মঙ্গলবার রাতে আচমকাই চোখ চলে গিয়েছিল আমার খাটের উপরে। তখনও সেখানে বিজয়া রায়ের লেখা বইটি উপুড় হয়ে রয়েছে। মলাটে সত্যজিৎ রায়। দিলখোলা হাসছেন। যেন আমার দিকেই তাকিয়ে। বুকের ভিতরটা হু হু করে উঠল। কেঁদে ফেলেছি। রাত পোহালেই আমার ‘রাজা’ সাজা শেষ!
বুধবারের পরে রূপটান শিল্পী সোমনাথ কুণ্ডু আর আমার দুই গালে ব্রণর এবড়ো খেবড়ো দাগ আঁকবেন না। বড্ড চেনা সাদা পাঞ্জাবি, ঢোলা পাজামা আর পরব না। আমি ফর্সা। কিংবদন্তি পরিচালক শ্যামলা। রূপটানে আমিও তা-ই হয়ে যেতাম। উপভোগ করতাম সবটা। সোমনাথদা না থাকলে আমি সত্যজিৎ রায় হতে পারতাম না।
দিন ছয়েক আগে পরিচালক অনীক দত্তকে বলেছিলাম, ‘‘দাদা, আমার কাজ ফুরলো। সত্যজিৎ রায় আমায় ছেড়ে চলে যাবেন।’’ অল্প হেসে অনীকদা পাল্টা বলেছিলেন, ‘‘পুরোপুরি ছেড়ে যাবেন কি? মনে হয় না। কিছু না কিছু ছাপ তোমার মধ্যে রেখেই যাবেন।’’ মঙ্গলবার বিকেলেই যেন তার ইঙ্গিত পেলাম। অঞ্জনা বসুর শট ছিল। ‘সর্বজয়া’ করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্রটি করছেন ‘অপরাজিত’ ছবিতে। আমি একটু দূরে একাই দাঁড়িয়ে ছিলাম। দিদি এসে বললেন, ‘‘জিতু, তুমি কি এ ভাবেই দাঁড়াও?’’ বুঝলাম, বদল এসেছে। অজান্তেই সত্যজিৎ আমার আত্মার দোসর হয়ে উঠেছেন। আমার সব কিছুতেই তাই এখন তাঁর ছাপ। আনন্দবাজার অনলাইনে কলম ধরেছিলাম, সত্যজিৎ রায় হয়ে ওঠার গল্প লিখব বলে। তখন বলেছিলাম, যে কোনও চরিত্র থেকে বেরিয়ে আসতে আমার বেশি সময় লাগে না। ভুল বলেছিলাম। শেষ বেলায় আবারও কলম ধরে অকপটে স্বীকার করছি, আমার সময় লাগবে সত্যজিৎ রায় থেকে আবার আগের জিতু কমল হয়ে উঠতে।