছবিটা বহুবার দেখেছি। আমি চাই হিন্দিতে এ রকম একটা ছবি হোক। আরও মানুষের কাছে গল্পটা পৌঁছোনো উচিত। সেখানে খরাজ মুখোপাধ্যায়, কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দারুণ লেগেছিল।

প্রশ্ন: মাঝে আপনি কাজ চেয়ে ভিডিয়ো দেন শোনা যায়, আপনি সর্বস্বান্ত হয়েছেনএখন কি পরিস্থিতি ভাল হয়েছে?

জয়া: আমার মা তখন হাসপাতালে ভর্তি, ১৪ দিনের জন্য ভেন্টিলেশনে। সেই সময় আমি বুঝতে পারছিলাম না, মা আদৌ বেঁচে আছে কি নেই! শুধু লক্ষ লক্ষ টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। ১৮ লক্ষ টাকা খরচ করেছি মায়ের জন্য। তার মধ্যে বাড়ি সারানোর কাজে হাত দিয়েছিলাম, তাতে ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়।

প্রশ্ন: তার জন্যই কি অসুবিধায় পড়েন?

জয়া: না না, তখনও টাকাপয়সার টান পড়েনি। তখন আমি মাকে নিয়ে ঘরেবাইরে বিপর্যস্ত। হাসপাতাল আর বাড়ি করছি। সেই সময় এক সাংবাদিক ফোন করে জানান, আমার মা মারা গিয়েছেন। সেটা শুনে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ি। তখন আমি বলি, আমি এমন সন্তান নই যে মা-বাবার চিকিৎসা করব না। যদি আমি সর্বস্বান্তও হয়ে যাই, তাও বাবা-মায়ের জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করব। সেটা নিয়ে নানা ধরনের খবর বেরোতে শুরু করে। এতে যথেষ্ট বিড়ম্বনায় পড়ে যাই। আমাকে বিভিন্ন লোক ফোন করতে শুরু করেন। সাহায্য করার অছিলায় কেউ কেউ নানা ধরনের প্রস্তাবও দিচ্ছিল। আমি সাহায্য ফিরিয়ে দিতে চাইলে বলেন, ‘‘টাকা না নাও, এমনি দেখা দাও!’’ ভাবুন, কী ধরনের প্রস্তাব এটা! আমি সমাজমাধ্যম খুলতে ভয় পেতাম। অবস্থা এমন জায়গায় দাঁড়ায় যে ফোন ধরতে পর্যন্ত ভয় পেতাম।

প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে এত বছর কাজ করার পরেও এমন আর্থিক টানাটানি... এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?

জয়া: দেখুন, সত্যি বলতে কী, হিন্দি টেলিভিশনের অনেক অভিনেতা নানা অনুষ্ঠানে গিয়ে অর্থ উপার্জন করেন। লোকের বিয়েতে গিয়ে নাচেন কিংবা নিজের উপস্থিতির জন্য পয়সা নেন। সে ভাবে আমি রোজগার করি না। কারণ, আমি কেরিয়ারের প্রথম দিকে বেশ কিছু অনুষ্ঠানে গিয়েছি। দেখেছি, পুরুষেরা এমন নজরে তাকান, সেই দৃষ্টিটা ভাল নয়। নজরটা খানিকটা ইঙ্গিতপূর্ণ। যেটা আমি সহ্য করতে পারি না। কারণ, আমি জীবনে কারও পা চেটে অর্থ রোজগার করিনি। লোকের ওই দৃষ্টি আমি নিতে পারি না।

প্রশ্ন: নারী-পুরুষের সমানাধিকারের তা হলে কী হল?

জয়া: নারী ও পুরুষ সমান? এ সব কথার কথা। সত্যটা অন্য। একটা সময় ছিল যখন সারা ক্ষণ রেগে থাকতাম চারপাশের পরিস্থিতি দেখে। পরে বুঝলাম, এ সব করে রেগে লাভ নেই। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখেছি। আগে রাস্তাঘাটে লোকজনকে পিটিয়ে দিতাম অন্যায় কিছু হতে দেখলে।

প্রশ্ন: সে কি! লোকে চিনতে পারত না আপনাকে?

জয়া: আমি আসলে টেলিভিশনে সব খলচরিত্রতে অভিনয় করতাম। লোককে ভয় দেখাতে সেই দিকটা ব্যবহার করতাম। আমি একদম গুন্ডা টাইপ, একবার চোখ ঘুরিয়ে তাকাব, লোকে ওখানেই চুপ করে যাবে! আমার খলচরিত্রে অভিনয় করাটা সে ক্ষেত্রে বেশ সাহায্য করেছিল। যদিও সে সব বছর পনেরো আগের কথা।

প্রশ্ন: ‘কিঁউ কি সাস…’-এর সেটে কাউকে ধমকেছেন?

জয়া: (থামিয়ে দিয়ে) এই বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না।

প্রশ্ন: এই ধারাবাহিক ফের শুরু হয়েছে, দেখছেন?

জয়া: আমি আজকাল টেলিভিশন খুব কম দেখি। আমি অভিনয়টা ভালবাসি, সেটা নিয়েই থাকি। এ ছাড়াও আমি পথকুকুরদের উদ্ধার করি। আমার একটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আছে। সে সব কাজে এত ব্যস্ত থাকি যে টিভিতে ধারাবাহিক দেখার সময় নেই।

প্রশ্ন: ‘কিঁউ কি সাস…’-এর পায়েল চরিত্রটা আপনাকে অনেক কিছু দিয়েছে, নাকি নিয়েছে?

জয়া: আমি বলব নিয়েছে। এই চরিত্রটা করার পর সবাই ওই এক ধরনের চরিত্রের প্রস্তাব দিচ্ছে, যেটা আমি করতে চাই না। টেলিভিশনে নিজেকে ভাঙার সুযোগ থাকে না। সেই কারণে সাত বছরের বিরতি নিই। আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, আর খলচরিত্র কখনও করব না।

প্রশ্ন: আপনি তো স্পষ্টবক্তা। এ জন্য আপনার কোনও ক্ষতি হয়েছে?

জয়া: ক্ষতি কি না জানি না। তবে অনেক কিছু হারিয়েছি। জীবনে অনেক কিছু করতে পারতাম। কিন্তু নিজের বোকামির জন্য অনেক কিছু করা হয়নি। আসলে অন্যের জন্য প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমি বোকা হয়েছি। আর এ সব করা বন্ধ করে দিয়েছি।

প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে বন্ধু কারা আপনার?

জয়া: অনেকেই আমার বন্ধু। যখন আমার মা অসুস্থ, আমার টাকা শেষ, প্রায় পাঁচ বছর ধরে আমার বন্ধুরাই আমার সংসার চালাতে সাহায্য করেছে। তবে আমি কোনও পার্টিতে যাই না। গ্রুপ বানিয়ে চলি না।

প্রশ্ন: ধারাবাহিক থেকে উঠে আসা সুশান্তের পরিণতি দেখে কী মনে হয়?

জয়া: সুশান্তের মৃত্যুটা বোঝাই যায়নি কী হল। আদৌ আত্মহত্যা ছিল কি না! এখনও ভাবলে শিউরে উঠি। ও কিন্তু বোকা ছিল না, খুব বুদ্ধিমান একটা ছেলে। ও কিন্তু সেই মানুষটা নয়, যে সাফল্য পেয়ে উড়ে বেড়াবে। আমি বিশ্বাস করি না যে সুশান্ত আত্মহত্যা করতে পারে।

প্রশ্ন: ধারাবাহিক থেকে রাজনীতিক হিসেবে স্মৃতি ইরানির উত্তরণ দেখলে কেমন লাগে?

জয়া: এটুকুই বলব, ওকে বন্ধু মনে করি। এর বেশি কিছু বলব না। কিন্তু ও ক্ষমতাশালী হয়েছে বলে কোনও উপকার নিতে চাইনি।

প্রশ্ন: আপনি কখনও রাজনীতিতে আসবেন?

জয়া: অনেকবার লখনউ থেকে লড়ার প্রস্তাব পেয়েছি। পরিবারের কথা চিন্তা করে সে সব দিকে পা বাড়াইনি। এ ছাড়া রাজনীতিতে অনেক মিথ্যা বলতে হয়। আমি এককথার মানুষ। একবার কিছু বলে দিলে সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিই না।

Delhi Crime Jaya Bhattacharya Bollywood Star Hindi Serial TV Actress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy